বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭

বকুল তলায়

কিশোর বয়সে আমি একবার সরিষাবাড়ী থানার পিংনার চিতলি পাড়া নামে এক গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম । ঐ গ্রামেই দেখেছিলাম-শান বাঁধানো পুকুর । আমার মনে আছে সেদিন আকাশে উঠেছিলো চাঁদ।জ্যোৎস্নায় ডুবে যাচ্ছিলো বৃক্ষ লতা গুল্ম।ঝোঁপে ঝাঁরে জোনাকিরা সব জ্বলে উঠেছিলো। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত ঘাটের বকুলতলায় বসে গল্প করেছিলাম। সেই রাত, সেই ঘাট, সেই জল, সেই বকুলের মৌ মৌ গন্ধ আজো আমাকে উতলা করে রাখে।

তারও অনেক পরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে এই রকমই শান বাঁধানো পুকুর দেখেছিলাম। আজ থেকে শতো বছর আগে কবিগুরু তার তরুণী বধূ মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে এই পুকুর ঘাটে বকুলের তলায় বসে কতো গান গেয়েছিলো । কতো কবিতা লিখেছিলো । এতো বৎসর পরে আজো সেখানে চাঁদ ওঠে। এখনো সেই ঘাট আছে, এখনো দূরের পদ্মা থেকে বয়ে আসে শীতল হাওয়া। শুধু কবিগুরু নেই। মৃণালিনী দেবী নেই।

হঠাৎই পূর্ণিমা এলে ঘর হতে বেরিয়ে পড়তে মন চায়। শান বাঁধানো পুকুরপাড় আমাকে টানে। বকুল ফুল ঝরে পড়া দেখতে আমার মন চায়। আমার খুব শখ হয় আমরা দুজন এমনি কোনো চাঁদনী রাতে যেয়ে বসে থাকি কোনো বকুলের তলায়।
                                                                 



বুধবার, ২৮ জুন, ২০১৭

অশেষ করেছো

হঠাৎ করেই শরীর কেঁপে জ্বর আসে। দুই দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা। কী বোর্ডে আঙ্গুল চালানোও সম্ভব হলোনা। অনেকটা স্বার্থপরের মতো কাউকেই কিছুু বলা হলোনা। হে প্রভু আমাকে তুমি অঙ্গার করে ফেলোনা। আরো কতো মায়াবী দিন বাকি আছে।তার সুশ্রষাগুলো নব প্রাণ দিলো। 'আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব–. ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব।। কত-যে গিরি কত-যে নদী -তীরে. বেড়ালে বহি ছোটো এ বাঁশিটিরে,. কত-যে তান বাজালে ফিরে ফিরে. কাহারে তাহা কব।'

সোমবার, ২৬ জুন, ২০১৭

সানাই

অসময়েই শুনতে পেলাম ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সানাই। আমি কখনোই যাইনি বানারসি তার বাড়ীতে। সাধ ছিলো বিসমিল্লাহ খানের সানাই বাজবে আমাদের বিয়েতে। কিন্তু সেদিন বাজেনি কোনো ভৈরবী রাগ ।
ঘুম ভাঙ্গে এই সানাইয়ের সুর শুনে। এতো রাতে একাকী পথে নেমে পড়ি। পার্ক রোডে নির্জন লাইট পোস্টের নীচে দু'জন মানুষ দাড়ানো । রাস্তার পাশে বাড়ীটাতে তখনো আলো জ্বলছে। এইটি কোনো জলসা ঘর নয়। তবুও এতো রাতে কেনো বিসমিল্লাহ খানের সানাইয়ের করুণ সুর সেখানে বাজছে? কি যেনো বলাবলি করছিলো ঐ দুইটি লোক। আমি কাছে এগিয়ে যাই।
প্রথম লোক : কাউকে ভালোবাসিনি কখনো । তবু ভালোবাসার লোভ ছিল। তবে তা ইচ্ছের চেয়ে বেশি কিছু না। নিজের জীবনকে সব তছনছ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি একা থাকতে। স্থির হয়ে নতুন একটা জীবন আবার শুরু করেছি।
দ্বিতীয় লোকটি তখন রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে।
আমি কাছে যেয়ে বললাম- আপনি কি খুব ক্লান্ত ?
দ্বিতীয় লোক : হুম। বেঁচে থাকতে ভালো লাগে। কিন্তু কেন এত ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, জানি না

রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭

ঈদের শুভেচ্ছা

কোনো অশ্রু ফোটা ঝরেনি। তারপরও ঘুম আসছিলোনা চোখে। বিছানা থেকে উঠে জানালা খুলে দেখলাম, বাঁকা চাঁদ সন্ধ্যা রাতেই নিভে গেছে। কি বোর্ড সচল করলাম। ইনবক্স খুলে গ্রিটিংস্ পড়ছিলাম। নীল নদের পাড় থেকে অভিবাদন, আটলান্টিক পাড়েরও আছে, আছে লিফী নদীর পাড়ের। নায়াগ্রার জলপতন আমার দেশের মাধবকুন্ডের মতো অতো মায়াময় মনে হয়না। এই মধ্যরাতে বৃষ্টিও নেই।
কিছু লিখতে মন চায়। গদ্য পদ্য কোনটা বুঝিনা। মাথার মধ্যে জীবনানন্দ ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কিন্তু অন্তরের ভিতর অন্য তোলপাড়। লিখছিলাম তাই-
মৃত্যুর বিছানায় শুয়ে তোমাকে দেখবো,
দেখবো চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল, তুমি দেখবে আমার মৌনতা শুধু,
আর দেখবে-
নিষ্করুণ মুখ কেমন সমুজ্জ্বল।
'তখন সব পাখি ঘরে আসে
সব নদী ফুরায় জীবনের সব লেনদেন,
তখন- থাকে শুধু অন্ধকার.....।'
কাল ঈদ। এসব দুঃখের কথা লেখা কি মানায় ? তারপরেও ঘুরেফিরে মা'র মুখ মনে পড়ে। সেই বাবার হাত ধরে প্রথম ঈদের মাঠে যাওয়া। কাল সকাল হবে। নতুন পাঞ্জাবী পড়ে আমি ও আমার ছেলে ঈদগাহে যাবো। আরো অনেক বছর পরে এমনি করে যাবে,আমার ছেলে আর অনাগত আমার দৌহিত্র। কালপরিক্রমা এমনি করে এগিয়ে যাবে মহাকালের দিকে। নাহ্ কোনো মন খারাপ নেই। ভালোই লাগছে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।



থাকে শুধু অন্ধকার

মৃত্যুর বিছানায় শুয়ে তোমাকে দেখবো, 
দেখবো চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল, তুমি দেখবে আমার মৌনতা শুধু,
আর দেখবে-
নিষ্করুণ মুখ কেমন সমুজ্জ্বল।
'তখন সব পাখি ঘরে আসে
সব নদী ফুরায় জীবনের সব লেনদেন,
তখন- থাকে শুধু অন্ধকার.....।'

তার কানে কানে

যে কথাটি বলা হয়নি মাধুরীর কানে
সেই কথাটি বলবো
তোমার কানে কানে
যে সুর তুলতে পারিনি আমার এ গানে
সেই গান গাইবো তোমার প্রাণে প্রাণে।

মাধুরী চলে গেছে এক মাধবী রাতে
হৃদয়টা নিয়ে গেছে
শূন্য করি আমাতে
যে নদী বেঁকে গেছে দূরের মোহনায়
সেই সুর থেমেছিলো অ্সীম মায়ায়।

যে পাখী উড়ে গেছে নীলিমার পানে
সে পাখী আসেনি
আর বসন্তে গানে
বেহালায় সুর বাজে আজো প্রাণে প্রাণে
সেই কথাটি বলিনি তার কানে কানে।

শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭

ষণ্ডা

আশুলিয়া রোডের ধউর থেকে মিরপুরে যাওয়ার বেড়ী বাঁধের রাস্তাটি তখন সবে মাত্র চালু হয়েছে। একদিন সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে মিরপুরে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজি ঠিক করি । ড্রাইভার আমাকে বলে- 'স্যার,বেড়ী বাঁধ দিয়ে নিয়ে যাই, তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। রাস্তায় জ্যাম হবেনা।' আমি বললাম-'যাও'। কামারপাড়া পেরুনোর পরেই দেখতে পাই- আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে । ধউর পেরিয়ে  সিএনজি তখন মিরপুরের দিকে চলছে। চারদিকে কেমন জনমানব শূণ্য। দু'একটা টেম্পু মাঝে মাঝে চলতে দেখা যায় । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে । মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিছু দুর যাওয়ার পর সিএনজি একটি পিটেসরা গাছের নীচে হঠাৎ থেমে যায়। আলো আধারিতে দেখতে পাই- দুটো মাস্তান টাইপের ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বলে- 'আয়াজ আলী ভাইরে কি আপনি চিনেন ?' আমি বুদ্ধি করে বললাম- চিনবো না মানে ? ও তো আমার ভাগিনা হয়।' মাস্তান ছেলে দুটো আমার কাছে আর কোনো কিছু চায়না। ওরা ড্রাইভারকে বলে দেয়- 'এই-,মামুরে ঠিকমতো পৌঁছে দিবি। কোনো অসুবিধা যেনো না হয়।'

সিএনজি পুণরায় চলতে থাকে। তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর সিএনজি আবার থেমে যায়। দেখি সামনে একটি মেয়ে দাড়ানো। সে বৃষ্টিতে ভিজছে। পরনে তার সালোয়ার কামিজ। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখে মনে হলো,মেয়েটি মোটামুটি ভালো ঘরেরই হবে। দেখতেও সুশ্রী। সে বলছে-' আমাকে একটু মিরপুরে পৌঁছে দিবেন। কোনো গাড়ী পাচ্ছিনা।' আমি বিব্রত হই এবং 'না' বলি। মেয়েটি আবার কাঁদো কাঁদো করে বলতে থাকে- 'আপনার ছোট বোন যদি এই রকম বিপদে পড়ে, তখন তার কি উপায় হতো।' আমি মেয়েটিকে সিএনজি তে উঠায়ে নেই।

বৃষ্টি আরো জোরে শুরু হয়েছে। মেঘ ডাকছে। সিএনজি চলছে। হঠাৎ মেয়েটি বলে ওঠে- 'টাকা পয়সা যা আছে দিয়ে দেন। নইলে চিৎকার করবো, এবং বলবো- আপনি আমার ইজ্জত মেরেছেন। আয়াজ আলী ভাইয়ের লোকেরা আশে পাশেই আছে। তারা এসে আপনাকে ঘেরাও করবে।' আমি কিছু বলবার আগেই ড্রাইভার সিএনজি থামিয়ে দেয়। এবং মেয়েটিকে বলে- ' নেমে পড়ো তুমি, কারে কি বলছো- ইনি হচ্ছে আয়াজ আলী ভাইয়ের মামু।' মেয়েটি তখন ভয়ে আমার কাছে মাপ চেয়ে নেমে চলে যায়।

সিএনজি আবার চলতে থাকে। মেঘ গর্জন করছে । প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বাতাসের দুলুনিতে সিএনজি চলতে পারছিলোনা। মিরপুর চিড়িয়াখানা বরাবর পশ্চিম পার্শ্বে বেড়ীবাঁধের উপর একটি কড়ই গাছের তলায় সিএনজি থামাতে বলি । সিএনজি ঝড়ে উড়ে যাবে, এই ভয়ে আমি রাস্তার উপর নেমে পড়ি এবং কড়ই গাছের গোড়ায় বসে থাকি। মুশুলধারে বূষ্টি হচ্ছিলো তখন। সাথে প্রায় ঘন্টায় সত্তর মাইল বেগে ঝড় । বিকট শব্দ করে বজ্রপাতও হচ্ছিলো। সারাদিন ভ্যাপসা গরম ছিলো। গরমে অসহ্য একটা ভাব ছিলো। বৃষ্টি এবং ঝড়কে দেখে মনে হলো আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বৃ্ষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগছিলো। শীতল হয়ে উঠেছিলো আমার প্রাণ। ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাতকে আমি দারুণভাবে উপভোগ করছিলাম।

ঝড় একসময় থেমে যায়। সিএনজিটি মিরপুর ৬নং সেকসনে আমার বোনের বাসার সামনে গিয়ে থামে। জুবুথুবু এরকম অবস্থা দেখে প্রথমেই বোন তোয়ালে দিয়ে আমার মাথা মুছে দেয়। পাশে ভাগিনা দাড়ানো ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি- 'এই আয়াজ আলী কেরে, তুই চিনিস নাকি ?' ভাগিনা তখন বলে- 'মামা,চিনবোনা,মানে ? ওতো মিরপুরের একটা ষণ্ডা।'

শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০১৭

বর্ষার সঙ্গীতে

আমার সমস্ত নৈঃশব্দগুলি একদিন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি হবে। পথের ধূলো সব কাদা হয়ে যাবে মুহূর্তেই। বারান্দায় দাড়িয়ে দেখবো বৃষ্টি। তখন তুমি পিচ্ছিল পথে রাধার মতো পা টিপে টিপে চলে আসবে । আমিও ঘর হতে বের হয়ে যাবো, পথে পথে ঘুরবো, ভিজতে থাকবো দু'জনে বর্ষার সঙ্গীতে ।

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

টান

মেয়েটির নাম শ্যামলিমা দাশগু্প্ত। ওপাড়ের মেয়ে। জলাইগরিতে জন্ম। ওখানেই বেড়ে ওঠা। ক'দিন আগেই শ্যামলিমা আমার বন্ধু লিস্টে আ্যাড্ হয়েছে। ওর পর্ব পুরযেরা ছিলো এই বাংলাদেশের। তাদের মুখেই শুনেছে এই দেশের কথা। শ্যামলিমা বাংলাদেশে কখনো আসেনি। দেখেনি এ দেশের মাঠ ঘাট নদী প্রান্তর। যা শুনেছে বাবা ও দিদি'মার মুখ থেকেই। শুনেই এতো টান পূর্বপুরুষদের মাটির প্রতি ! এ এক বিস্ময়ের। শ্যামলিমা'র মুখ থেকেই সে টানের কথা শোনা যাক-

আমাদের জলপাইগুড়ির বাড়িতে একটা অনেক বড় ফটো আছে।দেশের বাড়ির পুকুরে নৌকার মধ্যে আমার দাদু আর তার ভাইয়েরা বসে আছেন।দেওয়াল আলো করে ঝুলছে সেই ফটো ।ওহ,বলতে ভুলে গেছি,দেশের বাড়ি বলতে ঢাকা বিক্রমপুর।
আমার ছোটবেলার দুপুরগুলো ঠাকুমার হোস্টেল জীবনের গল্প শুনে কাটতো।৭ বছর বয়স থেকে ঠাকুমা হোস্টেলে থাকতো।এদেশে না কিন্তু,ওদেশে।বিদ্যাময়ী স্কুল,ময়মনসিংহ।
আগে দার্জিলিং মেল কলকাতা যেত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে।লালমনির হাট বলে একটা জায়গা আছে নাকি সেখান দিয়ে।বাবার মুখে গল্প শুনেছি।
এসব তো গেল গল্প শোনার গল্প।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যার গায়কীর ভক্ত।একসময় বিপাশা হায়াত,আবুল হায়াতের নাটক দেখতাম।বিপাশা হায়াতকে তো খুবই ভালো লাগতো।আর ছিল শমী কায়সার।ছোটবেলায় antenna ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাবা টিভিতে বাংলাদেশের চ্যানেল আনতো।আমরা নাটক দেখতাম,'ইত্যাদি' দেখতাম।একবার তো বাংলাদেশ টিম কোন একটা ক্রিকেট ম্যাচ জেতাতে বাবা তার কাজের জায়গায় সক্কলকে মিষ্টি খাইয়েছিল।
ফিরোজা বেগমের অনেক রেকর্ড আছে বাড়িতে জানেন।বাবা গ্রামাফোনে শোনে এখনো।
ওদেশ থেকে যারা ঘুরে আসে তারা সকলে বলে ওদের আন্তরিকতার কথা,আতিথেয়তার কথা।ঐ জাতীয় সংগীত এর সুরটা কানে আসলে আমার সত্যি চোখে জল আসে।কেন আসে বলুন?ও দেশে আমার কেউ নেই,ও দেশে আমি যাইও নি।তবু আসে।
আসে,কারণ ও দেশটাও কোন একসময় আমার ছিল,ওরাও বাংলা ভাষায় কথা বলে।
আমার ছোটবেলা,আমার বড় হয়ে ওঠা,আমার বর্তমান আমায় বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী মানুষের জন্য আর এক ক্রিকেট খেলার জন্য আমি ঐ দেশ কে ঘৃনা করতে পারবো না আর সেইসব দিয়ে আমি বাংলাদেশকে বিচার করতেও পারবো না।
ভালো যেমন আমার দেশ
তেমন ভালো বাংলাদেশ।

________________________________________________________________

ছবির মুখ : শ্যামলিমা দাশগুপ্ত, ওর টাইমলাইন থেকে নেয়া।

তুরাগপাড়ে জ্যোৎস্নায়

বহুদিন ধরে জ্যোৎস্নার নিচে
তুরাগপাড়ে হাটিনি
এবার হারমনিকা নিয়ে যাবো
তুমি নিবে খুঞ্জরী,
রাতের আকাশ থেকে নক্ষত্রেরা ঝরে পডবে
তোমার বেনী খুলে আলুলায়িত হবে চুল
চুলের অন্ধকারে লুকাবো তখন মুখ
তারপর গান হবে,তারপর
তুরাগপাড় হয়ে উঠবে তোমার আমার ।

বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

জ্যোতির্ময় করো

আমাদের পদচারণায় চঞ্চল হয়ে উঠিছিলো
অরণ্যের বৃক্ষাদি
পল্লবীতো হয়ছিলো সবুজে শ্যামলে
মধ্যহ্নের সূর্য রশ্মিতে তপ্ত হয়েছিলো পর্বতমালা
জলপ্রপাত বেগ পেয়েছিলো পাথরে পাথরে
ঝর্ণায় স্নাত হয়ে শীতল হয়েছিলো অঙ্গখানি।

এখনো সবুজে মাতাল হয় অরণ্য,এখনো উষ্ণ হয়
সেখানকার পাহাড়
এখনো বহে নির্মল বাতাস
এখনো জলপ্রপাতের জলে স্নান করে অনাগত মানুষ
এখনো ঝর্ণাধারায় জল ঝরে অবিরত।

এসো আমাকে আলিঙ্গন করো ঐ নদীর মতো
জড়িয়েে ধরো ঐ সাগরের মতো
মিশে যাও ঐ মোহনার মতো
চুম্বন দাও মাতৃক্রোড়ে ঐ দেবশিশুর মতো।

এসো বাহু বন্ধনে-
এসো জ্যোতির্ময় করো ঐ সূর্যের মতো।










নিঃশব্দ চরণে

এখনো ভালোবাসি, এখনো কাছে আসি নিঃশব্দ চরণে
এখনো রয়েছো তুমি চিরস্মরণে,
এখনো মনে রাখি অনিঃশেষ অশ্রু ক্ষরণে।


জাতিস্মরের বাঁশি

কিছু মেঘ হঠাৎ উড়ে আসে
ঝরে পরে পুরানো শ্যাওলা দেওয়ালে ক্যাকটাসে
কিছু ডানামেলা পাখী নির্জন বসে থাকে-
তখন আমি বৃষ্টি ঝরে ঝরে আসি
তখন মেঘে মেঘে বাঁজে জাতিস্মরের বাঁশি।

সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭

তারে খুঁজে বেড়াই

এই গোলকে ঘুরতে ঘুরতে কতোজনের সাথেই তো দেখা হয়ে যায়। পথ চলতে চলতে পথের উপরে কিংবা কফি হাউসে গরম চা চুমক দিতে দিতে। তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় কবি জসিম উদদীন হলে। আমার রুমমেটের কাছে তিন দিনের অতিথী হয়ে সে এসেছিলো। চিত্রালীতে প্রকাশিত 'সেই চোখ' কবিতাটি পড়ে সে আমার ভক্ত হয়ে যায়। অদ্ভূূত এক বন্ধু বৎসল চুম্বক শক্তি ছিলো তার। তাইতো তিনদিনেই সে আমার প্রাণের কাছে ঠাঁই করে নিয়েছিলো।

তারপর অনেক বছর দেখা নেই। ভুলেই গিয়েছিলাম সেই স্বল্প সময়ের বন্ধুটিকে। এক সন্ধ্যায় ফার্মগেট বাস স্ট্যান্ডে আমি দাড়িয়ে আছি। পাবলিক বাসে আসবো এয়ারপোর্টে। হঠাৎ আলো আধারীতে  সেই বন্ধুটি  আমার কাছে এগিয়ে আসে। যার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো জসিম উদ্দীন হলে। সেও যাবে এয়ারপোর্ট বাস স্ট্যান্ডে। পরে জানলাম আমার এলাকা দক্ষিনখানে একটি মেসে সে ভাড়া থাকে।

সে সময় আমার কর্মহীন জীবন চলছিলো। নতূন বিয়ে করেছি। হঠাৎ সেই বেকারত্ব জীবনে এই বন্ধুটি আমার সকাল বিকালের সাথী হয়ে যায়। প্রায় তিন মাস ঢাকা শহরের কতো পথে পথে একসাথে ঘুরেছি তার কোনো শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর,  লাইব্রেরী চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরী, যাদুঘর প্রাঙ্গন, ধানমন্ডি লেকের পার, পুরানো ঢাকায়,পথের উপর টং চা'র দোকান, কতো জায়গায় যে দু'জন ঘুরে বেড়িয়েছি, আর সময় কাটিয়েছি।

একবার সদরঘাটের প্লাটফরমের রেলিং এ দাড়িয়ে দু'জন বুড়িগঙ্গার জল দেখছিলাম, কতো লঞ্চ এসে ভিড়ছে প্লাটফরমে। কতো মানুষ জীবিকার জন্য আসছে ঢাকা শহরে। মনটা কেমন উদাস লাগছিলো। জীবনের প্রতি হতাশার কথা বলছিলাম ওকে। সে তখন আমার ঘাারের উপর হাত রেখে বলেছিলো- Never give up easily in life, success is right around the corner.

ওর এক কাজিন ছিলো একটি বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক। নিজে ভালো কিছু করতোনা। তরপরেও তার কাজিনকে বলে ব্যাংকে ভালো একটি চাকুরী আমাকে পাইয়ে দেয়। এরপর থেকে আমি চাকুরীতে ব্যস্ত হয়ে যাই। আগের মতো তার সাথে আড্ডা বা ঘোরাঘুরি করা সম্ভব হতোনা। এর কিছুদিন পর দক্ষিনখানের মেস ছেড়ে  কলাবাগানের একটি মেসে সে চলে আসে।

এরপর মাঝে মাঝেই সুযোগ সময় পেলে কলাবাগানের  মেসে যেয়ে ওর সাথে আমি দেখা করতাম। একবার প্রায় ছয় মাস, ওর সাথে আমার দেখা করা হয়নাই। পরে যখন যাই, যেয়ে দেখি কলাবাগানের ঐ মেস ছেড়ে সে অন্যত্র চলে গেছে। মেসমেটরাও বলতে পারেনি সে কোথায় গিয়েছে।

এই পৃথিবীর পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে কতোজনের সাথেইতো মানুষের দেখা হয়। যে পথগুলো দিয়ে আমি ঘুরেছি, সে পথের উপর দিয়ে আকাশ ছিলো, কিন্ত সে পথে তার দেখা পাই নাই। কতো শূণ্য প্রান্তরের মধ্য দিয়ে একাকী দৌড়ে দৌড়ে হেটেছি কিন্তু কোথাও আমার সে বন্ধুটি ছিলোনা। এখন ফেসবুক,গুগল, টুয়েটারেও  সার্চ দিয়ে দেখেছি, সেখানেও তার খোঁজ পাওয়া যায় নাই।

মানুষ ঘুরতে ঘুরতে নাকি চাঁদ হয়ে যায়, যেখানেই থাক, পৃথিবীর যে কোনো কোণকে নাকি সে আলোকিত করে রাখে। আমিও আমার সেই বন্ধুটির আলোর দ্যূতি গায়ে মাখি। আমার জীবনের এক ক্রান্তিকালে যে উপকার সে করেছিলো, তার ঋণ আমি শোধ করতে পারি নাই। সেই ঋণ শোধ করার জন্য আমি এখনো এই ঢাকা শহরের পথে পথে তাকে খুঁজে বেড়াই।

ওর ঠিকানা আমার পুরোপুরি জানা নেই। গ্রামের নামও মনে নেই। শুধু পোস্ট অফিস ও থানার নামটি মনে আছে। মোঃ শফিকুল ইসলাম, পোঃ ভিটঘর, থানা- নবীনগর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কেউ একটু খুঁজে দেখবেন কি ?









রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭

যেতে যেতে পথে

ঈদের পরে, না হলে অক্টোবরে বাড়ী যাবো। মা মরে যাবার পর তেমন বাড়ী যাওয়া হয়না। গত পাঁচ বছরে গিয়েছি মাত্র দুই বার। মা বেঁচে থাকতে প্রায়ই যেতাম। বিমানবন্দর স্টেশন থেকেই ট্রেনে উঠবো। হ্যাপিকেও সাথে নিয়ে যাবো। ওকে যখন আগে বাড়ী নিয়ে যেতাম, তখন লাল রঙ্গের শাড়ী পড়িয়ে নিয়ে যেতে হতো। মা পছন্দ করতো লাল রঙ্গের শাড়ী।এখন মা নেই। তাই কোনো বাধ্য বাধকতাও নেই। মৌচাক স্টেশনে যদি ট্রেনটা আধা ঘন্টা থেমে থাকে, তবে ভালো হতো। পাশে শালবন থেকে একটু হেটে আসা যেতো। প্লাটফরমে চা'র দোকানে কাঠের বেঞ্চিতে বসে দুজন চা'ও খেতে পারতাম।

যমুনায় ব্রীজের উপর দিয়ে যখন ট্রেন পার হয়, তখন আশ্চর্য রকম শিহরণ লাগে। ট্রেনের জানালা খুলে ভরা যমুনার অথৈ জল দেখতে খুব ভালো লাগে । অনেক দূর পর্যন্ত দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখা যায়। ট্রেন পার হয়ে পশ্চিম পাড়ে গেলেই  গ্রামগুলো কাছে চলে আসে।

এই নদী আমাকে ডাকে,ঐ দিগন্ত জোড়া জলধীতে
পরাণ আমার ডুবে যেতে মন চায়,
ঐ যে ওপারের গ্রাম, জামরল গাছের নীচে
আমরা খেলেছিলাম কতো ডাংগুলি,
ট্রেনের টিকেট কেটে চলে যেতাম পাকসী
পদ্মার ঢেউ দেখতাম,আর দেখতাম
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের লোহার খাঁচাগুলি।


সয়দাবাদ স্টেশনে নেমে রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে আমাদের বাড়ী যাওয়া যায়। আমরা রিক্সাতেই যাই। রিক্সার হুড নামিয়ে পথ চলতে ভালো লাগে। রাস্তার দু'পাশের সারিবদ্ধ গাছের ছায়াতল দিয়ে রিক্সা চলতে থাকে। আমরা দেখি ফসলের ক্ষেত, ছোট ছোট খাল ডোবা আর পুকুর। গাছে গাছে ঘুঘুদের ডাক শোনা যায়।

শৈলাভিটা নদীর কাছে গেলেই যতো নস্টালজিয়া। এই নদীতে একসময় অনেক জল থাকতো। এখানে খেয়া পারাপার হতো। প্রায়ই বোষ্ঠুমীদের গানের আসর বসতো নদীর কুলে। গান শুনতে শুনতে কতো খেয়া যে মিস করেছি। এখন এখানে খেয়া নৌকা নেই। কংক্রীটের বিশাল ব্রীজ। নীচে ধূধূ বালুচর। খরস্রোতা জলও নেই। এখন আর কোনো বোষ্ঠুমীদের গান শোনা যায়না।

তারপর আর বেশী পথ নেই। ছোনগাছা বাজার থেকে মেঠো পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। মন প্রফুল্ল হয় ফসলের গন্ধ নিয়ে। হ্যাপি মাথায় বড়ো করে ঘোমটা টেনে নেয়। সে যে তার শ্বশুর বাড়ীর গাঁয়ের পথে হাটছে।

এই পথে চলতে পা যে এখন অবশ হয়ে আসে,
জানালার পাশে মা আর বসে থাকেনা
কখন আসবে তার খোকা ঢাকা শহর থেকে
মলিন মুখ তার অনেক আগেই
আকাশের মেঘে মেঘে মিশে গেছে-
বাড়ী যেতে মন চায়না আর, এতো ধূলি পথে !
চোখের নীচে কেবল অজস্র ক্রন্দণ ।





কলাবতী

লেকের পারে পথের ধারে এই কলাবতীকে আজ দেখে এলাম। সারারাত ব্রোথেল রমণীদের মতো বৃষ্টিতে ভিজে পাঁপড়িগুলো নুয়ে ফেলেছে। আমি ওকে স্পর্শও করিনি,গন্ধও নেইনি। জানি ওর গায়ে বুঁনো গন্ধ ছিলো, তবুও এই অনাদরের ফুলটিকে আদর না করেই চলে এলাম।

মাধবী ভিলা

অনেকদিন ধরে মাথায় একটি বাড়ীর নাম ঘুরপাক খাচ্ছে। ' মাধবী ভিলা '। কোথায় যেনো দেখেছিলাম এই বাড়ী। প্রাচীন কোনো বিধ্ধস্ত নগরীতে হয়তো দেখে থাকবো । ভিতরে বাইরে পলেস্তারা খসে যাওয়া, অলিন্দ জুড়ে পরগাছা আর লতাপাতায় ছেয়ে আছে। বাড়ীর চারদিকেও গাছ গাছালি। আমলকি,হরতকি,শিরিষ,ডগডুমুর আরো কতো কি !সুপারীর সারিও। মনে হয় যেনো পুরো আঙ্গিনার উপরে সবুজের ছাদ। এক নিঝুম  দুপুরে এই বাড়ীরই বারান্দায় বসে কার সাথে যেনো আমার প্রথম কথা হয়েছিলো। সেই মুখও মনে করতে পারছিনা। একি স্বপ্নে দেখা কোনো বাড়ী.? নাকি কোনো ভ্রম ! নাকি সত্য। 

নিদ্রাবতী রাত

আজ কোনো কথা নয়
যদি ওঠে নবমীর চাঁদ, মায়াবতী তোর ভ্রুকুটী প্রেমময়
ঘুম এনে দেবে এই স্বপ্নময়ী রাত।

সেই কবে থেকে ঘুম নেই,
দূর প্রান্তরে মরিচীকার ছায়া, স্বপ্নের কথা বলি যেই
ভরিয়ে দিস তুই ভালোবাসার মায়া।

তারপরও তোকে ভালোবাসি
বিনিদ্র রাতের দুপুরে করি শোক, দুঃখ দিস তবুও
তোর কাছে আসি
তোর জন্য স্বপ্ন দেখে এই চোখ।

আর কোনো কথা নয় মায়াবতী,
আসবেই নিদ্রাবতী রাত ,তুই হবি তখন অমরাবতী
সেদিনও উঠবে এমনি নবমীর চাঁদ।



শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭

সঙ্গীত

আমি না থকলেও তোমার নাকফুল থাকবে, হাতের বালা থাকবে, গলার হার থাকবে,সিঁথির টিকলি থাকবে,খোঁপার কাঁটা থাকবে। আমি একটি গীত লিখে যেতে চাই তোমার জন্যে। রিমঝিম বৃষ্টির দিনে শুনবে সেই সঙ্গীত।

রাঙ্গামাটির পথে পথে

রাঙ্গামাটির পথে পথে এখন ধূসর ধুলো উড়ছে,
পাহাড় চাপায় থেতলে গেছে অসংখ্য মানুষ,
বন থেকে বের হয়ে এসেছে কাঠবিড়ালী,বুঁনো হাতি
বন মড়োগ, বন গাভি ভয়ে লুকিেয়েছিলো ওরাও
ক্ষুধার্ত গিরগিটি গর্ত থেকে বের হয়েছে
নর মাংসের গন্ধে-
রাঙ্গামাটির আকাশে এখন শকুনেরা উড়ছে।

রাঙ্গামাটির পথে পথে এখন আর শোনা যায়না
রবি ঠাকুরের সেই গান
'গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ'
মানবেন্দ্র,অপর্ণাচরণ,কল্পনা তোমরা আজ কেউ নেই
কে কাঁদবে সেখানে ?
রানী ইয়ান ইয়ান, তুমি কি এসেছিলে পাশে-
গেয়েছিলে কি ক্রন্দণের কোরাস গান ?ঈ একসাথে,
রাঙ্গামাটির পথে পথে।


শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭

সাগরের গান

কতো বছর ধরে শুনিনি সাগরের গান
কতোদিন দেখিনি ঝিনুকের রং
তোমাকে খুঁজেছি দূর জলধীতে,
শরীরের ভাজে খোঁজে শিকড়ের ডালপালা
বিমুগ্ধ নাবিকে মতো ফেলে নোঙ্গর,
ঠিক তখনই সাগরের গান বেজে ওঠে
ভূ-কম্পনের মতো আমার শরীরে।

তুমি জল দিও

আজন্ম থেকে যেতে পারি তোমার কাছে
যেমন প্রান্তর জুড়ে আছে ফসলের মাঠ
পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যায় নদী
আমি আকন্ঠ পান করি এর জল.
যেমন ছলাৎছল মাঝি বেয়ে নিয়ে যায় নৌকা
অতল গহীনে ফেলে নোঙ্গর
আমিও তেমনি নাও ভাসিয়ে দিতে পারি
তোমার অথৈ জলে-
তুমি জল দিও,আমি আজন্ম এই জলেরই চাতক।

  

আমি আছি স্বপ্নলোকে

আমি চলে গেলেও আমার শূণ্যতার মাঝে
সকল চিহ্ন পড়ে থাকবে
যেমন পড়ে থাকে মৃত্তিকার উপর আকাশের ছায়া
আমার জামা কাপড় ভাঁজ করে টানানো
থাকবে আলনায়
না হয় সুগন্ধি কোনো ট্রাংকে
ঝুমঝুম বৃষ্টির দিনে ট্রাংক খুললেই উপচে আসবে
আমার শরীরের গন্ধ
কখনো কখনো মেঘ না হলেও যেমন বৃষ্টি নামে
তেমনি জল হয়ে ফিরে আসবো তোমার চোখে।

তুমি একাকী হাটবে যখন বাড়ীর আঙ্গিনায়
কোনো প্রভাতে
যখন বসে থাকবে ঘরের সামনে শিউলীতলায়
উদাসীন কোনো দুপুরে
আমি না থাকলেও দখিনা বাতাসে আমার
পদধ্বনি শুনতে পাবে
নিঝুম রাত্রিতে যখন ঘুম আসবেনা চোখে
নির্ঘুম চোখ ওপাশ ফিরালেই দেখবে
আমি আছি তোমাকে ছুঁয়ে
আছি তোমার স্বপ্নলোকে,সকল চৈতণ্যে সবসময়।






বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

বিদিশার অন্ধকার

কোনো এক শণিবারের বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানের লেকের ধারে বসে বিদিশা আমার হাত ধরে বলেছিলো- 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' সেদিন সেই মনোরম বিকেলে বিদিশার কানের কাছে মুখ রেখে কানে কানে আমিও বলেছিলাম-
' তোমাকেও আমি ভালোবাসি।' আমাদের ভালোবাসার কথা শুনে উদ্যানের সকল ঘাস সেদিন সবুজ হয়ে উঠেছিলো। লেকের জল হয়ে উঠেছিলো চঞ্চল। শিরিষ আর ছাতিম গাছ থেকে ঝরা পাতাগুলো ঝরে পড়ছিলো আমাদের উপর।'

তারপর কতো বিকেল, কতো সন্ধ্যায় আমি আর বিদিশা কতো যে ভালোবাসা রচনা করেছি, সেকথা জানে চন্দ্রিমা উদ্যানের ঘাস আর লেকের জল। দিনগুলি আমার কাটছিলো ভালোই বিদিশার ভালোবাসা নিয়ে। হঠাৎ একদিন সব এলোমেলো হয়ে গেলো । এক ধূসর সন্ধ্যায় চন্দ্রিমার ঘাসে বসে বিদিশা আমাাকে বলেছিলো- ' তোমার সাথে আমার ঘর বাঁধা হবেনা।' সেদিন সেই সন্ধ্যায় আমি বিদিশার কাছে এর কোনো কারণ জানতে চাইনি। সোজা ঘাসের উপর দিয়ে হেটে হেটে রাজপথে এসে জনারণ্যে মিশে গিয়েছিলাম। পিছনে আর ফিরেও তাকাইনি ।

তারপর অনেক বছর চলে গেছে। একদিন বিকাল বেলা খুব মন খারাপ লাগছিলো। ভাবলাম- চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে একটু বেড়িয়ে আসি। আমি বসেছিলাম যেয়ে সেইখানে, যেখানে বসে বিদিশার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম- 'ভালোবাসি'। এতো বছর পরে আজ নিজেকে খুবই অপরাধি মনে হচ্ছিলো,আফসোস করছিলাম- কেনো সেদিন বিদিশাকে বলিনি- 'কি তোমার অসুবিধা ছিলো, কেনো তোমার বিয়ে করা সম্ভব নয়,?'

লেকের ধারে বসে থাকতে কেমন যেনো হাঁপিয়ে উঠছিলাম। উদ্যানের ঘাসগুলো সেদিনের মতো সবুজ ছিলোনা । লেকের জল কেমন অস্বচ্ছ, ঘোলাটে হয়ে আছে। শিরিষ ও ছাতিম গাছ থেকে মরা পাতাগুলো ঝরে পড়ছিলো। সারা উ্দ্যান জুড়ে কেমন আঁধার নেমে আসতে থাকে, কেমন যেনো বিদিশার মতো অন্ধকার !

বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

বৃষ্টিমঙ্গল

আমি তখন বাগবাটী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে। কিন্তু নদী নালায় তখনো বন্যার পানি ঢোকে নাই। সেদিন স্কুলে ক্লাস শেষে বাড়ী ফিরবো কিন্তু হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘ দেখা দেয় এবং বৃষ্টি নামা শুরু হয়। সবাই বৃষ্টি থেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি আর তা করলাম না। বইগুলো প্লাস্টিকের কাগজে পেঁচিয়ে নেই। ধূলির রাস্তা একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদা হয়ে যেতো। কাঁদায় স্যান্ডেল পড়ে হাটা যেতো না। আমি একহাতে বই আরেক হাতে স্যান্ডেল নিয়ে আড়াই মাইল পথ কাঁদায় হেটে এবং বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ী ফিরি। মা প্রথমেই তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে আমার মাথা মুছে দেয়। কিন্তু মাথা মুছে্ দিলে কি হবে, রাতে ঠিকই ভীষণ জ্বর এসে গিয়েছিলো।

একবার বাবার সাথে শহর থেকে হেটে বাড়ী ফিরছিলাম। শৈলাভিটা খেয়াঘাট পার হওয়ার পর থেকেই মুশলধারে বৃষ্টি শরু হয়ে যায়। পথ চলতে যেয়ে বাবা তার হাতের ছাতা আমার দিকে ঝুঁকে রাখে। আমি যেনো ভিজে না যাই। কিন্তু আমি বার বার ছাতার বাইরে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি। সেদিন সারা রাস্তা বাবার ছাতার নীচে এমনি লুকোচুরি খেলে ভিজতে ভিজতে বাড়ী ফিরে এসেছিলাম।

তখখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমি। কবি জসিম উদ্দীন হলে থাকি। সেদিন সারাদিন বৈশাখের তপ্ত গরম ছিলো। রাতে সামান্য গুরি গুরি বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঠিক ঐ রকম নয়, দু'এক ফোঁটা ফোঁটা। একটু শীতল হওয়ার জন্য সে রাতে সারারাত আমি আর আমার এক বন্ধু হলের ছাদে শুয়ে থেকেছিলাম।

ঢাকার দক্ষিণখানের বাড়ীতে তখন আমি একা থাকি। বর্ষার দিনে সন্ধ্যার পর অফিস থেকে যখন বাড়ী ফিরতাম, তখন প্রায়ই বৃষ্টির জন্য প্রা্র্থনা করতাম। এয়ারপোর্ট বাস স্ট্যান্ডে নামার পর যেদিন বৃষ্টি পেতাম, সেদিন আমার মনের স্ফূর্তি বেড়ে যেতো। আমি সারা পথ একাকী ভিজতে ভিজতে ঘরে চলে যেতাম।একা থাকার কারনে কেউ দেখতে পেতোনা আমার শরীরের ভেজা কাপড়।

সবে মাত্র বিয়ে করেছি তখন। একদিন সন্ধ্যার পর আমরা দুজন শেরেবাংলা নগর মামার বাসা থেকে রিক্সায় করে মিরপুরে আমার বোনের বাসায় যাচ্ছিলাম। আবহাওয়া অফিসের কাছে যেতে না যেতেই মেঘ শুরু গম্ভীর করে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। আকাশ ভেঙ্গে বূষ্টি শুরু হয়ে যায়। বউ রিক্সার হুট উঠিয়ে দিতে চায়। আমি বাঁধা দেই। আমরা দুইজন কাক ভেজার মতো ভিজে চুপসেে যাই। সেদিন মিরপুর পর্যন্ত সারা রাস্তা ভিজে ভিজে চলে গিয়েছিলাম। আমার বালিকা বধূ প্রথম সেদিন বুঝতে পেরেছিলো- একটা পাগল তার কপালে জুটেছে।

ফুয়েন্টসোলিং ভূটানের একটি ছোট্ট শহর। একে একটি বাজারও বলা যেতে পারে। ভারতের জলপাইগুরির জয়গাঁও সীমা্ন্ত লাগোয়া এই শহরটি অবস্থিত। ভারত থেকে সড়কপথে ভূটানে যাবার অন্যতম এটি একটি প্রবেশ দূয়ার । এই ফুয়েন্টসোলিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিলিগুরি থেকে আমি আর আমার স্ত্রী ট্যাক্সিতে জয়গাঁঁও যাচ্ছিলাম। আমরা যখন ডুয়ার্স অতিক্রম করি তখন থেকেই মুশুলধারে বূষ্টি শুরূ হয়ে যায়। জলপাইগুরির চা বাগানের ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা টিলা পথে আমাদের ট্যাক্সি জয়গাঁওয়ের দিকে চলতে থাকে। গাড়ীর উইন্ড গ্লাস বৃষ্টির জলে ঘোলা হয়ে আসছিলো। চা বাগাানের ভিতর দিয়ে বৃষ্টিমুখর সেই দিনের পথচলা স্বর্গীয় মনে হয়েছিলো । কি যে ভালো লেগেছিলো সেই ক্ষণ। মনে হয়েছিলো এই পথ যেন কোনোদিন শেষ না হয়। কিন্তু-

'গীতিময় সেইদিন চিরদিন বুঝি আর হলো না
মরমে রাঙ্গা পাখি উড়ে সে গেলো নাকি
সে কথা জানা হলো না.....
চোখের ভাষাতে আজকে না হয়
মনের কথা বলো না।'





সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭

আষাঢ়ের প্রথম দিন

বিয়ের কয়েক মাস পরের কথা। স্ত্রী বাপের বাড়ী নাইওর চলে গিয়েছে। সকালবেলা খবরে কাগজ পড়ে জানতে পারলাম, আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। জানালা খুলে দেখি,বাইরে সত্যি সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে। মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো। এমন বাদল দিনে আমি একা। ঘরে সে নেই। বিটিভি অন করতেই জানা গেলো আবহাওয়ার খবর। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। এ রকম মেঘলা বৃষ্টি থাকবে নাকি আরো তিন দিন। খবরটা শুনে মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেলো।

ঘর থেকে বৃষ্টির মধ্যেই বড়ো কালো ছাতাটি নিয়ে বের হই। প্রথমে আজিজের হোটেলে গরম পরোটা খেয়ে নেই।তারপর চলে যাই অফিসে। অফিস থেকে ফিরে আসি সন্ধ্যায়। রাতেও ছাতা মাথায় দিয়ে হেটে হেটে চলে যাই আজিজের হোটেলে। শুনলাম ওরা নাকি আজ কচু দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না করেছে। আমি ইলিশ মাছের অর্ডার দিলাম।মাছ দিয়ে ভাত খেতে বসেছি. তখন বেয়ারা এসে বললো- 'স্যার রুই মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডালের ঘন্টো রান্না করা আছে, দিবো নাকি?' আমি বললাম- দাও । হোটেলে ভাত খেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মোরে দিয়ে ঘরে চলে এলাম।

বাড়ীতে আর কেউ নেই। রাতে একা একা বিছানায় শুয়ে আছি। গ্রামীন পরিবেশ। বাংলো টাইপের ঘর। টিনের চালের উপর ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে মাঝে ঝরো বাতাসও বইছে। হঠাৎ করেই জানালার কাঠের পাল্লা বাতাসে শব্দ করে দুলে ওঠে। ঘরের পশ্চিম পাশে বাঁশ ঝাঁর। দমকা বাতাসে হেলানো বাঁশগুলো টিনের চালে ঘর্ষণ দিচ্ছিলো। একা একা একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম। ঘুমও আসছিলোনা। উঠে বিছানার এক পাশে এসে বসি। বৃষ্টি তখন অঝোর ধারায় ঝরছে। খুব ইচ্ছা হলো রাতের এই বৃষ্টি দেখতে। দরজা খুলে বাইরে চলে আসি। ঘরের চাল থেকে বৃষ্টির জল তখন গড়িয়ে পড়ছে। আমি হাত দিয়ে সে জল ধরলাম। বাইরে  নিস্তব্ধ নির্জন অন্ধকার। দূরে কেবল এয়ারপোর্ট টার্মিনালের আলোটাই দেখা যাচ্ছিলো।

আমি ঘরের ভিতর এসে আবারও শুয়ে পড়ি। ঘুমাবার চেস্টা করছিলাম। কিন্তু ঘুম আসছিলোনা। বাইরে বাঁশ ঝাঁরে কোঁত কোঁত করে পেঁচা ডেকে উঠলো। তার কিছু পরে বিমান বন্দর স্টেশনে ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি শুয়ে আছি, জানালাটা আরো একবার ঝরো বাতাসে দুলে ওঠে। হঠাৎ বাইরে বারান্দার  গেটে কড়া নারার শব্দ শুনতে পাই। একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম, তারপরও উঠে দরজা খুলে বারান্দায় চলে আসি। দেখলাম, আমার স্ত্রী বাইরে দাড়ানো। পরনের সালোয়ার কামিজ বৃষ্টির জলে ভিজে গেছে। আমি এতো রাতে তাকে দেখে বিস্মিত হই। গেট খুলে দেই। সে ভিতরে প্রবেশ করে।

ঘরের ভিতর আমার বিছানায় এসে সে বসলো। হাতে ওর একগুচ্ছ ভেজা কদমফুল। ফুলগুলো আমার হাতে দিয়ে বললো- 'আজ এই প্রথম বর্ঘার রাতে তোমাকে আমার ভালোবাসায় সিক্ত করলাম।' আমি ফুলগুলো হাতে নিয়ে তার সুবাস নেই, তারপর বলি - 'হঠাৎ এতো রাতে কি ভাবে তুমি এলে ?'

স্ত্রী:  ট্রেনে চলে এলাম। পথে কোনো অসুবিধাই হয় নাই।
আমি :  তোমারতো আরো পরে আসার কথা ছিলো, এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে ?
স্ত্রী :  সকালে বৃষ্টি দেখে তোমার কথা খুব মনে পড়লো। তুমি বৃষ্টি পছন্দ করো এবং সেই বৃষ্টির সময়ে আমি তোমার কাছে থাকবোনা তা কি করে হয় ? এটা মনে করেই তোমার কাছে চলে এলাম।
আমি : এই ফুল কোথায় পেলে ?
স্ত্রী:  রাজেন্দ্রপুর স্টেশন থেকে কিনেছি।

সে তার গায়ের ভেজা জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিলো। হঠাৎ এই বৃষ্টির রাতে ওকে পেয়ে চিত্ত আমার আনন্দে ভরে উঠলো। আষাঢ়ের প্রথম দিনে সকালবেলায় যে শূণ্যতা অনুভব করছিলাম, আজ এই রাতে তাকে কাছে পেয়ে মন প্রাণ পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। দেখলাম ,সে একটি সাদা রঙ্গের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। মূখে কোনো সাজ সজ্জা করা নেই। নির্মল প্রকৃতির মুখ। কবেকার সেই লোধ্ররেণুও সে মাখেনি। পায়ে তার রূপার নুপুরটাও আজ পড়ে নাই। বৃষ্টির রিনঝিন ধ্বনি যেনো তার পায়ে বাজছে। এই বৃষ্টি ঝর ঝর বাদল দিনে স্টেরিওতে কোমল মৃদমন্দ সুরে গান শুনতে ইচ্ছা করলো-

'আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরানসখা বন্ধু হে আমার॥
আকাশ কাঁদে হতাশ-সম, নাই যে ঘুম নয়নে মম--
দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম, চাই যে বারে বার॥
বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,
তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।
সুদূর কোন্ নদীর পারে, গহন কোন্ বনের ধারে
গভীর কোন্ অন্ধকারে হতেছ তুমি পার।'

গান বাজতে বাজতে একসময় গান থেমে যায়। বাইরে বৃষ্টির আবেগ প্রবল হতে থাকে।দমকা বাতাস ঝড়ে রূপ নিলো।ঝুম ঝুম শব্দে ভরে উঠলো বাইরের পৃথিবী। কে কবি কখন লিখেছিলো- 'এমন দিনে কি তারে বলা যায় !' অথবা 'দুঁহ করে দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া।' তারপর বৃষ্টির রিমঝিম দোলায় কখন ঘুমিয়ে গেছি,জানি নাই।

সকালে দেরী করেই আমার ঘুম ভাঙ্গে। বাইরে তখনো  বৃষ্টি হচ্ছিলো। পাশে ফিরে দেখি বিছানায় সে নেই। ভাবলাম, আগেই ওর ঘুম ভেঙ্গেছে । হয়তো সে স্নান ঘরে গেছে। অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষণ,কিন্তু আসছিলোনা। খুঁজলাম এ রুম ও রুমে, কোথাও সে নেই। ঘরের দরজা এবং বারান্দার গেটও বন্ধ। বিস্ময়ে ভাবছিলাম- তাহলে কোথায় গেলো সে ! আলনায় রাতের ভেজা সালোয়ার কামিজ মেলে দেওয়া দেখলাম। বিছানার কাছে যেয়ে দেখি- রাতের কদম ফুলগুলো এলোমেলো হয়ে বিছানার উপরে পড়ে আছে।

দূরের পাখীরা

পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যা নেমে আসে, পাখীরা চলে
আসে ঘরে
কাছের পাখীরা দূরে চলে যায়
নিঝুম নিরবে তুমি তখন শোনাবে গান
তখন বাজবে সুর তানপুরায়,তখন তারা জ্বলে উঠবে
তখন মেঘ আড়াল করবে অরুন্ধতিকে।

গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বে পৃথিবী
ঘুমিয়ে যাবে নিশি পাখী
ঝরে পড়বে আকাশ থেকে তারা, মূত্তিকার নীচে
পতঙ্গেরা ঘুমিয়ে যাবে
আমার চোখে তখন ঘুম আসেনা।

তখন আমি স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন দেখি পাখীর চোখের দিকে চেয়ে থেকে
স্বপ্ন দেখি দূরের আকশের মেঘে মেঘে
তখন ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নামে
যে গান শুরু হয়েছিলো সন্ধ্যা বেলাায়
সেই গান সেই সুর তখন বৃষ্টির জলে থেমে যায়।




রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭

প্রেমপত্র

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ে একটা মেয়ের কাছ থেকে প্রথম প্রেমপত্র পাই। মা'র ভয়ে সেই প্রেমপত্রটি আমাদের ঘরের চাঙ্গের উপর উঠে বসে পড়েছিলাম। কাঁচা হাতে ভাসা ভাসা করে তাতে অনেক কথাই লেখা ছিলো। সব কথাই আজ আর মনে নেই। তবে একটা কবিতা লেখা ছিলো। সেই কবিতার কিছু অংশ-

আমি দেখতে অনেক মিষ্টি
পাকা আমের মতো মিষ্টি
তুমিতো দুধকলা খাও
সাথে পাকা আমও খাও
পেকে আছে গাছে বেল
তুমিতো খাও আপেল
পাকা জামের মতো মিষ্টি
দেখো তুমি জামি মিষ্টি।

মা'র ভয়ে আমার আর সেই মিষ্টি খাওয়া হয়নাই। কারণ মা ছিলো একজন জাঁদরেল শিক্ষিকা। পড়া না পারলে কাঁচা কুঞ্চি দিয়ে সবাইকে পিটাইতো। ঐ কুঞ্চির মাইরের ভয়ে সেই প্রেমপত্রের উত্তরটাও আর দেওয়া হয়নাই।

লিমেরিক

পাকি ভরে পাইলামনা, পাইলাম আমরা ইন্ডিয়ারে
পাইতাম যদি তরে এবার ঘষা দিতাম পিন্ডিয়ারে
মাইর খাইছিলি সেই একাত্তরে
ভুইল্লা গেছোস বিচ্ছু গুলানরে
ইমরান খান-কির পো শিক্ষা দিতাম জিন্দেগিরে।


প্রিয়তম হে

আর কতোবার তোমাকে ডাকতে হবে
আর কতোবার ডাকবো গানে
আর কতোবার বলবো
প্রিয়তম হে তুমি এসো।

তুমি দাড়িয়ে আছো দরজার ওপাশে
অকুল অন্ধকারে
খুঁজিছো আমারে
সকল নিঃসঙ্গতায় তুমি এসো।

বিনম্র চোখে চেয়ে থাকবে আত্মজা
আকুল হবে যখন সকল মায়া
পড়বে তোমার ছায়া
প্রিয়তম হে তখন তুমি এসো।





শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭

এ নহে কাহিনী


অনেকদিন আগের কথা। রাজশাহী থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম সিরাজগঞ্জ। রাত আটটার দিকে ট্রেন সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে এসে পৌঁছে। শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরে আমাদের গ্রামের বাড়ী। বাড়ীতে যাবার তখন কোনো পাকা রাস্তা ছিলোনা। কোনো রিক্সাও চলতো না। হেটে যেতে হতো অথবা টমটমে কিংবা গরুর গাড়ীতে। টমটমও সব সময় পাওয়া যেতো না। আমি স্টেশনে নেমে খুঁজছিলাম টমটম কিন্তু কোথাও দেখছিলাম না। হেটে হেটে চলে আসি স্টেশন রোডের মোরে। দেখি কড়োই তলায় একটি টমটম দাঁড়িয়ে আছে। সাধারনতঃ সন্ধ্যার পরে কোনো টমটমই রাজি হয়না গ্রামে যেতে। তারপরেও কাছে যেয়ে কোচোয়ানকে বললাম- তুমি যাবে ?
কোচোয়ান: কোথায় যাবেন ?
আমি : ছোনগাছা হাট।
কোচোয়ান : শৈলভিটা নদী পর্যন্ত যাওয়া যাবে। তারপর আর যাবো না।
আমি : আমি যদি তোমাকে দেড়গুণ বেশী টাকা দেই।
কোচোয়ান : যদি খেয়া নৌকা টমটম পার করে, তবেই যাবো।
আমি : ঠিক আছে, তাই হবে। চলো।
আমি উঠে বসলাম টমটমে। কোচোয়ানকে দেখে ভালোই মনে হলো। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। টমটম শহর থেকে বের হয়ে কাটাখালি নদীর তীর ধরে চলতে থাকে। নদীর তীরে এসে দেখি- পূর্ব আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে । কাটাখালি নদীর ওপাড়েই ভাঙ্গাবাড়ি গ্রাম। সেই গ্রামের মাথার উপর দিয়েই চাঁদটি দেখা যাচ্ছে। সারা লোকালয় আর প্রান্তর যেনো জ্যোৎস্নার প্লাবনে ভেসে গেছে। আমার মনটা খুবই উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। ভাবলাম,এই পূর্ণিমার আলোর নীচ দিয়ে পথ চলতে ভালোই লাগবে।
নদীর ওপারে ভাঙ্গাবাড়ী গামটি দেখে মনে পড়লো স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠিনী ঝর্ণার কথা। ঝর্ণা বাগবাটী স্কুলে আমার সাথে পড়তো। মেট্রিক পরীক্ষার পর ওর বিয়ে হয়ে যায় এই ভাঙ্গাবাডি গ্রামে। শুনেছি বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও গীতিকার রজনীকান্ত সেনের বাড়ীর পাশেই ঝর্ণার স্বামীর বাড়ী। আজকের এই পূর্ণিমার চন্দ্রভূক রাতে হঠাৎ মনটা উদাস হয়ে উঠলো ঝর্ণার জন্য। মনে হলো এই হেমন্ত পূর্ণিমার রাতে কোচোয়ানকে বলি, টমটমটি ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের দিকে ঘুরিয়ে দিতে। একটু দেখে যাই আমার সেই প্রিয় সহপাঠিনী ঝর্ণাকে।
ঝর্ণা ছিলো নিতান্তই গ্রামের সহজ সরল একটি মেয়ে। আমাদের ক্লাশে আটজন মেয়ে পড়তো। ওদের সাথে বেশী কথা বলার সুযোগ হতোনা। স্যাররা ক্লাশে আসার সময় কমনরুম থেকে ওদের নিয়ে আসতো, আবার ক্লাস শেষ হলে ওদেরকে আবার নিয়ে যেতো।একবার আমার কাছ থেকে ঝর্ণা 'এ নহে কাহিনী' নামে একটি বই নিয়েছিলো। বইটি তখন গল্পের বই হিসাবে ক্লাস সেভেনে আমাদের পাঠ্য ছিলো। বইটি যখন ঝর্ণা আমাকে ফেরৎ দেয়, তখন খুলে দেখি, ভিতরে একটি ঝাঁও গাছের ঝিরিঝিরি পাতা।
আরেকবার তখন ক্লাস নাইনে উঠেছি। ঝর্ণা আমার কাছ থেকে এ্যালজাবরা নোট খাতাটি চেয়ে নিয়েছিলো। খাতাটি যখন ঝর্ণা ফেরৎ দেয়, দেখি খাতার ভিতরে একটি কাগজ ভাঁজ করা। খুলে দেখি কাগজটিতে কোনো কিছু লেখা নেই। শুধু একটু জল ছাপ বোঝা গেলো। আমি বাড়ীতে যেয়ে কাগজটি জলে ভিজাই। দেখলাম, সেখানে জলছাপে লেখা আছে - ' ঝর্ণা + আমার নাম।'
সেদিন মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিল আপ করার শেষ দিন ছিলো। ঝর্ণাকে দেখলাম, খুব বিষন্ন। আমার সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছিলো। আমি বুুঝতে পারছিলাম, হয়তো ঝর্ণার সাথে আর কোনো দিন দেখা হবেনা। আমারও মন খারাপ লাগছিলো- ভাবছিলাম, মেয়েটিকে না হয় ভালোবাসি নাই, কিন্তু মায়াতো করেছি। ওকে দেখে আজকেও খুব মায়া হলো। আমি ওর কাছে এগিয়ে যাই, বলি- পরীক্ষার রেজাল্টের পর কোন্ কলেজে তুমি ভর্তি হবে ?
ঝর্ণা : জানিনা, বাবা আর পড়াবে কিনা, তাও জানিনা।
আমি : পড়া বন্ধ করোনা।
ঝর্ণা : হুম। তুমি কোথায় ভর্তি হবে ?
আমি : ঢাকায় চলে যাবো।
ঝর্ণা: তোমার সাথে আর দেখা হবেনা ?
আমি : হয়তো হবে, হয়তো না।
তারপর অনেক বছর চলে গেছে। ঝর্ণার সাথে আমার আর দেখা হয় নাই। শুনেছি মেট্রিক পরীক্ষার পর এই ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে ঝর্ণার বিয়ে হয়েছে। অনেকদিন পর্যন্ত 'এ নহে কাহিনী' র ভিতরে ঝর্ণার দেওয়া সেই ঝাঁউ গাছের পাতাটি রেখে দিয়েছিলাম। এক সময় পাতাটি শুকিয়ে অস্তিত্ব চিহ্নহীন হয়ে যায়। তারপর ঝর্ণাকে ধরতে গেলে এক প্রকার ভুলেই যাই।
আজ এই হেমন্ত পূর্ণিমা রাতে, এই বাঁধভাঙ্গা জ্যোৎস্নায় ,দুরের ঐ ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামটি দেখে ঝর্ণার কথা খুব মনে পড়ছে। একসময় কাটাখালী নদীর কাঠের পুল আমরা অতিক্রম করি। ঘোড়ার পায়ের খটখট শব্দে রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে চলতে থাকে টমটম। রহমতগঞ্জের কবরস্থানটি অতিক্রম করে আরো কিছুদূর চলে যাই। গা'টা একটু ছমছমই করছিলো। নির্জন দুই রাস্তার মোরে ,যেখানে ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামের শেষ প্রান্ত। সেখানে দেখতে পাই- অদূরে বটগাছের নীচে বসে একটি মেয়ে গুমরে গুমরে কাঁদছে। কোচোয়ান লোকটিকে বললাম- 'ঐ বটগাছের নীচে আমাকে নিয়ে যাও' কিন্তু কোচোয়ান আমার কথা শুনলো না। বললো- 'ভাই, ওদিকে আমাদের যাওয়া ঠিক হবেনা।'
আমার কাছে মনে হয়েছিলো- ঝর্ণাই এ রকম করে বসে বসে ওখানে কাঁদছে। ও হয়তো আমাকেই বলতে চাইছে, 'তুমি তোমার টমটমে তুলে আমাকে নিয়ে যাও। আমাকে ওরা খুব অত্যাচার করে।' ভাবলাম কোচোয়ানকে আবার বলি- 'টমটমটি ঐ বটগাছের দিকে ঘুরিয়ে দিতে'। দেখলাম- কোচোয়ান ততোক্ষণে ঘোড়ার পিঠে জোরে চাবুক মেরেছে। ঘোড়াটি তখন আরো জোরে পায়ের খটখট শব্দ তুলে দৌড়াতে থাকে। টমটমটিও দ্রুত চলতে থাকে শৈলাভীটা নদীর খেয়াঘাটের দিকে ।






শুক্রবার, ৯ জুন, ২০১৭

গান শোনাও


চারদিক থেকে শূণ্যতার ধবনি ভেসে আসে
কেমন হাহাকার আর কান্নার শব্দ
একটা গান শোনাও-
যেনো মৃতেও শোণে সে গান
যেনো কবরেও পৌঁছে সে গান
যেনো থেমে যায় দূরাগত ঐ কান্নার ধ্বনি।

যে চুম্বন তোমাকে আমি দিয়েছিলাম
তা তূমি ফিরিয়ে দাও আমার ঠোঁটে
যে জল ফেলেছিলাম আমার চোখে
তা তুমি তুলে নাও তোমার চোখের বৃন্তে।

একটা গান শোনাও-
যে গান শুনে ভালোবাসা এসে থামবে
আমার মনের কোণে।

তুমি আর কবিতা

কথা ছিলো বৃষ্টি নামলেই তুমি আসবে
বৃষ্টির জল ছন্দ হয়ে কবিতায় এলো
তুমি আর আসলেনা।

যখন আমি কবিতা লিখি তখন তুমি ঘুমিয়ে থাকো
তোমার চোখের স্বপ্নগুলি
আমার কবিতার শব্দ হয়ে আসে।

যখন তোমার ঘুম ভাঙ্গে
তখন তোমার জেগে থাকার সৌরভগুলি
আমার কবিতায় এসে মাধূর্য ছড়ায়।

আর যখন তুমি কাছে আসো ,
তখন আর কবিতা লেখা হয়না
তুমি আর কবিতা ভালোবাসায় একাকার হয়ে যায়।




বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭

ভালোবাসবে কি ?

মনে করো, এই যে আমি কবিতা লিখছি, গান লিখছি-
আমি যদি আর না লিখতে পারি !
ধরো, একদিন আকাশ দেখবো বলে বেরিয়ে গেলাম।
যদি আর ফিরে না আসি।
যদি আকাশের তারাদের কাছে যেয়ে বসে থাকি।
এই যে দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবি টানানো আছে,
ওটা নামিয়ে দিয়ে নজরুলের মতো ঝাঁকড়া চুলের
আমার ছবিটি কি তুমি ওখানে লাগাবে ?

সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে দেখবে কি ছবির মূখ খানি ?
তুমি কি সেই ছবিতে ফুল দেবে ?
টেবিলের উপর কবিতার খাতাটি পরে থাকবে
হিবিজিবি কাটাকাটি করা অনেক কিছুই লেখা আছে
পাতা উল্টালেই দেখতে পাবে- রাত জেগে কতো প্রহরে
তোমাকে নিয়ে কতো কথা লিখে রেখেছি-
কতো ভালোলাগা,কতো গ্লানি, কতো দীর্ঘশ্বাসের কথা
তুমি কি পড়বে সেই সব কথা ?
তুমি সেদিনও আমাকে ভালোবাসবে কি ?
নাকি ধূপ জ্বালিয়ে রেখে অন্ধকারে বসে শুনবে এই গান-

' তব চরণের কাছে,যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে--
নাই নাই ভয়,'সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই।
অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই।'



বুধবার, ৭ জুন, ২০১৭

ছায়া

যতোদূর পর্যন্ত দৃস্টি যায় তাকিয়ে দেখলাম
কোথাও তোমার ছায়া নেই
শুধু আকাশের ছায়াটি পড়ে আছে।

পথ

পার্কের পাশে ছায়াহীন এই রাস্তা দিয়ে জৈষ্ঠ্যের কড়া রোদ্রের ভিতর আজ একাকী মিনিট দশেক হেটেছিলাম। মনে হয়েছিলো এ যেনো এক অনন্ত পথ চলা, শেষ হচ্ছিলোনা।

অথচ আমরা দু'জন প্রায় দুইযুগেরও বেশী সময় ধরে একসাথে পথ চলছি। এতোগুলো বছর কখন জীবন থেকে ফুঁড়ত হয়ে চলে গিয়েছে, জানতে পারি নাই।

স্বর্গের কাছাকাছি

তোমাকে আমি দেখেছিলাম তুরাগের পাড়ে
আমার সোনালী স্বপ্নের প্রথম প্রহরে
দেখেছিছলাম তোমার দুচোখ,
দিগন্তজোরা তোমার চুল,
কাঞ্চনজঙ্গার মতো ঠোঁট,
নদীর মতো উদ্দাম শরীর,
হীরের মতো হাসি
পশ্চিম আকাশের লাল আভার মতো চুম্বন
অস্তমিতকালীন সূর্যের মতো আলিঙ্গন।

তুরাগের পাড়ে সেদিন সেই বিকেলে
আমরা চলে গিয়েছিলাম স্বর্গের কাছাকাছি।

মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০১৭

'Broken in a million piecces'

ক্রিস্টাইন আর্চিবাল্ড, আদর করে তোমাকে
সবাই ডাকতো ক্রিসি বলে-
তুমি এসেছিলে তোমার দেশ কানাডার
বৃটিশ কলম্বিয়ার ক্যাস্টলগার শহর থেকে
তুুমি ছিলে সমাজকর্মী,হৃদয় ছিলো ভালোবাসার
কাজ করতে এখানে গৃহহীন আশ্রয় কেন্দ্রে ।

তুমি প্রেমিকা ছিলে একজনের-
অপেক্ষায় ছিলো তোমার প্রিয়তম টেইলর ফার্গুসন,
যার হৃদয় লক্ষ টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেছে
এই গ্রীস্মেই তোমার বিয়ের সানাই বাজার কথা ছিলো
সেই উৎসব আর হলোনা,
তার আগেই তুমি প্রাণহীন হয়ে গেলে
গীর্জায় বেজে উঠলো করুণ ভায়োলিন।

'মানুষ যেনো হোমলেস সেন্টারে সময় দেয়,
তারা যেনো সাহায্য করে সব গৃহহীনদের।'
এই বার্তা নাকি তুমিই পাঠিয়েছো মানুষের কাছে-
লন্ডনের পেডেস্টিয়েনের কংক্রিটের ব্রীজের উপর
এখনো থোকা থোকা রক্তের দাগ লেগে আছে,
কাঁদছে সবাই, কাঁদছে তোমার গৃহহীন মানুষগুলোও।

_________________________________________________
ছবি : ক্রিসি'র টুয়েটার একাউন্ট থেকে নেয়া।
তথ্যসূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।







সোমবার, ৫ জুন, ২০১৭

প্রিয় বাংলাদেশ

কেমন যেনো গুমোট বদ্ধ লাগে।কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো।
যা লিখতে চাই তা লিখতে পারিনা,ভয় পাই
একটি চাপাতি ধেয়ে আসে আমার দিকে, কিংবা ৫৭ ধারা
মেয়ের হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতেও ভয় পাই
মনে হয়,বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাবো !

এ রকম মন খারাপ হলে আগে বাড়ীতে চলে যেতাম
মা'র কাছে গেলেই মন ভালো হয়ে যেতো
এখন মা'ও নেই
স্নিগ্ধ সুবাতাস নিতে পারিনা ধানক্ষেতের আলে দাড়িয়ে।

এই শহরেই আছি,
যাবো কোথায় ? কোন ভিন দেশে ? এই শহরেই তুমি থাকো
ঠিকানা একটাই,ঐ লাল সুবুজের ছায়ার নিচে ঘুমিয়ে থাকি-
প্রিয় বাংলাদেশ।

মৈত্রী বন্ধন

নীচের ছবি দুইটি দু'টো দেশের বর্ডারের ছবি। উপরের ছবিটি সুইডেন ও নরওয়ের বর্ডারের ছবি।। আর নীচেরটি বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের ছবি। একটি সভ্যতার, আরেকটি অসভ্যতার !

কি আকুতি ! কি মৈত্রী বন্ধন !!

রবিবার, ৪ জুন, ২০১৭

বসন্ত মাধবী রাতে

শুধু ভালোবাসার জন্য বেঁচে থাকতে চাই
অনন্ত সময়কাল
ধূলির সন্ধ্যায় হেটে চলে যেতে চাই
দূরে কোথাও,
যেখানে দাড়িয়ে দেখা যায় পূরবীর বাঁকা চাঁদ
আমি চলে যেতে চাই অমরাবতীতে
ভালোবাসায় পেতে চাই অমরত্ব।

তোমার শরীরে বুঁনো ফুলের গন্ধ আসে
আমি তার সুবাস নেই -
মায়াময় অর্কেষ্ট্রার সুর সেখানে বাজে
আমি তার গান শুনি বিহবলতায়
জ্যোৎস্না মাধবী রাতে।


চোখের জল

সেই কবে তার অটোগ্রাফ খাতায় লিখে দিয়েছিলাম,
'ভালোবাসার জন্য চোখের জল ফেলতে হয়,
তবেই সে জলে মুক্তা ফলে ।'
আজ এতো বছর পর এসে দেখতে পেলাম-
'তার চোখের জল কখন মনি মানিক্য হয়ে গিয়েছে জানতে পারি নাই।'


কেনো এমন আঁধার

আজ রাতের আকাশ এমন কৃষ্ণাভ কেনো ?
কেমন যেনো নির্লিপ্ত,
আকাশের রং তো নীল হয়, তবে কেনো এমন আঁধার!
আমার খুব ভয় লাগছে-
হে প্রভূ এ আঁধার থেকে আমায় মুক্তি দাও।


শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭

প্রথম আবেগ

আমার সমস্ত ভালোবাসা বুঁনো আবেগে তাড়িত
আমি বিশ্বাস করি- তোমাকেই ভালোবাসি
তোমার হৃদয়ের মধ্যে এক অসম্ভব নিরবতা
যা আমাকে কুরে কুরে আহত করে
কারণ,আমি ভুলতে পারিনা আমার প্রথম আবেগ
আমার প্রথম ভালোবাসাকে-
যে আমাকে সারাক্ষণ জাগিয়ে রাখে।

তখন প্রশান্তি

তুমি নাই একাকীত্ব চারদিক-
কোথাও তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না,
হঠাৎ দূর থেকে বাতাস এসে লাগে গায়ে
প্রশান্তিই বলে দেয়-
এই বাতাস তোমার শরীর ছুঁয়ে এসেছে।

শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭

প্রতিবাদ ও নিন্দা

নীচের দু'টো ছবিতে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। একটি জাতিস্বত্ত্বাকে ধ্বংস ও নিঃশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রক্রিয়া। ডানদিকের ছবিটি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে সেদেশের দূর্বৃত্তরা। আর বামদিকের ছবিতে রাঙ্গামাটির লংগেদুতে আদিবাসীদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে এদেশর কিছু দূর্বৃত্ত।

একটি জাতিস্বত্ত্বাকে ধ্বংস ও নিঃশ্চিহ্ন করার এই জঘন্য প্রক্রিয়াকে আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।

ছোট সে আশা

সকালে হাটতে গিয়েছিলাম উত্তরা ১৩নং সেক্টরের লেকভিউ পার্কে। পার্কের গেটে প্রবেশ করার সময় পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল ফোনটি বের করছিলাম। ঠিক পাশেই একজন ভিখারিণী বসা ছিলো। আমার পকেটে হাত দেওয়া দেখে সে খুশী হয়, ভেবেছিলো আমি বোধ হয় তাকে কিছু দান করবো। আমি তাকে কিছু না দিয়েই ক্রস করে সামনের দিকে চলে আসি। কি মনে করে পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি- ভিখারিণী আমার দিকে বিষন্ন চোখে তাকিয়ে আছে। আমার খুব মায়া হলো, ভাবলাম দশটি টাকা তাকে দিয়ে আসি। আমি ভিখারিনীর কাছে ফিরে চলে আসি এবং পকেটে হাত দেই। আমার পকেটে হাত দেওয়া দেখে এবারও ভিখারিনী খুব খুশী হয়। কিন্তু আমি আমার পকেট হাতরিয়ে দেখি-  পকেটে কোনো টাকাই নেই। বাসা থেকে বেরুনোর সময় মনের ভুলে কোনো টাকা তোলা হয়নি। আমি লজ্জিত হই। ভিখারিণী ব্যাপারটি বুঝতে পারে। দেখলাম- মুহূর্তেই তার হাসিমাখা মুখখানি পুনরায় বিষন্ন হয়ে গেলো।

তুমিই অধিশ্বরী

আমার সাম্রাজ্যে আমিই রাজকুমার
সব দৌলত তোমাকেই সমর্পণ করতে চাই
তোমাকে নিয়ে চলে যেতে চাই
স্বর্গের দুয়ারে একদিন.।

বিশ্বভূবনের সর্বোত্রই তুমি
সর্বোত্রই আমার চেতনায় তুমি লীন
এই সাম্রাজ্যে আর কোনো রাজা নেই
সমস্ত সিপাহসালার আমারই অধীন।

আমি জয় করতে এসেছি তোমার হৃদয় সাম্রাজ্য
তোমার প্রেম,বিদ্বেষ, আশ্লেশ, ঘৃণা, রূপ -,
সম্রাজ্ঞী, আমার সাম্রাজ্যে তুমিই অধিশ্বরী। 

ঝরা ফুল

সারারাত ধরে এই পথের উপর ঝরে পরেছিলো কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। সারারাত বৃষ্টিও ঝরেছিলো ওদের উপরে। আজ সকালবেলা পথচারীরা পা মাড়িয়ে হেটে চলে যাচ্ছে। এও সত্য!


বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭

The Kiss

পৃথিবীতে না আসতে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম,
এসে দেখলাম নদী,সাগর,জলপ্রপাত,
চন্দ্র সূর্য,গ্রহ,তারা-
দেখা হলো তোমার সাথে
দেখলাম এখানে সবকিছুই মায়ার টান
চুম্বনেও জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা
ছাড়তে ইচ্ছা করেনা, এই পৃথিবীর মতো।

ভালোবাসারও মৃত্যু হয়,
যেমন করে চলে যেতে হয় এই পৃথিবী থেকে
সেই প্রথম ক্রন্দন ধ্বনির মতো
অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে।


_______________________________________________________________________________
The Kiss

এই পৃথিবীতে এসে দেখলাম নদী,সাগর,
চন্দ্র সূর্য,গ্রহ,তারা-
দেখা হলো তোমার সাথেও -
এখানে সবকিছুই মায়া আর মরিচীকা।

চুম্বনেও জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা
ছাড়তে ইচ্ছা করেনা,এই পৃথিবীর মায়ার মতো
সে এক অদ্ভূত টান।

ভালোবাসারও মৃত্যু হয়,
যেমন করে চলে যেতে হয় এই পৃথিবী থেকে
সেই প্রথম ক্রন্দন ধ্বনির মতো
অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে।
___________________________________________________
Pic :  'The Kiss'
Sculptor : Auguste Robin
France.