শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

মেহেরজান

অপ্রেমে দূরে রেখেছিলাম তাকে।প্রেমেই তাকে কাছে নিয়ে আসে।এতো কাছে যে- ওর চোখের মায়া একদিন আমার চাহনীতে না পেলে আমার মন খারাপ হয়ে যেতো।আমার সমস্ত চৈতন্যে,সমস্ত অবচৈতন্যে তার ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই।
মেহেরজানকে প্রথম দেখে বিমুুগ্ধ হয়েছিলাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে।তখন সেখানে এতো অট্রালিকা ছিলো না।ওয়াইজ ঘাট থেকে হেটে হেটে আরো একটু পশ্চিমে,নদীর তীরে একটা ভাঙ্গা ইটের ঢিপির উপর দু'জন বসেছিলাম।সূর্য তখন অস্তমিত।নদীতে ভেসে থাকা লাল আভার ঝিলিক মেহেরজানের মুখে এসে পড়েছিলো। আর প্রথম বিমুগ্ধ হওয়া সেখানেই।

সেদিন ঝুনু আপা ক্লাশে আসেনি। তাই ক্লাশ আর হলোনা। তবলচি কিছুক্ষণ একাকী তবলায় তাল দিলো।কিন্তু সে নাচ আর কারো করা হলো না। তারপর মর্নিং শো'তে স্টার সিনেমা হলে আমি আর মেহেরজান যেয়ে ঢুকে পড়ি।সুভাষ দত্তের বসুন্ধরা।সিনেমা কি দেখবো ? আমরা যেখানে বসেছিলাম,তার আশে পাশে ওয়াইজ ঘাটের এক গাদা Out of Bond এর মেয়েরা বসেছিলো।উদ্ভট সাঁজ,আর পোষাক পরিহিত ঐ সব বনিতারা অকারণে হাসি আর শিষ দিচ্ছিলো। বিরতির সময় আমরা বের হয়ে চলে আসি।

আর একদিন আহসান মঞ্জিলে গিয়েছিলাম।প্রকোষ্ঠের পর প্রকোষ্ঠ ঘুরছিলাম।একটি রূম আছে নবাবদের পানশালা হবে হয়তো।দেয়ালে টানানো একজন নর্তকীর তৈলচিত্র দেখতে পাই।আমি মেহেরজানকে বলি- তুমিও তো নাচ শিখছো। নবাবরা থাকলে এই রকমই নর্তকী হতে পারতে।
মেহেরজান:   তুমি কি ঐ মেয়ের চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারছো ?
আমি:     যে মাদকতা আমি দেখছি ওর চোখে মুখে,সেখানে কেবল আনন্দই দেখতে পাচ্ছি।
মেহেরজান:   তুমি দেখেছো কেবল ওর আনন্দয়ী দুটি চোখ। আমি দেখেছি ওর চোখের পিছনে- যেখানে অনেক বেদনার অশ্রু জমে আছে। যা দেখাও যায়না,ঝরেও পড়েনা।

আমি দেখলাম, মেহেরজানের চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে।হঠাৎ মনে হলো ঐ রুমের মধ্যে ঘুঙ্গুরের শব্দ হচ্ছে।তবলচি বাজাচ্ছে তবলা। শরাব খা্চ্ছি আমি।মেহেরজান নাচছে নুপুর পায়ে। আমি তো মেহেরজানের চোখে কোনো দুঃখ দেখছিনা,দেখছি আনন্দ।শরাব পান করছি। প্রিয়া আজ মেহেরজান।হঠাৎ মনে হলো,পাশের প্রকোষ্ঠ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মনে হলো কোনো একজন নর্তকী আথবা যৌনদাসী কাঁদছে। যখন ঘোর কাটে তখন দেখতে পেলাম- আমি মেহেরজানের চুলে মুখ লাগিয়ে চুলের সুবাস নিচ্ছি।মেহেরজান আমার বুকে জড়িয়ে আছে।

তারপর অনেক কথা।কতো ভালোবাসা হলো দুজনের।কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সেই প্রেম কালস্রোতের উল্টো দিকে ভাসিয়ে দিলো।প্রেমেই একদিন মেহেরজানকে কাছে টেনে এনেছিলো, আবার প্রেমেই তাকে দূরে রেখে দিলাম।যার চোখের মায়া  দিয়ে আমাকে একদিন না দেখলে সারাদিন  মন খারাপ লাগতো, তাকেই নয়নের আড়াল করে রাখলাম।মেহেরজানকে আমার সমস্ত চৈতন্যে,সমস্ত অবচৈতন্যে ভুলে যেতে থাকি,কেন ভুলে যেতে থাকি- সে দীর্ঘশ্বাশের কথা আরেকদিন বলবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন