মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ক্রান্তিকাল

আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর প্রথমেই হ্যাপিকে ইউটিউবে একটি গান শোনাই । গানটি দ্বৈত কন্ঠে গেয়েছিলো একজন নবীন মেয়ে শিল্পী এবং ওর বাবা'র বয়সের মতো এক লোক।দু'জনেই খুব দরদ দিয়ে গানটি গাচ্ছিলো।গানটি গাওয়া যখন শেষ হয়,তখন দেখি,হ্যাপি'র দু'চোখ বে্ঁয়ে জল ঝরে পড়ছে। ভেজা কন্ঠে ও বলছিলো,তুমি কি এই গানের অর্থ আমাকে একটু  বুঝিয়ে দেবে ? আমি বললাম-এই গানটির অর্থ এইটাই যে- 'গানটি তোমাকে কাঁদাচ্ছে, তোমার চোখে অশ্রু ঝরাচ্ছে।'
'
এখানে সেই গানটির একটি Link দিলাম।আসুন  আর একবার গানটি আমরা শুনে নেই-

https://www.youtube.com/watch?v=tmGRkA9Drp0

যারা ইউটিউবে গানটি শুনতে পাচ্ছেননা, তাদের জন্য কথাগুলো:-

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর ॥
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে ॥
গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে ॥
ধরণী'পরে ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা
ফুলপল্লব-গীতবন্ধ-সুন্দর-বরনে ॥
বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে ॥

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

এতো নৈঃশব্দ চাইনি

এতো নৈঃশব্দ কখনো চাইনি
এমন শব্দহীন নিঝুম রাত
 বলেছিলাম আমার হাত ধরতে
তুমি জড়িয়ে দিলে তোমার বুক,
এতো স্বপ্ন আমি দেখিনি কখনো
বলেছিলাম পাশে এসে বসতে
তুমি জড়িয়ে থাকলে সারারাত।

একবিন্দু প্রাণ

১.আমি আমার কবিতার মানুষদের কা্ঁদাতে চাইনা,
মানুষ কাঁদুক এটা আমি চাইনা।

২. এই সেদিনও শীতের সকালে রোদ্র খুঁজেছিলাম,
আজকের এই তপ্ত ফাল্গুনের খাঁখাঁ দুপুরে খুঁজি শীতল ছায়া।

৩.বাগানে এসে বসেছিলো একটি ছোট্র প্রজাপতি,
কি সুন্দর দেখতে ও ! কি সুন্দর একবিন্দু প্রাণ !



সময় হয় নাই

আমি আমার শরীরের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলি,তারপরও কি আমাকে যেতে হবে ?                                        যদি বাতাস এসে আমাকে নিয়ে যেতে চায়,যাবে কি তুমি আমার সাথে ?
 সেদিন তুমি আমায় কানে কানে বলেছিলে-
'আমার সময় হয় নাই,সময় হয় নাই।'

তুমি যেনো নদী

তুমি যেনো নদী, জলে ভরে থাকো,
আবার কখনো বাঁকও নাও-
তুমি চাও আমি মাছরাঙ্গা হই
শিকার করি চঞ্চু ডুবিয়ে জলে।
জল শুকে গেলে বালির উপর শুয়ে থাকো,
তখন তুমি বলো- এসো রোদ্র তাপ নাও। 

রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কুসুম

একটি রিসার্স প্রজেক্টে কাজ করতে কুসুম ঢাকা এসেছিলো ।সাময়িক চাকুরী।ও আমার সহকর্মী ছিলো।গত সপ্তাহে কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে গেছে। তাই চাকুরী আর নেই। আজ সে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।জানালার পাশে বসে থাকা কুসুমের বিষন্ন চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে । ট্রেনের চাকার খট্ খট্ কর্কশ আওয়াজ দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে সামনের সমান্তরাল পথের দিকে।কুসুমের চোখ আর দেখা গেলোনা।এই শহর ছেড়ে কুসুম চলে গেলো।

কতোক্ষণ প্লাটফরমে একাকী হাটছিলাম।কেমন যেনো উদাস লাগছিলো।পাশে অদূরে একটি চা'র দোকানে গিয়ে বসি।এক কাপ লাল চা খাই।তারপর সিগারেট ধরাই।পাশে কেউ ছিলোনা।ধূয়াগুলো মিলিয়ে দিচ্ছিলাম- শুন্য প্লাটফরমের দিকে।

স্টেশন থেকে পথে নেমে পড়ি।প্রখর রোদ্রে হেটে হেটেই মুগদাপাড়ায় মেসে চলে আসি।মনটা ভালো লাগছিলোনা।বিছানায় সোজা শুয়ে পড়ি।টেবিলের উপর রাখা ডাইরীটার উপর চোখ যায়।একবার প্রজেক্টের কাজে নেত্রকোনা'র বারোহাট্রা গিয়েছিলাম।কংস নদীর পাড়ে এক নিরিবিলিতে আমার ডায়েরীটা নিয়ে কুসুম লিখেছিলো-
'তুমি আমাকে পূর্ণ করো।আমাকে পূর্ণ করবেনা অন্য কেউ।আমাকে তুমি স্বপ্ন দেখাও। যে স্বপ্ন ভাঙ্গতে পারবেনা কেউ।আমি বসে থাকি তোমার পথের দিকে।তোমার সাথে পথ চলবো।,সে পথ চলা বন্ধ করতে পারবেনা কেউ।আজকের এই কংস নদীর জলকে সামনে রেখে বলছি- আমি তোমাকে ভালোবাসি।'এই ভালোবাসাও কেড়ে নিতে পারবেনা কেউ।'

একদিন দুইদিন যায়।সময় কাটতে চায়না।সব চেনা পথগুলো ফাঁকা ফাঁকা লাগে।দুটো টিউশনী করি।বিকেল হলে একাকী স্টেশনের প্লাটফরমে ঘুরে বেড়াই।কখনো অসময়ে ঘুমিয়ে থাকি।কখনো সারারাত জেগে থাকি।মাঝে মাঝে ভাবি,কুসুম আমার কি না হতে পারতো।ওকে কেন যেতে দিলাম।রেখে দিতাম আমার উদ্বাস্ত জীবনের কাছে।
                                                                                                                                                       একটি কোম্পানীতে পণ্য মার্কেটিং-এর চাকুরী পাই।প্রথম দিনেই সহকর্মী মালতী নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।যেনো কুসুম। সেই চোখ,সেই চুল,সেই স্মিত হাসি।সেই ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠা। সেই পুরানো প্রেম ফিরে পাওয়া।কুসুমকে নিয়ে যে পথগুলো দিয়ে হেটেছিলাম,সে পথ দিয়েই মালতীকে নিয়ে হাটি। পার্কে যে বেঞ্চে কুসুমকে নিয়ে বসে থেকেছি সেই বেঞ্চেই মালতীকে নিয়ে বসে থাকি।মালতীর ভালোবাসাগুলোও কুসুমের মতোই।সেই একই শরীরের গন্ধ,আলিঙ্গনের উষ্ণতা একই,চুম্বনের মাধূর্যও একই।



এক অগ্রহায়ানে মালতী আর আমার বিয়ের সানাই বেজে ওঠে। আমার পরনে শেরওয়ানী,মাথায় কারুকার্য খচিত টুপি,ওদিকে মালতীর পরনে লাল বেনারশী শাড়ি।সিঁথিতে টিকলী বাঁধা।গালে কপালে আবির মাখা সাঁজ।যখন আমার পাশে মালতীকে বসানো হলো,তথন একবার তাকালাম মালতীর দিকে। দেখি এ যেনো সেই কুসুম।সেই মায়াবী চোখ,সেই আনত ললাট। চারদিকে কতো আনন্দ, কতো হৈহুল্লুর, কতো গান বাজচ্ছিলো । সব গান ছাপিয়ে এই গানটি কানে বাজছিলো:- ''প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে। চারি দিকে হাসিরাশি, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে।''





শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

পরিশ্রান্ত যুবক

বিষাদের দুয়ার খুলে অপেক্ষা করছে
পরিশ্রান্ত এক যুবক
জীর্ণকায় ছাদ থেকে ক্লান্তি ঝরে পড়ছে,

যুবক প্রেম চেয়েছিলো প্রিয় প্রেমিকার কাছে
 সে এখন অন্য আকাশ                                                                                      
কার কাছে পাবে যুবক সেই নির্মল প্রেম ?                                                                                                
একাকী পরিশ্রান্ত যুবক বসে আছে নির্লিপ্তহীন -
বিষাদের দুয়ার খুলে সে অপেক্ষা করছে
সুন্দর প্রজননের জন্য পবিত্র কোনো নারীর।

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

Woman

অনেক আগে ইউরোপের একটি দেশে ছবির এই লোকটিকে না খেয়ে মৃত্যুর শাস্তি দেওয়া হয়। লোকটিকে কারাগারে রাখা হয় বন্দী করে। তার শাস্তির ধরন ছিলো এমন,যতোদিন না তার মৃত্য হয়- ততোদিন তাকে না খেয়েই থাকতে হবে। লোকটির একমাত্র কন্যা বাবাকে দেখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানায়।অনুরোধক্রমে প্রতিদিন একবার করে দেখার অনুমতি পায় মেয়েটি। প্রতিদিন দেখা করার আগে মেয়েটিকে ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়া হতো যাতে মেয়েটি বাবার জন্য কোনো প্রকার খাবার অথবা অন্য কোনো জিনিস নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু প্রতিদিন বাবার এ অবস্থা দেখে মেয়েটি আর সহ্য করতে পারছিলো না। তাই সে নিজের বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিরুপায় হয়ে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতে লাগলো।এদিকে সপ্তাহ পেরিয়ে মাস গড়িয়ে যায় তবুও লোকটির মৃত্যু হচ্ছে না।এতে করে প্রহরীদের মনে সন্দেহ হলো লোকটি কি করে এখনো জীবিত থাকে । তাই পরদিন এক প্রহরী মেয়েটির পিছু নেয় এবং বাবাকে নিজের বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় মেয়েটিকে ধরে ফেলে। এ বিষয়ের উপর আবার মামলা মোকদ্দমা হয়। এমন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পরে ইউরোপের আনাচে-কানাচে। বৈঠক হয় মন্ত্রী থেকে সরকার পর্যায়ে। অবশেষে সরকার আইনের চক্ষু বন্ধ করে, বিবেকের চক্ষু খুলে এ বিষয়ের উপর বিচার করে রায় দেন। এতে পিতা ও কন্যা দুজনকেই মুক্ত করে দেওয়া হয়।

নারী যে যেই রূপেই হোকনা কেন সে ‘মা’ না হয় স্ত্রী, অথবা বোন। এরা প্রতিটি রূপেই ভালবাসার এক অতুলনীয় প্রতীক। তাই নারীকে ভালবাসুন ও সম্মান করুন।


তথ্য ও ঘটনা:  একটি বিদেশী ই-ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া,
ছবি: চিত্রশিল্পী ‘মুরলির’ চিত্রায়ন করা একটি আর্ট।





চুষে নিচ্ছি রক্তবিন্দু

 নি:সঙ্গ নাভি দেখি, নিসর্গ শোভা দেখি, চুপচাপ পুষ্পবৃন্ত দেখি,  তৃণভূমি দেখি ।  দুহাতে ধরেছি অরণ্য, মুঠোয় নিয়েছি এর সুগন্ধ । ছিঁড়ে যাচ্ছে মায়ার টান। উল্টে যাচ্ছে যতিচিহ্ন। ঠোঁটের স্পর্শে জেগেছে প্রেম ,জ্বলছে বহ্নিশিখা। ছিনিয়ে নিচ্ছি তার শেষ আলোটুকু, নিঃশেষ হচ্ছে স্বেদ কনিকা,। 

বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সুপ্রভাত

কাল রাতে কবিতা লিখতে যেয়ে যে চোখের কথা লিখছিলাম, সে চোখ তোমারই ছিলো। যে চুলের কথা বলছিলাম,.সে চুলেও তোমারই গন্ধ পাচ্ছিছিলাম।আজ সকালে জানালা খুলে যে বাতাস প্রথম গায়ে লাগলো.সেখানেও তোমারই ছোঁয়া। সবাইকে সুপ্রভাত।

বৈরাগ্যই শান্তি

সংসার আর ভালো লাগেনা। বৈরাগ্যই শান্তি।এসো এই বসন্তেই আমরা পথে বেরিয়ে পড়ি।সামনের বসন্ত নাও পেতে পারি। বাকী জীবন পথে প্রান্তরে, আশ্রম আর আখড়ায় কাটিয়ে দেই। 

নিখাদ

পোড়ামাটির প্রতিমার গন্ধ ছিলো তোমার শরীরে
কাঁচা মাটি ছানতে যেয়ে পেয়েছিলাম তার স্বাদ
পুড়েছো আর জ্বলেছো ভালোবাসায় হয়েছো নিখাদ।




আদি পুরুষ

কেমন ছিলো তাম্র আর প্রস্তুর যুগের মানুষেরা।শ্রাবস্তী,বিদর্ভ নগরই বা ছিলো কোথায় ? মন চায় উজ্জয়িনী তীরে বনে বাদারে ঘুরে বেড়াতে। ঘুরতে ঘুরতে যদি আদি পুরুষের কারো'র দেখা পাই। দেখতে পাই যদি বানর আর ওরাংওটাং এর। বলতাম- তোমরা কেন এখনো আদি রূপেই রয়ে গেলে। কি পাপ করেছিলে যে- ঈশ্বর তোমাদের উপর বিবর্তনবাদ প্রয়োগ করেনি।নাকি পাপী আমরাই- হিংসা পাপ যুদ্ধ আর ধর্মান্ধে জড়িয়ে গেছি। আমাদের চেয়ে সেই আদি রূপের বানর আর ওরাংওটাং'রাই উত্তম।

সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নদীর মৃত্যু

পদ্মা পাড় থেকে ইনবক্সে একটি বার্তা পেলাম
লিখেছে সাহানা জোয়ার্দার-

হার্ডিন্ ব্রীজের নীচে জল নেই, ঢেউ নেই,
 চরাচর জুড়ে শুকনো কাশবন,
 যেনো শ্মশাণ ? চিতায় ছাই উড়ছে !
কুবের মাঝি নোঙ্গর উঠিয়ে তাকিয়ে আছে
গাঙ্গের দিকে, পাশে বসে মালা কাঁদছে।

সাহানা আরো লিখেছে-
 দাদাভাই,
 তুমি এসে দেখে যাও নদীর মৃত্যু।                                                                                                                                      

জেগে উঠুক আমার প্রাণ

তুমি শুধু একবার খুলে দাও হৃদয়ের কপাট
এই উচ্ছল যুবকের সামনে,বন্ধ করোনা দরজা
একবার খুলে দাও লজ্জার অবগুন্ঠণ।

তোমাকে দেখাবো কিভাবে ভালোবাসতে হয়
সব তছনছ করে,সব ভেঙ্গেচুরে গড়তে হয় শরীর শিল্প
হৃদয় ভাঙ্গতে হয় হৃদয়ের গহীনে।

আমি হাটু মুড়ে দু'হাতে পেতে চাই স্বর্ণরেণুর স্পর্শ
ভুলে যাওয়া ঢের ভালো স্মৃতি কাতর যন্ত্রণা
তুমি এই উন্মূল যুবকের বুকে মাথা রাখো
তোমার সব মনি কাঞ্চন বিলিয়ে দাও নিভৃতে।

তোমাকে পেতে চাই জলের মতো,নদীর মতো
তোমার অন্তহীন স্পর্শে জেগে উঠুক আমার প্রাণ। 

'র' রহস্য

আমার ছোটো মেয়েকে গতকাল বাংলা পড়াচ্ছিলাম।সে আগাগোড়া বাংলাতে কাঁচা।সিক্স ক্লাশে পড়ে,কিনতু এখনো তাকে মাঝে মাঝে বর্ণমালা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়।গতকাল পড়াতে যেয়ে 'আষাঢ়' শব্দটি এসে যায়।আমাকে সে পরপর দুইটি প্রশ্ন করে: বাবা, এতোগুলো 'র' কেনো? 'র' 'ড়' 'ঢ়' ।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: 'আষাঢ়' লিখতে 'র' না হয়ে 'ঢ়' হলো কেনো ?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম।ডঃ রফিকুল ইসলাম স্যার ও ডঃ মনসুর মুসা স্যার আমাদের ভাষা তত্ত্ব ও ধ্বনি তত্ত্ব পড়িয়েছেন।আমি মেয়েকে অনেক পান্ডিত্য আর তাত্ত্বিকভাবে ওর প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে পারতাম।কিন্তু আমি সেদিকে গেলাম না।ওসব বুঝবেও না সে।আমি শুধু বললাম- মামনি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্ল্যাহ নামে অনেক বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা এগুলো অনুমোদন করে গেছেন। তোমাকে এইভাবেই এসব পড়তে ও লিখতে হবে। তুমি বড়ো হও- তখন বুঝতে পারবে, 'র' এর রহস্য।

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বলো- ভালোবাসি

একবার ভালোবাসবার চেস্টা করো আমায়
শুধু একবার-
পৃথিবীর দু'টো সুন্দর যেনো ক্লেদের না হয়,
আমার চৈতন্য জুড়ে পান্না চুনি রাঙ্গা হয়েছে,
আকাশের চারদিকে আলো জ্বালাতে যেয়ে
সন্ধ্যা মালতির দিকে চেয়ে বলেছি
তুমি সুন্দর-
আমার সমস্ত অহংকার দিয়ে এই বিশ্ব জগতে
তোমাকে দিয়েছি অমরত্বের আসন,
যদি ভালো না বাসো অস্তিত্ব মিশবে নিঃসঙ্গতায়
ধূলো হয়ে যাবো কবরের,
তাই একটিবার বলো- ভালোবাসি।

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

লক্ষ্মীজান

নতুন বিয়ে করে প্রথম গ্রামের বাড়ী গিয়েছি।তখন আষাঢ়ের প্রথম সময়কাল।তখনো বর্ষার জল খাল বিলে আসেনি।কিন্তু প্রমত্ত যমুনা ফুলে ফেঁপে উঠেছে।নতুন বউয়ের ইচ্ছা হলো যমুনা নদী দেখবার।

ভাটপিয়ারী আমার মামাদের গ্রাম।মামার বাড়ীর পাশ দিয়ে যমুনা বয়ে চলেছে। হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গে  তখন ধবল মেঘ পুঞ্জের ঘনঘটা, জিমা ইয়ংজং হিমবাহে তখন হিমেল হাওয়া।মানস সরোবরের উত্তাল তরঙ্গমালা ব্রহ্মপুত্র হয়ে যমুনাকেও উত্তাল করে তুলেছে। 

আমরা দু'জন মামা বাড়ীতে।সেদিন ছিলো পূর্ণিমার সন্ধ্যা রাত।বাড়ীর সামনে বাঁশ ঝাড়ের অর্ধেক ভেঙ্গে গেছে নদীতে।পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলছে যমুনার জলে।আমরা নদীর খুব কাছে চলে যাই।কুলে উচুঁ মাটির ঢিপির ঘাসের উপর দুজন যেয়ে বসি। থর থর করে নদীর জলের শব্দ হচ্ছে।আশে পাশে থেকে পার ভেঙ্গে পডছে জলে।এক মোহনীয় স্রোতের শব্দে ভাসছে যমুনা। সন্ধ্যার জ্যোৎস্নায় কেঁপে ওঠে আমাদের হৃদয়।মনে হচ্ছে হিমালয়ের গিরি শৃঙ্গ থেকে জল ঝরছে মানস সরোবরে।

পাগল কাড়া চাঁদের আলোয় দেখলাম ওর মুখ।স্নিগ্ধ মায়াবী এক হাসি দেখতে পেলাম সে মুখে।আমার হাত কখন সে ছেড়ে দিয়েছিলো,জানি নাই।মুহূর্তেই পার ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাই।মাটি ধ্বসে পড়া শব্দের সাথে যমুনার জল ঝলসিয়ে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ।পাশে ফিরে দেখি সে নেই।প্রমত্তা যমুনার জল তাকে ভেসে নিয়ে গেছে।

আজ থেকে অনেক বছর আগে আমার ছোটো ফুপু লক্ষ্মীজান'কে ঠিক এমনি এক পূর্ণিমা রাতে প্রমত্তা যমুনা কেড়ে নিয়ে গিয়েছিলো।এটি তারই একটি স্টাটাস রূপ।

কিক্ আউট

Bela Winter আমার আমেরিকান ফেস বুক বান্ধবী।ওর ওয়ালে যেয়ে এই স্টাটাসটি দেখলাম।যার বাংলা করলে এই রকম দাড়ায়- ঐ সব এক্সপায়ার্ ট্রিক দিয়ে আমাকে পটাতে এসোনা। আমাকে পটাতে হলে আরো শানিতো ট্রিক দরকার। যা তোমার নেই। তাই তোমাকে কিক্ আউট করলাম। ্

স্বপ্ন

-  রাত অনেক হয়েছে এখন তুমি কি চাও ?
- ঘুম।
- ঘুমিয়ে গেলে তো স্বপ্ন আসবে,                                                                                                                         - স্বপ্নটাই আসুক,আমার স্বপ্ন তো তুমি।

জলে ভাসি

 হোয়াটস্ আপে এই ম্যাসেজটি পাঠায় একটি মেয়ে।
তোমার ফেসবুকে স্টাটাসে দেখলাম- আমার চিঠিগুলো দিয়ে কাগজের নৌকা বানিয়ে বালু নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছো।আর আমিও সেই থেকে জলে ভাসছি।আমাকে ভাসিয়ে এরপরে তূমি কাকে কয়টা চিঠি লিখেছো ? সেও তো তোমার চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে একদিন জলে ভাসিয়ে দেবে,তখনতো তুমি ভাসতে ভাসতে আমার কাছেই চলে আসবে।

প্রেমহীন এক বৌস্টুমী

তুমি এতো সুন্দরী মেয়ে
যেনো একালের রাই বিনোদনী
কিন্তু প্রেমটাই করতে পারলেনা।
ফিগারটাতো ছিলো দারুণ হ্যান্ডসাম
একটার পর একটা বিয়েতো করতে পারতে
কিন্তু একটাও করলেনা।
আমি বাজিয়েছিলাম কৃষ্ণের বাঁশি
কিন্তু সেই সুর তুমি কানে নিলেনা
তুমি হয়ে রইলে এক বৌস্টুমী
কোনো পুরুষের হৃদয় খুন করে
হৃদয় হন্তাকারিণীও হতে পারলেনা।

সেই সব বসন্ত সময়

কিশোর সময়ের বসন্ত কথা।কি এক অনাস্বিত ফুলের নেশা ছিলো তখন।উদ্ধত উল্কার মতো স্বপ্ন সোয়ারী হয়ে ছুটে যেতাম দিগন্তের দিকে।ঘামে ভেজা সার্ট খুলে সৈয়দ আলীর বাড়ীর ভিটায় শিমুল তলায় দাড়িয়ে থাকতাম।গন্ধ নিতাম শিমুলের। তখন স্বপ্নেরা ছিলো নিষ্পাপ। বাউলের গান শুনেছি।রাখালিয়া জারি শুনেছি। ইচ্ছে হয় আবার ছুটে যাই সেখানে- সেই শিমুল তলায়। কিন্তু সে ছায়া কি আর সেখানে আছে ? আছে কি দিগন্ত জোড়া সেই নীল আকাশ ? নাকি অনেক বসন্তের তপ্ত হাওয়ায় সবই লুপ্ত হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শাঁখের করাত

ঘর থেকে বাইরে বের হলে বউ ফোন করে আমার খোঁজ খবর রাখে।কোথায় আছি, কেমন আছি,কি করছি।একদিন অফিসে অধস্তন একটি সুন্দরী মেয়েকে সেদিনের কাজের Assignment দিচ্ছিলাম।মেয়েটি আমার টেবিলের সামনে বসা।কাঁচের চুড়ির টুংটাং শব্দের মতো দু'জন কাজের ফাঁকে একটু খাসগল্পও করছিলাম।In this time বউয়ের ফোন-
বউ:   হ্যালো জানু,কি করছো ?
আমি  এই কাজ করছি।
বউ:  খুব ব্যস্ত বুঝি ?
আমি: এই একটু আধটু।

আমি আস্তে আস্তে মেউ মেউ করে কথা বলছি বুঝে সে বলছে-
বউ:  তোমার সামনে কি কেউ বসা ?
আমি:  হে।
বউ:  ছেলে না মেয়ে ?
আমি:  পরের টা।
বউ:  দেখতে সুন্দরী ?
আমি: তোমার মতো না।
বউ:  আমি ভিডিও চ্যাট অন্ করছি, ওকে একটু দেখাবে।

আমি লাইন দেই কেটে।একটু পরে ইনবক্সে ম্যাসেজ পেলাম-
'সন্ধ্যায় বাড়ী আসো, আজ রাতে তোমাকে শাঁখের করাতে কাটবো।'

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

চলে গেলে চলে যাবি

চাল নেই চুলো নেই ছাদ নেই গাছতলাও নেই
খোলা আকাশ দেখি-
কি সুন্দর তারা ঝরে পড়া দেখি
তুই এই সবের মধ্যে থাকলে থাকতে পারিস
না হলে চলে যাবি।

বুক চিন চিন করবে,সিগারেট খাবো একটু বেশী
তারা গুনবো রাতভোর
ঘাসের স্নিগ্ধতায় ঘুম পাবে
তোকে মনে পড়লে পড়বে,তারপরেও
তুই চলে গেলে- চলে যাবি।

তুই চলে গেলে একা লাগবে
ফার্মেসীতে আসা যাওয়া বাড়বে
না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকবো
উদ্বাস্তু বাড়ীর চারদিকে জোনাক জ্বলবে
 তারপরেও- তুই চলে গেলে- চলে যাবি।

যীশু কন্যা

সে ছিলো বাবার আদরের মেয়ে।বাবা ছিলো অশিক্ষিত এক গায়েন।বাবার মুখের গান শুনতে শুনতে সে বড়ো হয়।বাবার গাওয়া সব গান সে তার কণ্ঠে ধারণ করে।মেয়েটির বয়স যখন বারো,তখন ওর বাবা মারা যায়।এরপর এই বালিকাই গান গেয়ে মা'র সংসারের খরচ নির্বাহ করে।

তখন ১৯৭১ সাল।ময়মনসিংহ দূর্গাপুর অঞ্চলে সীমান্তবর্তী একটি পাহাড়ী গ্রাম।সেদিন সেই গ্রামে একটি নতুন গির্জা উদ্বোধন হবে।সেই অনুষ্ঠানে মেয়েটি গান গাবে।গান সে শুরুও করেছিলো।হঠাৎ পাকিস্তানী মিলেটারী সেখানে এসে উপস্হিত হয়।এবং অতর্কিত গুলি চালাতে থাকে।অনেক লোক মারা যায়।কিছু লোক এদিক সেদিক পালিয়েও যায়।মেয়েটি তার গান গাওয়া বন্ধ করেছিলো না। ভেবেছিলো তার গান শুনে মিলেটারীরা গুলি চালাবেনা। ওরা ওর গান শুনেওছিলো-,কিন্তু গণহত্যা বন্ধ করেনি।

 হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করে পাকিস্তানী সৈ্ন্যরা সেখান থেকে চলে যায়।আশে পাশে থেকে পালানো মানুষগুলো ফিরে আসতে থাকে।গির্জা প্রাঙ্গনে অসংখ্য লাশ তারা পড়ে থাকতে দেখতে পায়।মেয়েটির মা মেয়ের খোঁজে গি্র্জার ভিতর প্রবেশ করে।সে দেখতে পায়,তার মেয়ে ধর্ষিত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় যীশু মূর্তির সামনে মেঝেতে মরে পড়ে আছে।মেয়েটির মায়ের আর্ত চিৎকারে সেদিন সেই পাহাড়ী গ্রামের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিলো।

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বংশী নদীর জল

সেই কবে থেকে বংশী নদী পাড়ে যেতে মন চায়।ওখানে নাকি সন্ধ্যা আকাশের নীচে নদীর জল ঘুমিয়ে থাকে।আবার কখনো মন চায়- তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে- তোমাদের বাড়ীর পাশে সেই ছোট্ট জামতৈল স্টেশনে।যেখানে চা'র দোকানে বসে দুপুরে দু'জন গরম চা খেয়েছিলাম।আর এক বিকেলে রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে চলে গিয়েছিিলাম ছোট্ট ব্রীজটির কাছে- যেখানে দাড়িয়ে দেখেছিলাম,দূরের ধানক্ষেত।যেখানে দখিনা শীতল হাওয়া এসে লেগেছিলো আমাদের গায়ে।
ওমর খৈয়াম পড়ার সময় বার বার মদ আর মদিরার কথা পড়েছি।মদের অর্থ জানি- কিন্তু কোনো মদিরাতে মত্ত হতে চাইনা।একাকী আমার খুব ঘুম পায়।ভয় লাগে ঘুমিয়ে পড়তে।যদি ঘূম না ভাঙ্গে। আমার যে এখনো দেখা হয় নাই বংশী নদীর সেই নিঃস্তব্ধ জল।শোনা হয় নাই জামতৈল স্টেশনে দাড়িয়ে থাকা দ্রুতগামী ট্রেনটির ছেড়ে যাবার শেষ হুইসেলের শব্দ।

পবিত্র করো দেহ

গতকাল যে সব ভালোবাসা আমি পেয়েছিলাম,তা আজ সকালে যমুনার জলে ভাসিয়ে দিয়ে এলাম ।ঘৃণাগুলোও রেখে এলাম গহীন বালুচরে।জল বলছিলো বারবার-
তুমি স্নান করো,পবিত্র করো দেহ-
জগতের অসুন্দরগুলো নাও মুছিয়ে।
সবাইকে আজ প্রাতের মঙ্গল শুভেচ্ছা।

নতুন বইয়ের ঘ্রাণ

কাল বিকালে রমনা পার্কের মধ্যে দিয়ে হেটে হেটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই মেলার দিকে যাচ্ছিলাম।পার্কে কোথায় কী গাছ দেখছিলাম সব- দেবদারু, ছাতিম, রাধাচূড়া, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, কদম,জারুল, শিরীষ৷উদ্যানে প্রবেশ করে বইমেলার একটি স্টলে ঢুকি।একটি নভূন বই হাতে নিয়ে গন্ধ নেই৷বুক ভরে নেওয়ার মতো ঘ্রাণমেলায় অসংখ্য মানুষের পায়ের ধূলা উড়ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো৷কয়েকটি স্টল ঘুরে কোনো বই না কিনে মেলার বাইরে চলে আসি।ভালো লাগছিলো না মনটা।। সামান্য দূরে ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখি শিমুল ফুলের কয়েকটি টুকরো৷ পিছনে আর ফিরে তাকাই না।একটা সিগারেট ধরাই।সিগারেট টানতে টানতে শাহবাগের দিকে চলে আসি।ভাবছিলাম- কেনো এই বিষন্নতা,কেন এই ফিরে আসা।

এই শহর আমাকে টানে। বইমেলা আমাকে টানে,বই আমার চিত্তকে চমকে দেয়।
এই যে আমি ফিরে আসছি,আমাকে টানছে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভালোবাসা দিবস

ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা দিবস লাগেনা।একবার এক ভালোবাসার দিনে নবাব বাড়ীর সামনের উ্দ্যানে বসে আমার হাতে হাত রেখে সুলতা নামে একটি মেয়ে বলেছিলো- 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' সেই যে সুলতা 'ভালোবাসি' বলে চলে গেলো,তারপর সে আর ভালোবাসা দিতে আসেনি। আরেক ভালোবাসাহীন দিনে- একটি অপরিচিত মেয়ে 'বলা নেই কওয়া নেই' বলে বসলো- 'কবুল।' সেই থেকে আমাদের মধ্যে চলছে- নিরন্তর ভালোবাসাবাসি।

ভালোবাসার দিনের কবিতা :
তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে দ্রোহী হয়েছি
আমার আর বন্ধু হয়না কেউ
ভালোবাসা দিবসও হয়ে গেছে তাই বন্ধুহীন।
,
আমি ভক্ত ছিলাম ঈশ্বরের
তারচেয়ে বেশী আসক্ত হয়েছি এখন তোমার
তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে দ্রোহী হয়েছি ঈশ্বরের।
তোমার বুকেতে জন্মেছে লাল গোলাপ
চারদিকে কেমন তার মৌ মৌ গন্ধ -
ভালোবাসার দিনে বাগানের ফুলের প্রয়োজন হয়না
দ্রোহী হয়েছি তাই বাগানের সকল ফুলদের কাছে।

শরবত

চৈত্রের দুপুরে আড়াই মাইল তপ্ত ধূলির পথ পায়ে হেটে স্কুল থেকে যখন বাড়ী ফিরতাম, মা তখন প্রথমেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে লেবুর পাতার গন্ধ মিশিয়ে দুধ মিশ্রিত শরবত খেতে দিতো।মা'র বানানো সেই শরবতের স্বাদ,সেই লেবুর পাতার গন্ধ আমি আজো অনুভবে পাই। 

হৃৎকম্পন নেই

সারারাত ধরে বাতাসের শব্দ
সারারাত ধরে পায়ের শব্দ
চূড়ির শব্দ,শিঞ্জিনীর শব্দ
সারারাত ঘুম জেগে থাকে
সারারাত স্বপ্ন জেগে থাকে-,
স্বপ্নের মধ্যে তোমার যে মুখ আমি দেখি
তোমার ঠোঁটের যে স্পর্শ আকাশে ভাসে
সেখানে কোনো হৃৎকম্পন নেই
কোনো শব্দ শুনে আর কান পাতি না
কোনো স্পন্দনই জাগায়না শরীরে দোলা।
রাতের বোধিমূলে দেখিনা তোমার হিরণ্য নগ্ন পোষাক
নির্ঘুম রাত্রির চাহনীতে তোমাকে খুঁজেও পাইনা আর।

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সংসার

প্রতিদিন রাত্রি নেমে আসে।আলো জ্বেলে তাকে খুঁজে আনি।চোখে চোখ রেখে দেখি তার সুবর্ণখচিত মুখ।আমি জানি,সকাল হলেই সংসার শুরু হবে।এবং সেখানেই সে আবার হারিয়ে যাবে।

কাকে আমি প্রেম দেবো

কাকে আমি প্রেম দেবো- মায়াহীন ভ্রু-কুটি
 তুলে সে তো চলে গেছে
শরীরে নেই তার আগের মতো শিঞ্জিনী
সকালবেলার ভৈরবীর সুর গাঁথাও নেই
ওষ্ঠাধারে নেই তার জলপ্রপাতের ধারা
কার ঠোঁটে আমি আর চুম্বন দেবো ?

নিষ্প্রাণ বর্ণমালা দিয়ে ছন্দ রচিত হয়না
প্রাচীন স্বপ্নপুরী থেকে যে আলো আসে
তার নীচে কপিলাবস্ত নগরীর অন্ধকার-
যে শরীরের সৌন্দর্য অলংকারবিহীন
সেখানে আামার কোনো পুষ্পার্ঘ পড়েনা।

কাকে আমি প্রেম দেবো -
সে তো এখন আমার আর কেউ নয়।



বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

হৈমন্তী

টু ক্লাসের প্রথম দিনের কথা।মা আমার চুলে সরিষার তেল মেখে পরিপাটি করে আঁচড়িয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিলো।পরনে ছিলো রাবার লাগানো চেক হাফ প্যান্ট।গায়ে ছিলো পপলিনের সাদা ঢোলা সার্ট। পায়ে ছিলো স্পঞ্জের স্যান্ডেল।ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে এক কোনে চুপচাপ বসে আছি।ও পাশ থেকে দেখি- আমাকে দেখে হৈমন্তী মিট মিট করে হাসছে।

 একদিন,হৈমন্তী চুপিচুপি ওদের গাছের একটি কা্ঁচা পেয়ারা এনে আমাকে খেতে দিয়ছিলো।আর একদিন দিয়েছিলো, পূজোর প্রসাদ- খেঁজুরের গুরের খাজা।মাঝে মাঝে কুন্ডুদের দোকান থেকে আমরা কাঠি লজেন্স কিনে খেয়েছি। ফাইভ ক্লাস পর্যন্ত হৈমন্তী আমার সহপাঠি ছিলো।

জীবন অনেক পিছনে ফেলে রেখে এসেছি।পিছনে পড়ে আছে হৈমন্তীও।এতো পিছনে যে স্ক্রল করে আনাও এখন অসম্ভব। হৈমন্তীরা অনেক আগেই ভারতে চলে যায়।জলপাইগুরি'র ময়নাগুরিতে ওরা থাকে।বিয়েও হয়ে গেছে ওখানেই।ওর বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাকি তিস্তা নদী।যে নদীর বহতা বাংলাদেশেও আছে।

মাঝে মাঝে হঠাৎ মনটা বিহবল হয়ে ওঠে। উদাস হয়ে দেখি পিছনের সেই সব মানুষ,নদী,ধানক্ষেত।শুনতে পাই বাউল আর ভোরের পাখিদের গান।মনে পড়ে হৈমন্তীর কথাও। খুব ইচ্ছা হয়  তিস্তা নদীতে নৌকা ভাসিয়ে চলে যাই ময়নাগুরিতে।ওখানে তো এই নদী আছ। যেয়ে খুঁজে বের করি ওর গ্রাম। দেখে আসি একবার আমার ছেলেবেলার সেই হৈমন্তীকে।

নক্ষত্রের আত্মহত্যা

মেয়েটার বয়স বাইশ বছর।নাম জয়া শীল।যার স্টেজ নেম- জ্যাকুলিন মিথিলা। বাবা পেশায় নাপিত।স্বপ্ন দেখতো সে বড়ো মডেল হবে।বড়ো নায়িকা হবে।এ স্বপ্ন সে দেখতেই পারে।খবরে প্রকাশিত-কয়েকদিন আগে এই মডেল কন্যা আত্মহত্যা করেছে।সুইসাইড করার আগে সে নাকি ফেস বুকে স্টাটাসও দিয়েছিলো।আমার কৌতূহল জাগলো,ওর টাইম লাইনটি দেখার। গিয়ে দেখি- আড়াই লক্ষ ফলোয়ার তার।( যার বেশীর ভাগ হয়তো কীট পতঙ্গ হবে) এতো বড়ো একজন সেলেব্রেটি, অথচ এতোদিন ওর নামও শুনিনি।একি আমার দূর্ভাগ্য ? না, এই সেলেব্রেটির প্রতি উদাসীনতা ?

 জানতে পারলাম- মিথিলা নাকি আমাদের দেশের সানি লিয়ন।একটা সহজ সরল মেয়ে, যে স্বপ্ন দেখতো নায়িকা হবে।তাকে কারা স্বপ্ন দেখিয়ে সানি লিয়ন বানালো ? জয়া শীলের চার পাশের এই সব কুৎসীত কীট পতঙ্গরা কালো আধারে ঢেকে থাকবে আর কতোকাল ? আর কতো অসহায় সহজ সরল জয়া শীল'রা কেবল আত্মাহূতিই দিয়ে যাবে ! অন্তরের মধ্যে এই হাহাকারটি বাজছে --

'ধানের ক্ষেতের গন্ধ মুছে গেছে কবে
জীবনের থেকে যেন; প্রান্তরের মতন নীরবে
বিচ্ছিন্ন খড়ের বোঝা বুকে নিয়ে ঘুম পায় তার-
এখন মরণ ভালো — শরীরে লাগিয়া রবে এই সব ঘাস;
অনেক নক্ষত্র রবে চিরকাল যেন কাছাকাছি।'

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

হাজার বছর পরে

আমি কোনো স্বপ্নের কথা বলছিনা
কোনো কল্পনার কথাও বলছিনা
প্রাগঐতিহাসিক কোনো ইতিহাসের কথাও নয়
এটি কোনো লোকগাঁথার কল্প কাহিনী নয়
তন্দ্রাচ্ছন্ন অলীক ভাবনার কথাও বলছিনা
গীতি কবিতার কোনো পংতি নয়
কোনো মেলোডি লিরিকের মূর্ছণাও নয়
এটি কোনো মানব ভ্রমও নয়
দূরের কোনো মরিচীকার মায়াও নয়
আমার দু'চোখ ভরে যা দেখেছি
তাই বলছি---
পৃথিবীর প্রান্তর জুড়ে সবটাই যেন একটি ফুলের বাগান।গোলাপ চন্দ্রমল্লিকা আর মাধবীরা ফুটে আছে। দখিনা হাওয়ায় সুবাস ছড়াচ্ছে চারদিক। সাদা শাড়ীর আ্ঁচল উড়ায়ে কে যেন আসছে আমারই দিকে।প্রথমে ভেবেছিলাম,জন্মান্তরের পরিচিত কেউ হবে। সেই মুখ.সেই চোখ, সেই ভ্রুযুগল, সেই চুলের রং ! হঠাৎ মনে হলো- আমার দেহ,আমার আত্মা ক্লোন করে নিয়ে গেছে হাজার বছর পরের কোনো পৃথিবীতে। যেখানে দেখছি এই ফুল,এই বাগান,আর অস্পষ্ট এই মেয়েটিকে।


অসমাপ্ত

এসেছিলে আচম্বিতে। চলেও গেলে নিঃশব্দে। স্তব্ধ আকাশের সব রঙ ছড়িয়ে অস্তমিত সূর্যের মতো অস্তদিগন্তে মিলিয়ে গেলে। বসন্ত সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসে আজও। জোনাকি ঝংকারে প্রতিদিন আমি শুনি--বুঝি এলো, বুঝি এলো... 
মালবিকা- একবার, শুধু একবার এসো তুমি, অরণ্যের পথ বেয়ে অন্তহীন কালস্রোতে। পূর্ণ কর, চরিতার্থ কর, একবার অসমাপ্ত চুম্বন তোমার।

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আজ বসন্ত দিন,

আবির দিচ্ছিলাম তার তুলতুলে গালে
সে তখন বলে ওঠে- এ তুমি কি করছো !
আমি বলি- আজ বসন্ত দিন-
শহর জুড়ে চলছে লাল হলুদের উৎসব
যেতে হবে যে -
বকুল শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার বনে !!


শোনায়নি কোনো গান

শোনায়নি কোনো গান
একবার চাঁদ কেঁদে ওঠে একবার সরোবর
কেঁদে ওঠে-
কতো গান গাওয়া হলো পূর্ণিমা রাতে
কেউ শোনেনি কোনো গান, না কোনো বোস্টুমী
না কোনো সন্নাসী।
কতো বর্ষা কতো বসন্ত চলে গেছে
কতো রাগ, কতো ভৈরবী সুর হারিয়েছে
কৃষ্ণপক্ষ রাতে-
একবার হৃদয় কেঁপে ওঠে,একবার দু'চোখ
জলে ভরে ওঠে-
পাহাড় অরণ্যের ঝঞ্ছা পথে
কেউ আসেনি, শোনায়নি কোনো গান
তারাদের মুখের পানে।
চাঁদও ডুবে গেছে,সরোবরের জলও শুকিয়ে গেছে
তারপর আর গায়নি কেউ কোনো গান
কারো কানে কানে।

ম্যারেজ ডে সেলিব্রেশন

দুপুরবেলায় খালি পেটে কেউ কোনোদিন গরম চা খায় ! দিয়াবাড়ির বটতলায় টং দোকানের বাঁশের মাচায় বসে আমরা দুজন তাই খেলাম ।তপ্ত চায়ের কাপে ধূয়া উডছিলো।বসন্ত আসি আসি সময়ে কাশবন ম্রিয়মান হয়ে গেছে।সাদা ফুলের ঘ্রাণ আর নেই।চৌচির করছে দিয়াবাড়ির প্রান্তর।

কাশবনের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে খোলা রিক্সায় উঠে দু'জনে চলে যাই-পশ্চিমে ব্রীজের দিকে।আহা ! এই দুপুরে গাংচিল লেকের জলে স্নান করছে।পেটে আমাদের খিদে।বাদামওয়ালার কাছ থেকে দশ টাকার বাদাম কিনি।লেকের পাড়ে দু'জন বসে আছি।খিদে পেটে বাদামও ভালো লাগেনা।এতো বৎসর পর দুু'জন একটু নব প্রাণে প্রেম করবোো,তাও হচ্ছেনা।চুল তার এলোমলো হয়ে বাতাসে মুখের উপর এসে পড়ছে।গোলাপী রঙ্গের গাল তপ্ত রোদ্রে লাল হয়ে উঠেছে।ঠোঁট হয়ে গেছে চৌচির।একবার মনে হলো কাছে টানি- লেকের ঐ পানকৌড়ির মতো ঠোঁটে জল ঢেলে দেই।তা আর হলোনা। অল্প বয়সী রিক্সাওয়ালা তরুণটি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

লেকের রোদ আর দখিন থেকে বয়ে আসা নির্মল বাতাস কোনোটাই ভালো লাগছিলো না।পেটে যে খিদা।চলে আসি,'Mainland China' ঘূর্ণয়ামান রেস্তোরায়। পনরো তলায় জানালার পাশে বসে দেখি- উত্তরার নীল আকাশ।হাত বাড়িয়েও ছোঁয়া যায়না আকাশের নীল।টুংটাং চামচের শব্দ হচ্ছে !খুঁজছিলাম নীল নীল আলো। খুঁজছিলাম আলো আধাঁরি।কিন্তু হায় ! এতো স্বচ্ছ আলো যে- কোথাও নেই একটুও নীলাভ আলো।নব প্রাণ আর জেগে উঠলো না।আমাদের Marriage day Celebration টাই ব্যর্থ হয়ে গেলো !! 

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

হিরণ্য মেয়ে

হে হিরণ্য মেয়ে তুমি হরিণী হও
তুমি পোষ মানো বনারণ্যে-
গাছের পাতার ফাঁকে লুকোচুরির আলোয়
আমি হরিণ হই,
লুপ্ত হই তখন ঐগভীর বনারণ্যেই।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

যেতে ইচ্ছা করে

 গোপনে তোমার কাছে যেতে ইচ্ছা করে
টানে আমাকে তোমার পবিত্র হাত,
এই একটু আগেও ভুল করেছিলাম
রেখেছিলাম হাত অন্য মেয়ের কাধে-
লুটিয়ে পড়েছিলো প্রেম দেহান্তরে
ভুলও কখনো কখনো উৎসব করে
আনন্দ করে- অন্ধকার গলির বারবধূ
এতো সব বধূ, তারপরেও-
ভিতরে ভিতরে তোমার কাছেই যেতে ইচ্ছা করে।

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

হাওরের কান্না

তিনি হাওরের পুত্র ছিলেন-
আজ তিনি হাওরের কান্না।আজ তিনি নিরালোকে।
ঋদ্ধ আইনজীবি থেকে রাজনীতিবিদ,তুখোর পার্লামেন্টিয়ান,
প্রগতিশীলতার প্রতিভূ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক,
সমাজতন্ত্রের শেষ স্পন্দন- এরকম বহূ বিশেষণ আছে তার।

তিনি চলে গেলেন।যেখানে গেলেন তিনি-
 সেখান থেকে কেউ ফেরেনা।
সুরঞ্জীত সেনগুপ্ত - আপনার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সেই রথ ঘর

আমি সিরাজগঞ্জের নিভৃত পল্লীর বাগবাটি স্কুলের ছাত্র ছিলাম।আমাদের স্কুলের পাশেই পুরানো একটি রথ ঘর ছিলো।টিফিনের সময় চার আনার বিস্কুট কিনে সাইফুল,আমিনুল,ফটিক ও আমি,ঐ রথ ঘরে বসে খেতাম।সাথে এক সলা সিগারেট টানতাম চারজনে।আজ কতো বৎসর চলে গেছে, সেই স্কুল সহপাঠিদের সাথে দেখা নেই। শুনেছি আমিনুল মারা গেছে।সাইফুল আর ফটিক কোথায় আছে জানা নেই। আজ কয়েকদিন ধরে স্কুলের পাশে পুরানো সেই রথ ঘরটর কথা মনে পড়ছে।আর মনে পড়ছে সেই কিশোর সহপাঠি মুখগুলোর কথা।এ জীবনে কি আর ওদের দেখা পাবো ? দেখতে পাবো কি আর সেই পুরানো রথ ঘরটিও !

তোমার জন্মদিন

আজকের দিনে প্রথাসিদ্ধ ভাবে তোমাকে কি কোনো শুভেচ্ছা জানাতে হবে ? তোমার সাথে আমার সম্পর্ক প্রথা ভাঙ্গার।ভালোবাসতে কোনো ব্যাকরণ কোনোদিনই অনুসরণ করিনি।কাকতালীয় এই যে- এক শীতে তুমি পৃথিবীতে এসেছিলে,আরেক শীতে আমি। ঠিক অন্য আরেক শীতে তুমি আর আমি- জীবনের একবিন্দুতে মিলিত হয়েছিলাম। 'তোমাকে ভালোবাসি'- এই উচ্চারণ ভালোলাগে না। যে থাকে কবিতায়, তাকে কি প্রথাগত ভাবে বলতে হবে- 'আজ তোমার শুভ জন্মদিন।' যদি বলতে বলো - বলবো।  'না' বললে 'না'।


সবই মিছে স্বপ্ন

প্রাচীন সুউচ্চ কোনো অট্টালিকা থেকে
অচেনা কোনো ভগ্ন প্রাসাদ থেকে
কমলা রঙ্গের রোদ্দুর পেড়িয়ে তুমি এসেছিলে
সিয়রে বসে রেখেছিলে হাত কপালে।
তারপর অচিনপুরীর ঘুম এলো
রাতের গভীরে স্বপ্ন এলো, তারপর-
প্রাতেঃর আলো আসার আগেই
ঘুম ভেঙ্গে যায়, আসলে সবই ছিলো ভ্রান্তি,
 সবই ছিলো মিছে স্বপ্ন দেখা ।
                                                                                                    

শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আকাশের সব নীল

আমি প্রতিদিন বিস্ময়ে দেখখি-তুরাগ পারের কাশবন
বালি মাটিতে ফুটে থাকা তুচ্ছ ঘাস ফুল
দেখি দিয়াবাড়ির আকাশ,শুনি কানপেতে সন্ধ্যার শব্দ,
কপালের উপর তোমার উড়ে পড়া চুল
দেখি স্বপ্নের মধ্যে ভালোবাসারকাতরতা ।

ঘর থেকে বের হওয়ার বাঁশি শুনি
ধূসর বসন্ত সন্ধ্যায় যদি তুমি ডাক দাও
উড়ন্ত শশারের মতো স্বপ্ন নিয়ে উড়ে যাই
আকাশের সব নীল তখন লালচে হতে থাকে।

তোমাকে সাথে নিয়ে যে সন্ধ্র্যা আমি দেখি
যে রাত দেখি- বিমুগ্ধ প্রণয়ের যে কাতরতা
চোখের উপর চোখ রেখে বুঝতে পারি-
এই ক্লান্তির শহরে আমাদের সব প্রেমই অম্লান।


ভালোবাসায় পূর্ণ করেছো

 ধরেছো আমার বাহু,জড়িয়েছো বুক
 লতা গুল্ম জড়ায় যেমন পল্লবে
পল্লবও জড়িয়ে থাকে লতা গুল্মে
তুমিও তেমনি বে্ধেঁছো হাত আমার হাতে।

আজন্ম সোহাগ লালন করে শুয়েছো শয্যায়
ভালোবাসায় বুদ করে রেখেছো- মধু সময়
ঝড়ের বাতাস এসে থেমে যায় লতায়
তুমিও তেমনি থামালে হৃৎকম্পন আমার বুকে,
আমাকে তুমি বে্ঁধে রেখেছো হৃদয়ে-                                                                                                          ভালোবাসায় পূর্ণ করেছো আমার হৃদয়।






ভালোবাসা দিবস

 ভালোবাসা দিবস বলতে একসময় কিছু ছিলো না। আজ অতীত হাতড়ে শিহরিত হই এই ভেবে যে, ফাল্গুন মানে তখনো ভালোবাসা ছিলো ।ভালো লাগার অনুভূতিঝ ছিলো। মনে পড়ে বসন্তের সাথে জড়িয়ে থাকা কান্নাভেজা চোখ, না পাওয়া প্রেম, পাওয়ার আনন্দ, ভালবাসায় ছুঁয়ে দেওয়া হাত, প্রথম শিহরণ,, অকথিত প্রেম।
বসন্ত এতো মোহময়, এতো সুরভিত, এতো উন্মাতাল।সমস্ত সুঘ্রাণ,সমস্ত সৌন্দর্য আর সমস্ত রূপের মিলিত অবয়বই যেনো এই মধুর বসন্ত।


ভৈরবী

এই গ্রাম, মাটি, জল, রূপকথা— সবই গান। সবুজ শস্যের উপর যে বাতাস সুসংবাদ বয়ে আনে তাও তো গান। ওই যে দুটি শালিক ঠোঁটে ঠোঁট, গান ভ’রে দিচ্ছে হৃদয়ে, তাদের একটি কোমল ধৈবত আর একটি নিখাদ। টিউশানি পড়ে ফেরার পথে সরু অন্ধকার গলিতে যে প্রেম মুখ লুকায় তা মন্দ্র সপ্তকে বাঁধা। বাড়ি ফিরে রাতে ভূগোল বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে পড়া চিঠি তবে কৌশিকধ্বনি।
যে ছেলেটি, চিনতে পারছে সুরের চলন। সুর তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ছেলেটি পিছুটানহীন চলে যাচ্ছে তার পিছু পিছু। কোথায়, কতদুরে, কোন দিগন্তের কোনও পথভোলা কিশোরীর কাছে আলোকনির্মিত গানের স্কুলে সে শিখতে যাচ্ছে কীভাবে সুর হাসায়, কাঁদায়, ক্ষমা করে, ভালবাসে। আজ, ছেলেটির এই অনায়াসে চলে যাওয়ার নাম হোক ভৈরবী।

বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

যতোদূরেই যাও

দূরে বহুদূরে চঞ্চল মেঘের মাঝে আকাশ ছাড়িয়ে ভেসে যাও।ব্যাপ্তিও ছড়াও ঐ দূরালোকে।আমি গভীর গহনে আবর্তিত হই একাকী ভূবন মাঝে।তুমি যতোদূরেই যাও,আমার ভূবনেই তুমি ব্যাপ্ত হয়ে আছো।

সানফ্লাওয়ার

সে ছিলো মধ্যবয়সী এক রমণী।শরীরের বাঁকে বাঁকে জমে গেছে রেখা।মেকআপের নীচে দেখি পরিচিত তিল।সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাই দোতালায়।সুপারহিট ম্যাটেনী শো।সোফিয়া লরেনের সানফ্লাওয়ার।অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহ।সুনসান নিরবতা।ভয়ে ত্রস্ত হলাম,সোফিয়ার চুুলের কাঁটা গিলে ফেললো মার্শেলো।
ঝুঁকে পড়ে রমণী।আমার হাত থেকে ক্লাশ পালানো বই খাতা নীচে পড়ে যায়।কলমটাও হারিয়ে ফেলি অন্ধকারে।কাটতে থাকে রোমাঞ্চ সময়।ম্যাটেনী শো শেষ হয়।সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নেমে আসি।রাস্তায় ব্যস্ত গাড়ীর হর্ণ।বসন্তের ধূলো উড়ছে।বিকালের রোদটাও ঝাঁঝাঁঁ করছে।বিদগ্ধ মাঝ বয়সী রমণী রিক্সার হূট তুলে রামকৃষ্ণ মিশনের দিকে চলে যায়।
ইউনিভার্সিটির হলে শুয়ে আছি। মাথা ঝিম ঝিম করছে।সন্ধ্যাকে মনে করছি মধ্যরাত।ঘুমের ঘোর নাকি,স্বপ্নে আছি ! কে যেনো বলছে- থেমে যাও তরুণ ! নিঃসঙ্গ নারী নাভীতলে মগ্ন হয়োনা।নিঝুম পুষ্প বৃষ্টিতে ভিজিও না।এ সব মায়ার সময় এখন তোমার নয়-
আমি তো দু'হাতে ধরেছি অরণ্য,
বুকের তলায় বেঁধেছি অনেক স্বপ্ন-
বাড়ীতে যাইনা- ছোট বোন অভিমানে তাই বেনী গাঁথেনা
মা পথের দিকে তাকিয়ে থাকে বিমর্ষ চোখে-
নস্ট ঠোঁটের গন্ধ নিতে চাইনা
আলোগুলো মিলাতে চাইনা,কোনো ভ্রষ্ট রক্তের বিন্দুতে।




বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ঐশ্বর্যময়ী

ওর নাম ঐশ্বর্যময়ী। ওকে চেয়েছিলাম না। আমাদের চাওয়াকে দ্রোহ করে- বিরূদ্ধ স্রোতে ভেসে সে চলে আসে।।সেদিন ছিলো শীতের সন্ধ্যারাত।উত্তরার আইচি হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে- এক নবজাতক চিৎকার করে বলে ওঠে- 'আমি আসলাম'।ডাঃ রোমানা বলে- এ দেখছি আপনাদের ঐশ্বর্য।'আমি বলেছিলাম- ও শুধু ঐশ্বর্য নয়, ঐশ্বর্যময়ী'ও।  ঐশ্বর্যময়ী আমাদের ছোটো মেয়ে। আজ ওর জন্মদিন। আসুন না,আমরা সবাই ওকে একটু উইশ্ করি।


রুবী ও অন্যান্য সহপাঠী বন্ধু'রা,

আজ আমার ছোটো মেয়ের জন্মদিন।খুব ইচ্ছা ছিলো তোমাদের মিলন মেলায় যোগ দিতে।কিন্তু পারলাম না।আমার মেয়ের ছোট্ট ভূবন জুড়ে যে আমি।তাই ওর ভূবনেই থেকে গেলাম।
তোমাদের সাথে আবার দেখা হবে- অন্য কোনো মিলন মেলায় অন্য কোনো অনুষ্ঠানে।
শুভ কামনা সবার জন্য।

-------- কোয়েল।

ছুঁয়ে আছো

তুমি ছুঁয়ে আছো- মায়া ছুঁয়ে আছে
প্রেমে মহিমা ছুঁয়েছে,
শরীর ছুঁয়ে আছে,রক্ত মাংস বোধ ছুঁয়েছো
বুকের চারপাশে মুক্তা ঝরেছে
ঠোঁট গন্ধক ফল চেয়েছে
শরীর সংযম মেনেছে,
দূর্লভ অন্তপুরের দরজা খুলেছো
চোখে চেয়েছো, সীমারেখা টেনেছো
মায়া করেছো,নাভিতল নদী হয়েছে
মন ছুঁয়েছো,মেধা ছুঁয়েছে
শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্না চেয়েছো
রহস্য শরীর বৃত্তে- যা তুমি ভাঙ্গতে এসেছো।