সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬

কোথাও তুমি নেই

 শুয়ে আছি ঘুম আসে না চোখে,
তাই তাকিয়ে থাকি দূর নীলিমায়
দেখি তুমি সাদা শাড়ি পড়ে মেঘে মেঘে ভাসছো,                                                                                         তোমার ঐ মেঘে ঢাকা ছায়ায় ঘুম আমার এসে যায়                                                                                            ঘুম আর স্বপ্নের ভিতর তখন তোমাকে দেখি-                                                                                                       তুমি সদ্য স্নান সেরে নীল শাড়িপড়ে হাটছো বারান্দায়                                                                                       চুল থেকে তখনো ফোটা ফোটা  ঝরে পড়ছে জল                                                                                              তোমার ঐ চুলের গন্ধ আর পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়                                                                                     যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন স্বপ্নটাও চলে যায়                                                                                                           তখন শূণ্যতায় চোখ মেলে চেয়ে দেখি-
 তোমার নীল শাড়ি,ভেজা চুল এসব কিছুই নেই। 

আদিমতা তুমি ফিরে এসো না

আদিমতা তুমি ফিরে এসো না,আমরা সভ্যতায় থাকতে চাই
বর্বরতা তুমি ফিরে এসো না, আমরা সম্প্রীতিতে থাকতে চাই
ধংস তুমি উন্মত্ত না, আমরা শান্তির জনপদ এখানে নির্মাণ করেছি
আগুন তুমি জ্বলে উঠো না, আমরা শীতল আবাস এখানে গড়েছি।

কতটা ভালোবাসি

 একদিন আমার স্বপ্ন চোখে যখন তুমি এসে ধরা দিলে, মনের মধ্যে তখন যেন অদ্ভুত এক মুক্তির আনন্দ বয়ে গেলো । এ মুক্তি অব্যবহিত অন্তর্জালকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে জানান দিল জগতে প্রেম আছে । শরীর নয়,আত্মার কাছকাছি স্বর্গীয় সুধা আছে। তোমার প্রেরণায় জীবন আমার এগিয়ে যাচ্ছে ,‘যুগ বয়ে যাচ্ছে তোমাকে নিয়ে। তোমাকে কতটা যে ভালোবাসি, এতটা যে কোন পাহাড়ের ক্ষমতা নেই পরিমাপের, এতটা যে কোন আকাশে না এ বিস্তৃত হবে, এতটা যে না কারো চিন্তায় এর জায়গা হবে !

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

'Have a nice day'

 একটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে ব্রিটিশ অভিনেতা পিটার উস্তিনভকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল তার।তাই তিনি তাড়াহুরোও করছিলেন। ডাঃ মাথুর এসেছিলেন প্রাত্যহিক শরীর চেক আপ করতে। করেছিলেনও তিনি,সবই ঠিক ছিলো। ডাঃ মাথুর এবং সে এক সাথেই বেড়িয়ে আসেন। ডাঃ বিদায় নিয়ে চলে যান তার গাড়ির দিকে, ইন্দিরাজি ডাঃ মাথুরকে - 'Have a nice day' বলেই লনে হাটতে থাকে। ঠিক তখনই বিয়ন্ত সিং এর স্টেন গান থেকে এক ঝা্ঁক গুলি এসে লাগে তার বুকে। ১ নং সফদর জং রোডের বাড়ীর উদ্যানের সবুজ ঘাস তখন নিমিষেই লাল হয়ে যায়। তারপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বা্ঁচাবার সব চেস্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।তার জীবন প্রদীপ আগেই নীভে গিয়েছিলো।
ইন্দিরাজি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ ছিলেন।অাজ ৩১ অক্টোবর, বিয়োগান্তক ও বিষাদের এই দিনে তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।

একদিন দুপুরে

একদিন দুপুরে বাড়ীতে একাকী শুয়ে আছি।রোদ্র্রের তপ্ততায় ঘরের চালের টিন ঝা্ঁঝা্ঁ করছে।চোখ বন্ধ করে আছি। হঠাৎ মনে হলো এই খর দুপুরে বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।দেখলাম- তুমি আঙ্গিনার উঠোনে বৃষ্টিতে ভিজছো।তোমার চোখে মেঘলা আকাশের মায়া। চুল থেকে ঝরছে বিন্দু বিন্দু জল,শাড়ীর আ্ঁচল তোমার জল কাদায় ছু্ঁঁয়ে যাচ্ছে। বিমুগ্ধ চোখ খুলে দেখতে পাই,এতো বৃষ্টি নয়,তুমি এই অলস দুপুরের প্রান্তবেলায় অপেক্ষা করছো আমার জন্য, চেয়ে আছো দূর পথের দিকে,যে পথ দিয়ে আমি ফিরে আসি ঘরে। কিন্তু আমার হাতে কোনো ফুল নেই,মালা নেই যা তোমাকে দিবো। মন খারাপ করতে না করতেই আমি  বিছানা থেকে উঠে বসি, শরীরটা আরমোরা করে উঠে দাড়াই। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় যেয়ে মুখ দেখি, সেখানে নিজের মুখ ছাড়া অন্য কারোর প্রতিচ্ছায়া দেখতে পাইনি।

ভালোবাসা নেই ঘৃণা নেই

আমি তাকে বললাম,ভালোবাসা দিব, তুমি কি দেবে আমাকে ?
উদাসীন সে,কোনো জবাব নেই
যেনো বহুকাল ধরে বহুজনের কাছ থেকে সে বহু ভালোবাসা পেয়েছে
 এসবের তার দরকার নেই।
তাকে আবার বললাম- তোমাকে আমি ঘৃণা করি
আচমকা মুখ তার বিবর্ণ হয়ে গেলো
যেনো সে এই প্রথম কারো কাছ থেকে ঘৃণা পেলো।

মনে মনে বলি, এখন তুমি কি দেবে আমাকে ?
তোমারতো কিছুই নেই- ভালোবাসা নেই,ঘৃণাও নেই।

শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

ধর্ষকের শাস্তি

একদা দৈববানী শুনে ব্রহ্মা বারো বছরের জন্য তপস্যায় বসলেন। তপস্যায় বসেও ব্রহ্মার নারী আসোক্তি যায় না। ঊর্বশী শতরূপাদের দেখলেই তার কামাদ্রেক হতো । কিন্তু তপস্যায় বসে এসব করা যাবে না। তাই ক্ষোভে দুঃখে একদিন পুস্করতীর্থে তীরে বসে ব্রহ্মা তার উথ্থিত লিঙ্গ পাথরের উপর রেখে আরেকটি পাথর দিয়ে ছ্যাচা দিয়ে বলে- 'তরে না কইচিলাম, অপ্সরী দেখলেই খারা হইবি না,তারপরেও তুই খারা হোস, এবার মজা বোঝ্,কেমন লাগে।'
   পা্ঁচ বছরের শিশু পূজার ধর্ষক সাইফুল এখন রিমা্ন্ডে।এই জানোয়ারের লিঙ্গটা একটা ইটার উপরে রেখে অন্য আর একটা ইটা দিয়ে ছ্যাচা দেওয়া হোক।  জীবনে যেনো আর এ রকম খায়েস ওর না হয়।

ভোরের পাখীদের গান

যে পাখী ভোরের গান গেয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়,তাকে আর সারাদিন দেখা যায় না।যে শিউলীরা ফুটেছিলো সারারাত তারা ঝরে যায় সকাল হবার আগেই। যে হাস্নাহেনার গন্ধে আকুল হয়েছিলো বাড়ীর প্রাঙ্গন,তা রোদ্র হবার আগেই লীন হয়ে যায়। আবার, অশ্রুর ফো্ঁটার মতো শিশিরও ঝরে এই সকালেই। এইসব দুঃখ বেদনা নিয়েই প্রতিদিন ভোর হয়।সবাইকে প্রভাতী শুভেচ্ছা।

আজ যে দীপাবলী

হাটুতে মাথা গুজে সারা সকাল বসেছিলাম বারান্দায়।মন খারাপ করে কেটে গেছে দুপুর আর বিকেল,                তখনো কেউ এসে আমাকে ডাকেনি।
সন্ধ্যায় নেমেছিলো বিষাদের ছায়ায় অ্ন্ধকার, তারপর রাত !
তখনো কেউ আসেনি আমার কাছে , হাটুতে গুজে থাকা মলিন মুখখানি একাকী উঠিয়ে দেখি-
চারিদিকে কেবল আলোর ছ্বটা, কেবল আলোর রোসনাই। আজ যে দীপাবলী।
সবাইকে দীপাবলীর শুভেচ্ছা।

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

শালবনে একদিন

তখন সবে মাত্র নতুন বিয়ে করেছি।বউকে নিয়ে শালবন দেখার খুব সাধ হলো। একদিন ছুটির দিনে লোকাল ট্রেনে টংগী স্টেশন থেকে শ্রীপুর চলে যাই। ওখানে স্টেশনে নেমে একটি চা'র দোকানে বসে দু'জন চা খাই,সাথে দু'টো করে ডালপুরিও খেয়ে নেই। স্টেশনটা আস্তে আস্তে এক সময় ফা্ঁকা হয়ে যায়। আমরা বসেই আছি। দেখি একটা লোক একটা বানর নিয়ে এগিয়ে আসছে। সে বানরের নাচ দেখায়। লোকটাকে দশ টাকা দিয়ে বানরের নাচ দেখি । তারপর হাটতে হাটতে আমরা শালবনের দিকে চলে যাই। ওর পড়নে ছিলো হলুদ জর্জেট শাড়ী,পায়ে ছিলো লাল রঙ্গের বাটার জুতা আর চুল ছিলো সবুজ ভেলভেটের ফিতা দিয়ে খোপা বা্ঁধা , দেখতে একদম রূপবানের মতো রূপবতী লাগছিলো। আমরা  শালবনের অনেক ভিতরে চলে যাই। কা্ঁচা রাস্তা দিয়ে হাটছি, ভাবলাম, ওর একটা হাত ধরি, কিন্তু লজ্জা লাগলো, কেউ যদি দেখে ফেলে। আরো কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি,একটি জলার মতো পুকুর।পুকুরের চারপাশটাও শালবনে ঘেরা।পাড়ে দূর্বা ঘাসের উপর দু'জন বসে পড়ি। বক,ডা্হুক,হা্ঁস,পানকৌড়িরা তখন কিচিরমিচির করছিলো।চারিদিকে তাকিযে দেখলাম জনমানব শূণ্য। আমি ওর মুখের দিকে একবার তাকাই, দেখি নির্জন দুপুরের রোদ্দুর ওর মুখে এসে পড়েছে।খুব মোহনীয় লাগছিলো। ভাবলাম- একটু কাছে টানি, আদর দেই ঐ মুখে। ওর মুখের দিকে ঝুকতেই কোত্থেকে একটি তীর এসে ওর শরীরে বি্দ্ধ হয়।রক্তাক্ত হয় ওর শরীর, রক্তে ভিজে যায় ওর শাড়ি।  দু্টো পানকৌড়ি তখন আহত রক্তাক্ত হয়ে  উড়ে চলে গেলো।

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

এই মেঘলা দিনে

সকালটা যেমনটি দেখেছিলাম এখন তা নেই।এখন দেখছি বৃষ্টি। একদম দয়িত/দয়িতাকে জড়িয়ে শুয়ে থেকে ঘুমুবার মতো বৃষ্টি। ফেসবুকেও তেমন কোলাহল দেখছি না। তার চেয়ে YouTube এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একটা গান শোনা যাক-
এই মেঘলা দিনে একলা,ঘরে থাকেনা তো মন ,কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।...... .আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে,কি যে ভাবি আনমনে।
তুমি আসবে ওগো হাসবে, কবে হবে সে মিলন।.......

সুভ সকাল

একটু আগে ঘুম ভেঙ্গেছে। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙ্গলে মন এমনিতেই খুশী লাগে।জানালা খুলে দেখলাম বাইরের আকাশ ও দুরের বৃক্ষরাজি। তখনো সূর্য ওঠে নাই।কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার লাল আভা। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। সে বাতাস লাগছে আমার গায়ে। খুব ভালো লাগছে।সবাইকে সুভ সকাল।

মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬

ফিরে আসবো অলকানন্দায়

 এই পৃথিবীর দিকে মুখ রেখে ভাবি- এখান থেকে চলে গেলেও শতবর্ষ পরে আবার এই মাটিতেই ফিরে আসবো। যে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে অমোঘ মৃত্যুর মাঝে, সেই ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন সাথে নিয়ে আবার আসবো এই ধূলির পৃথিবীতে।তখন দেখতে পাবো কি আবার নন্দনকাননে ফুটে থাকা সেই অলকানন্দা ফুল।দেখতে পাবো কি অলস দুপুরে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে আমার জন্য বকুলফুলের মালা গা্ঁথছে কি কেউ ? কিংবা যাকে পেয়েছিলাম সারা জীবনে, ফিরে এসে তাকেই কি আবার পাবো পরজীবনে ? এই শস্যক্ষেত এই নদী এই নীল আকাশ সব কি আগের মতোই থাকবে ?এই লোকালয়ের,পশু পাখি মানুষ বৃক্ষরাজি এসব ফিরে এসে আবার দেখতে পাবো ? নাকি অচেনা কেউ হয়ে যাবো আমি সেই সময়ে!


সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

একদিন অালস্য্য এক দ্বিপ্রহরে বিছানায় হেলান দিয়ে অনুপম রায়ের এই গানটা ঢাকাই সিনেমার সংলাপের মতো করে বলছিলাম -

'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও,
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি।
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক,
সব পেলে নষ্ট জীবন।'

পাশে থেকে আমার স্ত্রী বলে ওঠে- কেন হঠাৎ একা থাকতে চাও ? কিসের জীবন গুছিয়ে নিয়েছো ? সব পেলে নস্ট জীবন ! এ সব কি কথা  ?

আমি আবার বলতে থাকি-

'তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোয়,
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হওয়া কাচের মতো।
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও,
দূরবীণে চোখ রাখবো না।'


স্ত্রী বলে- হায় খোদা ! তুমি কি পাগল হয়েছো ? আমি আবার কোথায় যাবো ? চলে গেলে আমাকে দূরবীন দিয়েও দেখবে না। কি আবোল তাবোল বলছো !

আমিি তখন তাকে বলি-

'আমার জন্য আলো জ্বেলোনা কেউ,
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ।
এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি,
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না।'


আমার বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে- নাগো না,আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।
এই যে ধরেছি যে তোমার হাত, এ হাত আর ছাড়বো না।

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

সে এক মায়ার টান

হেমন্ত এলেই কার্তিকের নবান্নের গন্ধ আর পাকা ধানের সুবাসে মাতাল করা গ্রামের কথা মনে হয় । যে গ্রামের মমতা আমি পিছনে ফেলে রেখে এসেছি বহু বছর আগে,সেই গ্রাম আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।এ এক মায়ার টান। গ্রামের ষে বাড়ীতে জন্ম নিয়েছিলাম,সেই বাড়ীতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে মন চায়। শুয়েও পড়তে চাই ঐ মাটির নীচে।যেখানে দূর্বাঘাসে ঝরে পড়বে ভোরের শিশির, যেখানে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরবে শ্রাবণ সন্ধ্যায়, যেখানে জোনাকীরা জ্বলবে, যেখানে পূর্নিমায় ভাসবে আকাশ। 

কাগজের ঝুনঝুনি

উত্তরার ৭নং সেক্টরের পার্কের গেটের সামনে আজ একজন বৃদ্ধ কাগজের তৈরী পাখীর ঝুনঝুনি বিক্রি করছিলো। বৃদ্ধকে দেখে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। এক চৈত্রে আমাদের গ্রামের মেলা থেকে বাবা আমাকে এমনি একটি কাগজের তৈরী ঝুনঝুনি কিনে দিয়েছিলো, সেই ঝুনঝুনি পেয়ে আমি কি যে খুশী হয়েছিলাম ! আজ এই ঝুনঝুনিওয়ালা বৃদ্ধকে দেখে হঠাৎ নস্টালজিয়ায় ফিরে যাই,হঠাৎ কেন জানি তার প্রতি খুব মায়া হলো, তার অসহায় মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো - সে এবং তার পরিজন প্রায়ই হয়তো অভূক্ত থাকে। আমি তাকে বললাম- আপনার ঝুনঝুনির দাম কতো।বৃদ্ধ বললো,একটির দাম ৫ টাকা। আমি বললাম-কয়টি আছে ? বৃদ্ধ গুণে বললো, ১৬ টি।আমি ১০০ টাকা দিয়ে সবগুলো ঝুনঝুনি কিনে নেই।বৃদ্ধ খুশীতে আমার হাত টেনে নেয় তার বুকে। বাসায় এসে ঝুনঝুনিগুলো আমার দুই মেয়েকে দিয়ে দেই। ওরা এতোগুলো কাগজের তৈরী পাখীর ঝুনঝুনি পেয়ে খুব খুশী হয়।যেমন খুশী হয়েছিলাম আমি আমার ছেলেবেলায়। ভাবছিলাম- সব খুশীই দেখতে কি একই রকম হয় ? কোনো খুশীর আড়ালে থাকে আনন্দ, আবার কোনো কোনো খুশীতে থাকে বেদনা। যেমনটি দেখেছিলাম আজকে ঐ ঝুনঝুনিওয়ালার মুখে।

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬

ওরা ১১ জন

ওরা ১১ জন চলচ্চিত্রটি প্রথম দেখেছিলাম ১৯৭২ সালে টাংগাইল শহরে রূপবানী সিনেমা হলে।ছবিটি দেখতে যেয়ে দেখি,হলের সামনে উপচে পড়া ভীড়,লোকে লোকারণ্য।এতো মানুষ দেখে মনে হয়েছিলো- এরা জীবনে কখনো মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। হ্যা্ঁ, যারা কখনো মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি,তাদের বারে বারে ফিরে যেতেই হবে এই 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রটির কাছে।আর এই মহান সিনেমাটি যিনি বানিয়েছিলেন,তিনি হচ্ছেন- চাষী নজরুল ইসলাম।আজ তার ৭৫তম জন্ম জয়ন্তী।তিনি আর আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার অমর কীর্তি তাকে অমর করে রাখবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

সন্ধ্যার অভিবাদন

মন ভালো লাগছিলো না।বাসা থেকে তাই একাকী হাটতে হাটতে চলে যাই দিয়াবাড়ী।সাদা কা্ঁশফুলের পাশের পথ দিয়ে হাটছিলাম।পড়ন্ত বিকালের নির্মল বাতাসে ফুলগুলি দুলছিলো।ফড়িং প্রজাপতিরা তখনো উড়ছিলো ফুলে ফুলে। লেকের পাড়ে যেয়ে বসে থাকি কতোক্ষণ।দেখলাম,দূর দিগন্তে বৃক্ষরাজির আড়ালে সূর্য ডুবে যাচ্ছে।সন্ধ্যার কি এক আশ্চর্য মায়াবী আলোয় ছেয়ে গেলো দিয়াবাড়ীর আকাশ। মনটা আমার ভালো হয়ে গেলো।আজকের এই হেমন্ত সন্ধ্যার এই ভালোলাগা পাঠিয়ে দিচ্ছি তাই সবার করে, যে যেখানে আছে যে প্রান্তে !

অচেনা সেই চিঠির কথা

আমি তখন কবি জসীম উদ্দীন হলের আবাসিক ছা্ত্র।একদিন দুপুরে হলের ঠিকানায় একটি চিঠি পাই।খামে কোনো প্রেরকের নাম ছিলো না। হাতের লেখা দেখেও চিনতে পারিনি,কে লিখেছে। আমি আজো সামান্যতম অনুমান করতে পারিনি,চিঠিটি কে লিখছিলো। চিঠিটি আমার সংরক্ষণে নেই। কিছু  কিছু কথা এখনো মনে আছে। ঠিক হুবুহু নয়, ভাঙ্গা ভাঙ্গা করে তারই কিছু কথা এখানে লিখছি:
'আজ আমি মহাপ্রস্থানের পথে পা বাড়িয়ে। হিমালয়ের কত নাম না জানা হিমবাহ পেরিয়ে আমি এখন এই পারিজাতের দেশে।.তুমি হয়ত পুনর্জন্ম নিয়ে আবার আসবে এ পথে, তাই পাহাড়ের গায়ে লিখে রেখে গেলাম কিছু কথা। আমার ইহকাল পরকাল সব‌ই কালের স্রোতে ভেসে চলে গেছে। এইবার বোধ হয় আমার মোক্ষলাভ হবে, তাই সেই মুক্তিপ্রদেশে পৌঁছনোর অপেক্ষায় রয়েছি | এই ঠিকানায় কোনো এক সময়ে জোনাকগুচ্ছ আলো দেখিয়ে আর আমার গন্ধবাতাস পথ চিনিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবে । এই পাথরে খোদাই করে রেখে গেলাম অক্ষরগুলি,আমার চিহ্ননাম,শুধু তোমার জন্য।'

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

আবেগ যখন আহত হয়

আমি সরাসরি আওয়ামী লীগ করি না। আমি এর সদস্যও নই। কিন্তু আমার চৌদ্দ গোস্ঠী আওয়ামী লীগ করে।এই দলটির সাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ জড়িত।এর অনেক কিছুতে আমিও আবেগ আপ্লুত হয়ে যাই।কাল সকালে যখন শুনলাম,ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন,তখন শুনে খুশীই লাগলো।ওবায়দুল কাদের আমাদের সময়েই একজন তুখোর ছাত্রনেতা ছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তার কাব্যময়ী বক্কৃতা শুনতে ভালো লাগতো।
কিন্তু সময় যতো গড়িয়ে যাচ্ছে ততোই মনটা বিষাদে ভরে উঠছে।আমিতো এই দল করিনা তবে কেনই আমার এ হাহাকার ! ঐ যে আবেগের কথা।সৈয়দ আশরাফ আমার আবেগ।আবেগ যখন আহত হয়,তখন অন্তরাত্মা কে্ঁদে ওঠে।

বর্ষণমূখর এক সন্ধ্যায়

বিয়ের আগে দক্ষিণখান এলাকায় বাংলোর মতো এক বাড়ীতে আমি একা থাকতাম।তখন বিদ্যুৎও সেখানে যায়নি।পূরো গ্রামীণ পরিবেশ।সেদিন ছিলো বর্ষণমূখর বৃষ্টির দিন।সারাদিনই ঝড়ো ঝড়ো বৃষ্টিি ঝরছে।আমি দুপুরে খেয়ে কা্ঁথা মোড়ে দিয়ে একটা ঘুম দেই। হঠাৎ এক সময় ড্রয়িং রুমের জানালার পাল্লার নড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়।দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঘর ভর্তি অন্ধকার।দিয়াশলাই জ্বেলে হেরিকেনটা ধরিয়ে নিয়ে জানালার কাছে এগিয়ে যাই।পাল্লাগুলো তখনো বাতাসে দুলছে।বাইরে খেয়াল করে দেখলাম ওপাশে কেউ নেই। নীচে মেঝের উপর তাকাতেই দেখি গন্ধরাজ ফুলের একটি তোড়া পড়ে আছে।ফুল ও পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভেজা এবং পাশে একটা চিরকুট কাগজ,তাতে লিখা- 'শুভ জন্মদিন।' হঠাৎ মনে হলো, আজ আমার জন্মদিন ! আমি ফুলের তোড়া ও চিরকুটটি বিছানার উপর রেখে দরজা খূলে বারান্দায় যাই। আলো আধারিতে বাইরে খু্ঁজে দেখলাম, কোথাও কেউ নেই।রুমে ফিরে চলে আসি- দেখি বিছানার উপর রাখা ফুলের তোড়া ও চিরকুটটি সেখানে নেই।

স্বপ্ন

যতোক্ষণ মানুষ স্বপ্নে থাকে ততোক্ষণ তার ভালোই লাগে,মনে হয় এইটাই বুঝি বাস্তব।যখন ঘুমটা ভেঙ্গে যায় তখন আফসোস করে কেন স্বপ্নের সুখটা নেই। ঈশ্বর অনেক সময় নিঃস্ব মানুষদের পার্থিব সুখ দেয় না,আবার এই মানুষগুলো যখন একটু স্বপ্নে থাকে,তখন তার স্বপ্নটা সে ভেঙ্গে দেয়,সুখটা তখন চলে যায়।

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬

শুভরাত্রি

ঘুম ঘুম লাগছে,শুয়ে পড়বো এখনই। ভাবলাম শুয়ে পড়বার আগে দেখে আসি আজকের রাতের আকাশ।কাল যদি আর ঘুম না ভাঙ্গে,যদি আর চোখ না মেলতে পারি।তাই দেখতে গেলাম আকাশকে।দূর অন্ধকার জুড়ে কেবলই শূণ্যতাই দেখলাম।আকাশকেও কেমন যেনো বিষন্ন মনে হলো, আর তারাগুলোও কেমন অনুজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে। সবাইকে শুভরাত্রি।

ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু

আপনি যখন আসলেন তখন এ জনপদ ছিলো বিরাণ
ফসলের ক্ষেতগুলো ছিলো চৈত্রের খরার মতো রূক্ষ উজার
খাল বিল নদী ছিলো চৌচির স্রোতহীন
শকুনেরা তখন আকাশে উড়ছে
শুকুরেরা তখন বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে
খুনীরা তখন উল্লুম্ফন করছে দেশ বিদেশে।

আপনি যখন আসলেন তখন দেখলেন রবীন্দ্র সরোবরের জল রক্তে ভাসছে
জনকের রক্ত,জননীর রক্ত,ভাইদের রক্ত,তাতৃ বধুদের রক্ত- সব রক্ত
সরোবরের সাদা কমলের সাথে মিশে এক একটা রক্ত কমল হয়ে আছে
আপনার নিযুত অশ্রু সেদিন ঝরে পড়েছিলো রক্তমাখা কমল কন্ঠের উপর
বাতাসও ভারী হয়ে উঠেছিলো আপনার আর্ত কা্ন্নার দীর্ঘশ্বাসে।

আপনি যখন আসলেন তখন কিছু উর্দি পড়া দানব
বুটের কর্কশ শব্দ তুলে হাটছে এই বাংলার জনপদে জনপথে
রাইফেলের গুলির শব্দে ভয়ে সচকিত হয়ে ওঠে বন অরণ্যের পাখী
ঠিক সেই সময়ে আপনার গলায় পড়িয়ে দেওয়া হলো এক মনিহার
যে মাল্য পড়েছিলেন আপনার প্রিয় জনক
তারপর চলে গেছে পয়ত্ত্রিশ বছর।

এরই মধ্যে অনেক অশ্রুজল মিশে গেছে যমুনা মেঘনা পদ্মার জলে
দানবের চাকায় পিষ্ট হয়েছে সেলিম দেলোয়ারের বুকের পাজর
 বুলেটে ঝাজরা হয়েছে নূর হোসেনের রক্ত মাখা জীবন্ত পোস্টার
রক্ত ঝরেছে মিলনের বুক থেকে, রক্ত ঢেলেছে রাউফুন বসুনিয়া
তারপর প্রিয় আইভির শরীর রক্তে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে।

তারপর আপনি ধরলেন নৌকার হাল
যেনো মরা গাঙ্গে জোয়ার এলো
যেনো পালে লাগলো উদাম হাওয়া
যেনো নদীতে নদীতে লাগলো জল তরঙ্গের ঢেউ
সব খরকুটো সব নোংড়া ভেসে গেলো বঙ্গোপসাগরে
শকুনরা উড়ে চলে গেলো দুর দিগন্তে দিকে।


আপনি কি খুব ক্লান্ত রাখাল রাজার মেয়ে !
আপনি কি একাকী টুংগীপাড়ায় জনকের কবরের পাশে
তসবীহ হাতে প্রার্থনায় থাকতে চান ?
 বনানীতে জননীর কবরের কাছে নিরালে ঝরাতে চান অশ্রু ?
নাকি পীরগঞ্জে প্রিয়তম স্বামীর পাশে যেয়ে প্রিয় স্মৃতি স্মরণে আনতে চান ?

,কোথায় পাবেন শান্তি, শান্তির পায়রা উড়াতে হবে যে আপনাকেই
 লাল সবুজ পতাকা বুকে জড়িয়ে বলেন- 'ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু।'














বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

এই গৃহ এই সন্নাস

 আমি সংসারেই খু্ঁজেছি সুখ,সংসারেই পেয়েছি শান্তি, স্ত্রী সন্তানদেরই করেছি মায়া। এখন এই মায়া ছিন্ন করে চলে যেতে হবে পরপারে। এই যে চলে যাবার ভাবনা, এই যে কষ্ট পাওয়া-  তারচেয়ে যদি সিদ্ধর্থের মতো  প্রথম জীবনেই গৃহ ছেড়ে চলে যেতাম কোনো আশ্রমে, কিংবা ফকির দরবেশদের মতো পড়ে থাকতাম কোনো মাজারে, সেই মনে হয় ভালো হতো। এতো মায়াও করতে হতো না, চলে যাবার এই যে বেদনা তাও পেতে হতো না। ঐখানেই জীবন নিঃশেষিত হতো। ঐখানেই মরে পড়ে থাকতাম । কেউ জানতোও না, কেউ কা্ঁদতোও না।

মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

সুপ্রভাত

আজ সকালে বাড়ীর বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলাম হেমন্তের আকাশ।কোথাও মেঘ নেই । দেখতে পেলাম - আকাশের শেষ অন্ধকার সরিয়ে দেওয়া প্রথম স্নিগ্ধ আলো।কর্মহীন সকালের এই যে নির্মল বাতাস,এই যে আস্বাদিত কমলার রঙ্গের সূর্য, এই যে ভোরের পাখীদের গান ,তা আমি একাই উপভোগ করলাম। কেউই জানতে পারলো না আজকের আমার এই  ভালোলাগার উপলব্দির কথা। সবাইকে সুপ্রভাত।

কৃষ্ণ-গহবর

 অমানিশার অন্ধকার রাতে মনে হয় যেন দূরে কোথাও চরাচরের দিকে হেটে চলে যাই। জীবনটাকে মিলিয়ে দিতে মন চায় দূরের কোনো আকাশে। আমি চাই- আমার গ্লানি আমার ক্লেদ এবং জীবনের কদর্যগুলি অন্ধকারের ভিতর লু্প্ত হয়ে যাক।পথ চলতে যেয়ে দেখি- কোথাও ঝি্ঁঝি্ঁ পোকাদের গান নেই।কোথাও জোনাকীদের আলো নেই।দূর নদীতে জল কোলাহলের শব্দ নেই।কোন্ অন্ধকারের অতলতল থেকে কে যেনো দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। কে যেনো কা্ঁদছে হুহু করে।আমি কি এই তমসাকে সরিয়ে খু্ঁজে বেড়াচ্ছি কোনো আলো ? নাকি জীবনকে বিলুপ্ত করবার জন্য কোনো কৃষ্ণ-গহবর !

সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬

বিদর্ভ নগরীর রাজপুত্র

একদিন সন্ধ্যা রাতে রুমের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ি।ভাবলাম অসময়ই একটা ঘুম দেবো।কিন্তু ঘুম আর এলোনা।মনে হলো রুমটা যেন একটা বিদর্ভ নগরী। আমি যেনো এর রাজপুত্র।বনলতা সেনের কথা খুব মনে হচ্ছিলো।যদি সে আসতো রাজকুমারী হয়ে এই রাতে,যদি পাখীর বাসার মতো চোখ তুলে দু'দন্ড কথা বলতো ! সেই কবে ক্লাসে ডঃ মনিরুজ্জামান স্যার পড়িয়েছিলেন বনলতা সেন।স্যার হাসির স্থলে কৌতুক করে বলেছিলো, এ এক রহস্যময়ী নারী।একে বুঝতে হলে এক জীবন লাগবে। স্যার তার এক জীবন শেষ করে পরপারে চলে গেছেন। আমারও এক জীবন শেষের দিকে। কিন্তু এই বনলতা সেনকে আজো বোঝা হলো না।যাকে বুঝতেই পারলাম না, তাকে পাবো কি ভাবে !

অজয় রায়

তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম একবারই উদিচী অফিসে। তখন আমি ছাত্র ইউনিয়নের একজন খুদে কমিউনিস্ট।মৃনাল দা'কে বলেছিলাম- উনি কে ? মৃনাল দা বলেছিলো- উনি একজন অনেক বড়ো কমিউনিস্ট, নাম অজয় রায়। তারপর তাকে আর কখনো চোখে দেখিনি। কিন্তু মেহনতি মানুষের জন্যে অনেক জয়গান তার শুনেছি। আজ শুনলাম তিনি আর নেই।
অজয় রায়, আজ থেকে তুমি কি কেবলই লাল ফ্রেমে বা্ঁধা একটি ছবি ?
কমরেড,তোমাকে জানাই সশ্রদ্ধ লাল সালাম।



রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

তিরিশ বছর পর

ফরিদা আপা আমার একসময়ের সহকর্মী ছিলো। সেই আশির দশকে একসাথে কাজ করেছি পরিকল্পনা কমিশনে।দুই বছর পর চাকুরী বদল করে ফরিদা আপা অন্যত্র চলে যায়।তারপর আর ফরিদা আপাকে দেখতে পাইনি কোথাও।আমরা একে অপরে খুব ভালো শুভাকাংখী ছিলাম।তাকে আমি প্রায়ই মিস্ করতাম।গত তিরিশ বছর ধরে  ফরিদা আপাকে অনেক খু্ঁজেছি কিন্তু দেখা পাইনি।
গতকাল বিকালে উত্তরা হাই স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে বাসায় ফিরছিলাম। দেখি একজন বয়সী লোক আর একজন বয়সী মহিলা বিপরীত দিক থেকে হেটে আসছে।প্রথমে অতো ভালো করে তাকিয়ে দেখিনি,যখন কাছে চলে আসে তখন খেয়াল করে দেখি,এ যে দেখছি আমার সেই ফরিদা আপা। বয়সের ভারে ঠিকমতো চিনতেই পারছিলাম ন। তাকে ঠিকমতো চিনতে না চিনতেই ফরিদা আপারা আমাকে ক্রস করে চলে যায়। আর ফরিদা আপার চোখও আমার দিকে তাকানো ছিলনা ।

 কি মনে করে পিছন দিগ থেকে আমি আর ফরিদা আপাকে ডাকলাম না। যাকে আমি খু্ঁজছি গত তিরিশ বছর ধরে হঠাৎ কেন তার সাথে এই নিষ্ঠুরতাটুকু আমি করলাম। আমি কেন তাকে ডাকলাম না।আরেক তিরিশ বছর পর আর কি তার দেখা পাবো ? ততোদিন কি বে্ঁচে থাকবো  আমি অথবা সে !

আমি তোমার সুধাকর

যাদুকরও আমি সুধাকরও আমি, আমিই তোমার প্রেমিক
তোমার কাছেই আমার প্র্র্রেম হয়েছে লীন,ভেঙ্গেছে হৃৎপিন্ড
উজান থেকে আমি এসেছি তোমার দুই কূূল ভাঙ্গতে
নদীর সব স্রোত যেনো থেমে যায় অকস্মাৎ
মৃত্তিকা ভাঙ্গে নদীর জলে
তোমার উদ্দাম শরীর চেয়েছিলো কোন্ শীতলতার জল 
কোথায় দহন হয় কোন্ শুদ্ধ আগুনে
কোথায় ভাঙ্গে দুই পাড় কোথায় কে কা্ঁদে লোনা জলে।

আমিতো প্রেম নির্মাণ করতে এসেছি
আমিতো ক্ষত করিনি ভ্রুণ,ধ্বংসে মাতিনি তোমার শোভিত বাগানে
যে পুষ্প প্রস্ফুটিত তোমার দেহবল্লরীতে আমিই তার মধুকর
তোমার যতো শ্লেস আশ্লেস লাভা 
যতো হেম যতো স্বেদ জল আমিই করেছি পান
আমিই প্রেমিক,আমিই যাদুকর, আমি তোমার সুধাকর।


মা'র জায়নামাজ

আজ চার বছর ধরে মা নেই।এই চার বছরে একদিনও আমি বাড়িতে যাইনি। কোনো শূ্ণ্যতাবোধ কি আমাকে কা্ঁদায়? নাকি ভাঙ্গা বুক, এই জন্যে বাড়ি যাওয়া হয়না । কাছে হলে আস্তে আস্তে করে হেটে চলে যেতাম।বাড়িতে যেয়ে খু্ঁজতাম কোথায় রাখা আছে মা'র জায়নামাজ, আর তন্ন তন্ন করে খু্ঁজে দেখতাম তা্ঁর তসবীহটিও।এ দুটোই যে আমার চাই।
সামনের কোনো এক শীতের সকালে ঠিকই চলে যাবো আমি, নিয়ে আসবো জায়নামাজ ও তসবীহখানি।আমি নামাজ পড়তে চাই মা'র জায়নামাজে, আল্লাহকে স্মরণ করতে চাই তা্ঁর তসবীহতে।

রূপান্তরের প্রতি

এই প্রেমকে কি তুমি প্রেম বলবে 
যে প্রেমে থাকেনা কোনো নীলাভ চোখের দেব পরুষ
যে প্রেমে নেই সফেদ বারিধারা
যে নৌকায় মাস্তল নেই,সে কি করে ফেলবে নোঙ্গর।

নুরীতে নুরী ঘষে আগুন জ্বলে
পাথরে পাথরে প্রেম হয়
যে প্রেমে আগুন থাকে জল থাকেনা
সেখানে জলও ঝরেনা আগূনও জ্বলেনা।

মাংসে আর মাংসে দীক্ষা মেলেনা
লবঙ্গের সাথে লবঙ্গ 
মরিচের সাথে মরিচ
সাথে দারুচিনি এলাচ থাকা চাই।

হে যৌবনবতী রমণীরা তোমরা শুদ্ধ হও
দেহকে বিদ্ধ করো দ্রাক্ষে
ফলোজ করো ফলবতী শরীর
তবেই ভ্রুণ পাবে পূর্ণতা,পুণ্যবাণ হবে তোমাদের প্রেম।

শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬

স্বপ্নে তুমি অস্তিত্তে তুমি

কাল রাতে ছিলো চন্দ্রগ্রহণ,যখন গ্রহণ হয় তখন ছিলাম স্বপ্নে
তুমি গ্রহণেও আছো,তুমি অগ্রহণেও আছো
তুমি শোর্যেও আছো,তুমি ধৈর্যেও আছো
তুমি কাছে থাকলেও স্বপ্ন আসে,কাছে না থাকলেও আসে
যখন একা ছিলাম তখনো স্বপ্নে ছিলে তুমি
এখন তুমি আছো তারপরেও স্বপ্নে জড়িয়ে থাকো তুমি
একাকীত্বেও তুমি, যুগলেও তুমি
জাগরণেও তুুমি স্বপ্নের মধ্যেও তুমি
আমার সকল অস্তিত্তের মধ্যে এ কেমন থিতু তোমার !

ঘরহীন ঘরে

মেঘ বৃষ্টির সা্ঁজ রাত,মনে হচ্ছে যেন মধ্যরাত
ফুটপাত ধরে হাটছি,ছিটে বৃষ্টিতে ভীজে যাচ্ছে সার্ট
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,হৃৎপিন্ড কে্ঁপে উঠছে
হাতে সিগারেট,নিকোটিন পুড়ে হচ্ছে ছাই
ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্টের কাছে ঘেউ ঘেউ করছে দুইটি নেড়ী কুত্তা।
ভাবছি যে কি ! আমারতো আছে ঘরহীন ঘর,চাল নেই,চুলো নেই
ঘরে যেয়ে দিয়াসলাই জ্বেলে আলো জ্বালাতে হবে আমাকেই
স্কুল রোডের ছাপড়া হোটেলে বসে রুটি আর গরম চা খেয়ে নেই।
পথে নেমে আবার সিগারেট ধরাই
যাচ্ছি ঘরে,যেখানে কেউ নেই
হায়,জীবন আমার।এইভাবেই চলবে জীবন ।
কোয়েল তালুকদার
১৯/১০/২০১৬
উত্তরা,ঢাকা।

নীল নীল নীলিমা

কি সুখের জীবন আমার। যেনো কোথাও আমার দায় নেই। এ রকম সুখ ছিলো খেলাঘরের আনন্দ কৈশরে। তারুণ্যে পেয়েছিলাম আরো বেশী উল্লাস।এলোমেলো উন্মূল যৌবনে তোমাকে আমি পেয়েছি।জীবন আমার ভরে গেলো সোনার আলোয়।এই যে তুমি আছো,তোমাকেই দেখি হেমন্তের নীলিমায়,হাটি ঘাসে সকালের শিশিরে।তুমি কখনো গোলাপ হয়ে ফোটো,আমি তার পরিস্ফুটন দেখি।তুমি সন্ধ্যার মৌনতা নও,রাতের নৈঃশব্দও নও।তুমি ঝুম ঝুম তারার শব্দ হয়ে অন্তরে বাজো।তোমার  শরীরের ঘ্রানে মাতাল হয় উত্তরের বাতাস।তাইতো আমি আকুল হই- 'তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর, তুমি তাই এসেছ নীচে।আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর,,তোমার প্রেম হত যে মিছে।'

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬

স্বপ্ন পহরে দেখা সেই মেয়েটি

আমি যখন দূর অরণ্যে শূণ্যতার চোখে খু্ঁজছিলাম কোনো এক মানসীকে,
তখন তুমি  অপেক্ষায় ছিলে তোমারই বাড়ীর আঙ্গিনায়।
তখনো তুমি আমাকে দেখোনি, দেখোনি এক স্বপ্নবাজ তরুণের ঝাকড়া চুল,
যে কবিতা লিখে নিশীথের চন্দ্রপ্রহরে।যে কবিতায় তুমি কখনোই ছিলেনা।

কোনো এক স্বপ্ন পহরে তোমাকে আমি প্রথম দেখলাম,
দেখলাম বাড়ীর দেউটিতে বসে থাকা সেই মেয়েটির কাজল কালো চুল
দেখলাম তার আনত চোখ, দেবী প্রতিমার মতো আ্ঁকা তার দেহখানি
যেখানে শরতের কা্ঁচা রোদ্রের মতো শুভ্র রং ছু্ঁয়ে আছে
দেখলাম এইতো সেই স্বপ্ন দেখা মেয়ে
যাকে আমি খু্ঁঁজেছিলাম স্বপ্ন প্রহরে,আমার সকল দিন রাত্রিতে,আমার সকল কবিতায়।

নিঃশ্বাসের বাতাস

আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমার ঘুমের নিঃশ্বাস আমি শুনতে পাইনা
আমার নিঃশ্বাসের বাতাসে মাতাল হয় পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটির চুল
এলোমেলো চুল তার ওড়ে বসন্তের বাতাসের মতোন।

আমি যখন স্বপ্ন দেখি,স্বপ্ন বিভোরে তখন পাশের মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরি
তখন তার আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায়
সে তখন বুঝতে পারে আমার ভালোবাসার প্রগলভতাগুলো।

কখনো আমি জেগে থাকলে তুমি ঘুমিয়ে থাকো
আমি চেয়ে দেখি মৃত্যুর মতো নিঃস্তব্ধ তোমার দু'টি চোখ
জেগে থাকা আমার নিঃশ্বাসগুলো তখন দীর্ঘশ্বাস হয়
উত্তপ্ত বাতাস বেগ পায় সারা ঘরময়,দেখি তোমার চোখের পাপড়ি দুলছে সে হাওয়ায়।

যখন বন্ধ হবে আমার নিঃশ্বাসের বাতাস
যখন হাওয়ায় আর দুলবেনা তোমার চুল
যখন তোমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে মুয়াজ্জিনের আযানে
তখন কি তুমি জাগিয়ে তুলতে পারবে আমাকে ? তোমার নিঃশ্বাসের বাতাস দিয়ে।

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

বব ডিলান

এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন একাত্তরের বাংলাদেশ বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত পৃথিবীখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। সংগীতে কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির জন্যে তিনি পেলেন এ পুরষ্কার। ৭৫ বছর বয়সী ডিলান মার্কিন সংগীতে নতুন কাব্যিক ধারা নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে তাঁকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। তাঁর গান মানবতার পক্ষে ও যুদ্ধের বিপক্ষে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বব ডিলান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে জর্জ হ্যারিসনের সাথে বিখ্যাত কনসার্ট ফর বাংলাদেশেও অংশ নিয়েছিলেন।বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালায় তখন। পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর বন্ধুবান্ধব ও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনে কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ থেকেই বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
বিট কবি অ্যালেন গিনসবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘যশোর রোড’কেও গানে রূপান্তরের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বব ডিলান।
বব ডিলান, তুমি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা। তোমাকে অভিনন্দন,তোমাকে করছি স্যালুট।

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

জীবনের অনন্ত ঝর্ণা

এই ভূলোকের কোথায় হবে আমার গন্তব্য। কোন অরণ্য বনছায়ায় চলতে হবে পথ। কোথায় আছে পাহাড়,নদী, উপত্যাকা। কোথায় সেই সিংহ দুয়ার, জীবনের অনন্ত ঝর্ণাধারা। একাকী নদী তীরে অনহুতের মতো রয়েছি দাড়িয়ে। বেলা পড়ে যাচ্ছে ।বালুচরে কোনো বক,ডাহুক,পানকৌড়ি নেই। শিকারীরা ধনূক হাতে ফিরে গেছে লোকালয়ে। জল জেলেরাও চলে গেছে সন্ধ্যা কুটিরে। মেঘগুলো  ভেসে বেড়ায় দূর নদীর প্রান্তর জুড়ে,।সন্ধ্যা-আকাশ বয়ে আনছে কি অনাস্বাদিত কোনো বার্তা ? কি ঘটতে চলেছে,এই বালুচরবর্তী জনহীন জনপদে।এমন ধূসর সময়তো কখনো আসেনি। নিস্প্রভ রৌদ্রগলি চরাচরে মিলে যাচ্ছে।আধার ধেয়ে আসছে। কেমন নৈঃশব্দ চারদিক।কৃষ্ণ গহবরে কি গন্তব্য ! যেখানে নিঃশেষিত হবে প্রাণ।  

মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

জ্বলুক তোমার দীপ্তিঢালা সুধা

,তুমি আমার জীবন চরিতার্থ করে দিয়েছিলে।,সব ফুলের আগুন নীল দিগন্তে মিলিয়ে গিয়েছিলো। সেই তীব্র ভালোবাসার মুহূর্তগুলো যেন নমিত হয়েছিলো জমিনের উপর। সেইখানে একই বিন্দুতে যখন তুমি আমি একীভূত হয়েছিলাম। সেইখানে,ঠিক সেইখানে শূণ্যতা কি রাখা যায় ? অথবা এতটুকুও কি ম্লান হয়েছে সেই স্বেদবিনদু,?  সেই অনাবৃত শিহরণ? অনিঃশেষ প্রেম চিহ্ন গুলি কি কখনো মুছে যায়?  জ্বলুক তোমার দীপ্তি ঢালা সুধা, ঐ সুধায় ধন্য হোক এই নশ্বরতার সমস্ত আর্তি বেদনা দু:খ ও সুখ। এসো,সর্বাঙ্গ লেহন করো, চির চরিতার্থ হোক পৃথিবীবদ্ধ দুই হৃদয়খানি। 

জীবন এতো ছোটো কেনে

কতো নক্ষত্র ঝরে গিয়েছে।কতো নতূন নক্ষত্র জ্বলে উঠেছে ।কতো জীবন হয়েছে জন্ম,কতো যে হয়েছে মৃত্যু। পৃথিবীর আনত চোখ দেখেছে কতো জীবনেরই জয়গান।আবার কতো মধুময় ক্ষণ সূর্যের আলোয় নিকষ অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে।আমি আমার ছোট জীবন নিয়ে মহাকালের এক বা্ঁকে দাড়িয়ে আছি।আমার পাশে ছিলো অনেকেই। আবার চলেও গেছে অনেকে।এই মহাজাগতিক ব্রমাণ্ড বে্ঁচে থাকবে অনাদিকাল ধরে। অথচ আমাকে সময় দিয়েছে ক্ষণকাল। কতো প্রেম,কতো মায়া এখনো পড়ে রয়েছে । সব অপূর্ণ রেখে চলে যেতে হবে । জীবন কেন যে এতো ছোটো। আহা ! 'জীবন এত ছোট কেনে'।

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

সুপ্রভাত

আজ সকালের সমস্ত আলো ঝরে পড়ুক এইখানে,এই হৃদয়ের উপরে।এই চেতনার পদ্মকোষে,এই মর্মরিত মন-অরণ্যের লুকায়িত বৃক্ষ বাটিকায়।যে আলোর বিচ্ছূরণে ঝলমলিয়ে উঠুেছে এই দেহখানি।পুণ্যে পূর্ণ হোক অন্তরলোক।
সুপ্রভাত সবাইকে।




অন্ধকার

ছোটোবেলায় অন্ধকার দেখে খুব ভয় পেতাম।খেলা শেষে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতো। অন্ধকার ছেয়ে পড়তো প্রান্তর জুড়ে।তখন ভয়ে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ী চলে আসতাম।বাড়ীতে এসেই দেখতাম আলো। লন্ঠন জ্বলছে ঘরে।তারপরেও ভয়ে কাঁপতাম।মাকে জরিয়ে ধরতাম।মা বকুনী দিলেও মনে হতো - এখানে আলো আছে।উষ্ণতা আছে।আলিঙ্গন আছে।একলা হয়ে যাবার কোনো ভয় নেই আর।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান

 কাল সন্ধ্যায় পার্কে বকুলতলার পাকায় বসে কয়েক তরুণ গীটার বাজিয়ে গাচ্ছিলো হেমাঙ্গ বিশ্বাসের একটি গান । খুব আনন্দ করে ওরা গেয়ে যাচ্ছিলো গানটি কিন্তু কথাগুলো ছিলো করুণ, সুর ছিলো হৃদয় ছো্ঁয়া।আমি ওদের,গান শুনে  থমকে দাড়িয়ে যাই এবং পাশে যেয়ে বসে শুনি হেমাঙ্গের গানটি।হেমাঙ্গের পরে ওরা নচিকেতার একটি গান গায়। সেটিও ছিলো একটি বিষাদের গান।নচিকেতার গানটি শুনতে শুনতেই ওখান থেকে উঠে চলে আসি।চলতে চলতে ভাবছিলাম-  তরুণগুলো গান গেয়ে আননদ করলো আর তা শুনে মন বিষন্ন হলো আমার। আমার এই বিষন্নতা ঐ তরুণগুলো দেখতেও পেলো না, বুঝতেও পারলো না ।

রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

শুভ বিজয়া দশমী

পূজা উৎসবের আনন্দে মুখরিত দিক দিগন্ত। নবমীর রাতে কাল নেমেছিলো আলোর রোসনাই । মন্ডপে মন্ডপে এখন জনারণ্য। বৃষ্টি আর মেঘ মাঝে মধ্যেই এসে যায়। ভক্তদের কথা - মায়ের জন্যই মেঘ মায়ের জন্যেই বৃষ্টি।
বিজয়ার সকালটা শুরু হয়েছে আজ আকাশের শুভ্র-নীল মেঘে আর ঝলমলে রোদের আমন্ত্রণে।কাসার ঘন্টা আর উলুধ্বনিতে আজ উৎসব নামবে।ধূপের সুবাস ঝরবে সন্ধ্যায় চারিদিক।শুভ হোক বিজয়া দশমী।জগতের সকল মানুষের মঙ্গল হোক। 

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

মহামায়া


'মহামায়া কুলীনের ঘরের কুমারী। বয়স চব্বিশ বৎসর। যেমন পরিপূর্ণ বয়স, তেমনি পরিপূর্ণ সৌন্দর্য। যেন শরৎকালের রৌদ্রের মতো কাঁচাসোনার প্রতিমা-- সেই রৌদ্রের মতোই দীপ্ত এবং নীরব, এবং তাহার দৃষ্টি দিবালোকের ন্যায় উন্মুক্ত এবং নির্ভীক।' রবি ঠাকুর মহামায়াকে এমনি করেই বর্ণনা করেছিলেন তা্ঁর ছোট গল্পে। এই সুন্দর দীপ্ত মহামায়ার মুখ সহমরণের চিতায় পুড়ে কুৎসিৎ হয়ে যায়।তার এই কুৎসিৎ মুখ  তাকে আ্ঁচল দিয়ে ঢেকে রাখতে হতো।একদিন পূর্নিমা রাতে তার স্বামী তার এই কুৎসিৎ মুখ দেখে ফেলে। কথা ছিলো তার  স্বামী  কোনোদিন তার মুখ দেখবে না। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। বেদনায় ক্ষোভে স্বামী সংসার পরিত্যাগ করে মহামায়া চিরতরে ঘর হতে বের হয়ে চলে যায়

আমরা আশা করছি,খাদিজা একদিন বে্ঁচে উঠবে। আমি এই মেয়েটাকে কখনো দেখিনি।হয়তো মহামায়ার মতোই তার পরিপূর্ন সৌন্দর্য ছিলো, শরৎকালের রৌদ্রের মতো কাঁচাসোনার প্রতিমা ছিলো। দীপ্ত বিনম্র খাদিজা যখন বে্ঁচে থাকবে তখন তার শরীরের কদর্য দাগগুলো কি দিয়ে ঢেকে রাখবে ? তাকেও তো হীনমন্যতার কষ্টে পুড়তে হবে।অসীম বেদনা নিয়ে কোনো এক ভরা পূর্ণিমা রাতে এমনি করেই মহামায়ার মতো খাদিজাও  কি অভিমানী হবে ?  ঘর সংসার ছেড়ে চলে যেতে হবে নিরুদ্দেশে কোনো নিরালায় ? 

একজন অমরাবতী

ভালোবাসা তুমি রোদ্র মানো না
তুমি বৃষ্টি মানো না,মেঘও মানো না
অমাবশ্যা মনো না,পূর্ণিমা মানো না
আমি যদি বলি নদী তুমি তখন সাগরে যেতে চাও
তুমি জল মানো না,শেওলা ঝিনুক কোনো কিছু না।।

তুমি বললে হয়,আমি বললে হয় না
তুমি যদি প্রেম দাও,তখনই প্রেম হয়
তুমি যদি গ্রীবায় দিক্ষা দাও,তখন কবিতা হয়
তুমি রসতত্ত মানো না,উপমা অনু্প্রাস।

তুমিি ভালোবাসার ব্যাকরণ মানো না
বকুলতলায় ফুল হয়ে ঝরতে চাও,তমি মালা হতে চাও।

আমি যদি বলি প্রেম দাও
তুমি বলো লোমশ বুক পেতে দাও
কোথায় মিললে প্রেম শুদ্ধ হয়
ধারাপাত হয়,তুষারপাত হয়,সে তুমি জানো না
তুমি বিরহ মানো না,রক্ত মানো না
শক্লপক্ষ মানো না,জ্যোৎস্না মানো না।

তুমি মানো প্রেম,তুমি চাও ঘর
তুমি দেখো স্বপ্ন,তুমি চাও সন্তান
তুমি হৃদয় নিমগ্নের স্পন্দন হতে চাও
তুুমি হতে চাও গর্ভবতী,অমরাবতী একজন।


জীবন আর মৃত্যু

জীবন আর মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য হচ্ছে মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা। যতক্ষন আমাদের মস্তিস্ক  সঠিক ভাবে কার্যক্ষম থাকে ততক্ষন আমরা আমাদের অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারি বা অন্য কথায় নিজেদের জীবিতবোধ করি। একজন মানুষের প্রতিটি অংগ সুস্থ থাকলেও যদি তার মস্তিস্ক ফাংশনাল না হয় তাহলে সে মৃত। আবার একজন মানুষের সম্পূর্ন শরীর প্যারালাইজড থাকলেও যদি তার মস্তিস্ক মোটামোটিভাবে ক্রিয়াশীল থাকে তাহলে সে তার অস্তিত্ব বুঝতে পারবে। দৈহিক কার্যক্রম ও মস্তিস্কের সমন্বয়ের ফলে, আমরা আমদের মাঝে অস্তিত্ব অনুভব করি এবং একটি জীবনীশক্তিবোধ করি। এই পুরো ব্যাপারটিই মস্তিস্কপ্রসূত। আত্না বা কোন পৃথক স্বত্তা বা শক্তির কোন অস্তিত্বী নেই ।

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

আর কতো মৃত্যু দেখবে মানুষ

মানুষ মরে পড়ে থাকে রাস্তার উপর
পাশ দিয়ে দ্রুত বেগে গাড়ীগুলো চলে যায় ধেয়ে
কর্কশ হর্ণ বাজে ক্রন্দনের শব্দে
শেষ চাহনীতে তার দেখা হলো না প্রিয়জনের অশ্রুবিন্দু
তার চোখ চেয়ে দেখেছে কেবল মৌন নীল আকাশ।

মানুষ মরে পড়ে থাকে রেস্তোরায় নীল নীল আলোর দীপাবলীতে
রক্তে ভেসে যায় সুগন্ধি মাখা জামা,টি-সার্ট,ট্রাউজার্স
এমন মৃত্যু দেখেনি হিরোসিমার মানুষ
 মিলানের মানুষদের কর্মচাঞ্চলতা সেদিন কি থেমে গিয়েছিলো আপিসে ?
তর তর করে রক্ত গড়ে গেছে আর্টিজানের মেজে ভেসে  লেকের জলে
প্রাণহীন চোখের অশ্রুজল দেখতে পায়নি কোনো কন্যাী জায়া জননী।

মানুষ মরে পড়ে থাকে মশুলে
মানুষ মরে পড়ে থাকে আলেপ্পোতে
মানুষ মরে পড়ে থাকে আরব সাগরে
মানুষ মরে ভাসছে আটলান্টিকে
আর কতো মৃত্যু দেখবে মানুষ
আর কতো রক্ত ঝরলে শুদ্ধ হবে ধর্ম
আর কতো লাশের স্তুপ দেখলে আধিপত্য শান্ত হবে।

কোন্ সভ্যতায় বসবাস করছে মানুষ
কোন্ পাপ পুণ্যের জন্য এতো গোলা,এতো রাইফেল, গ্রেনেড আর শাণিত তরবারি
আমরা মৃত্যু চাইনা,আমরা শান্তি চাই.
করজোড় তোমাদের কাছে, বন্ধ করো সব হত্যা,গণহত্যা, সব রক্তপাত !

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

এই পৃথিবী

আশ্চর্য রকমের সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী। কতো রহস্য ধারণ করে আছে এই পৃথিবীতে।কতো সৌদ্দর্যই না আছে এখানে। সেই সৌন্দর্যের শুধুমাত্র সূচীপত্রে চোখ বুলাতে গেলেও মানুষের একজীবন শেষ হয়ে যাবে । পৃথিবীর সব  সৌদ্দর্য দেখবে সে কখন ! ঈস্বর যদি আমাকে সহস্র বছরের  জীবন দিয়ে বলতো- কোন গ্রহে আবার ফিরে যেতে চাও তুমি ? আমি বলতাম- আমি আমার অসস্ভব সু্ন্দর  পৃথিবীতেই আবার ফিরে যেতে চাই । সহস্র বছর ধরে বে্ঁচে থেকে দেখতে চাই, পৃথিবীর সব রূপ রস সৌন্দর্যগুলি।

বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬

সামনের পথ

 পথ চলতে গিয়ে কখনো কখনো থেমে যেতে হয় পথেরই মাঝখানে। দেখি সামনে আর এগুতে পারছিনা। এগোবার সব পথই রুদ্ধ হয়ে আছে। সামনের পথ না পেয়ে পিছনে ফিরে আসবো ?  পিছনের  হাটলে তো কোনো সাফল্য পাওয়া যাবে না।সামনেই চলতে হবে। তাইতো প্রতিদিন নির্মাণ করে চলেছি সামনের পথ এবং সেই পথ ধরেই হেটে চলে যাই আমি সামনের দিকে।

পূজার গান

শিউলির গন্ধ মাখা ভোরবেলায় শরৎ এসে কড়া নাড়ে যখন দরজায় তখন আমাদের গ্রামের হিন্দুদের পূজার উৎসবের কথা মনে পড়ে যায় । সন্ধ্যায় আরতি হতো আর  গান বাজনা হতো অবিরাম। গ্রামোফোন রেকর্ডে বাজতো পূজার হৃদয়কাড়া কিছু গান 'আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে' , আজ মনে হয় এই নিরালায় সারাদিন ছন্দের গান শুনি', 'কাজল নদীর জলে ভরা ঢেউ' এই গানগুলো । বাঙালির প্রতিদিনের জীবন যাপনে শরৎ আর এইসব শারদীয়া গান যেন এক আশ্চর্য স্বপ্ন আর মায়াবি আলো নিয়ে আসে। আমাদের উৎসবে আর আনন্দে পুজার গানের এই অর্ঘ্য চিরকালীন উষ্ণতায় উজ্জ্বল হোক।

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

কথা রাখলোনা অরুণা

কলেজে পড়ার সময় একদিন লাস্ট বেঞ্চে বসে কাঠ পেনসিল দিয়ে শিক্ষিকার শরীরের বা্ঁক আর ভাজগুলো আ্ঁকছিলাম খাতার পাতায়। সেই ছবি আ্ঁকা দেখে ফেলেছিলো পাশে বসা একটি মেয়ে। শিক্ষিকার দৈহিক অন্তঃঅঙ্গের মিল খুঁজতে যেয়ে শ্রেণীর ঐ মেয়েটির মনের মধ্যে মিল খু্ঁজে পেলাম। প্রেম করার সাধ হলো দু'জনেরই। কিন্তু একটা শর্ত জুড়ে দিলো মেয়েটি।সে জানালো, যদি কোনোদিন আমি মেসের জীবন ত্যাগ করে বাসা ভাড়া করে থাকতে পারি তাহলেই সে ভেবে দেখবে। তখনো সংসার কি জিনিস আমি জানিনা,তারপরেও বাড়ীতে যেয়ে মা'কে পটিয়ে কিছু টাকা নিয়ে আসি। অসম্ভব সব সপ্নের উপর ভর করে মেসের মায়া ত্যাগ করে একদিন জিগাতলার মোড়ে বাসা ভাড়া নেই। কিন্তুু ততদিনে মেয়েটি আমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে পরের ঘরে চলে যায়। হায়! কথা রাখলোনা অরুণা।

মাধবীলতা

চারুদত্ত আধারকারের প্রেম বঞ্চনার কথা কে না জানে।সুনন্দা ছিলো হৃদয়হীনা এক নারী।ভাগ্য ভালো সুনন্দার, ও বদরুইলার হাতে পড়ে নাই।নইলে ওকে চাপাতি দিয়া কোবাইতো।আবার মেমসাহেব ছিলো আরেক বেকুব মেয়ে। এইভাবে কেউ কোনোদিন গোলার মুখে যেয়ে নিজের জীবন আত্মাহুতি দেয় ? ক্লাসে আহমদ শরীফ স্যার, শ্রীকান্তকে 'হারামজাদা' বলিয়া গালি দিতো এই জন্য যে- কান্ত যখন বলে, 'ছোট প্রেম শুধু কাছেই টানে না,ইহা দূরেও সরিয়ে দেয়'।পারুই ভালো ছিলো,বুইড়াকে বিয়ে করে হলেও দেইব্বারে একটা উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলো।

সবচেয়ে ভালো  লাগে সমরেশ মজুমদারের মাধবীলতাকে। চলতি পথে কোনো এক সুনন্দার সাথে হঠাৎ দেখা হওয়ার কথা একসময় খুব ভাবতাম।কিংবা লাবণ্যের মতো  রুচিশীল কোনো মেয়েকে। কিন্তু মাধবীলতা ! আহা মাধবীলতা! তুমি কেবল অনিমেষদের স্বপ্নই দেখাও।মাধবীলতার মতো স্বপ্নের মেয়ে আর আধারকারের মতো গা্ঁধার, দূটোরই এখন খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।

ইনসাফ কা তারাজু'

 আশির দশকে একটি হিন্দী সিনেমা দেখেছিলাম নাম 'ইনসাফ কা তারাজু'। সিনেমাতে রাজ বাব্বর  জিনাত আমানকে ধর্ষণ করেছিলো। এজন্যে আদালতে জিনাত আমান বিচার চেয়েছিলো।কিনতু  বিচার সে পায় নাই। আইনের ফা্ঁকফোকরে বিচারক সেদিন রাজ বাব্বরকে খালাস দেয়। বিচারের বানী সেদিনই নিরবে কে্ঁদে উঠেছিলো। লম্পট রাজ বাব্বর প্রশ্রয় পেয়ে যায় এবং পরবর্তীতে জিনাত আমানের ছোটবোন পদ্মিনী কোলাপুরীকে ধর্ষণ করে।এবার আর জিনাত আমান আদালতে বিচার চাইতে যায় নাই।সে একটি গুলি ভর্তি বন্দুক ম্যানেজ করে। প্রেমজালে টোপ ফেলে রাজ বাব্বরকে একদিন বাড়ীতে ডেকে নিয়ে আসে।রাজ বাব্বর তখন সি্ঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠছিলো । জিনাত আমান  পিছন দিক থেকে গুলি করতে থাকে রাজ বাব্বরের পায়ে। প্রথমে একপায়ে তারপর আরেক পায়ে। সিড়ি দিয়ে ন্যাংরাইতে ন্যাংরাইতে  রক্তাক্ত অবস্থায় রাজ বাব্বর জিনাত আমানের পায়ের কাছে এসে পড়ে। জিনাত আমান আবারও গুলি করে ,গুলি লাগে পেটে।ফের গুলি করে এবার লাগে বুকে। রাজ বাব্বরের জান একসময় নিকাল হয়ে যায়।

আমাদের জায়া জননীদের বলছি-  বদরুইলাদের বটি দিয়া কোবান শুরু করেন। দেখবেন কোনো বদরুইলা ভবিষ্যতে আপনাদের ছায়ার কাছেও যেতে সাহস পাবে না।

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

আজ প্রার্থনার দিন

আজকের সকাল দেখে মনে হচ্ছে আজ প্রার্থনার দিন। নির্মল আকাশ বলে দিচ্ছে- আজ নামাজের দিন।আজ শুক্রবার।মসজিদে আযান ধ্বনিত হবে । নামাজে যেতে হবে। আজ মৌনতায় নত হবো সিজদায়।

লাবণ্য কথা

একটা  ঘোরের মধ্যে ছিলাম সে রাতে। ঘুমও আসছিলো না, স্বপ্নও আসছিলো না। মনে পড়ছিলো শিলং পাহাড়ের কথা, লাবণ্যের কথা, কেতকীর কথা। মনে খো্ঁচা দিচ্ছিলো অমিতের সেই উক্তিটি, 'লাবণ্যের সাথে তাঁর প্রেম যেন ঝরনার জল - প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নয়। আর কেতকীর সাথে সম্পর্ক ঘড়ায় রাখা জল- প্রতিদিন পানের উদ্দেশ্যে।' এই কথাটি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। কবে কখন ক্ষণকালের জন্য কে একজন এসেছিলো জীবনে। সেই কিনা হয়ে গেল ঝর্ণার জল।আর যে করছে ঘর,যে আছে সংসারে, সুখ আর দুঃখে,যার সাথে রচিত হচ্ছে প্রতিদিনের আখ্যান ,সেই কিনা হয়ে গেলো ঘড়ার জল ! লাবণ্য,তোমরা যেথায় আছো,সেথাই থাকো,হয়ে থাকো এক বিন্দু নয়নের জল । যে আছে আমার ঘরে, সে হয়ে থাক অতলান্ত সাগরের স্বচ্ছ নীল জল।

আলোর ছ্বটা

দরজা খুলেই দেখি আজ চারদিকে আলোর জোয়ার । আলোর জন্যে যে আকুলতা ছিলো রাতভোর, তা আজ এই সকালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে অন্তহীন আকাশ জুড়ে ।এই-যে আলোর ছ্বটা, এই্ যে সকাল ভোরের গান, সে তো বিধাতারই অন্তর্জগত থেকে উঠে আসা অমিয় আলোর নির্ঝাস। যেন সে-ই সবখানটাতে আলোকিত করে রেখেছে । সবাইকে সুপ্রভাত ।



কৃষ্ণ-গহ্বর

একটানা চেয়ারে বসে কম্পিউটার করতে মন চায়ছে না আজ। টেবিল ছেড়ে ঘরের ছাঁদে আমি চলে যাই । প্রতিরাতের মতো নীচের দিকে না চেয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি। যেমন বৃক্ষেরা দাঁড়িয়ে থাকে আকাশের দিকে। দেখি মহাশূন্য, দেখি কোন পথে হয়েছে সুনীল,সুরের নিস্তব্ধতা  কিভাবে জমাট বেঁধে গড়েছে এক একটি আকাশ, জ্বলজ্বলে তারা এবং কৃষ্ণ-গহ্বর। মনটা তখন না থাকে জগতে,না থাকে অন্তরীক্ষে।আমার জীবনের সমস্ত ক্লান্তি, ঘর গেরস্থালি ফিরিয়ে দিতে মন চায় রাতের হাওয়ায় কিংবা ঐ সুদূরে ফুটে থাকা একাকী ধ্রুবতারায়। 

রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৬

প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে প্রাণ

আজ সকালে চোখ খুলেই দেখলাম হেমন্তের শিশির লেগে আছে শিউলিফুলের পাপড়িতে। ভোরের রোদ্রে ঝিকমিক করছে পূবের আকাশ। বু্ঁনো বন্যতায় প্রকৃতি রঙ ঢালছে অকাতরে। বেগুনি, লাল, গাড়ো সবুজ, হলুদ। এই সব রঙের গভীরতায় আছে এক ভালোবাসার উচ্ছ্বাস। এই জগতের যাবতীয় রঙ ঠিক করে দেয় প্রকৃতি।আমাদের ভালোবাসার রঙ লাল, মৃত্যুর রঙ সাদা বা শোকের রঙ কালো।আজ বিধাতা রোদ্দুর দিয়েছে ঢেলে । অনেকদিন পর পিঠে মিস্টি রোদ লাগছে।কি যে ভালো লাগছে আমার।প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে প্রাণ।
। 

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

আবুল কাসেম ফজলুল হক

আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অণুবাদক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তিনি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার রচনা স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। প্রগতিপ্রয়াসী মন নিয়ে তিনি জাতিয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে মত প্রকাশ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন।তিনি তার লেখা ও কথায় জনগণের মাঝে সৎ চিন্তা উসকে দিতে চান। তিনি মানুষের মধ্যে শুভবোধের জাগরণ কামনা করেন। তিনি জনগণকে শ্রদ্ধা করেন এবং তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন না। তিনি এরকম মতপ্রকাশ করেন যে, যেহেতু দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষই ধর্মানুগত, তাই তাদের বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত দিলে তাদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হয়, সমাজ পরিবর্তনের কাজ হয় বিঘ্নিত।

আমি আমার এই মহান শিক্ষকের সুসবাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

জলঝর্ণার ধ্বনি

 বহুকালধরে পড়ে থাকা অনড় পাথরের বুকে মাথা রেখে শুনে ফেলতেও তো পারে ইতিহাসের শতশতশত জলঝর্ণার ধ্বনি। সেখান থেকে কলরোল হৃৎবদলও তো হয়ে যেতে পারে। তেমন স্রোতের থেকে নিঃসৃত হয়ে উঠতেই পারে বহমানতা।