শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

মুক্ত গদ্য কবিতা ( পাণ্ডুলিপি )

১.  

মনে হয়, জগতের সকল অন্ধকার দিয়ে তোমাকে আমি ঢেকে রাখি। রাখিও তাই। কিন্তু কখন যে তুমি শত সহস্র আলোকবর্তিকা হয়ে অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে ওঠো। আর মুহূর্তেই আমার অন্ধকার ঘরটি যেন আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে যায়।


২.


এখনও রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে, হঠাৎ মনে পড়ে যায়, কেউ একজন আসবে বলে আর আসেনি। কেউ একজন আসবে বলে আয়োজন করেছিলাম অনেক কিছুই।  তার পুরোনো চিঠিগুলোতে আছে  অনেক কবিতা, সুন্দরতম শব্দমালা।  আছে মুগ্ধ করা অনেকগুলো মূহুর্ত। অনেক হৃৎস্পন্দনের অনুরণন…

কেমন যেন হাহাকার বুকের মাঝে।  ঠিক কষ্টেরও না, কেমন যেন। সবাইকে লুকিয়ে একলা রাতে বালিশে মুখ গুঁজে রাখতে মন চায়। হাতের সব কাজ ফেলে দিয়ে মনে হয় স্টেশনের সেই কাঠের বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসে থাকি। মনে হয় বসন্তের ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর উপর মর্মর আওয়াজ তুলে হাঁটতে হাঁটতে দূরে কোথাও চলে যাই।


৩.


প্রায়শই পাশে থেকে অস্ফুট আর্তি শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি রাতভর সে নির্ঘুম। চোখে চোখ ছুঁই। কপালে কপাল রাখি। বুকে কান পেতে শুনি ভিতরের মর্মরিত কান্না। ওর ব‍্যথাগুলো নিয়ে নেবার চেষ্টা করি আমার শিরায়, আমার রক্ত কণিকায়।


৪.


সংসার ধর্ম আর ভালো লাগে না। বৈরাগ্যই শান্তি। এসো এই বসন্তেই আমরা পথে বেরিয়ে পড়ি। সামনের বসন্ত নাও পেতে পারি। বাকী জীবন পথে প্রান্তরে, আশ্রমে আর আখড়ায় কাটিয়ে দিই।

৫.


'আমি তোমার জীবনেও আছি, মরণেও আছি।'
এই কথাটি যে বার বার বলত সে আজ আর জীবনে নেই। 

মানুষ কখন যে জীবনে আসে, আর কখন চলে যায়। কেউ বলতে পারে না। যে থাকতে চেয়েছিল জীবনে, সে এখন রয়ে গেছে মনে।


৬.


নি:সঙ্গ নাভি দেখি, নিসর্গ শোভা দেখি, চুপচাপ পুষ্পবৃন্ত দেখি, তৃণভূমি দেখি । দুহাতে ধরেছি অরণ্য, মুঠোয় ভরি এর সুগন্ধ । ছিঁড়ে যাচ্ছে মায়ার টান। উল্টে যাচ্ছে যতিচিহ্ন। ঠোঁটের স্পর্শে জেগেছে প্রেম ,জ্বলছে বহ্নিশিখা। ছিনিয়ে নিচ্ছি তার শেষ আলোটুকু, নিঃশেষ হচ্ছে স্বেদ কণিকা।


৭.


আমি আমার শরীরের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলি, তারপরও কি আমাকে যেতে হবে?
যদি অচিন কেউ এসে আমাকে নিয়ে যেতে চায়, 
যাবে কি তুমি আমার সাথে ?
সেদিন তুমি আমায় কানে কানে বলেছিলে ---
'আমার সময় হয় নাই, সময় হয় নাই।'


৮.

এই সেদিনও শীতের সকালে রোদ্র খুঁজেছিলাম-
আজকের এই তপ্ত ফাল্গুনের খাঁখাঁ দুপুরে খুঁজি শীতল ছায়া।


৯.


কাল বিকালে দোয়েল চত্বর থেকে হেঁটে হেঁটে যখন বাংলা একাডেমির দিকে আসছিলাম, ঠিক তখনই ময়ুরাক্ষী বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ঝমঝমিয়ে পড়ছিল আমার গায়ের উপর। ভিজে যাই কাকভেজার মতো। মেলায় আর প্রবেশ করা হলো না।

সন্ধ্যায় যখন উবারে করে বাড়ি ফিরছিলাম তখন ঢাকার অলিগলি রাজপথ জ‍্যাম্। গাড়ি যেন দাবার রাজার মতো স্টেলমেট হয়ে আছে। চাল দেওয়ার কোনো জায়গা নেই।

শীতে কাঁপছিলাম খুব। বুকের নীচে ভাঙ্গা হৃদয় চেপে আসছিল। হ‍্যাপি ওর বৃষ্টি ভেজা শাড়ির আঁচলখানি  চিপে জড়িয়ে ধরছিল বারবার। যেন আমার বুকে ঠান্ডা না লাগে!

কেন জানি হ‍্যাপিকে কখনও কখনও আমার মায়ের মতো মনে হয়।


১০.


একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।
কেমন কবরের মতো একটা ঘর। শুয়ে আছি চোখ মেলে। চারদিকে অন্ধকার। হঠাৎ দেখি, কে যেন দূর থেকে আলো হাতে এগিয়ে আসছে। যখন কাছে চলে আসে দেখতে পাই, সে একটি মেয়ে। চিনবার চেষ্টা করি কিন্তু চিনতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম মায়াবতী হবে।  মেয়েটি তার হাতের আলোকবর্তিকাটি পাশে রেখে আমার বুকের উপর কপাল রেখে বলে - 'স্পর্শটুকু মনে রেখ, ভুলে যেওনা।'
স্বপ্নটা ভেঙে যায়।

১১.


আমার  চোখ সেই পথের দিকে চেয়ে থাকে, যে পথের সকল লতা গুল্ম ঘাস পায়ে মাড়িয়ে তুমি চলে গেছ।তারপর আকাশে জমেছে মেঘ, ঝরেছে জল, সব পথ কা্দাজলে ভেসে গেছে কিন্তু মেঘের নীচে সেই কাদা পথে হেঁটে কেউ আর ফিরে আসেনি । এই যে এত জল, এত মেঘ --- যে জলে ভিজে ভিজে আমি একাই হাঁটছি, আমার এই বৃষ্টি ভেজা একাকী ভালোবাসা উপভোগ করল না কেউ।


১২.



এমন রাক্ষুসে জ্যোৎস্নার আলোর ঝর্ণাধারা এ জীবনে আর আসবে না।গৃহত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হওয়ার যে ক্ষণ আমি জীবনভোর খু্ঁজেছিলাম তা আজ রাতে আমারই দুয়ারের সামনে চলে এসেছিলো।কিন্তু সংসারের মানুষগুলোর মায়ার টানে আমার সেই লালিত গৃহত্যাগ করার স্বপ্ন আজ পূরণ হলোঁ না।


১৩.


মুহূর্তেই জীবন ফুরিয়ে গেল। আজ সকালে যে রং যে আভা দেখলাম, কাল সকালে তা খু্ঁজে পাওয়া যায় না।পলকেই সবকিছু বদলে যায়। জীবন যে রেখা থেকে শুরু হয়েছিল সে রেখায় ফিরে যাবার কোনো পথ নেই। চলতে চলতে পথের মাঝেই জীবন শেষ হয়ে গেল। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে পথের শেষ প্রান্তরেখাটি দেখা যায়।


১৪.


নদী যেমন চলতে চলতে এক জায়গায় এসে থমকে সরোবর হয়, তেমনি কোনও দেবতার মঙ্গল আলোকের মতো অসীম ভালোবাসা নিয়ে সে আমার কাছে এসে সরোবর হয়েছে। যেন পলাতকা কোনও ঝর্নার জল প্রতিদিন আঁজলায় ভরি। তার মনটি আজ সকালের শিশির ঝরার মতো ঝির্ ঝির্ করে কাঁপছে। 
সবাইকে ভোরের শুভেচ্ছা।


১৫.


আমি তোমার সব দুঃখ মুছে ফেলতে চাই, কি্ন্তু কিছু দুঃখ আছে মানুষ চাইলেই মুছে ফেলতে পারে না। এই ক্ষমতাটা ঈশ্বর তার হাতে রেখে দিয়েছে। 

আমি আমার অসীম ভালোবাসা দিয়ে তোমার জীবনটাকে ভরে তুলতে চাই। এটা আমি করতে পারব, কারণ এই ক্ষমতাটা ঈশ্বরের হাতে নেই, এই ক্ষমতা আমার হাতেই আছে।


১৬.


কি করে ভুলে থাকতে পারি এই আকাশ, ধরিত্রীর উষ্ণতা, বাতাসের সতেজতা, জলের ঝিকিমিকি। এই ধরিত্রীর প্রতিটি অংশই আমার কাছে সৌন্দর্যের --- পাইন গাছের  চকচকে ডগা, বালুকাময় সমুদ্রতট, অন্ধকার বনভূমিতে জমে থাকা কুয়াশা, আদিগন্ত ফসলের প্রান্তর, প্রতিটি পতঙ্গ, ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা  ঝিলিমিলি বাতাস,  অশোকের গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতার শব্দ। এই সবই দেখার জন্য আমাকে ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যায়।





১৭.

ঘর হতে বেরিয়ে আলোতে এসে দাঁড়াই। বাইরে এত আলোর ছ্বটা। ঝলমল করছে বৃক্ষরাজি, অ্ট্টালিকা, পশু, পাখী, পাহাড়, নদী, সাগর। মনে হচ্ছে এই আলো মেখে পরিপূর্ণ করি জীবন। আমাদের স্বপ্ন দেখা শেষ হয় নাই, জীবন পরিপূর্ণ হয় নাই। আমার সাথে তো একজন সাথী আছে, সে এখনও আমার হাত ধরে আছে। যে আলো আজ দেখছি সে আলোয় দু'জনে মিলে পথ চলে যেতে পারব অনেক দূর। জীবন কোথাও শেষ করতে চাই না। পথ চলাও না। এই জীবন, 'এই পথ চলা যেন কোনো দিন শেষ না হয়।'


১৮.


আমার দায়ভার যখন শেষ হবে, তখন অপেক্ষাই বা কেন করব? সেই উদ্দাম, আনন্দময় জীবন যদি আর নাই থাকে, অক্ষম আর বোঝা হয়ে থাকা এই সুন্দর পৃথিবীর কাছে গ্লানিকর। সব সু্ন্দর শেষ হবার সন্ধিক্ষণেই ঘরের জানালা দরজা সব খুলে রাখতে চাই। আত্মার প্রস্থানের সাথে মানুষের সকল দুঃখের নাকি পরিসমাপ্তি ঘটে। পৃথিবী থেকে চলে যাবার আনন্দটাই তখন অন্যরকম হয় ।


১৯.


সৃষ্টিকর্তা পরম যত্ন সহকারে আমাকে অতি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য একটি জীবন দিয়েছে। সেই জীবনে তুমিই আমার একমাত্র সহচরী হলে। যার এলমেল চুলে মুখ লুকিয়ে নিঃশ্বাস নেই প্রাণ ভরে। যার বুকের পাঁজরে লেগে থাকে মহাকালের যত সুখ দুঃখ।  আমি তার কাছ থেকেই চলে  যেতে চাই জীবন নদীর ওপারে -- তাকেই ভালো বাসতে বাসতে।


২০.


যদি কোনো দিন পূর্ণিমা রাতে তুমি আর না থাকো, যদি আঁধার এসে ঘিরে ধরে আমাকে, 
'হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়ে' আমাকে তখন কে আর ভালবাসবে?


২১.


মাঝে মাঝে শব্দহীন কোনো জগতে চলে যেতে ইচ্ছা করে। যেখানে মেঘের শব্দ নেই, ঝিঁঝি পোকাদের গান নেই, নদীর জলের ছলাৎছল শব্দ নেই, মানুষের কোলাহল নেই, নেই কোনো বঞ্চনার মর্মরধ্বনি। আছে কী সত্যিই এমন কোনো জগৎ?

বড়ই ক্লান্ত হয়ে সেই পথ ও সেই নিঃশব্দলোকের ঠিকানা খুঁজছি।


২২.


আমার জন্ম যদি ফকির লালন শাহ্ এর সময়কালে হতো, তহলে আমি লালনের শিষ্য হতাম। লালনের আখড়ায় যেতাম, গাঁজা টানতাম। গান করতাম। সংসার বৈরাগী হয়ে  ঘরহীন জীবন যাপন করতাম। আহা! কী সুখ-ই-না পেতাম লালনীয় জীবন যাপনে !


২৩.



ভালোবাসায় অনিমেষ আর মাধবীলতা হতে হয়। দুজনেরই আরাধ্য ছিল একজন আরেকজনকে কাছে পাওয়া। পেয়েওছিল তারা। এর জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাদের। আসলে প্রেম এই রকমই হওয়া দরকার। একে অপরের বুক থেকে খুঁটে খুঁটে তুলে নিতে হয় আবেগ। আজন্ম ছিনিয়ে আনতে হয় কুসুমিত ভালোবাসা।



২৪.


মৃত্যুর জন্য কোন্ সময়টা শ্রেষ্ঠ সময় ? আমার কাছে সুবেহ্ সাদিক! একটা সময় আসবে আমি মরণেও থাকব না, জীবনেও থাকব না। ঐ মৃত্যু সন্ধিক্ষন সময়টুকুতে আমার স্ত্রী-সন্তানেরা আমার শয্যাপাশে বসা থাকবে। আমার নিষ্করুণ চোখ ওদেরকে  দেখতে দেখতে বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর আমার আত্মা বেরিয়ে যাবে। দূরে মসজিদগুলোতে তখন ফজরের আযান ধ্বনিত হতে থাকবে।


২৫.


জীবন কাটে না এ জীবনে আর, জীবন ভরেও না এক জীবনে। একি তৃষ্ণা আমার । একি ক্লান্তি নিয়ে বসে থাকি। অনেক কাছে থেকে দেখি অনেক দূরের আশার বিন্দু! আজ দক্ষিণের দুয়ার খোলা আছে। আসুক বাতাস আজ দক্ষিণ থেকেই।


২৬.      রক্তকরবী

আজ এই রাতে ঢাকার আকাশে মেঘ নেই। পশ্চিম দিকে রাস্তার উপর গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কুসুমপুরের মতো কোনও নিশাচর পাখিকে উড়ে যেতে দেখলাম না আলো অন্ধকারে। এই নিয়নের আলোর দেশে কোনও পাখির দেখা কী মেলে? তা না মিলুক। সামান‍্য পাখির জন্য মন খারাপ হয় নাকি কারোর?

ইউটিউবে শচীন দেব বর্মনের গান শুনছিলাম। 
'বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা,/ রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে 
একি তব হরি খেলা,/ তুমি যে ফাগুন রঙেরও আগুন তুমি যে রসেরও ধারা, /তোমার মাধুরী তোমার মদিরা করে মোরে দিশাহারা।'

আমি কী করতে পারি? উদাস মন হলে হাত পা অবশ হয়ে আসে। যা করতে চাই, তা করতে পারি না। কিছু না করি সেও কম ভালো, বেশি যেন না ভাবি। ভালোলাগা বেঁচে থাক আমার রাতের সঙ্গে। এও এক অবুঝ অবোধ সঙ্গ।

গান শোনা বন্ধ হয়ে গেছে। যদি মেঘ হতো তাহলে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে আসত। এই ফাগুন ঋতু জানান দেয়, বৃষ্টি হতেও পারে। বারান্দায় হেঁটে হেঁটে ওপাশে চলে যাই। আকাশ দেখে ফিরে আসি আবার। আমি কী পেয়ে গেছিলাম নিরক্ষর চিরচেনা কোনো ফুলের গন্ধ?

তুমি কী উদ্বেলিত! আমি চন্দন যোগার করেছি ভালোবাসার জন্য। আমি গন্ধ বিলাব রাত্রি সহচরী রমণীর বুকে। পাখি হয়ে রোজ আকাশে উড়তে চাই। যেমন করে কোনো একলা যুবক অন্ধকারে ভালবেসে ভেসে যায়।

আমি নিমগ্নতা চাই। একজন রমণী এ ঘর ও ঘর হাঁটবে আমার সুখে সুখে। সে আনন্দ করুক রাতে ফুটে থাকা কোনো রক্ত করবীর মতো। সে যে নন্দিনী হবে আজ রাত্রিতে এই রঞ্জনের।


২৭.        সেই ঝড়ের রাতে


ধূলো ঝর আজ এই শহরে,
উদ্বাহু বাতাস আসছে তুরাগের তীর থেকে-
সেই শৈশবে একবার ঝড়ে পড়েছিলাম এক সন্ধ্যায়-
শৈলাভিটা নদীর খেয়াঘাটে- 
বাবা তার পাঞ্জাবীর নীচে আমার মাথা ঢেকে রেখেছিল
কি আপ্রাণ প্রচেষ্টা তার জল ঠেকাতে !
,তারপরেও বাবার কন্ঠ বেয়ে
বুক গরিয়ে বৃষ্টির জলে ভিজে চুপসে গিয়েছিল
আমার মাথার চুল- বাড়ীতে যেয়ে দেখি-
লন্ঠণ জ্বালিয়ে নামাজ পড়ছেন মা।

মা সেই ঝড়ের রাতে নিশ্চয়ই আমার জন্য
আর বাবার জন্যে মঙ্গল প্রার্থনা করেছিলেন।


২৮.          পরজনম


যেদিন আকুল হয়ে বইবে বসন্ত বাতাস, যেদিন সবুজ বৃক্ষরাজির পল্লব ঝিরি ঝিরি করে দুলে উঠবে, যেদিন পূর্ণিমা রাতের ধূসর ছায়া পড়বে পদ্মপুকুর জলে ---
সেদিন সেই দিনে, সেই রাত্রিতে আমি আসব তোমার কাছে, হাজার বছরের অন্ধকার রাত্রির পর হলেও আমি আসব।


২৯.


আমার নিজের ভিতরেই এক মহাবিশ্ব আছে। আর সেই মহাবিশ্বের নির্জন গভীরে মগ্নচারী হতে চাই। সেখানেই খুঁজব অনন্ত সুখ, সেখানেই হয়ত পাব এক আনন্দময় স্থিতি। 


৩০.


আমার আছে ল্যাপটপ, কীবোর্ড, দুটো চোখ, আঙুল। 
আছে ভাঁটফুল, আমি নিঃসঙ্গ হই নাই। সময় বহিয়া যাবে।


৩১.


তার প্রাণের কথা, মায়াবী কাজল চোখ , বহুদিনের চেনা গন্ধ, বালিশে লেগে থাকা সুগন্ধি, গল্প বলা অজস্র রাত্রি, অস্পষ্ট করে  মনে পড়া কত ডাক নাম -- আরও কত কিছু আষ্টেপৃষ্টে করে মনে জাগে , কত ভাবে যে প্রাণে জড়াতে চায় সারাক্ষণ -- 
'দেহমনের সুদূর পারে  হারিয়ে ফেলি আপনারে,
গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে।' 

সবই তোমার মায়ার টানে ......


৩২.

প্রেমে পড়া কাকে বলে?  এই যে আৃমি-
এই শহরটাকে ভালোবেসে পৃথিবীর অন্য কোনো  ঝলমলে শহরে থিতু হইনি, 
সন্ধ্যাবেলা বের হলে কোনো না কোনো বাড়ি হতে ধুপের গন্ধ পাই,
কবরস্থানে দাঁড়িয়ে নীল আকাশ যেমন দেখি
আবার বুড়িগঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি বিকালের বিষণ্ণ সূর্যাস্ত, 
রেল স্টেশনে থেমে থাকা ট্রেনের জানালা দিয়ে কেউ না কেউ অপলক চেয়ে থাকে,
সকাল বেলা হাঁটতে গিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের বড়ো পুকুরটাতে কস্তরি ফুল ফুটে থাকতে দেখি -
বাঁশঝাড়ের তলায় যত নিঃশব্দেই হাঁটি না কেন, শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি শুনতে পাই,
বাড়ির সম্নূখে পিচঢালা রাস্তাটাতে হাঁটার সময় মনে পড়ে এখানে আগে মেঠোপথ ছিল,
প্রাইমারি স্কুলে নতুনকুঁড়িরা যখন হেঁটে যায়, তখন মনে পড়ে আমার কৈশোর কথা! 

আমি এইসবের  প্রেমে পড়ি, এইসব কী প্রেম নয়?


৩৩.

আমার সমস্ত তৃপ্তি অতৃপ্তি, আমার প্রেম অপ্রেম, অপূর্ণ সুখ, আমার তৃষ্ণা, আমার  সমস্ত উম্মাদনা তোমাকে ঘিরে। তুমি আমার চৈতন্যে অবচৈতন‍্যে। তোমাকে ছেড়ে আমি খুব বেশি দূরে কখনই যাব না।


৩৪.


জীবনের এই পথ চলতে কত বাঁক যে পেরুতে হয়। এক বাঁকে সুখ, আরেক বাঁকে দুঃখ। এক বাঁকে প্রেম, অন‍্য আরেক বাঁকে বিচ্ছেদ। বাঁকে বাঁকে কতো ব‍্যর্থতা, কতো গ্লানি, কত যে দীর্ঘশ্বাস।

কত ঘাত পেরিয়েই তবে এই জীবন। তবুও জীবনের জন্য কত মায়া, কত প্রবল আকুতি বেঁচে থাকার! এই পৃথিবীর ধূলোর উপরে পড়ে থাকবার কত যে প্রচেষ্টা।

অস্তাচলের শেষ আলোর উপর কোনও ধূসর ছায়া পড়ুক, তা চাই না। তারপরও আবছায়া এসে পড়ে অস্তযাত্রার পথের উপর। আমার যে পথ চলতে ইচ্ছে করে  ঐ অস্তাচলের আঁধারের দিকেই।


৩৫.


ক্লান্তির শেষে, ধূসর এই সন্ধ্যার গোধূলির উপর পড়ে থাকা অকৃপণ আলো সব… আমাদের  হোক। আমাদের  হোক।


৩৬.


এইসব অন্ধকার দিন, এইসব নিবিড়  তিমির রাত্রি  পেরিয়ে একদিন ঠিক দেখা হবে চাঁপাগন্ধ কোনো বসন্ত দিনে। তখনই খোঁপায় বেঁধে দেব নিশি চন্দন। সেই অপার্থিব সাক্ষাৎ মূহুর্তে আমি স্থানু হয়ে গ্রহণ করব পার্থিব যত সুখ.....


৩৭.


অস্তরাগের সন্ধ্যায় তুমি এসো-
ধান ধূপে জ্বলবে প্রদীপ, জ্বলবে তারার বাতি
তারপর দোঁহা জ্বলব রাত ভর
কেউ নেভাতে আসবে না, ছাই ভস্ম হবো বর্বর আদি অনলে।