বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

সেভক পাহাড়ে

গ্রামে আমি যখন ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের স্কুলে তিন জন অধীর ছিলো।একজন অধীর হালদার, আরেকজন অধীর কুন্ডু অন্যজন অধীর ঘোষ।তিন জনের সাথেই আমার সখ্যতা ছিলো।দারিদ্র আর অভাবের কারনে ওরা লেখাা পড়ায় বেশী দূর এগুতে পারে নাই।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েই ঝরে যায়। একটা সময় পর্যন্ত ওদের সাথে যোগাযোগ ছিলো, দেখা হতো, কথাও হতো।তারপর কালের পরিক্রমায় আমিই দূরে চলে আসি।আমার দীর্ঘ নানা জীবনে ওদেরকে আমি একেবারে ভুলে গেছি তা নয়।কর্মহীন কোনো কোনো অবসরে ওদেরকে মনে করেছি।
তারপর চলে গেছে আরো অনেক বছর। সময়ের ব্যবধানে তিন অধীরই চলে গেছে ভারতে।অধীর হালদার বালুঘাটে,অধীর ঘোষ রায়গজ্ঞ আর অধীর কুন্ডু চলে যায় শিলিগুরি।
২০০৯ সালে আমি আর আমার স্ত্রী জলপাইগুরির ডুয়ার্সে বেড়াতে যাই। বাড়ী থেকে শুধু এইটুকু জেনে যাই,অধীর কুন্ডু শিলিগুরিতে কোথাও ফল বিক্রি করে।।আমি আর আমার স্ত্রী শিলিগুরিতে তিন দিন ছিলাম।থাকতাম সেন্ট্রাল প্লাজা হোটেলে। আমরা রিক্সায় ছোটো শহর শিলিগুরি ঘুরেছি। বাস টার্মিনাল,বাজার, রেল স্টেশন সব ফলের দোকানে অধীরকে খু্ঁজেছি পাই নাই।
শেষ দিনের বিকালে আমরা বেড়াতে যাই সেভক পাহাড়ে।  সেভক ব্রীজে দাড়িয়ে আমরা নদীর কালো জল দেখেছি।দূরের পাহাড় দেখেছি।নিসর্গের অপরূপ রূপের মাঝে অবগাহন করেছি।সন্ধ্যা তখনো হয় নাই। ব্রিজের কাছেই পাহাড়ের একটু উপরে কালী মন্দির।আমরা মন্দির দেখে পাশেই সেভক বাজারে আসি।একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুজন কিছু খেয়ে নেই। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রাস্তার উপর চলে আসি। রেস্টুরেন্টের পাশেই একটি ফলের দোকনে অধীরকে দেখতে পাই। চিনতে অসুবিধা হচ্ছিলো।মাথার চুল পেকে গেছে।আমি অধীরের পিঠে হাত রাখি। ও চমকে ওঠে। মুখ ফিরে আমাকে দেখে। এবং চিনতে পায়।অধীর আামাকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নেয়।
রা্স্তার উপর দাড়িয়েই অধীরের সাথে অনেক কথা হয়। ও বলে-ভাবীকে সঙ্গে এনেছিস,আমার বাড়ীতে যাবিনা ? অামি বললাম: 'এবার না।কাল সকালে চলে যাব। আবার যখন আসিব,তখন যাইবো।' এই কথা বলিয়া ট্যাক্সি তে উঠিলাম।দেখলাম-অধীরের চোখে জল। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়া উঠিয়াছে। পাশের মন্দিরে শঙ্খধ্বনি বাজিতেছে। উচু নীচু পাহাড় আর টিলা পেড়িয়ে আমাদের ট্যাক্সি শিলিগুরির দিকে দ্রুতবেগে ছুটিয়া চলিয়াছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন