শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭

সাগরিকা

সেই কবে একদিন বন্দরে জাহাজ এসে ভিড়েছিলো। দেখেছিলাম, কিভাবে বন্দর জেগে উঠে কূলে। অসংখ্য মানুষ নামছে প্লাট ফরম ধরে । সবাই ডিনদেশী নারী পুরুষ যুবক যুবতী। সব অচেনা মুখ। যাত্রী নামতে নামতে  জাহাজটি একসময় খালি হয়ে যায়।  জাহাজটিতে এবার যাত্রী ওঠার পালা। কিন্তু হায়! আমি ছাড়া অন্য কোনো যাত্রী নেই । আমি যেয়ে বসি উপরে উন্মুক্ত কেবিনে। চারদিকে স্বচ্ছ কাঁচের বেষ্টনী। দূরে সফেদ জলরাশি, সারা আকাশ জুড়ে সীগাল চ্রিঁহি চ্রিঁহি করে ডাকছে।

নাবিক যখন জাহাজ ছাড়ার শেষ হূইসেলটি বাজিয়ে ফেলে, ঠিক তখনই দেখি -- সাদা শাড়ি পড়ে একজন রমণী আমার মুখোমুখি এসে বসলেন।    যেনো --

"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে। "  অনেকটা এই চিত্রকল্গের মতো তাকে আমিও দেখি।

জাহাজ কোন দিকে চলছে, কোথায় যাচ্ছে জানিনা। শুধু দেখতে পাচ্ছিলাম -- দৃস্টি সীমানা জুড়ে অসীম সমুদ্র। অতল শুভ্র জল ফেনায়িত হচ্ছে, সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে রূপালী সী গালের সাদা পালকের মতো জল। ঠিক তখনই সেই রমণী 'পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে' আমাকে বলেছিলো, ' আপনি কোথায় যাবেন? ' আমি বলেছিলাম --

' সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে' কিংবা যেতে পারি --
'বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে'
কিংবা ' আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে। '

আমি তাকে বললাম,' আপনি কোথায় যাবেন?' সে তখন বললো 'তুমি যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো। ' জানো,  বাতাস আজ কানে কানে এসে বলেছিল , তুমি নাকি আজ একাকী সাগরে ভাসবে। তুমি একা থাকবে, তাই কি হয়?  তাই চলে এলাম তোমার কাছে। '

আমি :  কে তুমি? আমি তোমাকে চিনতে পারছিনা ! কিন্তু চেনা চেনা লাগছে।  তুমি কি বনলতা সেন?
মেয়েটি :  না, আমি বনলতা সেন হবো কেন? আমি তোমার সেই সাগরিকা। যাকে তুমি ভালোবেসেছিলে তোমার পূর্ব জনমে।'

আমি ৰিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম সাগরিকার চোখের দিকে। এই চোখ আমি কবে দেখেছিলাম মনে করতে পারছিনা। সমুদ্রের হিম শীতল বাতাসে ওর যে চুলের গন্ধ পাচ্ছি, তা বহু যুগ আগের পরিচিত কোনো পুরনো গন্ধ। আমি তাকে প্রথম দেখেছিলাম, গোমতী নদীর পারে। এলোমেলো চুল ছিলো তার পিঠের উপরে। তখনো সেখানে দখিনের বাতাস ছিলো। আমি মাতাল হয়েছিলাম তার চুলের গন্ধ নিয়ে। '

সাগরিকা হাত বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে। বলে - তুমি এসো, চলো ঐ রেলিং এর ধারে। দেখি ভূবন জুড়ে জলরাশি। ' রেলিং ধরে দেখছিলাম দুজন জলের উপর নীল আকাশ, আর আকাশের নীচে থৈথৈ করা পানি । রূপালী ডলফিন সব নৃত্য করছে। সাগরিকা একবার সমুদ্রের দিকে মুখ রেখে, আর একবার আমার দিকে চেয়ে গুনগুন করে গাইছিলো --

'তুমি সাত সাগরের ওপার হতে আমায় দেখেছো
আর মন ভ্রমরের কাজল পাখায় ছবি এঁকেছো
আমি বলি :
আমি ময়ুর পংখি নাও ভিড়িয়ে তোমায় দেখেছি
আর প্রবাল দ্বীপের পান্না ভেবে চেয়ে থেকেছি
সাগরিকা :
আগুন ঝরা ফাগুন যখন ছিল পলাশ বনে
তোমার কথাই ভেবেছিলেম আমি মনে মনে।
আমি :
তোমার চোখে তাই তো খুশির পরাগ মেখেছি।'

আমি সাগরিকাকে বলি এখন তো গানের সময় নয়। এখনতো কোনো কথা বলবারও সময় নয়। এখন সাগরের ভাষা শুনবো দুজন ! সাগরিকা তুমি কান পাতো ঐ জলের কাছে। ঐখানে জীবনের যতো সুর বাঁধা পড়ে আছে। ঐ অতল জলধিতে কি হারাবে তোমার প্রাণ? এবং আমারও।

সাগরিকা বলছিল, তোমার কি মনে আছে? অনেক আগের এক বসন্ত দিনের কথা? ময়নামতি থেকে আমরা দুইজন হাটতে হাটতে অনেক দূর পর্যন্ত পূর্ব দিকে চলে গিয়েছিলাম।  দুইপাশে ধানক্ষেত ছিলো, পথের উপর দূর্বা ঘাস ছিলো। হাটতে হাটতে আমরা গোমতীর তীরে পৌঁছে যাই। গোমতীর স্বচ্ছ নির্মল জল আজলা ভরে তুলে এনে তুমি আমার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলে। ক্লান্ত দুপুরে আমি আমার মুখ রেখেছিলাম তোমার বুকে। তারপর নদী থেকে শীতল বাতাস এলো। ছাতিম গাছে ঘুঘু গান গেয়ে উঠলো। মেঘ ঢেকে দিলো সেদিনের সব রোদ্র। তুমি আমায় তোমার বুকের ছায়ায় আগলে রাখলে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, তারপরও তুমি তোমার সকল ক্ষণ শেষ করতে চাওনি।

আমি সাগরিকার মুখের পানে চেয়ে আছি। মনে করি কতো বছর আগের সেই সব কথা? সেই মধু ক্ষণ আমার মনে পড়েনা। আমার ভাবনায় কেবল শুধু এই আজকের বিকেল। সাগরের জলে ভাসে রক্তিম আভা ঐ সূর্যের। যে হাওয়া আসছে সমুদ্র থেকে, তার দোলায় উড়ছে সাগরিকার অবিনস্ত চুল, উড়ছে তার শাড়ির আঁচল। আজ এই স্বর্নাভ বিকেল শুধু আমার আর সাগরিকার করে পেতে চাই --
'হৃদয়ে প্রেমের দিন কখন যে শেষ হয় —
চিতা শুধু পড়ে থাকে তার,
আমরা জানি না তাহা; — মনে হয় জীবনে যা আছে। '

তারপর সেই সাগরের মাঝে সন্ধ্যা নেমে এলো। সূর্য ভেসে ডুবে গেলো লোনা জলে । সীগাল চ্রিঁহি চ্রিঁহি করে গান গেয়ে উড়ে চলে যায়। কতো অরণ্যের আঁধার আমরা দেখেছিলাম, কতো অন্ধকার নেমে এসেছিলো গোমতীর তীরে, ময়নামতির শালবনে ডুবেছিলো শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ। আজ যেনো সে সবই নস্টালজিক। সাগরে নেমে আসা এই মনোরম সন্ধ্যায় সাগরিকার মুখখানি স্নিগ্ধ রূপ পেলো। মনে হলো -- ফিরে গিয়েছিলাম অনেক বছর আগের সেই গোমতীর তীরে। সাগরে নেমে আসা সেই সন্ধ্যায় আমার কাঁধে মাথা রেখে সাগরিকা গেয়েছিলো এই গান --

'বাতাসের কথা সে তো কথা নয়
রূপ কথা ঝরে তার বাঁশিতে
আমাদেরও মুখে কোন কথা নেই
যেন দুটি আঁখি ভরে
রাখে হাসিতে।
কিছু পরে দূরে তারা জ্বলবে
হয়তো তখন তুমি বলবে।'

তারপর একে একে আকাশের সব তারা জ্বলে উঠলো। আশ্বিনের পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে পূর্ব আকাশে। সাগরের জলে ভাসে যতো ধ্রুবতারা। এই রাত কি আজ আমাদের হবে? ঐ চাঁদ কি দুজনের হবে? ঐ ধ্রুবতারা কি সাগরিকার কপালে জ্বলবে? জাহাজের রেলিংয়ের পাশে দাড়িয়ে আছি আমরা দুজন। সাগরিকা খুব নিবিড় ভাবে আমার কাছে চলে আসে। দুহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে -- ' ওগো, তুমি সেই আগের জনমের মতো আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা। সেবার গিয়েছিলে, সে জন্য আমি আত্মাহূতি দিয়েছিলাম গোমতীর জলে। এবার তোমাকে অনেক সাধনা করে পেয়েছি। এবার আর তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবেনা। '

পূর্ণিমার চাঁদ হঠাৎ করেই যেনো মেঘে ঢেকে গেলো। কেমন অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এলো সারা সাগর জুড়ে। অনেকটা অন্ধকারে আমি সাগরিকার আনত মুখখানির দিকে তাকিয়ে বলি -- 'কিভাবে আমি তোমার হবো? আমার ঘরে লক্ষ্মী একজন মায়াবতী স্ত্রী আছে। '

সেই রাতে পূর্ণিমার আলো এসে সাগরিকার মুখে পড়েনি। তাই দেখা হলোনা ওর মায়াবী মুখ খানি। যে বাহুডোরে সাগরিকা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো, তা শিথিল হলো। কোনো কথা না বলে সাগরিকা আমায় ছেড়ে সরে দাড়ালো। হঠাৎ যেনো জগৎ জুড়ে নিকষ অন্ধকার নেমে আসে। রেলিংয়ের ওপাশে সাগরের জলে ঝাঁপ দেওয়ার একটি শব্দ শোনা গেলো।

মানুষের জীবনে কখনো ভ্রান্তি চলে আসে । অতীতের অনেক কিছুই বর্তমানের জন্য সত্যি হয়। আবার কখনো সে সব স্বপ্ন হয়ে আসে। সাগরিকা কি শুধু স্বপ্নই ছিলো আমার? বিশ্বাস করতে হয় তাই। যখন স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, জেগে দেখি -- আমার স্ত্রীর একটি হাত জড়িয়ে আছে আমারই বুকের উপর।

না আমি না তুমি

যদি কখনো প্রেমময়ী হও,
যদি তুমি জেগে উঠতে চাও তোমার প্রাসাদে,
শোকাচ্ছন্ন একাকীত্বে
যদি প্রশ্ন করো বাতাসে 'আমি কেমন আছি '?
ইথারের সমস্ত তরঙ্গ, নক্ষত্র, পাখি, পুঞ্জীভূত মেঘ
সবাই সমস্বরে উত্তর দেবে 'ভালো নেই। '
কোথাও প্রেম নেই, আছে শুধু আন্দোলিত প্রাণ
আছে ভালোবাসার কুঞ্জবনে বিস্মৃতির নির্ঝর।

যদি কখনো তুমি মায়াবি কেউ হও
যদি মাতাল হয় মধ্যরাতের গান
যদি লুপ্ত হয়ে যায় এ্য়োদশীর কোনো চাঁদ
যদি নিভে যায় এক এক করে সকল তারা
তখন ভালো থাকবোনা আমরা কেউই --
না আমি না তুমি, না আমাদের মধুময় প্রেম।

গোলাপ বউ

নিঝুম ছিমছাম বাড়িতে সেই প্রথম একবার পরী তার  পালক খুলেছিলো। আবার কি তবে মনে মনে চাইবো তোমাকে? পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছো সুখের সেই তুমি। বাতাসের গান জলে ডুবছে ভাসছে। আবার তুমি যদি রাতে নেমে আসো এই বাড়িতে? প্রদীপের পাশে এসে ফিসফিস করে বলো, 'জানিনা আমি জানিনা। তুমি জানো?'
ছাতিম ফুল নাকি মনের কথা শোনে। নীলকণ্ঠ পাখির দেশে কানে কানে বলবে,  চলো ওই একলা যুবকের বুকে। যে একা একা এই শহরে ঘোরে, তার হাত ধরে একবার হেসে ওঠো। শেষরাতে ঘুম ভেঙে গেলে ছাতিম ফুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা সুখের শিশিরে তুমি ঠোঁটের দাগ রেখে চলে যাও। যে যায় সে আর আসেনা। যে আসে সে এখন যুবকের সন্ধ্যার বুকে একাকী টবে রাখা গোলাপ বউ।

নির্জনতা থেকে জনারণ্য

এইখানে যখন প্রথম এসেছিলাম তখন ফাঁকা জমিনের উপর একটি রেল লাইন ছিলো। সন্ধ্যার পরে পাশের জনমানবহীন ছোট রাস্তা ধরে নিঃশব্দে হেটে হেটে চলে যেতাম আমার বাড়ি। আজ এখানে কত্তো বড়ো একটি স্টেশন! হাজার হাজার লোক এখানে ওঠানামা করে। আর পাশের সেই ছোট্ট পথটি এখন রাজপথ, লক্ষ মানুষ চলে এই পথে সকাল দুপুর সন্ধ্যায়।

সেই সব নির্জনতার কথা ছিলো আশির দশকে। আর নীচের এই দৃশ্যটি আজকের। ছোট্ট এই জীবনে কতো পরিবর্তন!  নির্জনতা থেকে এতো জনারণ্য।

ছবি : বিমানবন্দর স্টেশন।
         আজ সকাল দশটায় তোলা।

যদি নাও প্রেম

চারপাশের শূণ্যতারা মিথ্যে হোক, ভালোবাসার
সুগভীর ছায়া পড়ুক এই জীবনে
তোমার ভিতরে ছড়িয়ে দেবো আমার প্রাণ
আমার প্রেম
ঈশ্বরের নির্মিত এই বুকে যতোই বাজুক
গভীর যতো ক্রন্দনের আওয়াজ।

আত্মার মধুর আলোকে দ্যুতি ছড়িয়ে দেবো
তোমার অন্তরাত্মায়
প্রিয় তুমি, সবই হতে পারে তোমাকে নিয়ে
এই পৃথিবীর ধূলোয়
আমার রক্ত কনিকায় জাগাও তোমার সকল
প্রবাহমান প্রেম সকল মায়া
তুমি এসে চূর্ণ করো আমার অন্তর্গত সকল গ্লানি।

তোমাকেই ভালবাসা অর্পণ করি
তর্পন করি মায়া মমতা
আমার দু 'হাতের আজলায় উপচিয়ে পড়ে প্রেম
যদি ভরে নাও সেই প্রেম, যদি থাকো কাছাকাছি
তুমি কখনোই পরাজিত হবেনা।

বিসর্জন দাও

দূর থেকে তাকে দেখলাম আজ বুড়িগঙ্গার পারে
হেটে হেটে এসেছিলো সে আরমানীটোলা থেকে
নবাব বাড়ির গেটে এসে
থমকে দাড়িয়েছিলো সে একবার।
আমি তার নাম জানিনা,
সে কি কৃষ্ণা? নাকি বাসন্তী, নাকি বিজলী?
কপালে তার সিঁদুর ছিলোনা,
সেকি মীর্জা বাড়ির মেয়ে তবে ?
নাকি সাঁওতাল, হরিজন দাসী কোনো?
মেয়ে তুমি যেই হও, চিত্ত আজ বিমুগ্ধ তোমার জন্য।

পায়ে নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ তোলো কেনো?
হাতে তোমার শাঁখারী বাজারের শাঁখা বাজে
কানে দোলে দুল, মাথার চুলে চন্দন ছড়ায়
কান্চনজঙঘার সৌরভ নিয়ে বিস্ময়ে দাড়িয়েছিলো,
তুমি কি বিসর্জন দেবে এই গঙ্গার জলে?
পার্বতী আজ ফিরে যাবে কৈলাসে মানস সরোবরে
যাবে শ্বশুরবাড়ি, শিব সংসারে
মেয়ে তোমার তো কোনো শ্বশুরবাড়ি নেই।

যদি সন্ন্যাস হতে হয় হবো, বেদুইন হতে হয় হবো
যদি সাঁওতাল হতে হয় হবো
হরিজন হরিদাশ হতে হলে তাই হবো --
তবুও বিসর্জন দাও আমারই হৃৎ যমুনায়।

স্পন্দনহীন আত্মার কথা

আমাদের দ্বিতীয় সন্তানটি নেই। নেই অর্থ ভ্রুণে প্রাণ পাওয়ার আগেই তাকে গর্ভপাত করানো হয়েছিল। ওকে যদি রাখতাম, ও আজ পূর্ণ তরুণ অথবা তরুণী হতো।
কি হতো সে? আমার মন এখনো বলে, ও আমার কন্যা সন্তান হতো। আমি মনে মনে অন্তরের মাঝে ওর একটি মুখচ্ছবি আঁকি। ও আমার চোখের সামনে তিলতিল করে বড়ো হতো এতোদিন। যদি ওকে রেখে দিতাম, এখন হয়তো ওকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে হতো।

হঠাৎ কখনো কখনো নিস্তব্ধ মুহূর্তে এই সন্তানটির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে প্রাণহীন সেই ভ্রুণের কথা। স্পন্দনহীন সেই আত্মার কথা। সেই কতো বছর আগে আমার স্ত্রী  কয়েকবিন্দু রক্ত ঝরে এসেছিল অপারেশন টেবিলে। যা এখনো অশ্রু বিন্দু হয়ে ঝরে পড়ে আমার চোখ থেকে।

আজ কন্যা দিবস। আমার সেই প্রাণ না পাওয়া কন্যাটির আত্মা যেখানেই থাক্, ভালো থাক্।

ছবি : আমার ছোট মেয়ে ঐশ্বর্যময়ী।

তুমি এসো

এতো কাছে আসতে নেই অগ্নি মুখ প্রজ্বলিত করে
দীর্ঘ চুম্বনের পথ পারি দিয়ে
হঠাৎ জ্বলে ওঠা প্রথম আলোর মূর্ছনার মতো --
এতো ভালো বাসতে নেই
সব প্রেম চিহ্নর পথ মাড়িয়ে আবাস গড়ো এসে
যেখানে নদী আছে
জ্যোতির্ময় অরন্যানী আছে
বসন্ত দীঘি আছে
যেখানে হাত ডোবালেই পেয়ে যাও অমৃতের পবিত্রতা।

তুমি আলো হয়ে আলো ছড়াও নির্জনতার ভিতর
মহাকাশ ছুঁয়ে থাকে যেমন পৃথিবীর বুকে --
তোমার দীপ্তিময় মুখে বিষন্নতার বিলাপ নেই
তুমি ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরো
অঙ্গার করো
ছাই করো
ভস্মীভূত করো
আপন কক্ষপথে জ্বলে ওঠে যতো তারা।

এতো কাছে জড়াতে নেই
যেখানে নক্ষত্র নক্ষত্র সংঘর্ষে আলিঙ্গন তৈরী হয়
নৈঋত থেকে ঝড় হয়, হৃদয় তোলপাড় হয়
রক্ত ক্ষরণ হয়,বসতি ধ্বংস হয় --
আমি এই প্রেম চাইনা, এসো প্রিয়তমা
অন্ধকারের নৈঃশব্দ ভেঙ্গে সকল শূণ্যতা পূর্ণ করো
ঐ পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলো ঝলমলিয়ে।

অণুকাব্য

পরশু রিকশায় করে আমি আর আমার স্ত্রী যাচ্চিলাম তিন নং সেক্টরে একটি ব্যাংকে। হঠাৎ পথে গুরিগুরি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আমরা রিকশায় বসলে সাধারণত হূড উঠাইনা। এবারও হূড উঠানো হলোনা। বৃষ্টিতে আমার মাথার চুল ভিজে ষাচ্ছিলো। সে জানে, বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ঠাণ্ডা ও জ্বর আসে। তাই সে তার পরনের ওড়না আমার মাথায় বিছিয়ে ধরলো। আপ্রাণ চেষ্টা করলো আমি যেন বৃষ্টিতে ভিজে না যাই।

নাহ্!  তারপরও বৃষ্টিতে আমাকে ভিজতে হলো। এবং কাল থেকে আমার জ্বর এবং কাশি। বৃথাই গেলো তার ওড়না দিয়ে জলে না ভেজার সেই প্রচেষ্টা!

হঠাৎ তুমি ছাড়া

আমি জানি তুমি ছাড়া পুড়ে খাক হয়ে যায়
সবুজের প্রান্তর, ফসলের মাঠ
চৌচির হয়ে যায় উর্বর মাটি
বিরাণ হয়ে যায় লতা গুল্ম বৃক্ষ, সারি সারি তরু।

তুমি না থাকলে গান নেই
গৌরী প্রসন্নের কলম থেমে যায়
বেটোফোনের ভায়োলিন করুণ সুরে ভেসে যায়
কানে বাজে রাতভর বিসমিল্লা খাঁর সানাই
তুমি না থাকলে দূরাগত কোনো নিক্কণ বাজেনা।

সুখ নেই, প্রশান্তির বুক নেই, ভালোবাসা নেই
তুমি না থাকলে শুকিয়ে যায়
দীঘির শান্ত জল,
সব কিছুই বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, মেঘে মেঘে ভেসে যায়।

আমার সকল মায়া সুধা, হৃদয় গহীনের সকল আকুলতা
সকল ভাবনা,
তিস্তা পারের দু 'কূলের সকল দীর্ঘশ্বাস --
হঠাৎ তুমি ছাড়া সব কিছুতেই হাহাকার করে ওঠে।

মনে কি পড়ে

মনে কি পড়ে কোভা? ব্যস্ত শহরে সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল
তুমি ভেজা হাইওয়ে ধরে
চলে গিয়েছিলে লং ড্রাইভে অনেক দূরে
কি নিঝুম বৃষ্টি ছিলো ! রিমঝিম উড়ছিলো পথের ক্লান্তি
মনে কি পড়ে কোভা? আমি ছিলাম তোমার পাশে।

চোখ মেলেছিলো ডানা উড়ন্ত গাংচিলে
দূরে ঝাঁও বনে ঝরছিলো বৃষ্টি অনবরত
আরো বেশি স্তব্ধতার ভিতর তুমি ছিলে ভাবলেশহীন
মনে কি পড়ে কোভা?
কি মোহময় সেই বৃষ্টিপাত! কি অবিরাম জলের ধারা
বাহূর আশ্রয়ে জানিয়েছিলে প্রথম ভালোবাসার নিমন্ত্রণ
বলেছিলে --' তোমাকে ভালোবাসি। '

তুমি বিস্মৃত হয়োনা কোভা --
সেই বিনম্র মুখের হাসি সেই মায়াবী দৃষ্টিপাত
নগরীর সমস্ত সভ্যতা ভেঙে চুরমার হয়েছিলো
বৃষ্টির শব্দে পথ চলতে চলতে সেই বিকেল!
বিস্মৃত হয়োনা কোভা
শান্তা মনিকার তীরে আমাদের সেই শেষ আলিঙ্গন!
প্যাসিফিকের জল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো তারও আগে
যা আজ আর মনে পড়েনা।

জীবন ফুড়িয়ে গেলো

উচ্ছল তারুণ্যে আর উদ্দাম যৌবনে কতো সুন্দর জিনিস চোখের সামনে চলে এসেছে, সেগুলো কখনোই ভালো  করে তাকিয়ে দেখিনাই। আর এখন? ছোট্ট একটি ঘাসফুল দেখলেও বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি । পৃথিবীতে এ রকম কতো বিস্ময় রয়ে গিয়েছে, যা দেখা হয়নাই। আর দেখবোই এখন কখন? দেখতে দেখতে জীবনই ফুড়িয়ে গেলো।

সুশীতল বাতাস নেই

আজ আর কোনো সুশীতল বাতাস নেই
মেঘের কাছে কারো কোনো শুভাশীষ নেই
আজ চারিদিকে তপ্ত নিঃশ্বাসের লু হাওয়া --
আজ দূরে মেঘের ছায়ায়
শূন্যতার ঘুড়ি উড়িয়ে দেই।

সুসম্পর্কের জন্য চাই কাডলিং

সুসম্পর্কের জন্য চাই কাডলিং। কাডলিং একে অপরের কাছাকাছি আসার জন্য খুবই জরুরি। একে অপরকে অনুভব করার মধ্যে দিয়ে প্রাণ পায় সম্পর্ক। আর এই সম্পর্ক গড়ার জন্য চাই 'কাডলিং' বা 'হাল্কা আদর'।

কাডলিং আপনার মনকে খুশি রাখে। যন্ত্রণার উপশম ঘটায়। মানসিক চাপ কমায়।  মনোমালিন্য থাকলে তা লাঘব করে। সম্পর্কের একঘেয়েমি কাটিয়ে বৈচিত্র্য আনে। মোদ্দাকথা, 'কাডলিং' উভয়ের মনকে প্রফুল্ল করে। যা একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

সবাইকে  শুভরাত্রি।