শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

শেষ বিকেলের কথা

রাতে খাবারের পর কেমন যেনো আলস্য লাগছিলো।শুয়ে ছিলাম বালিশে মুখ গুজে।ভালো লাগছিলোনা।উঠে তাই ছাদে চলে আসি।ছাদের এককোনে আমি দাড়িয়ে আছি।আজ আকাশে চাঁদ নেই।ছড়ানো ছিটানো আছে কয়েকটি তারা।আমার পরনে টি-সার্ট এবং ট্রাউজার্স।একটা সিগারেট ধরাই।সিগারেট টানছিলাম আর ভাবছিলাম আজকের শেষ বিকেলের কথ।সিগারেটের ধূয়ার টানে মনটা চলে গেল- বিকালে পার্কের সেই বিবর্ণ সময়ের কাছে ।

দু'টো প্রজাপতি একটাই গোলাপের উপর বসে আছে।পাশে আরো গোলাপ আছে,আরো আনেক ফুল আছে।সেখানে কোনো প্রজাপতি নেই।একটি ফুল থেকেই দু্'টো প্রজাপতি সুবাস নিচ্ছে।ওরা মধুরাক্ষী কিনা জানিনা।এই অপূর্ব মোহনীয় দৃশ্যটি দেখছিলাম আমি আর পাঁপড়ি।

পাঁপড়ি আমার সহপাঠী।আমাদের ক্লাশ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো।আজকে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেলো।ক্যাম্পাসকে বিদায় জানিয়ে এসেছি।কাল থেকে কেউই আমরা ক্যাম্পাসে থাকবোনা।সেমিনার কক্ষে কতো ছাত্র বসে থাকবে,আমরা সেখানে থাকবোনা।ক্যান্টিনে আর চা'র কাপে ঝর উঠবেনা।লাইব্রেরী বারান্দায় বসে আর কোনো আড্ডাও হবেনা।

আমার আর পাঁপড়ির এইসব নিয়ে এমনিতেই মন খারাপ ছিলো।তারপরেও আজকের এই শেষ বিকালটা কাটানোর জন্য পার্কে চলে আসি।এসেই প্রজাপতিদের ঐ মোহনীয় দৃশ্যটি দেখতে পাই। এলোমেলো ভাবে হাটছিলাম দু'জন।এক সময় লেকের পারে ঘাসের উপর যেয়ে বসি।পাঁপড়ি কালকেই চলে যাবে দেশের বাড়ী। ওর বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে আছে।অপেক্ষা ছিলো শুধু পরীক্ষা শেষ হবার।পাঁপড়ি বলছিলো- তুমি যাবেনা আমার বিয়েতে ?
আমি :  তুমি বললে অবশ্যই যাবো।
পাঁপড়ি মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো- তুমি অবশ্যই যাবে।
আমি:  যাবো। কিন্তু কোনো কারণে যদি না যেতে পারি -

আমি আমার ঝুলানো কাপড়ের ব্যাগ থেকে রবীন্দ্রনাথের 'গীতবিতান' বইটি বের করি। পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে এই গানটি চোখে পড়ে-

'অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে 
কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে 
সে কি তোমার মনে আছে তাই শুধাতে এলেম কাছে–
রাতের বুকের মাঝে মাঝে তারা মিলিয়ে আছে সকল খানে।'

গীতবিতানের প্রথম পাতায় লিখি- ' তোমার শুভ দিনে আমার এই শুভাশীষ '।নীচে আমার নাম ও তারিখ লিখি। তারপর বইটি পাঁপড়ির হাতে দিয়ে বলি- সেদিন যদি কোনো কারণে তোমার বিয়েতে না যেতে পারি, তোমার জন্য আমার এই গীতবিতান।

বইটি আমার হাত থেকে নিতেই দেখি পাঁপড়ির মুখ।মহুয়া গাছের ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদ এসে মুখে পড়েছে।লেকের নিস্তব্ধ জলের মতো চোখ বিনম্র হয়ে আছে। উদ্ভান্ত বাতাসে কড়ই গাছ থেকে তখন মরা পাতা ঝরঝর করে ঝরে পডছে।কি কথা যেনো বলতে চেয়েছিলো পাঁপড়ি কিন্তু আর বলতে পারেনি। দেখলাম-পাঁপড়ি কাঁদছে। 



Options











বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

মুক্তির মন্দির সোপান তলে

আমি নামাজ পড়ি আযান শুনে যখন যেখানে থাকি
গৃহকোণে,মসজিদে,মাঠে, নদীর কূলে জমিনের উপর,
আমি ভালোবাসি ফসলের ক্ষেত,পাখি মানুষ আর মাটি
ধর্মের নামে তোমরা অধর্ম করোনা-
হাতে তুলে নিওনা তুমি বোমা গ্রেনেড কিংবা চাপাতি।

যে মাটির জন্য এতো প্রেম সেই মাটিতেই আপনি শায়িত হলেন-
Rest in Peace, লে.কর্ণেল আজাদ।
আপনি আবার ফিরে আসবেন কোনো সুপ্রভাতে !

অমর্তলোকের তুমি

 তোমাকে ভালোবেসেছি সকল মাধুরী দিয়ে। ভালোবেসেছি স্বপ্নলোকের সকল স্বপ্ন দিয়ে । তুমি আমার ঘরেও এলেনা। স্বপ্নেও এলেনা। একদিন হেমন্ত সন্ধ্যায় তোমাকে বুকে টেনে বলতে চেয়েছিলাম-
'স্বপন দুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে 
এসো মুগ্ধ এ চোখে- ক্ষণকালের আভাস হতে,
চিরকালের তরে এসো আমার ঘরে।।'
কিন্তু তোমাকে ছুঁইতে পারিনি। মনে হয়েছে স্পর্শ করলেই বুঝি কল্পলোকের এ ভালোবাসা ভেঙ্গে যাবে। ভেবেছি তাই- শতো সহস্র অন্ধকার রাতের অমর্তলোকের ভলোবাসা হয়েই তুমি থাকো।

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭

পথের শেষ নেই

সকালে হাটতে বের হয়েছিলাম।কোনো ক্লান্তি ছিলোনা হাটায়।পা্র্কের রাস্তা ধরে গিয়েছি লেক ভিউতে।সেখান থেকে সোনারগা্ঁ জনপথ ধরে খালপাড়।তারপর দিয়াবাড়ির নির্জন কাশবনে।লেক থেকে তখন নির্মল বাতাস এসে গায়ে লাগছিলো।প্রশান্তিতে ভরে উঠেছিলো মন। পথে থেমে যেতে মন চায়নি। মনে হয়েছিলো আরো হাটি- আমার তো পথ চলার শেষ নেই। 

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

তুমি মরিও

সব মেঘ উড়ে চলে গেলো তোমার আকাশ পানে।

তুমি জানলেনা-
তোমার জন্য এই মেঘ কতোটুকু জল ঝরেছিলো
তুমি জানলেনা-
সেই জলে কতোটুকু আমার ভালোবাসা ছিলো।

যদি কখনো-
জলে ডুব দিতে চাও,তবে আমার জলে এসে ডুব দিও
যদি কখনো-
জলে মরতে চাও ,তবে আমার জলে এসে তুমি মরিও।

রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭

অসাধারণ গান

সিলেটের রক্তক্ষয়ী ঘটনায় অনেকেরই মন খারাপ।গতকাল আমাদের ক্রিকেটের একটি গৌরবময় বিজয় ছিলো, সেই বিজয়টাও ঠিকমতো সেলিব্রেট করতে পারি নাই। আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবসও। আসুন আনন্দ ও মন খারাপের এই দিনে একটা গান শোনা যাক।বিশ্বের মানুষের মনে ও সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত। বিদেশি হয়েও তারা কি সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে। দেখুন সবাই।
" কি গাব আমি কি শুনাবো আজি আনন্দ ধামে " 

গন্ধর্ব-নগরীর হেম

তোমাকে আজ উদাসীন উদাসীন লাগছে।গতকালও তুমি শ্রাবন ধারার মতো বর্ষা নামিয়েছিলে।আজ যেনো তুমি  জলহীন নদী। তুমি হরণ করতে পারোনা।তুমি শুরু জানো, শেষ করতে জানোনা।কাল ছিলে আহলাদী, আজ তুমি হতচ্ছারী।তুমি কখনো চন্দন চন্দন, কখনো আবার গন্ধর্ব-নগরীর হেম। এ কোন্ রহস্য তোমার, হে প্রানেশ্বরী !

একাকীত্বের গল্প

কখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো বুঝতে পারিনি ।মেয়ে এসে ডেকে বলে- বাবা তুমি কি চা খাবে ? বললাম- না।
মেয়ে জানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি আর ওর মা একসাথে বসে চা খেতাম।আজ থেকে সে নিয়ম আর নেই।আজই সকালবেলা তাকে কবরে রেখে এসেছি।পনরো বছর ছিলো সে আমার সাথে। আজ থেকে সে আর নেই ।

মেয়েই রুমের লাইট জ্বেলে দেয়।আলনায় তাকিয়ে দেখি- ভাজ করা পরিপাটি সব কাপড়।টেবিলের ফুলদানিতে ফুলগুলোও সাজানো আছে। সবকিছু সাজানো গোছানো আছে, শুধু সে আর নেই।

টেবিলে ভাত খেতে যেয়ে দেখি,ওর চেয়ারটা খালি।কাল দুপুরেও ও বসেছিলো, আজ নেই।কেউ বললো না,আরো একটু ভাত দেই।পানি খাওয়ার গ্লাসটা আজ আর কেউ এগিয়ে দেয়নি।

রাতে বিছানায় শুয়ে আছি।পাশের বালিশটা খালি।বালিশে আজকেও ওর চুলের গন্ধ পেলাম।নির্ঘুম চোখ ঘুমিয়ে গিয়েছিলো কখন জানিনা। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি এগারোটা বাজে।আজ আর ভোরবেলায় কেউ ডেকে বলেনি- সকাল হয়েছে,ওঠো- অফিসে যেতে হবে।

আজ আর কেউ নেই।কেবল ক্লান্ত জীবনের গল্প।আজকের দিনও চলে যাবে।প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যা হবে। রাত হবে। ভোর হবে।দিনগুলো কাটতে থাকবে ।মেঘের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ একজন তখন আমাকে দেখবে, আর হাসবে।আর বলবে-

'তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে,বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।'


( লেখাটি প্রিয় বন্ধু রানা খানকে উৎসর্গ করা হলো। )
ছবি :  রানা'র ওয়াল থেকে নেয়া।





কার কন্ঠে দেবো এ গান

লিখতে চেয়েছিলাম গান।হয়ে গেলো কবিতা। কিংবা কোনোটাই না।
যদি গান হতো কে-ই বা দিতো সুর ? কার কন্ঠে তুলে দিতাম এই গান ?

কতো পথ খুঁজে খুঁজে তোমার পথেই চলে আসা
কতো অন্ধকার সরালাম হইনি কখনো নিরাশা
তুমি আমার সকল মায়া সকল আশা
তুমিই তৃষ্ণা তুমিই সকল ভালোবা্সা
কতো প্রেমে তোমার মাঝেই হারালাম আমি ভাষা
কতো বন্দর ঘুরে ঘুরে তোমার কাছেই ফিরে আসা
তুমিই দুঃখ আমার তোমাতেই জলে ভাসা
তুমিই ধ্বংস আমার তোমাতেই সর্বনাশা
কতো প্রান্তর হেটে হেটে তোমার কাছেই চলে আসা
কতো তারার আলোয় তোমাকেই হলো ভালোবাসা।

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭

আমরা করবো জয়

আজকে আমাদের স্বাধীনতার দিন।আজকের সকাল শুরু হওয়ার কথা তপোধ্বনির শব্দ শুনে।কিন্তু একি কান্নার ধ্বনি শুনি সিলেট থেকে।আজকে চারিদিকে দেখার কথা লাল সবুজের রং।কিন্তু কেন দেখতে হচ্ছে- রক্ত আর রক্তের রং।আহাজারি কেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে !

এই স্বাধীন দেশে কেন এসব মৃত্য, কেন এই হত্যা ?
বুকের ভিতর এখনো একাত্তর জেগে ওঠে।
কোথাও এখনো অসুন্দর এবং অসুররা রয়ে গেছে।
ফয়সালা দরকার।হয় অসুররা থাক,না হয় মানুষেরা থাক।
বুকের নীচে আমার বিশ্বাস-
আমরা করবো জয় একদিন।

খোঁজ

কতো পথ কতো প্রান্তর, কতো বন্দর কতো লোকালয়
কতো অন্ধকারে চোখ রেখে যাকে খু্ঁজতেছিলাম-
তার দেখা পেলাম জামতৈল স্টেশনে।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

সূর্য ওঠার আগে

২৫ শে মার্চ,১৯৭১,আমাদের স্বাধীনতার ঠিক আগের দিন
পরাধীনতার শেষ দিন, কিংবা শেষ কালো রাত-
কি হয়েছিলো সেদিন,সেই রাতে ?
সারি সারি জলপাই রঙ্গের ট্যাংক নামলো রাজপথে
বুটের খট খট শব্দ,ট্যাংকের চাকার শব্দ
তারপর গোলার শব্দ, রাইফেলের গুলির শব্দ
এলোমেলো লাশ পড়তে থাকে পথের দু'ধারে,নর্দমায়
এমন শব্দ এমন আর্তনাদ শোনেনি এর আগে এই শহরের মানুষ।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন তাক করে চালানো হয়েছে গুলি
আক্রমন হয়েছে পিলখানায় ইপিআর ব্যারাকে
আক্রমন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ হল,মধুর রেস্তোরা,
আক্রমন হয়েছে নিলক্ষেত পুলিশ ক্যাম্প,মোহসীন হলে
জ্বলছে শহর,হঠাৎ এ কেমন আলোকিত হয়ে উঠেছে নগরী !

দুগ্ধপানরত শিশু ত্রস্ত হয়ে মুখ খুলে ফেলে মায়ের স্তন থেকে
মসজিদে সিজদারত মুসুলল্লীরা ভিত হয়ে ওঠে এ কোন কিয়ামতের আলামত !
মন্দিরে উলুধ্বনি দেওয়া রমণীদের কন্ঠ রোধ হয়ে আসে
গির্জায় যিশুর সামনে প্রার্থনারত মানুষগুলোর প্রার্থনা থেমে যায়
ওয়াইজঘাটের বারবনিতাদের কুঠুরীর আলোগুলো একে একে নিভে যায়
বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা হলের রাতের সব প্রদর্শনী।

রক্তে ভাসছে রাজপথ,মুহূর্তেই বুড়িগঙ্গার জল হয়ে গেলো লাল
এতো লাশ দেখেনি কখনো এই শহরের মানুষ
 এতো আলো  দেখেনি কখনো এই শহরের মানুষ
এতো আর্তনাদের কান্না শোনেনি এই শহরের মানুষ।

ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে বাড়ীতে বিমর্ষ হয়ে পায়চারী করছেন এক নেতা
মুখে তার কালো রঙ্গের তামাক পাইপ,পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী-
শতাব্দীর স্তব্ধতা ভেধ করে তিনি ঘোষণা করলৃেন স্বাধীনতার অমর বানী
তখন কালো রাতের শেষ প্রহর, ঠিক নতুন একটি সূর্য ওঠার আগে।








শ্রীজাতের কবিতা

আমার 'অভিশাপ দেবোনা' কবিতাটি এখানে পোস্ট দেওয়ার পর থেকে অনেকেই শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতাটিও পোস্ট দেওয়ার জন্য ইনবক্সে অনুরোধ করেছে।কবিতাটির জন্য FIR করা হয়েছে শ্রীজাতের বিরুদ্ধে।সারা ভারত জুড়ে কবিতাটি নিয়ে তোলপাড়।যারা কবর খুরে মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করতে চেয়েছে,বিশেষ করে যোগী ও তার শেগরেদরা- সেই সব উগ্র ধর্মীয় ধ্বজাধারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে কবিতাটিতে। এবার পড়ুন শ্রীজাতের সেই কবিতাটি।

অভিশাপ / শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

সময়ে ওষুধ, নইলে বেড়ে যায় সবরকম রোগই
ভিখ পেতে পেতে তুমি রাজা হয়ে ওঠো, গেঁয়ো যোগী।

উঠেই নির্দেশ দাও, ধর্মের তলব দিকে দিকে
মৃগয়ায় খুঁজে ফেরো অন্য কোনও ধর্মের নারীকে।

যে–হরিণ মৃত, তারও মাংসে তুমি চাও অধিকার
এমন রাজত্বে মৃত্যু সহজে তো হবে না তোমার।

বাতাসে হাপর নামে, দেশ জুড়ে অধর্মের ছাই...
প্রতি নির্বাচনে আমরা শতাব্দীপিছনে ফিরে যাই।

যেখানে পুরুষধর্ম ধর্ম-পুরুষের অন্য নাম
আর আমি নারীর মৃত্যু পার করেও শিকার হলাম।

আমাকে ধর্ষণ করবে যদ্দিন কবর থেকে তুলে –
কন্ডোম পরানো থাকবে, তোমার ওই ধর্মের ত্রিশূলে!

মুন্নী বাঈ : বাঈজী থেকে বেগম

ইতিহাসের এক ধূলি সময়ের কথা।মুন্নী বাঈ ছিলো নবাব আলীবর্দী খাঁ'র জলসা ঘরের এক বাঈজী। অসম্ভব সুন্দর দেহবল্লরীর অধিকারিণী ছিলেন তিনি।তার রূপ মাধুরী আর নাচের নুপুরের নিক্কণে নবাব অন্দর মহলের অনেক যুবা পুরুষেরই অন্তরে কাঁপন ধরতো।মীর জাফরেরও অন্তর কাঁপিয়ছিলো এই নর্তকী।আলীবর্দী খাঁ'র প্রধান সেনাপতি থাকা অবস্থায় মীর জাফর প্রায়ই জলসা ঘরে যেয়ে মুন্নী বাঈয়ের সাথে স্ফূর্তি করতো।তখন থেকেই তার খায়েস ছিলো মুন্নী বাঈকে বিয়ে করার।কিন্তু রাজকীয় প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জলসাঘরের কোনো নর্তকী অভিজাত মুসলমানের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব ছিলোনা।মীর জাফর তার লালিত খায়েস পূরণ করেন পলাশী যুদ্ধের পর পুতুল নবাব হয়ে। তার প্রথম স্ত্রী শাহ বেগমের আকস্মিক মৃত্যু হলে তার খায়েস পূরণের সুযোগ এসে যায়।সকল লোক লজ্জার মাথা খেয়ে এই নর্তকী মুন্নী বাঈকে বিয়ে করে বেগমের মর্যাদা দেন।এই ভাবেই শুরু হয়েছিলো মুর্শিদাবাদে জেনানা মহলে বাঈজী থেকে বেগম হওয়ার অধঃপতিত কাহিনী।

কথিত আছে.দুশ্চরিত্রা এই মুন্নী বাঈকে মীর জাফর আরেক বদমাশ লর্ড ক্লাইভের কাছে মনোরঞ্জনের জন্য পাঠাতেন।মুন্নী বাঈ তার রূপ মাধুরীতে বিমুগ্ধ করতো ক্লাইভকে এবং তাদের নাবালক পুত্র নাজিমের জন্য বাংলার পরবর্তী নবাবের পদটি নিশ্চিত করিয়ে নিয়েছিলেন এই ভাবেই।প্রায় সময়েই মীর জাফর অন্যান্য রমণী ও নর্তকীদের সাথে সুরাপানে মত্ত থাকতো আর এইসব রমণীদের মিশবার সুযোগ করে দিতো স্বয়ং মুন্নী বাঈ। এই সুযোগে মুন্নী বাঈও রাজমহলের সকল গুুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।বাংলার নবাবীও চালাতো ইংরেজ লর্ডদের সাথে যোগসাজস ও মনোরঞ্জন করে এই নাচনেওয়ালী।  

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭

আগুনের. পরশমণি

'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে। এ জীবন পুণ্য কর দহন-দানে।
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে।'
চারিদিকে এতো আগুন,এতো তপ্ত দাহ।এসিডে জ্বলে আমার মেয়ের মুখ।আগুনে জ্বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।আগুন জ্বলে বাসে,ট্রেনে।কতো আহাজারি বার্ণ ইউনিটে।পুড়ে শপিং মল। নিমিষে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় বস্তির জীবন,খরকুটো।এতো আগুনের দাহে এই গানটির মাধূর্য ও প্রয়োজনীয়তা এখন আর নেই।

সুপ্রভাত

কোনো একদিন ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে
খুলতে পারবোনা আর সে চোখ
শরীরের সব চেনা গন্ধ ঢেকে যাবে আতরে
কর্পূরের সুবাস ছড়িয়ে দেয়া হবে কফিনে-
কবরে মাটি ঢাকা পড়লেই দেখতে পাবোনা সূর্যাস্ত
দেখতে পাবোনা চাঁদ নক্ষত্র জোনাকীদের আলো।
উঠবে আবার সূর্য, শুরু হবে নতুন জীবনের
তখনও কি তুমি এসে বলবে,'সুপ্রভাত'।






বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭

এক বিন্দু গল্প

তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো এক বিন্দু শিশির কনার মতো ক্ষণকালের।বহুকাল পর আবার তার সাথে দেখা হয়। এবার আমাদের সম্পর্ক হবে সাগরের জলের মতো চিরকালের।

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

মুক্তি

তোমাকে সেই কবে থেকে খুঁজছি,পথের পাশে চা'র দোকানে বসে জনারণ্যের মাঝে।                                            খুঁজেছি লঞ্চে,বাসে,ট্রেনের কামরায়।
স্বপ্নেও খুঁজে খুঁজে আমি ক্লান্ত।ভেবেছিলাম, দেখা হলে তোমার কাছে মুক্তি চাইবো।                                                 ক্ষমাও চাইবো পথের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে।

অভিশাপ দিবনা

যোগী,কি ভয়্ঙ্কর লালসা তোমার ! আত্মাহীন প্রাণ,মৃত্তিকায় মিশে গেছে যে দেহ
তাকে তুমি ধর্ষণ করবে ! কামাতুর চোখে তুমি বিধেঁছো আজ ত্রিশূল
ছি ! যোগী,তুমি ভোগী হতে পারো, তাই মৃত রমণীর সাথে রতিক্রীড়া ?
এতোই মাংসভূক তুমি? ক্ষুধার্ত কীট তুমি মলের,শকুনও,ছি !
জানোয়ার সঙ্গম করে জানোয়ারকে
কুকুর করে কুকুরীকে,পাখী করে পাখালীকে
এ সবই তাদের পবিত্র সঙ্গম
যোগী, তুমি জানোয়ারও নও,তুমি কুকুরও নও
তুমি কি মানুষ ? নাকি সন্নাস ?
সন্নাসও সঙ্গম করে রূপবতী কোনো বোষ্টুমীকে।
এ কেমন উত্থিত লিঙ্গ তোমার ! স্পন্দনহীন মৃত যোনী বুভূুুক্ষু !ছি !
তোমার নোংরা হাত খুঁজবে মৃতের স্তন,জঙ্ঘা-
পবিত্র গীতার পাতা আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকালের আকাশে উড়ছে
সীতা সন্ত্রস্ত হয়ে রাম রাম নাম ঝপছে
মা দূর্গা লজ্জায় আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকছে
গান্ধীজীর অহিংস বাণী হিন্দুকুশ পর্বতের প্রস্তুুরে মাথা ঠুকছে
তোমার কন্যা,জায়া,জননীরাই নির্সজ্জ কেবল !ছি !
ছি ! যোগী,তুমি কোথায় প্রায়শ্চিত্ত করবে? কোথায় করবে পাপমোচন?
মহামতি শিবের কাছে যাবে ? তোমার লিঙ্গকে করবে কর্তন ?
সবিতা মালবীকে আমি বলেছি, মন্দিরে যেতে-
আমিও যাবো মসজিদে- প্রার্থনা করবো তোমার জন্য-তুমি যেনো মানুষ হও,
তোমাকে আমরা অভিশাপ দিতে চাইনা,ঘৃণাও করতে চাইনা।

শরীরের ঘ্রাণ

তুমি কাছে নেই, তাই বসন্ত আসবেনা ঘরে
তাই কি কখনো হয় ?
ডালায় ফুল ভরে গেছো,রুমালে আবীর মেখে গেছো
সেই সব কি তোমার দেওয়া ভালোবাসা নয় ?
যে রয়েছে কাছে সে তুমি যদিও নও
সাজানো ফুলেও তুমি নাই-
বাতাসে আবীরের গন্ধ ভাসে সেখানেই যে
তোমার শরীরের গন্ধ খুঁজে পাই।

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

ধূলামাটির খেলাঘর

ছোটো বেলায় ধূলো বালিতে খেলাধূলা করতাম।মাটির উপর ধূলোর ঘর বানাতাম,সেখানে সুলতানা বিবিয়ানা খেলতাম । কবে কখন উন্মাতাল ঝর এসে সে সব ধূলোবালি উড়ে নিয়ে গেছে, খেলাঘরও ভেঙ্গে দিয়ে গেছে জানি নাই।। আমাদের শৈশবের সেইসব মায়াগুলি পুকুর পাড়র চালায় ধূর্বা ঘাসে এখনো মিশে আছে।

Life is very beautiful


আমাকে বাধ্য করা হলো।আমি রাজি ছিলামনা।বলেছিলো-স্বর্গের কাছে যাও।আমি রজঃস্বিলা ছিলাম।তারপরেও উল্লাস করেছে।শুধু শরীরে নয়, আমার মন্ ও মননেও রক্ত ঝরেছে।ভুল না হয় আমি করেছি।তাই বলে আর কোনো বিশ্বস্ত হাত কি ধরবেনা আমার হাত ? কেউ বলবেনা- তোমার মন খারাপের দিনে আমি আছি।,আমি বা্ঁচতে চাই।এই পৃথিবী থেকে আমাকে চলে যেতে দিওনা। I believe that life is very beautiful.




রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

সুপ্রভাত

এসো আমার হাত ধরো, অচেনা পথ ধরে চলে যাই কোথোও।যেখানে কোনো সভ্যতাা নেই।
আছে চাঁদের পাহাড়,আছে নদী।বনারণ্য আড়াল করে রাখবে আমাদের।আকাশও ঢেকে রাখবে।এমন মনুষ্যহীন লোকালয় কোথায় আছে ? যেখানে প্রথম কথা হবে আমাদের।প্রথম কোলাহল,প্রথম পায়ের চিহ্ন আমরাই এঁকে আসবো।

মেঘ থম্ থম্ করছে।বৃষ্টিও ঝরছে।হোক বাদল দিন। তারপরেও বেরিয়ে পড়বো ঐ অচেনা পথেই।
 আনন্দময় হোক পথ চলা।সবাইকে সুপ্রভাত।

প্রানেশ হে

আকাশ কালো করে মেঘেরা আসে, তবু আমরা বসে থাকি যমুনা ঘাটে।
আমরা নদীর জলেও ভিজি,বৃষ্টির জলেও ভিজি-

'একি লাবন্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রানেশ হে।'

এখন বসন্ত

এই শহরে কোনো গায়েন নেই,কোনো কবি নেই
কিছু যুবকের দল কোরাস গান গাইছে পার্কে
ওরা হাসছে ওদের হাসি বলে দেয় এখন বসন্ত।

এই শহরে পলাশ শিমুলের ডালে আগুন লেগেছে
মধুকরের দল- দল বেঁধে ছুটে চলেছে বনে বনে
গুনগুন মৌমাছিদের গান বলে দেয় এখন বসন্ত।

এই শহরে পালা করে কোকিলেরা ডেকে যায়
ওদের কুহুস্বর ছড়িয়ে পড়ে  মহল্লায় পাড়ায়
কুমারীরা তখন সমস্বরে বলে ওঠে এখন বসন্ত।

এই শহরে গায়েন আর কবি থাক বা না থাক
যুবকের দল গান গেয়ে যায় সারাদিন সারারাত্রি
কুমারীরা প্রেমিকা হয়ে বলে ওঠে- এখন বসন্ত।


শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭

সুবাতাস নিয়ে এসো

পলাশের রেণুরা সব যাচ্ছে ভেসে
মেঘের ছায়ায় নামছে আধার, এসো রাত্রি-
এসো তুমি আলো জ্বেলে ধরো,
এলোমেলো পড়ে থাক আম্র মুকুল,শিমুল ফুল
ঝরে পড়ছে গাছের পাতা,ঝরছে শিলা বৃষ্টি
এই ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ রাতে-
তুমি সুবাতাস নিয়ে এসো।,
,



শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

নাজমা জামান

“তোমারই জীবনে, এলো কি আজ বুঝি, নতুন কোন অভিসার/ আমি এসেছি জেনে কি, তোমার মনে কি, ফাগুন খুলে দিলো দ্বার” গানটি একসময় স্পর্শ করেছিল সঙ্গীত প্রিয় শ্রোতাদের অন্তর। বিখ্যাত এই গানটি গেয়েছেন সত্তর দশকের বিখ্যাত পপ সংগীতশিল্পী নাজমা জামান। গানটি কতখানি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, তা সেকালের শ্রোতারাই বলতে পারবেন। গানটি লিখেছেন শিল্পী নাজমা জামানের সহোদর সাফাত আলী খান। সুর- জিঙ্গা গোষ্ঠী।

 সেই আমলে নাজমা জামান ছোট করে চুল কেটে তাঁর স্বতস্ফূর্ত সঙ্গীতের পরিবেশনা দিয়ে পাশ্চ্যাতের বনি এম, এ্যাবা’র সেই ঢং-এর’ই একটা দেশীয় প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আমাদের গানে। তাঁকে দিয়ে সেই আমলে যেটা শুরু হয়েছিলো সেটা একটা ভীষণ সাহসের বিষয় ছিলো। তবে তাঁর সাবলীলতার গুণে সেটা একটা স্বাতান্ত্রিক এবং স্বাভাবিক চেহারা পেয়েছিলো। সে সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে সলিড গোল্ড আর বাংলাদেশ বেতারে ওয়ার্ল্ড মিউজিক নামে দু’টি বিদেশী শো প্রচারিত হতো।

চট্টগ্রামে থাকতেন নাজমা জামান এবং তার ভাই বোনেরা। ১৯৬৩ সালে তার বড় ভাই সাফাত আলী খান-বোন শায়লা, নাজমা জামান ও তার ভাবী মিলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রামে জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠী নামে একটি ব্যান্ড তৈরি করেন। পরে তারা সবাই ঢাকা চলে আসেন।নাজমা জামান ”দূর আলাপনি দ্বারা হলো নব পরিচয়” ইত্যাদি গানের মধ্যে এক ধরনের আধুনিকতা নিয়ে আসেন। তবে তিনি ছিলেন শহুরে। তার জনপ্রিয়তা ছিলো শহরে। আর এক দল তরুণ গায়ক গায়িকা এসময় আবির্ভূত হন, যারা বাংলাদেশের গানের ভুবনকে পাল্টে দেন। এরা হলেন আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীর, ফিরোজ সাঁই এবং পিলু মমতাজ।

নাজমা জামান, শায়লা জামান তাঁরা দুই বোন। তাঁদের ভাই মরহুম সাফাত আলী ভাবী নীঘাত আলী। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বসবাস করছেন নাজমা জামান। আজ সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হলো তার ভাই সাফাত আলীর তিন সন্তান তারা সবাই আজ শিকাগো এবং আইয়োয়াতে প্রতিষ্ঠিত। সাফাত আলীর বড় ছেলে শায়ান আলী জিংগাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার মেয়েও শাজিয়া নারমীন এবং তার ছোট ছেলে নাহিয়ান আলী এরা তিন ভাই বোন। শায়ান আলী বাবার মতই কথা ও সুর করে নিজেই গাইছেন।


তথ্য সূত্র ও ছবি: :রঙ্গিন



নাগকেশরের গন্ধ

           
শিমুল দেখলেই রক্তভূক হয়ে উঠি
এই শহরে কোথায় পাবো শিমুল ?
তোমার সাদা জবায় এখন বসন্তকাল
তুমি হয়ে উঠেছো তাই রক্তকরবী ।

বসন্ত চলে যাক-
আসছে গ্রীস্মে তুমি রাধাচূড়ার আবির মেখে থেকো
আমি আসবো কাছে- আমার শরীরে থাকবে তখন
 বঙ্কিম রূপের নাগকেশরের গন্ধ। 

পাসওয়ার্ড বিড়ম্বনা

তিন চার বছর আগে একটি ই-কমার্স সাইটে Signup করেছিলাম।শেষ প্রায় দুই বছর আর Login করিনি।আজ Login করতে যেয়ে দেখি password ভুলে গেছি। Password recovery question এ লিখেছিলাম- 'তুমি প্রথম কাকে চুমু খেয়েছিলে' ?,তার নাম। কিন্তু আশ্চর্য, সেই নামটাও ভুলে গেছি।স্মৃতি হাতরিয়ে প্রথমে একটা নাম লিখে দিলাম,কিন্তু matching হলোনা। দ্বিতীয়বার আরেকটি নাম দিলাম,সেটাও গ্রহণ করলোনা। তৃতীয়বার- এবার স্ত্রীর নাম লিখে দিলাম।একটি notification message এলো- 'you're blocked now from this site permanently.'

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

জলবাস

এই সমুদ্র দেখে মনে হয় এখানেই জলবাস আমার
এর উচ্ছাস,এর অতল গহবর,এর গর্জন,এর ভৈরবী নিনাদ
আমাকে কাছে ডাকে,
কতোকাল অপেক্ষায় ছিলাম নদী হয়ে মোহনায় মিশবো
কিন্তু পারিনি নদী হতে,
আজ এখানে এসে তোমার কূলে দাড়িয়েছি
তোমার উদাত্ত আহবান আমার প্রাণে জাগে
তুমি টেনে নাও,হে জলধি ! তোমার জলের বুকে।

পৃথিবীর পথে পথে

সিরাজগঞ্জে শহীদ মনসুর আলী স্টেশন থেকে সিল্কসিটি ট্রেনে ঢাকা আসছিলাম।আমার পাশের সিটে মধ্য বয়সী এক বিদেশী বসা ছিলো।প্রাথমিক পরিচয়ে যতোটুকু জানতে পারি- ওর নাম পল এ্যান্ডারসন। সে একজন ধর্ম যাজক এবং পরিব্রাজক।অনেকটা ক্যারাভান লাইফ তার,যাযাবরীয় জীবন করে। গিয়েছিলো দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দির দেখতে। সেখান থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাট। সোনা মসজিদ দেখে এখন ঢাকার পথে। তারপরে যাবে রেঙ্গুন।

সিল্কসিটি ধীরে ধীরে যমুনা অতিক্রম করছিলো।তখন বর্ষার সময় ।জেগে থাকা চরগুলো জলে ডুবে গেছে।সারা যমুনার বুক জুুড়ে জল থৈথৈ করছে।সাগরের মতো লাগছে যমুনাকে।ওপারের কোনো কূল কিনারা দেখা যায়না।ট্রেনের জানালা দিয়ে পল বিস্ময়ে দেখছিলো যমুনা নদী !
পল :   তোমাদের এই নদীটির নামই তো যমুনা ?
আমি:  হ্যাঁ, এইটিই যমুনা নদী।
পল:  খুবই সুন্দর একটি নদী। ঐ যে দূরে পানি আর পানি দেখছি। তারপরে কোন শহর বা গ্রাম আছে ?
আমি:  ঐ জলের ওপারে কোনো শহর নেই, নদীর কূল ঘেসে আছে শুধূ গ্রাম আর ফসলের ক্ষেত।

পলের সাথে এইভাবেই কথা বলতে থাকি।ট্রেনটি ইতোমধ্যে যমুনা পার হয়ে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।মির্জাপুর পর্য্ন্ত যেতে যেতে পল সম্বন্ধে যতোটুকু জানতে পারি- পলের জন্ম আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের হার্স্ট শহরে।ওর মা ছিলো বার্মিজ।পলের বাবা চাকুরী সূত্রে রেঙ্গুনে থাকাকালীন সময়ে পলের মা'র সাথে প্রণয় হয় ও পরবর্তীতে বিয়ে হয়।পলের বাবা'র পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিলো বোম্বে।আর পলের কৈশরকাল কাটে এই ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতেই। এই নগরীতেই পলের মায়ের অকাল মৃত্যুও হয়।

ট্রেনটি মির্জাপুর স্টেশনে থেমে আছে।জানতে পারি, অন্য আর একটি ট্রেন এখানে ক্রসিং হবে।ট্রেনটি ছাড়তে দেরী হবে দেখে আমি আর পল স্টেশনে নেমে প্লাটফর্মের উপর দিয়ে হাটছিলাম।
আমি :  পল, তারপরের কথা বলো।
পল:  আমার য়য়স যখন নয় বছর তখন বাবা হার্স্টে চলে আসে।এমনই দূর্ভাগ্য যে, আমার বাবা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সে বছরেই।
আমরা যেয়ে একটি চা'র দোকানে বসি।দু'জন দুই কাপ চা খেলাম।পলই আমাকে সিগারেট অফার করে।সিগারেট খেতে খেতে বলছিলাম-  পল এবার তোমার ঘর সংসারের কথা কিছু বলো।
পল:  আমার স্ত্রী একজন আইরিশ মেয়ে। সে এখন ডাবলিনে থাকে।বিচ্ছিন্ন জীবন।ওর কাছে আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে।নাম মিলিশা।

পল ওর মানি ব্যাগ থেকে ওর মেয়ের একটি ছবি বের করে আমাকে দেখায়।ফুটফুটে পরির মতো দেখতে ওর মেয়ে।
দেখলাম- পল আরো একটি সিগারেট ধরিয়ে টানছে। ঢাকার দিক থেকে আসা ট্রেনটি স্টেশনে এসে দাড়ায়। আমরা যেয়ে আমাদের ট্রেনে উঠে পড়ি।

ট্রেনটি যখন রাজেন্দ্রপুর বনাঞ্চল অতিক্রম করছিলো- দেখি বনারণ্যের গভীরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পল।আমি পলকে ডাকি -  'পল ?'
পল:   জ্বী, কোয়েল।
আমি: তুমি তো এখন অনেক নিঃসঙ্গ ! তোমার সময়গুলো কি ভাবে কাটাও ?
পল:  এই তো ধর্ম কর্ম করছি। দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর পথে পথে একাকী হাটছি। বিভিন্ন উপাসানালয়ে ঘুরে বেড়াই।বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ মানুষের সাথে কথা বলি। আমার ধর্মের বাণী অন্য মানুষদের শোনাই।কাল চলে যাবো রেঙ্গুনে। মাতামহ ও মাতামহীর গ্রেবইয়ার্ডে যাবো।তাদের জন্য প্রার্থনা করবো। ওখানকার বৌদ্ধ উপাসানালয়গুলো ঘুরবো। এইতো এইভাবেই জীবন চলছে।এই ভাবেই সময় কাটাই।


আামাদের ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে। কখন টঙ্গী চলে এসেছে বুঝতেই পারি নাই। আমি পলকে বললাম- 'সামনে বিমান বন্দর স্টেশনে আমি নেমে যাবো।' আমি পলকে শেষ যে প্রশ্নটা করলাম,তাহলো- ''পল,তুমিতো পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছো,কোন দেশে বা কোথায় তোমার মরতে ইচ্ছা করে ? '' আমার এ ্প্রশ্ন শুনে,পলের মুখটা বিষন্ন হয়ে গেলো।চোখ দু'টো কেমন যেনো ভারী হয়ে উঠলো।

পল :   তোমাদের ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতে আমি মরতে চাই ।ওখানে আমার শৈশব ও ছেলেবেলা কেটেছে।ওখানকার আকাশ বাতাস এখনো আমাকে টানে।আরব সাগরের তীরে ছোটোবেলায় আমার হাতধরে বাবা মা কতো ঘুরেছে। আমার মায়ের সমাধিস্থল ঐ শহরেই। ঐ শহর আমাকে ডাকে।ঐ আরব সাগরের তীরে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।মেরিন ড্রাইভ রোডের আমাদের ছোট্ট বাড়ীটার কথাও মনে পড়ে।

ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে বিমান বন্দর স্টেশনে এসে থেমে যায়।আমি পলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়ি।
বিদায় মুহূর্তে পলকে বলেছিলাম- তোমার সাথে আমার আর কি দেখা হবে কখনো ? পল বলেছিলো- হহতো হবে,এই পৃথিবীর কোনো এক পথে। এই রকমই কোনো এক ট্রেনে।


বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

কোয়েল,ঘুম নেই।


সারারাত ঝরেছিলো বৃস্টি-
ঝুম বৃস্টির শব্দে শুনতে পারিনি কোনো ফুল ফোটার গান
সারারাত তোমার পায়ের শব্দ বাজেনি
জানালায় লাগেনি এসে দমকা হাওয়া-
সারারাত ছিলো তোমার পুরোনো চিঠির।

স্বপ্ন দেখবো বলে যখন ঘুম এসেছিলো চোখে
স্বপ্নহীন ছিলো সব ঘুম-
ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি আমি জেগে আছি
কাল সারারাত ফুলও ফোটেনি,স্বপ্নও আসেনি।


সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭

আজন্ম ভালোবাসা

দেখা হলো তাদের সমদ্র পাড়ে
ঝিনুক কুড়ানোর সময়ে গেয়েছিলো গান
গানের কথা ছিলো
প্রাণের কথা ছিলো
সাগর শুনেছিলো সে কথা সে গান।

ঝিনুকে মুক্তা ছিলো
ঝিলমিল তারা ছিলো
সে মুক্তায় প্রাণ ছিলো
ভালোবাসা হলো তাদের মুক্তার বিন্দুর মতো।

সমুদ্র পাড়েই তাদের ভালোবাসা হলো
দু'জনেই সেদিন জলে নেমেছিলো
দু'জনেই হাত দিয়ে জল ধরেছিলো
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আজন্ম ভালোবাসার।

'ভালোবাসি'

বালিতে আঙ্গুল দিয়ে লিখেছিলে যার  নাম
সাগরের জল এসে সে নাম মুছে দিয়ে গেলো
যে বাতাস এলোমেলো করে দিয়েছিলো
তোমার মাথার চুল-
তারই কানে কানে বলে দিয়েছিলে 'ভালাবাসি'।

দূরের আকাশে সে বাতাস মেঘে ঢেকে গেলো
'ভালোবাসি' কথাটি পৌঁছলোনা কারো কানে।




রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭

দান

অনেক বছর আগের কথা। একটি সরকারী প্রকল্পের মূল্যায়নের কাজে বাগেরহাট গিয়েছিলাম। এক ছুটির দিনে ইচ্ছা হলো খান জাহান আলীর মাজার যিয়ারত করবার।
বাগেরহাট সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খানজাহান (রহ:) এর মাজার শরীফ।আমি বাগেরহাট থেকে ট্রেনে খান জাহান আলী স্টেশনে নেমে সুপারী আর নারিকেল গাছের সারি বেস্টিত পথ ধরে মাজার প্রাঙ্গনের দিকে হেটে যাচ্ছিলাম।মাঝারে ঢুকবার আগেই পথের উপর একটি পা্ঁচ টাকার নোট পড়ে থাকতে দেখি।ছোটো বেলায় মা বলেছিলো- 'পড়ে পাওয়া টাকা পয়সা ফকির মিসকিনদের দিয়ে দিতে হয়।' আমি পাঁচ টাকার নোটটি হাতে তুলে নেই।এবং হাটতে থাকি মাজারের দিকে। মাজার প্রবেশের আগেই এক বৃদ্ধা ভিখারিনীকে দেখতে পাই।সে একটি গাছ তলায় বসে ভিক্ষার হাত পাতছে।সত্যিই হত দরিদ্র সে।দেখে মনে হলো অভুক্ত,সারাদিন কিছু খায়নি।আমি কুড়িয়ে পাওয়া সেই পাঁচ টাকার নোটটি তাকেই দিলাম এবং বললাম- এটা দিয়ে তুমি কিছু খেয়ে নিও।বৃদ্ধা পরম খুশীতে আমার হাত তার বুকের কাছে টেনে নিয়ে আমাকে দোয়া করে দিলেন।
মাজার যিয়ারত করে ঘন্টাখানেক পর ঐ পথেই স্টেশনের দিকে ফিরছিলাম।সেই ভিকারিনীকে আবার চোখে পড়লো। দেখলাম- সে এক বালকের সাথে কি যেন কথা বলছে। একটু এগিয়ে যাই, কিন্তু এ কি ! আট নয় বছরের বালকটি এতো অঝোরে কাঁদছে কেন? আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কি-ই বা বলছে সেই বৃদ্ধাকে ! আরও একটু কাছে এগিয়ে গেলাম।কানে এলো বালকটির দুঃসহ কাতরোক্তি। ছেলেটি বার বার বলছে,পাঁচ টাকার নোটটি সে হারিয়ে ফেলেছে।কথাায় আরো বুঝতে পারলাম,বালকটি বৃদ্ধার নাতি হয়।ওকে পা্ঁচ টাকা হাতে দিয়ে খাবার কিনতে পাঠিয়েছিলো ঐ বৃদ্ধাই।এবং ঐ বালক তা পথে হারিয়ে ফেলে।
দুঃখে কাতর সেই বালক ও বৃদ্ধার কাছে এগিয়ে যেতে গিয়েও আমি আর গেলাম না। অনেকটা দ্বিধার কারণে বলা হলোনা যে,,ঐ টাকা আমিই কুঁড়ে পেয়েছিলাম।একটু আগে আমি যে দান করেছিলাম,আমার সে দানের মহিমা যেন মুহূর্তেই ধুলোয় মিশে গেল।

তুমি ঋদ্ধ হও


তুমি কপালে আঁকো মহাস্থান গড়ের লাল মাটির টিপ
অভ্রকুচির সৌরভ ছড়াও সারা শরীরে-
আমি সবকিছু গ্রহণ করবো যা কিছু আছে তোমার।
আমিও সব জল,,সব শীতল হাওয়া,সব কদম ফুল
সব বাঁশি,সব বালুকাবেলা- তোমাকে দিয়ে যাবো-
তুমি গ্রহণ করো, তুমি আনন্দ করো, তুমি ঋদ্ধ হও।
,








স্বর্গীয় চিত্রাবলী

একদিন আমাদের দেখা হবে, ঈষাণে থাকবেনা
সেদিন মেঘ,
ঝড়ও আসবেনা নৈঋত থেকে-
 ঝিরঝির বৃষ্টির ধারাও বইবেনা
 ভৈরবীর সুরে গান বেজে উঠবে সারা ভূবন জুড়ে
এমনি মায়াবী ক্ষণে আমাদের ভালোবাসা হবে
পৃথিবীর বিমুগ্ধ চোখ তাকিয়ে দেখবে
সেই সব স্বর্গীয় চিত্রাবলী।

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

ফাগুন দোলায় দুলে উঠি

এই ফুলটি কি কেবল শান্তি নিকেতনেই দেখা যায় ?
আহা ! কি সুন্দর 'ফাগুন বউ' তুমি ! তোমাকে দেখতে সাধ হচ্ছে !
এ ফাগুনে তোমাকে আর দেখা হলোনা।
সামনের ফাগুনে আসছি শান্তি নিকেতনে।
বসন্তের এ পথ চলা ফুরোতে থাক।

এই ফুলের রংটি দিয়েই সবাইকে দোল পূর্ণিমার শুভেচ্ছা।

মেহেরজান

অপ্রেমে দূরে রেখেছিলাম তাকে।প্রেমেই তাকে কাছে নিয়ে আসে।এতো কাছে যে- ওর চোখের মায়া একদিন আমার চাহনীতে না পেলে আমার মন খারাপ হয়ে যেতো।আমার সমস্ত চৈতন্যে,সমস্ত অবচৈতন্যে তার ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই।
মেহেরজানকে প্রথম দেখে বিমুুগ্ধ হয়েছিলাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে।তখন সেখানে এতো অট্রালিকা ছিলো না।ওয়াইজ ঘাট থেকে হেটে হেটে আরো একটু পশ্চিমে,নদীর তীরে একটা ভাঙ্গা ইটের ঢিপির উপর দু'জন বসেছিলাম।সূর্য তখন অস্তমিত।নদীতে ভেসে থাকা লাল আভার ঝিলিক মেহেরজানের মুখে এসে পড়েছিলো। আর প্রথম বিমুগ্ধ হওয়া সেখানেই।

সেদিন ঝুনু আপা ক্লাশে আসেনি। তাই ক্লাশ আর হলোনা। তবলচি কিছুক্ষণ একাকী তবলায় তাল দিলো।কিন্তু সে নাচ আর কারো করা হলো না। তারপর মর্নিং শো'তে স্টার সিনেমা হলে আমি আর মেহেরজান যেয়ে ঢুকে পড়ি।সুভাষ দত্তের বসুন্ধরা।সিনেমা কি দেখবো ? আমরা যেখানে বসেছিলাম,তার আশে পাশে ওয়াইজ ঘাটের এক গাদা Out of Bond এর মেয়েরা বসেছিলো।উদ্ভট সাঁজ,আর পোষাক পরিহিত ঐ সব বনিতারা অকারণে হাসি আর শিষ দিচ্ছিলো। বিরতির সময় আমরা বের হয়ে চলে আসি।

আর একদিন আহসান মঞ্জিলে গিয়েছিলাম।প্রকোষ্ঠের পর প্রকোষ্ঠ ঘুরছিলাম।একটি রূম আছে নবাবদের পানশালা হবে হয়তো।দেয়ালে টানানো একজন নর্তকীর তৈলচিত্র দেখতে পাই।আমি মেহেরজানকে বলি- তুমিও তো নাচ শিখছো। নবাবরা থাকলে এই রকমই নর্তকী হতে পারতে।
মেহেরজান:   তুমি কি ঐ মেয়ের চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারছো ?
আমি:     যে মাদকতা আমি দেখছি ওর চোখে মুখে,সেখানে কেবল আনন্দই দেখতে পাচ্ছি।
মেহেরজান:   তুমি দেখেছো কেবল ওর আনন্দয়ী দুটি চোখ। আমি দেখেছি ওর চোখের পিছনে- যেখানে অনেক বেদনার অশ্রু জমে আছে। যা দেখাও যায়না,ঝরেও পড়েনা।

আমি দেখলাম, মেহেরজানের চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে।হঠাৎ মনে হলো ঐ রুমের মধ্যে ঘুঙ্গুরের শব্দ হচ্ছে।তবলচি বাজাচ্ছে তবলা। শরাব খা্চ্ছি আমি।মেহেরজান নাচছে নুপুর পায়ে। আমি তো মেহেরজানের চোখে কোনো দুঃখ দেখছিনা,দেখছি আনন্দ।শরাব পান করছি। প্রিয়া আজ মেহেরজান।হঠাৎ মনে হলো,পাশের প্রকোষ্ঠ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মনে হলো কোনো একজন নর্তকী আথবা যৌনদাসী কাঁদছে। যখন ঘোর কাটে তখন দেখতে পেলাম- আমি মেহেরজানের চুলে মুখ লাগিয়ে চুলের সুবাস নিচ্ছি।মেহেরজান আমার বুকে জড়িয়ে আছে।

তারপর অনেক কথা।কতো ভালোবাসা হলো দুজনের।কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সেই প্রেম কালস্রোতের উল্টো দিকে ভাসিয়ে দিলো।প্রেমেই একদিন মেহেরজানকে কাছে টেনে এনেছিলো, আবার প্রেমেই তাকে দূরে রেখে দিলাম।যার চোখের মায়া  দিয়ে আমাকে একদিন না দেখলে সারাদিন  মন খারাপ লাগতো, তাকেই নয়নের আড়াল করে রাখলাম।মেহেরজানকে আমার সমস্ত চৈতন্যে,সমস্ত অবচৈতন্যে ভুলে যেতে থাকি,কেন ভুলে যেতে থাকি- সে দীর্ঘশ্বাশের কথা আরেকদিন বলবো।

শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

যমুনা

যমুনা- আমি তোমার কাছেই ফিরে যাবো।এই শহরে কোথাও জায়গা নেই।
আমার পূর্ব পুরুষেরা তোমার জলেই স্নান করে পুণ্য হয়েছে।
তোমার বুকেই প্রাণ মিলেছে কতোজন।
যমুনা,তুমি জল রাখো আমার জন্য।আমি আসছি তোমারই জলে।

সেই ঝড়ের রাতে

ধূলো ঝর আজ এই শহরে,
উদ্বাহু বাতাস আসছে তুরাগের তীর থেকে-
সেই শৈশবে একবার ঝড়ে পড়েছিলাম এক সন্ধ্যায়-
শৈলাভিটা নদীর খেয়াঘাটে-
বাবা তার পাঞ্জাবীর নীচে আমার মাথা ঢেকে রেখেছিলো
কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা তার জল ঠেকাতে !
,তারপরেও বাবার কন্ঠ বেয়ে
বুক গরিয়ে বৃষ্টির জলে ভিজে চুপসে গিয়েছিলো
আমার মাথার চুল- বাড়ীতে যেয়ে দেখি-
লন্ঠণ জ্বালিয়ে নামাজ পড়ছেন মা।

মা সেই ঝড়ের রাতে নিশ্চয়ই আমার জন্য
আর বাবার জন্যে মঙ্গল প্রার্থনা করেছিলেন।

সম্পর্ক নেই

আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই,
 মায়া মমতা,শ্লেশ,আশ্লেশ
শ্রাবন দুপুরের মায়াবী চাহনী,ঘণা,
রাতের খুনসুটি কোনো কিছুই নেই।

সহস্র আলোক-বর্ষের ওপার হতে যে আলো
একদিন সড়িয়ে দিয়েছিলো পথের অন্ধকার
সে আলোর প্রতিধ্বনিও নেই।

নিঃশেষিত হয়েছে সব বোধ- ফুলের ঘ্রান,সন্ধ্যা ধূপের সুবাস
ভালোবাসার অভিজ্ঞান,সব স্মৃতি চিহ্ন লুপ্ত হয়ে গেছে-
বিমুগ্ধ প্রগাঢ় চুম্বন,উষ্ণতার সব আলিঙ্গন কোনো কিছুই নেই।

বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭

রুদ্র পলাশ

ওটা কি পলাশ? না৷ ওটা কি শিমুল? না৷ ওটা কি মন্দার? না৷
গ্রাম বাংলার পথে মাঠে কিংবা পাহাড়ি বনাঞ্চলে যারা হাটেন নিমেষে বলে দিয়ে যান ওই ফুলের নাম৷ ও যে বসন্তের আগমন বার্তা দিয়ে যায়। ওর নাম পলাশ৷কবি গুরু আদর করে নাম দিয়েছেন রুদ্র পলাশ।

পলাশের বৃন্ত যেমন হয়, সে রকমই৷ ও রকম একটাই পাপড়ি৷ কিন্তু রংটা লাল, গুলমোহরের মতো৷ রুদ্রপলাশ– রুদ্র তোমার বাঁশিতে বাজিছে মন কেমনের সুর৷ বছরের এই সময়টাতে রংয়ের আগুন শুরু হয় এই ফুল দিয়ে৷ পাশাপাশি ঝড়ের মতো উপচে আসে শিমুল৷  সে গাছে পাতা নেই৷ শুধু ফুল৷ রক্তরাঙা ফুল৷ এত দ্রুত জন্ম, এত দ্রুত মৃত্যু, কোন ফুলের আসে? কখন যে চলে আসে কেউ জানতেও পারে না৷ 

সবাইকে আজ সকালে এই রুদ্র্ পলাশের রক্তিম শুভেচ্ছা।

তোমাদের কাছে একদিন

পিতা,এখানেই তুমি শুয়ে আছো মিশে গেছো
এই মৃত্তিকায়,
এখানকার সব মাটি দুর্বা ঘাসে ঢেকে গেছে-
ঠিক তোমার বাম পাশেই শুয়ে আছে- প্রিয়তমা পত্নী তোমার,
খেঁজুর গাছের পাতার ছায়া পড়েছে
তোমাদের উপর।

আধারের ভিতর তোমরা ঘুমিয়ে আছো-
তোমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়না ঝিঁঝিঁ পোকাদের গানে
কিংবা ভোরের পাখীদের ডাক শুনে-
কোথায় তোমাদের সেই কাফনে মোড়ানো দেহ ?
যা খাটিয়ায় করে বহন করে আমিই এনেছিলাম একদিন,
এই মৃত্তিকা তলে মিশে গেছো,আত্মাও মিশে গেছে ঘাসে।

এই যে তোমাদের কাছে আজ আমি এখানে এসেছি
শুনেছো কি আমার পায়ের শব্দ ? পেয়েছো কি-
আমার হৃৎ কম্পনের ধ্বনি ? আমার দীর্ঘশ্বাস ?
কিংবা আমার মোনাজাতের ক্রন্দনের কথা ?

ঘাসের আচ্ছাদনের মতো জড়িয়ে থাকতে ইচছা করে
আমিও একদিন আসবো-
ঘাস হয়ে জড়িয়ে থাকবো তোমাদের কাছে।

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

সারা রাত জুড়ে

কাল রাতে তারারা ছিলো অনেক আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে তুমি চলে যেতে চেয়েছিলে-
কিন্তু পেরেছিলে কি ?
সারা রাত জুড়ে তুমি আনাগোনা করেছো সেই সুরে,
তারই রং যেনো লেগে আছে তোমার চোখে মুখে চুলে।

জল গহবর

তুমি আমাকে কখনো বলোনি কতো জলের পথ চলতে হবে
কতোটুকু জলে ভেজাতে হবে পা
চরাচর জুড়ে রাত্রিতে জোনাকিরা জ্বলে ওঠে
তুমি কখনো বলোনি কতোখানি জলে ডুবলে মৎস্যকন্যা পাওয়া যায়                                                        কতোটুকু জ্যোৎস্না ঢাললে কোলাহল থেমে যায় নদীর-
আমি যে ডুবে যেতে চাই নদীর জল গহবরে।

কথা ছিলোনা

অপেক্ষা করেছিলাম এই বসন্তদিনের জন্য,ভেবেছিলাম
 ঘূর্ণি বাতাসের ধুলির মতো তার প্রেম এসে দোলা দেবে
বন্ধ জানালার কপাটে,
আমাদের প্রেম ছিলো হেমন্ত সন্ধ্যার মতো মৌন ও স্থীর,
আমি এপার থেকে শুনেছি তার দীর্ঘশ্বাস
কাঁটাতারের কা্ঁটা বিঁধে আছে হৃদয়ে,
সেই ক্ষরণ দেখতে পায়নি সেখানকার আকাশ,
ভেবেছিলাম এই বসন্তেই তার নীল শাড়ীর আঁচল উড়বে
এখানে,এই বাংলায়,এই যমুনা নদী তীরে।

কিন্তু এই বসন্তে দেখা হলোনা ,হবেও না আর কোনো দিন
কথা ছিলোনা এই বসন্তেই আমাদের বিচ্ছেদ হবে
একাকী কাঁদতে হবে তাকে ভাগিরথী তীরে।,                                                                                      

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

ভূবন মাঝি'র অন্তর্ধাণ

বাংলার জনপ্রিয় ব্যান্ড দোহারের গায়ক ও লোকসংগীত গবেষক কালিকা প্রসাদ আর নেই । আজ এক সড়ক দুর্ঘটনায় এই ভূবন থেকে  না ফেরার ভুবনে তিনি চলে গেছেন।

গ্রাম বাংলার লোক গানকে তুলে ধরেছিলেন তিনি।শহুরে মানুষদের মাটির গান শোনায়েছেন। বাংলার বাউল-ভাটিয়ালি-চটকা-ঝুমুর-সারিগান-বিহু- সব গান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। হারিয়ে যাওয়া অনেক গানকে নতুন করে প্রাণ দিয়েছেন কালিকা প্রসাদ। সর্রশেষ তিনি 'ভূবন মাঝি'তেও গান গেয়েছিলেন।আজ ভোরেও  তিনি ছিলেন এই ভূবনে,আর এখন তিনি অন্য ভূবনে।

এই মরমীয়া শিল্পীর আত্মার প্রতি রইলো আমার শ্র্দ্ধাঞ্জলি।

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

ডুব

তুমি সঙ্গ দিয়েছিলে আমাকে এক দুপুরে
রোদ্র এসে পড়েছিলো তোমার মুখের উপর,
নীল মেঘের মাঝে আমরা ভেসে বেড়িয়েছিলাম
অদ্ভূত শুভ্রতার জল ঝরে পড়েছিলো তখন,
জল এতোটাই জলজ ছিলো যে -
সে জলে আমরা ক্রমেই ডুবে গিয়েছিলাম।

শুধু চন্দন চন্দন

 কাঁচুলি ছুঁড়ে দাও মেঘে। তোমার  চোখে বিঁধে যাক সব পুরুষের বাসনা। উতলজোড়া বুকে দুলে উঠুক অগণন ঠোঁটের দাগ। জঙ্ঘা ডুবে যাক মৈনাকের মাথায়। তুমি আজ বাধাবন্ধহীন নৃত্যে আনন্দ ভৈরবী। তোমার পায়ে পায়ে ব্রহ্মকমলের ছন্দ।তুমি কি এভাবেই মুক্তি চেয়েছিলে আমার কাছ থেকে? মৈথুনে মৈথুনে ঢেকে রাখা এক জীবনের অনঙ্গজোছনা এবার মুখের অবগুণ্ঠন খুলেছে । আর তুমি আমার নও। আমিও আর কারোর নই।আসন্ন সন্ধ্যায় কবন্ধ রাক্ষস ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বসে কাঁদবে এবার। নখ নেই দাঁত নেই মুন্ডহীন, রঙিন পেখম নেই, শিথিল অঙ্গে অঙ্গে শুধু চন্দন চন্দন। শুধু চন্দন।

শব্দ ও নৈঃশব্দ

কাল রাতে তোমার পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
 তুমি থাকলে শব্দ হয়।না থাকলে নৈঃশব্দ।


মৃত্যু

মানুষ মরে গেলে আর ফিরে আসেনা,এ কেমন প্রস্থান মানুষের ?
নদীর জল শুকিয়ে গেলেও বৃষ্টিতে ভরে নদী
পানকৌড়িরা আবার ফিরে আসে জলে,মানুষ কেনো ফেরেনা
আমি অমরত্ব চাই,কি ভাবে রুখবো মৃত্যু ?
কিভাবে ফিরাবো আযরাইলের মৃত্যু থাবার পবিত্র হাত,
প্রেমিকাও কেঁদে কেঁদে ফিরে পায় প্রেমিককে
বাতাস না থাকলেও ঝড় এসে বন্ধ করে দখিনের জানালা,
মানুষ মরে গেলে কেনো সে ফেরেনা।

এই যে আমি এখান থেকে একদিন চলে যাবো
আমার শোবার পালঙ্কও বেঁচে থাকবে অনেকদিন
আমার বসার চেয়ার,আমার পড়ার টেবিল,পুরু লেন্সের চশমা
আমার কবিতার খাতা,অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি,সব থাকবে
আমি কেন থাকতে পারবোনা-
আমি কেনো আর ফিরে আসতে পারবোনা ?

চাঁদ ডুবে গেলে চাঁদ ওঠে,জ্যোৎস্নায় ভাসে পৃথিবী
আকাশ থাকেনা খালি,শূন্যস্থান ভরে দেয় মেঘ এসে,
মানুষ মরে গেলে আর ফেরেনা,কেনো শূন্য হয়ে থাকে তার স্থান।







রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

রক্তমুখী নীলা

জ্যোতিষী হাওলাদারকে একবার হাত দেখিয়েছিলাম,
সে বলেছিলো নীলা পাথর নিতে, নীলা নাকি রক্তমুখী।
আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম,তার নামও ছিলো নীলা,                                                                               কিন্তু সে ছিলো পোড়ামূখী।এক যুবকের হাত ধরে সেই যে চলে গেলো,
তারপর আর আমার মুখো হয়নি।

চর্যাপদের হরিণী তুই

বসন্তের প্রথম বৃষ্টি,ফাল্গুনেরও প্রথম।এমনই এই সন্ধ্যারাতে বৃষ্টির দিনে কংক্রীটের শহরে আমি একা।এখানে অন্ধকারে সেই মায়াবী আধার নেই ।রাস্তার উপর লাইটপোস্ট গুলোতে ল্যাম্প জ্বলছে।ঘরেও প্রদীপ নেই। চোখ চেয়ে আছে প্রাচীন যুগে এক পাহাড়ি উপত্যাকার দিকে,সেই চর্যাপদের সময়ে।ওর নাম সবরী।নীচু জাতের মেয়ে।ডোম।নাচের মতো করে ছোট্ট ছোট পা ফেলে সে হাটতো,টিলায়,লতাগুল্মে,কখনো ঘাসফুলের উপর।আহা ! কি সুন্দর দেহ বল্লরী তার।বৃষ্টি হলেই স্বল্প বসনে সে বেরিয়ে পরতো। কাহ্ন'পা ওকে নিয়ে লেখে পদাবলী।চর্যাপদের হরিণী তুই ! আজকের এই বসন্তদিনের প্রথম বৃষ্টির সন্ধ্যায় তোকেই যে মনে পড়ছে।

হিরন্ময় সভ্যতা

মাঝে মাঝে এ কেমন আচড়ন তোমার
মনে হয় আমাকে তুমি চিনতে পারো না
মনে হয় প্রাচীন কেউ আমি,
মনে হয়ে তাম্র যুগের অচেনা একজন ।
মাঝে মাঝে তুমি এমন করো
নিষিদ্ধ হয়ে থাকি তোমার নিষিদ্ধ এলাকায়
যেখানে আমার প্রবেশাধিকার নেই।

আমি গড়তে চাই নতুন সভ্যতা এক-
অনার্য আর্য কিংবা দ্রাবিড় যেই থাক,
হিরন্ময় সেই সভ্যতায় ভালোবাসাই স্পর্ধিত হবে
যেখানে আচড়নগুলো হবে সব প্রেমের।

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

ফিনিক্স পাখি

প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে ফিনিক্স হল এক পবিত্র “আগুনপাখি”। এটি এমনই এক পবিত্র আগুনপাখি, যার জীবনচক্র আবর্তিত হয় হাজার বছর ধরে। মনোলোভা স্বর্ণের লেজ এবং লাল,গোলাপি ও নীল রঙের পালক দ্বারা আবৃত ময়ূরসদৃশ এই পাখির প্রকৃত অর্থে কোনো মৃত্যু নেই। হাজার বছর নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকতে পারে এরা। যমদূত আসার ঠিক আগেই ফিনিক্স পাখি নিজের বাসা নিজেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আর নির্মমভাবে দগ্ধ হয় এই পাখি এবং তার বাসার ভস্ম থেকেই জন্ম নেয় নতুন ডিম। প্রাণ পায় নতুন জীবনের, শুরু হয় আবারও জাতিস্মর ফিনিক্সের অবিনাশী যাত্রা।

হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে


কখন যেন প্রাণ জেগে ওঠে।পাহাড়-বাতাস কাঁপিয়ে জেগে ওঠে গান। সে গান শোনার শর্ত একটাই, প্রেম।সত্তর আশি'র দশকের কথা- যাঁরা সেই সময়ে কৈশোর পার হয়ে যৌবনের দোর গোড়ায় থমকে দাড়িয়েছিলেন, তাঁরা জানে এর মধ্যে নিহিত মর্মধ্বনিকে। ঐ সময়ে নির্মলেন্দু গুন,হেলাল হাফিজ ও জয় গোস্বামী'র কবিতার পংতি উদ্ধৃতি ব্যতিত তরুণ তরুণীদের প্রেম অসম্পূর্ণই থাকতো।


অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল– ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
– ’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।


( জয় গোস্বামীর ‘ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা?’ থেকে।)

ফিরে যাবো যমুনা তীরে

তোমরা দাঁঁড়াও,শোনো আমার কথা-
আমি ফিরে যাবো যমুনা তীরে
জগদীশ আমার জন্য নৌকা নিয়ে বসে আছে ঘাটে
মলিন ধুতি পড়ে হুক্কা টানছে জুড়ান মাঝি
ডিঙ্গি বেয়ে বৈঠা টেনে আসছে আমার গাঁয়ের আয়নাল মন্ডল।

দাঁড়াও তুমি.শোনো আমার কথা-
আমি ফিরে যাবো আমার গাঁয়ে,ওখানে আর সত্যেন দা নেই
কি অভিমানে চলে গেছে ওপারে পঞ্চান্ন বছর পরে
সাইফুলও নেই,আছে শুধু ওমর আর সামাদ মামা
ছোনগাছা বাজার বিরান হয়ে গেছে,বন্ধুরা কেউ নেই।

আমার একটি কথা শোনো-
আমার বাল্যবন্ধু লালচাঁদ, ও এখন আমার গাঁয়ের মসজিদের ইমাম
ওকে আমি নিস্পাপী মানি,সেই পবিত্র মানুষ-
আমার মরনের পর আমার জানাজার ইমামতি করবে ঐ লালচাঁদ'ই
ও যে আমার বাল্য্ সখা, প্রিয় বন্ধু আমার।

কোনো সুভাশীষ নেই

সোমা ব্যানার্জি তুমি বলেছিলে-
পূর্বমেঘের কাছে শুভাশীষ পাঠিয়ে দেবে
কতো মেঘ উড়ে উড়ে এসে জল হলো
সেই মেঘের সাথে সেই জলের সাথে
 তোমার কোনো সুভাশীষ নেই।

বলেছিলে গঙ্গা পারের শীতল হাওয়া পাঠিয়ে দিবে
ঈশাণ থেকে কতো বাতাস এলো,কতো ঝড় এলো
সেই বাতসের সাথে সেই ঝড়ের সাথে
গঙ্গার শীতল হাওয়ার কোনো স্নিগ্ধতা নেই।
                                                                                              

তোমার আছে শান্তি নিকেতন আমার আছে পতিসর
তোমার আছে চুরুলিয়া আমার কাছে নজরুল
তোমার আছে রামগিরি আমার আছে পূর্বমেঘ
তোমার আছে আবেগ আমার আছে মেঘ।

সোমা ব্যানার্জি-
 সেই মেঘের কাছে তোমার কোনো শুভাশীষ নেই।


শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭

আর একবার

চোখ বন্ধ হওয়ার আগে আর একবার দেখতে চাই
সেই মাঠ ঘাট হাওড় প্রান্তর,
গারোদহ নদী- সোনালী ধান ক্ষেত
যেখানে সুঘ্রাণ ছড়ায় কালি জিরা ধান -
পার ভাঙ্গা মাটির গন্ধ ভাসে যমুনার ঘোলা জলে।
বিস্ময়ে চেয়ে দেখতে মন চায় আর একবার
আবু সাঈদদের পুরানো আম গাছে মৌমাছির চাক
 আর আষাঢ়ের সেই রথযাত্রা উৎসব।
   

অপর পৃষ্ঠায়

সব চিঠিই আগুন জ্বেলে আমি পুড়ে ফেলেছিলাম।দুই একটা কোথাও রয়ে গিয়েছিলো।তেমনই একটি চিঠি পেলাম আজ অনেক পুরোনো বুক শেলফের বইয়ের ফাঁক থেকে।চিঠির অনেক অক্ষর অনেক শব্দ অস্পষ্ট হয়ে গেছে।পড়া যায়না ঠিক মতো।তবুও যতোটুকু পাঠোদ্ধার করতে পেরেছি,তাই এখানে উল্লেখ করছি। আজ থেকে অনেক বৎসর আগে চিঠিটি লিখেছিলো খাগড়াছড়ি থেকে লাবন্য চাকমা।

প্রিয় অমিত,
আমাদের কলেজ গ্রীষ্মের ছুটি হয়ে গেছে।ঘর থেকে বেশী বের হতে পারিনা।বাড়ীর সবাই আমার এতো কাছে কাছে থাকে যে,আমি তোমাকে ঠিকমতো চিঠিও লিখতে পারিনা।তোমার কথা মনে পড়ে আমাকে কাঁদতে হয়,সে কান্নাগুলোও অনেক সময় গোপনে কাঁদি।সালেহ আহমেদ দাদা খবর পাঠিয়েছে,পোস্ট অফিসে নাকি তোমার বেশ কয়েকটি চিঠি এসে রয়েছে। ভাবছি দু'একদিনের ভিতর পোস্ট অফিসে যাবো।যেয়ে তোমার চিঠি গুলো নিয়ে আসবো এবং আমারগুলো পোস্ট করে আসবো।
তোমার সাথে মনে হয় এ জীবনে আর দেখা হবেনা।পাহাড় খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে।প্রীতির লোকেরা আমাদের বাড়ী এসে ধমকি ধামকি দিচ্ছে।হয়তো সীমান্তের ওপারে চলে যেতে হতে পারে।ওখানে তো আরো গভীর অরণ্য।সেই অচেনা বন বাদার থেকে তোমাকে কি ভাবে চিঠি লিখবো ? তোমাকে চিঠি না লিখলে তুমিতো আমাকে ভুলে যাবে।তোমাকে কতোদিন বলেছিলাম,এই অভাগীকে এসে নিয়ে যাও।তুমি এলেনা।

তোমার জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।সে কান্না মিশে যায় চেঙ্গী নদীর জলে।কতো হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস গোলাবাড়ীর এই উপত্যাকায় মিলিয়ে গেছে।সেই সব দেখেছে খাগড়াছড়ির আকাশ,আর এই নির্জন পাহাড়ি উপত্যাকার পাখীরা।এই দেশ,এই পাহাড়,এই অরণ্য........ ( অপর পৃষ্ঠায়).

অপর পৃষ্ঠায় যেয়ে দেখি সব লেখা অস্পষ্ট আর ঝাপসা হয়ে গেছে।পড়া সম্ভব হয়নি।একদম নীচে নামটা শুধু পড়া গেলো। ......,লাবণ্য।

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

শূন্যতা

সেই শূন্য জায়গাতেই তোমাকে বারবার খুঁজতে চাই
যেখানে তুমি নেই
নিঃশ্বাসের বাতাস যেখানে ভারী হয়ে আসে
সেখানেই যেয়ে ঝরে পড়ি অসীম শূন্যতার।

স্বপ্ন বীজ

অন্ধকার পছন্দ করো,বুকের খাঁজে তাই তোমাকে রেখেছি
তা দেখে রাত্রিও হিংসা করে-
শরীরের ঘ্রান পেয়ে আহলাদী হয়ে ওঠো
আমিও তখন্ স্বপ্ন বীজ বুনি তোমার উর্বর মৃত্তিকায়।

পাখীদের বাসা

 উত্তরা'র রাস্তাগুলো ছিলো একসময় বন জঙ্কল।রাস্তার মধ্যে ছিলো অপরিকল্পিত গাছ গাছালি।আনিসুল হক মেয়র হয়ে আসার পরে রাস্তার সব জঙ্গল কেটে পরিস্কার করেছেন।রাস্তা গুলো এখন হয়ে উঠেছে প্রসস্ত। দু'পাশে সুন্দর ফুট ওয়্যার।পিচ ঢালা দৃস্টি নন্দন এই রাস্তায় চলতে এখন সবার ভালোই লাগে।

কোথায় যেনো পড়েছিলাম- আমেরিকায় একটা আবাসন প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।শেষ কাজটি করতে একটা গাছ কাটতে হবে।কিন্তু সেই মুহূর্তে একটা শকুন ঐ গাছে এসে বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে।ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে উড়ে যেতে শকুনের যতোদিন সময় লাগবে, তার জন্য আবাসন কর্তৃপক্ষা অপেক্ষা করেছিলো।

উত্তরার রাস্তাগুলো সুন্দর করতে যেয়ে- শতো শতো গাছ যে কাটা হলো,সেখানে একটিও কি পাখীর বাসা ছিলো না ?
গাছ কাটতে যেয়ে সেই সব কি খেয়াল করা হয়েছিলো ? উত্তর অবশ্যই- না।

বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭

কবি হতে চাই না

আমি কবি হওয়ার জন্য লিখিনা।আমি লিখি আমার মনের জন্যে।যে মন প্রতি সকালে আমায় সুপ্রভাত দেয়।আমার কষ্টরা আমার বুক ভারি করে রাখে।আর এই লেখার মধ্যেই কষ্ট ভুলে থাকি।বেঁচে থাকার প্রেরণাও এই লেখার মধ্যেই। সুনীলের মতো করে তাই বলতে ইচ্ছে করে--

“শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভূবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।'


 মানুষ মরে গেলে আকাশে তার আত্মা চলে যায়। আমি কবিতাকে ভালোবাসি,  এতো ভালবাসি যে- আমি মরে গেলে আমার আত্মা যেনো বাজ পাখীর মতো আকাশ থেকে নেমে আসে। এবং তা কোনো কবির বুকে যেনো গেঁথে যায়।যে কবি কবিতা লেখে। 

মাধবী এসেই বলে যাই

রফিক আজাদের কবিতার পংতির মতো- মাধবী এসেই বলে যাই।আমি বলি কোথায় যাবে ? সে বলে,'কোথায় নিয়ে যাবে ?' আজ আমরা বংশী নদীর পারে যাবো।ওখানে নদীর জল দেখবো,নৌকা দেখবো।গাছের ছায়ায় বসে থাকবো।মাধবী বলে- 'এই কাঠপোড়া রোদ্রের দুপুরে যাবে বংশী নদীর পারে ! আমার খিদে লেগেছে।আগে খাওয়াও, তারপর যাবো।' আমরা নীলক্ষেতের ভাই ভাই হোটেলে কাচকি মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নেই।তারপর চাঁন খাঁর পুল থেকে লোকাল বাসে উঠে সোজা চলে আসি সাভার বাজারে ।

বাস স্টান্ডের অদূরে দেখি গাঁধা টানা একটি ছোট টমটম দাড়িয়ে আছে।কোচোয়ানকে বলি, তোমার টমটম কি যাবে ?
কোচোয়ান:  কোথায় যাবেন স্যার ?
আমি:  রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ী।
কোচোয়ান:  আমি চিনিনা।
আমি:  ( মাধবীকে দেখিয়ে ) ওকে চেনো ?
কোচোয়ান:  না
আমি:  উনি হচ্ছে রাজা হরিশচন্দ্রের বড়ো মেয়ে। নাম: রাজকুমারী অনুদা ।
মাধবী:  তুুমি আমাদের বংশী নদীর তীরে নিয়ে চলো।
কোচোয়ান:  চলেন।

টমটম চলছে।মনে হচ্ছে এ যেন সাম্ভার নগরী। বারশত বছর আগে লাল পোড়ামাটির পথ ধরে আমরা চলছি বংশী নদীর তীরে।টমটমের মুখোমুখি আমি আর মাধবী বসে আছি।মাধবীকে রাজকুমারী অনুদার মতোই লাগছিলো।চুল হাওয়ায় উড়ছে।রোদ্র এসে পড়েছে ওর চোখে মুখে।ওড়না গলা থেকে দুই দিক থেকে বুুকের উপর দিয়ে সাপের মতো নীচে নেমে পড়েছে।ওকে খুব রোমান্টিক লাগছে।

আমাদের টমটম এসে থামে বংশী নদীর তীরে।কোচোয়ানকে বললাম- তুমি ঐ বটবৃক্ষ তলায় যেয়ে অপেক্ষা করো।আমরা ফিরবো দুই ঘন্টা পর।
কোচোয়ান:  স্যার, হরিশচন্দ্রের বাড়ী যাইবেন না।
আমি:  যাবো।বংশী নদীর হাওয়া খেয়ে আসি, তারপর যাবো।
কোচোয়ান:  হুজুর আপনার পরিচয়টা একটু দিবেন।
আমি : আমার নাম গোপীনাথ।আমি ময়নামতির মহারানীর পুত্র। রাজা হরিশচন্দ্রের হবু জামাতা।
কোচোয়ান:  জ্বী,আচ্ছা।

তখন বিকেলের রোদ।বংশী নদীর কূল ধরে আমরা হেটে হেটে চলে যাই আরো সামনের দিকে।নদীর তীরে একটি জারুল গাছের নীচে দুজন ঘাসের উপর বসে পড়ি। হেমন্তের বংশী নদী।নদীর জল অর্ধেক হয়ে আছে।দু'একটা নৌকা এলোমলো ভাবে চলছে।একটু পর পর বংশী নদীর শীতল হাওয়া আমাদের শরীরে এসে লাগছিলো। চারদিকে জন মানবহীন।কেমন সুনসান নিরবতা ।
মাধবী:  আমার ভয় লাগছে।
আমি:  তাহলে চলে যাবে ?
মাধবী:  না।যাবো না।
আমি:  কেন যাবে না ?
মাধবী:  ভালো লাগছে।

নদীর কূল থেকে একটু দূরে একটি পরিত্যক্ত নাট মন্দির দেখতে পাই।আমরা আস্তে আস্তে ঐ নাট মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাই।দু'জন সন্তর্পণে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়ি।ভিতরে ঢুকে মন্দির দেখে বিস্মিত হই।কি অদ্ভূত কারুকার্যখচিত মন্দির। দেখি ভিতরে রাজা হরিশচন্দ্র ও রানী কর্ণবতী প্রার্থনায় রত।পাশে একজন পুরোহিত জপমালা জপছে।একটু পর রাজা রানীর প্রার্থনা শেষ হয়।পিছনে মুখ ফিরিয়েই তারা আমাদের দেখতেে পায়।
রানী:  মা অনুদা তুমি এসেছো।
রাজা:  বাবা গোপীনাথ তুমি এসেছো।
রাজা হরিশচন্দ্র পুরোহিতকে কহিলেন- এদের ধর্ম ও ভগবান মতে বিবাহের ব্যবস্থা করো।পুরোহিত তাই করিলেন।


মন্দিরের সাথেই স্বর্ণকূটিেরের মতো একটি ছোট কক্ষে আমাদের প্রবেশ করানো হলো। রানী মা কহিলেন- তোমরা এখানে বিশ্রাম নাও।এই বলে রানী মা কক্ষের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে চলে গেলেন।আমরা দুজন পালঙ্কের উপর যেয়ে বসলাম।
আমি :   অনুদা,প্রিয়সী আমার- এই ক্ষণ কেমন লাগছে ?
অনুদা:  জ্বী জাহাপনা, এই ক্ষণটির জন্য এতোকাল অপেক্ষায় ছিলাম।
আমি:  এসো আরো কাছে এসো।
অনুদা:  জ্বী, আসছি।
আমি:  এই ক্ষণ শুধু তোমার আমার !

তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।চোখ মেলে দেখি চারদিকে কেমন যেনো অন্ধকার।সবকিছুই অপরিচীত লাগছে। চেয়ে দেখি- আমি আর মাধবী জীর্ণ এই নাট মন্দিরের মেঝেতে পাশাপাশি শুয়ে আছি।বাইরে থেকে কোচোয়ান ব্যাটা ডাকছে- 'হুজুর ! হূজুর ! গোপীনাথ স্যার ! আর কতোক্ষণ দেরী হইবে ? যাইবেন না !