শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

জলের ঢেউ

ক্রমশঃ গহীনতম পথে চলতে থাকে আমাদের লীলাপর্ব 
জলের ঢেউ ভেঙে নাবিক নোঙ্গর ফেলে আরো অতলে
আমরা বুঁদ হয়ে থাকি জলের নির্মাণে --
নিঃসঙ্গ বালিয়ারীতে তখন মুক্তা ফলায় ঝিনুক
জলধির গভীরে যে কথা হয় তার সাথে
তার বুকে কান রেখে সে কথা শুনি আমারই প্রাণে।

এই পথ

এই পথ দিয়ে একা চলতে চলতে আর পিছনে ফিরে তাকানো হলোনা। নিঃস্তব্ধতাই বলে দেয়, আমার এই পথ চলায় কারো কোনো পদধ্বনি নেই।

শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭

চন্দ্ররাত্রির কথা

কিশোর বয়সে আমি একবার সরিষাবাড়ী থানার পিংনার চিতলি পাড়া নামে এক গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম । ঐ গ্রামেই দেখেছিলাম-শান বাঁধানো একটি পুকুর । আমার মনে আছে সেদিন আকাশে চাঁদ উঠেছিলো। জ্যোৎস্নায় ডুবে যাচ্ছিলো বৃক্ষ লতা গুল্ম।ঝোঁপে ঝাঁরে জোনাকিরা সব জ্বলে উঠেছিলো। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত ঘাটের বকুলতলায় বসে গল্প করেছিলাম। সেই রাত, সেই ঘাট, সেই জল, সেই বকুলের মৌ মৌ গন্ধ আজো আমাকে উতলা করে রাখে।
তারও অনেক পরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে এই রকমই শান বাঁধানো পুকুর দেখেছিলাম। আজ থেকে শতো বছরও বেশী আগে কবিগুরু তার তরুণী বধূ মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে এই পুকুর ঘাটে বকুলের তলায় বসে কতো গান গেয়েছিলো । কতো কবিতা লিখেছিলো । এতো বৎসর পরে আজো সেখানে চাঁদ ওঠে। বকুল ফুল ফোটে। এখনো সেই ঘাট আছে, এখনো দূরের পদ্মা থেকে বয়ে আসে শীতল হাওয়া। শুধু কবিগুরু নেই। মৃণালিনী দেবী নেই।
বসন্তের এক মধু সন্ধ্যার কথা। রাঙামাটির সাজেক ভ্যালী থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রামে একদিন ছিলাম। আমার সাথে ছিলো নব পরিনীতা। আমরা চলে যাই উত্তর কাট্টলীর নমিতা দেবীর শান বাঁধানো ঘাটে। পুকুরের দুই দিক থেকে দুটি পথ দুই দিকে চলে গেছে। অদূরে গীতা মন্দিরে শঙ্খধ্বনি বেজে উঠেছিলো। পুরো আঙ্গিনায় সবুজ আর সবুজ, বিচিত্র সব বৃক্ষরাজি। তারই ফাঁক দিয়ে উঠেছিল শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ। আমরা বিমুগ্ধ হয়ে বসেছিলাম ঘাটে। রাতের প্রথম প্রহর সেখানেই কাটিয়েছিলাম সেদিন। আমার আজো সেই রাতের মুহূর্তগুলি ফিরে পেতে ইচ্ছা করে।
তারপর অনেক দিন হয়েছে গতো। নানান কর্মে বেঁধে যাই সংসার মায়াজালে। এখনো অনেক নস্টালজিয়ায় আকুল হই। এখনো হঠাৎ পূর্ণিমা এলে ঘর হতে বেরিয়ে পড়তে মন চায়। শান বাঁধানো পুকুরপাড় আমাকে টানে। বকুল ফুল ঝরে পড়া দেখতে ইচ্ছা করে । আমার খুব শখ হয় এমনি কোনো চাঁদনী রাতে আমরা দু'জন যেয়ে বসে থাকি আবারও কোনো বকুলের তলায়।
আবারও যদি আসে কখনো সিদ্ধার্থের গৃহ ত্যাগের মতো চন্দ্ররাত্রি, তাহলে সেই রাত্রির কানে কানে তাকে বলতাম -- 'এসো রাত্রি, এই আকাশে আমরা আসন পাতি। তুমি বাজাও তোমার বীণা। সে বীণার সুর ঢেউ তুলুক জোছনায়। নরম চামোলি-আলোয় স্নান করিয়ে দিই তোমায়। তার আগে এসো ঘুমের দেশের স্বপ্নতরীগুলোকে ভাসিয়ে দিই আলোর বন্যায়। ওরা স্বপ্ন ছড়িয়ে দিক দিকে দিগন্তরে। এই চরাচরের বুকে স্বপ্নরা আকাশপ্রদীপের মতো জ্বলতে থাকুক।'

আলো জ্বালবেনা কেউ

তুমি কান পেতে শুনলেনা আমার শব্দ
আমার স্বপ্ন
স্বপ্ন ঘরে জ্বালানো আমার বাতি
সকল নৈবেদ্য --
যখন তুমি আসবে
তখন সব শব্দহীন
কোথাও আলো জ্বালা নেই
তথন আর আলো জ্বালবেনা কেউ।

পুরোনো কল্প কাহিনী

শ্রাবণ মেঘের দিনে বৃষ্টি এলেই একটা ছেলের খুব মন খারাপ হয়ে যেতো। জানালা খুলে দেখতো দূরে তেপান্তরের মাঠ জুড়ে বৃষ্টি ঢলে পড়ছে। হাত দিয়ে বৃষ্টি ছুঁইতো। দুই হাতে ভিজাতো জলে। তারপর কপাল আর দুই গাল মুছে শীতল করতো। টেবিলে বসে কবিতা লিখতে যেয়ে সারা পাতা জুড়ে তার নাম লিখতো। স্বপ্ন এসে তার কাছে ভীড় করতো সারারাত। পুরোনো কথা আর গোপণ নিভৃতে লুকিয়ে থাকা সুর এসে গান হয়ে যেতো। ছেলেটি এমনি করেই কখনো তারার আকাশ দেখতো। কল্পনায় ময়ুরপঙ্খী নাও ভাসাতো সাগরের পানে। কেউ কি যাত্রী হবে তার? কেউ কি ধরবে তার হাত! যাবে তার সাথে? এইতো আমি সেই ছেলেটি। দুই হাত মেলে দাড়িয়ে আছি।

মেঘের অন্ধকার

ঐ চাঁদের মাঝে তাকে খুঁজে বেড়াই
কিন্তু চারপাশে তার 
কেবলই মেঘের অন্ধকার!

এই স্বর্গ রাত্রিতে

একদিন না একদিন স্বর্গ আমাকে টানবেই
আমার ভালোবাসার জন্য
আমার নিরহংকার সোহাগের জন্য
বিচিত্র এইসব দান প্রতিদানের জন্য!
অবসাদ আমাকে ছুঁইতে পারেনা
আমাকে চূর্ণ করো তুমি মোহিনী মায়ায়
আমি চাই তোমার ঘৃণাও
সকল দাবি আমার সকল নিষ্ঠুরতাও!
আমি আর ফিরে যেতে চাইনা অভিশপ্ত নরকে
বিকৃতিতেও নয়,
নয় কোনো রূপান্তরে অন্য কোনো আশ্লেষে
পরিমার্জন চাই দেহে আর দ্রোহে!
হাজারো প্রগাঢ় চুম্বনেও মন ভরেনা
তুমি লুকিয়ে রেখোনা তপ্ত সূর্যের ঝাঁচ
জ্বালিয়ে দাও বারে বার
জ্বলে ওঠো তুমি এই স্বর্গ রাত্রিতে সহস্রবার।

বিস্ময়ে তাই জাগে

কেনো এমন করে ভাঙচুর করো তুমি। কেনো এমন করে ফুলের ঘায়ে। যোজন যোজন দূরে কোথায় কার হিয়া কাঁদে। আমি বিক্ষুব্ধ স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকি সারারাত। বিধাতা সব পারে। অপূর্ব যতো প্রেম দিতে পারে। আবার বেদনার ঘা-ও। পৃথিবীর মায়া মমতার কাছে এই জীবন বাঁধা পড়ে যায়। লোভ আমারও হয়। তার সাথে থাকে যদি ভালোবাসার মতো অন্তরের টান।
প্রথম চাওয়া ব্যর্থ হয়েছিলো বলে চৈত্রের ঊষা লগ্নে স্বপ্ন ভেঙে যায়। তারপর দ্বিতীয় চাওয়া, সেখানেও দীর্ঘশ্বাস! তারপর তুমি এলে। তোমাকে পাওয়ার প্রাপ্তিতে ভরে গেলো প্রাণ।
'অসীম কালের যে হিল্লোলে
জোয়ার ভাটার ভূবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান। '