সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

জ্যোৎস্না পড়ুক গায়ে

তার সাথে আমার কোনো রাগ নেই, কোনো অভিমানও নেই। তারপরও আমরা দুইজন দুইজনের সাথে ঠিকমতো কথা বলিনা। আজ রিক্সায় আসছিলাম ওর মামার বাড়ি থেকে । সারা রাস্তা সে আমার সাথে কথা বললোনা অথচ গোপনে গোপনে আমি তার চুলের গন্ধ নিচ্ছিলাম। উত্তরের এলোমেলো হাওয়ায় ওর মাথার এক গুচ্ছ চুল এসে পড়েছিলো আমার গালে। মাঝে মাঝে ঢেকে যাচ্ছিলো আমার চোখ। সে কি নির্বিকার ছিলো, নাকি সেও দেখছিলো এ সব।
একবার রমনা পার্ক থেকে বেরিয়ে মিন্টো রোড ধরে শেরাটনের দিকে আসছিলাম। বৃষ্টি নেই, রাস্তায় জল নেই, কোনো খানা খন্দক নেই। হঠাৎ শাড়ীর পাঁড়ে জুতা প্যাঁচ লেগে পা ফসকে পড়ে যাচ্ছিলো সে। আমি আমার শক্ত হাতে তার বাহু ধরে ফেলি। দেখলাম তিরিশ সেকেন্ড আমার বুকে সে আলিঙ্গন বদ্ধ হয়ে থাকলো। পথচারীরা সে দৃশ্য দেখে হতচকিত হয়ে উঠেছিলো।
প্রায়ই খাট ছেড়ে সে সোফার উপর যেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর সে দেখতে পেতো, তার মাথার নিচে বালিশ রাখা আছে, আর শরীর তার চাদর দিয়ে ঢাকা। আমি খাটের উপর ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকি তখন। আমি জানি সে বিস্ময়ে দেখছিলো তার রাতের বেলার এই পরিবর্তনগুলো।
আবার কোনো কোনো দিন উল্টোটাও হয়। একদিন খুব ক্লান্ত্ হয়ে অফিস থেকে ফিরেছি। বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাই। যখন ঘুম ভাঙ্গে দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত দেড়টা। আমার চোখের চশমাটি সে খুলে ওয়্যারড্রবে রেখে দিয়েছে। বুকের উপর পরে থাকা পত্রিকাটি ভাঁজ করে সাইড টেবিলে রাখা। খাবার টেবিলে খাবার সাজানো রয়েছে। সে সোফায় বসে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমি বিস্ময়ে দেখছিলাম এসব। সে কি ঘুমের ভিতরে আমার এই বিস্ময় ভরা চোখ দেখতে পেয়েছিলো?
খাটের দুই পাশে দুইজন শুয়ে আছি। কথা বলিনা কেউই। মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব। সারাদিন অফিসে কাজ করেছি। ক্লান্ত ছিলো শরীর। তাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাই। সে ওপাশ ফিরে হয়তো জেগেই ছিলো। রাতের শেষ প্রহরে যখন জেগে যাই, দেখি সে আমার বাহুর উপর মাথা রেখে বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তার একহাত আমার পাজর জড়িয়ে রয়েছে। আমি নিঃশব্দে চোখ মেলে সবই দেখলাম। আমি জানি তার এই অবস্থাটি ঘুমের ঘোরে হয়েছে।
দেখা গেলো,ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে দুইজন খেতে বসেছি। আমার পাতের ভাত খাওয়া শেষ হয়েছে। সে আর দ্বিতীয় বার দিচ্ছে না। আমি চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ি। দেখলাম সেও পূর্ণ খাবার না খেয়ে উঠে চলে গেলো।
সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার সময় টাইয়ের নট বেঁধে দেয়না। আমিও বলতামনা, তুমি বেঁধে দাও। অফিস থেকে বিকাল বেলা বাসায় এসে দেখি, সে আর সেদিন তার চুল বাঁধেনি। চোখে কাজল নেই। হাতের চুড়ি রিনিঝিনি করে বাজেনা।
কেন এই অস্বাভাবিক আচরণ তার? তখন আশ্বিনের মধ্য সময়। তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরনে তার লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি। সেদিন ছিলো পূর্ণিমার রাত। বানের পানি নেমে গেলেও পুকুর ভরা ছিলো জল। সন্ধ্যায় আম আর কদম গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখা গেলো। প্রগাঢ় আকুলতা দেখলাম তার ভিতরে। পুকুর পাড়ে বসে থাকবে সে, দেখবে পূর্ণিমার চাঁদ।
পূরানো কাঠের চেয়ার পেতে বসে আছি দুইজন। সে বলছিলো প্রথম কথা -- সারারাত বসে থাকতে ইচ্ছে করছে এইখানে!
আমি : আমার সারা জীবনই বসে থাকতে ইচ্ছা হয়।
আমি : একটা গান গেয়ে শোনাও না।
সে : আমি তো গান গাইতে পারিনা।
আমি : গুণ গুণ করে শুধু কথাগুলো শোনাও।
সে : ' একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে
ওগো বন্ধু কাছে থেকো, কাছে থেকো
রিক্ত আমার ক্ষুদ্র প্রাণে
তোমার আঁখিটি রেখো। '
আমি : এই গানটি আমার খুব প্রিয়। আমার এক বন্ধু এই গানটি খুব পছন্দ করতো।
সে : কোন বন্ধু? নাম কি?
আমি : মানসী
সে : কেমন বন্ধু?
আমি : ভালো বন্ধু!
সে : সে এখন কোথায়?
আমি : জানিনা কোথায়, হয়তো দূর পাহাড়ে সে ঘুরে বেড়ায়! অথবা চেঙ্গী ভ্যালীর বাঁকে বাঁকে।
সে : তুমি তাকে মিস করো?
আমি : করি।
সে : আমি আর এই গান কোনো দিন গাইবো না।
আমি : কেন?
সে : আমার আর চাঁদ দেখতে ইচ্ছা করছেনা।
এইটি তার রাগ না অভিমান আমি এই ব্যাপারে খুব কনফিউজড্। সে আমাকে যে পাগলের মতো ভালোবাসে এটা আমি বুঝতে পারি। আমি অনুভব করতে পারি সে আমাকে এক দন্ড না দেখে থাকতে পারেনা।
সেদিন ছিলো ছুটির দিন। দুপুরে খাবারের পর শুয়ে আছি। তাকে বললাম -- এসো, পাশে শোও। সে সোফায় যেয়ে শুয়ে পড়লো। তাকিয়ে দেখলাম, দুই চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারও কিছু পরে সে ঘুমিয়ে যায়। আমি তার মুখখানি দেখছিলাম। কিছু দুঃখ সেখানে ছেয়ে আছে। সে এখনো নিতান্তই একজন বালিকা। ওকে তৈরী করতে হবে যে আমাকেই।
আমার আর ঘুম এলোনা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। টেবিলের কাছে বসে লিখছিলাম ---' তুমি আগের মতো চুল বাঁধোনা কেনো মেয়ে? দুই বেনী বেঁধে খুকু হয়ে যাও। পায়ের আলতা তুলে আবার আলতা লাগাও। যখন তুমি আলতা উঠাও তখন তোমার পা আরো গোলাপী হয়ে যায়। আমি সুন্দর আলপনা আঁকতে পারি। এসো তোমার পায়ে আলপনা এঁকে দেই। আমি দেখছি তোমার আনত মুখ! ঐ মুখে দুঃখ রাখতে নেই। তুমি জেগে থাকলে তোমাকে নিয়ে তুরাগ নদীর পারে নিয়ে যেতাম। এই মায়াবী সন্ধ্যায় দু'জনে বসে থাকতাম তুরাগ নদীর তীরে। আজও তো পূর্ণিমা সেখানে। আমরা দেখতাম অসম্পূর্ণ সেই পূর্ণিমা তিথি। যা তুমি একদিন না দেখে চলে এসেছিলে। '
অনেকটা মন খারাপ করেই ঘর হতে বেরিয়ে যাই। পাশেই রেলস্টেশন। একাকী হাটতে হাটতে স্টেশনে চলে যাই। চা 'র দোকানে বসে চা খাই। একটা লোকাল ট্রেন স্টেশনে দাড়ানো ছিলো। ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে ছেড়ে চলে গেল। আমি শুন্য পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কতোক্ষণ। মনটা ভালো করতে পারলামনা। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে রাত নয়টার দিকে বাসায় চলে আসি।
ঘরে এসে দেখি সে একটা লাল পেঁড়ে সাদা শাড়ি পড়ে বিছানায় পা মেলে বসে আছে। সন্ধ্যা মালতী ফুল দিয়ে খোঁপা বাঁধা তার। কপালে কালো টিপ পড়েছে অপর্ণা সেনের মতো। আজ ওকে দেখে আর বালিকা মনে হলোনা। যেনো সে একজন সম্পূর্ণ রমণী। পাশে তার আলতার বাটি। সে বলছিলো -- 'পায়ে আলপনা এঁকে দাও। '
আমি তার পায়ে আলপনা এঁকে দেই। রাতে দুইজন পাশাপাশি শুয়ে আছি। জানালা দিয়ে পূর্ণিমার আলো এসে পড়েছিলো ঘরে। আমি বলি -- 'জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি।' সে বলছিলো -- 'খোলাই থাক্। জ্যোৎস্না এসে পড়ুক আমাদের গায়ে! '

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭

বাজিগর হতে চাইনা

হঠাৎ মধ্যেরাতে ঘোড়ার খটখট শব্দ
হঠাৎ প্রান্তর জুড়ে সাওয়ারের আওয়াজ,
এই রাতদুপুরে আমি বাপু কোনো বাজিগর হতে চাইনা 
তুমি ছুটে যাও তোমার মতো দিগ্বিদিক্।
এই ঘোর মধ্য প্রহরে তিমির আমাকে টানে
না আমি অশ্বারোহী নই
আমি বাজিগরও নই
আমার মাঝেই বসত তখন মধ্যরাতের এক মধুময়ীর ---
ধবল তুষারপাতের সময়ে আমি কোনো স্বপ্ন দেখিনা হৃদ মাঝেই তখন ঝন্ঝার মতো বেজে ওঠে
মাধুকরী এক হ্রেশ্বা ধ্বনি।

রক্তজবার লাল রং

রক্তজবা ফেরৎ দিলো রক্তের রঙ। সেও কি শুঁষে ফেলতে চেয়েছিল? পারেনি বলে আমাদের আজ শ্রাবন মাস। আহির গাঁয়ে যে-ফাগ উড়েছিল কানুকে একটু শুধু ছোঁবে বলে, তার প্রতিটি কণা ব্রজবালারা শুঁষে নিতে চেয়েছিল। পারেনি। কানু চলে গেল দ্বারকায়। সে তখন কৃষ্ণ। রাধা কেঁদে কেঁদে সব রঙ ধুয়ে দিয়েছিল বাদল মেঘের অঝোর ধারায়। সেও এক রঙ। রঙ ধুয়ে যাওয়ার রঙ। আর সে রঙ ধুলে যায়না। মাথা কুটে মরে গেলেও সে রঙ পিছু ছাড়েনা। 
সবাইকে রক্তজবার লাল রংএর শুভেচ্ছা।

আলোগুলো জ্বালিয়ে দাও

ধরুন আপনি মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছেন। আপনার শেষ বাক্যটি কি হতে পারে? কিংবা আপনি কি বলতে চান? আমি যে কথাটি বলবো বা ঐসময় উচ্চারিত হবে আমি কি তখন তা বুঝতে পারবো- সেইটি আমার শেষ বাক্য? আমি যতোটুকু জানি , মানুষ সেই সময়ে জীবনেও থাকেনা, মরণেও থাকেনা। সে এক বিষাদময় সন্ধিক্ষণ! আসলে কিছু কি বলতে পারবো তখন? কিংবা তারও কিছু আগে? হয়তো শেষ কথাটি হবে -- 'আলোগুলো এক এক করে নিভে যাচ্ছে কেন? সব আলো জ্বালিয়ে দাও। '
হয়তো কোনো কথাই বলা হবেনা। তার চেয়ে বরং সেই সময়ে কেউ যেনো আমার চোখের সামনে আমার মায়ের একখানা ছবি মেলে ধরে। সেই ছবিটি দেখতে দেখতেই আমার দুই চোখ যেনো বন্ধ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

সন্ধ্যার অরণ্যে

আমাকে টেনে নিয়ে যায় আমারই পথ 
ধূসর সেই পথে যে গথ চলে গেছে মনুষ্যহীন দূর অরণ্যে
তুমি হাত ছেড়ে দিয়েছিলে তারও আগে
বলেছিলে-- বিদায়!
সেদিন তুমি বলতে চেয়েছিলে আরো অনেক কথাই
বলতে চেয়েছিলে আমারই কানে কানে।
সেবার রিক্সাপথে মার সাথে গিয়েছিলাম মামাদের বাড়ি
বাবার ছিলো খুব অসুখ, রেখে যায় তাকে
সারা রাস্তা মা ভেবেছিলো বাবার কথা
তার ক্রন্দনহীন নিরব চোখ
উদাস হয়ে তাকিয়েছিলো আমাদের দিকে ।
আজ এই নির্জন সন্ধ্যায় আমি চলে যাচ্ছি
আমারই পথ ধরে বাবার সেই ক্রন্দনহীন চোখের মতো
যে পথে এর আগে আমি হাঁটিনি কখনো
প্রিয়তমা, আমার যে অনেক পথ যেতে হবে
অন্তহীন সে পথ, হাটতে হাটতে যদি ক্লান্তি আসে
আমি যেনো সেথায় পৌঁছার আগে ঘুমিয়ে না যাই।

পৃথিবীর শেষ মানুষ

যদি এমন হয়, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একে একে সবাই মারা গেছে। শেষ মানুষটি হিসেবে আমিই কেবল বেঁচে আছি। তখন কেমন লাগবে আমার? এতো বড়ো পৃথিবীটা শুধু আমারই হবে। আমি হবো এর মালিক। বলুন, সেই পৃথিবীর কি কোনো মূল্য থাকবে ?
সারা পৃথিবী তখন নির্জন নিরালা হয়ে রইবে। কোথাও একজন মানুষও নেই। ক্লান্ত প্রাণে একাকী শুয়ে থাকবো ঘরে। নির্ঘুম চেয়ে রইবো শূন্যতার দিকে। চোখে ঘুম নেই। সেই গভীর রাতে হঠাৎ যদি কেউ এসে ঘরের দরজায় নক্ করে, আর যদি দরজা খুলে দেখতে পাই-- আমারই প্রিয় মানুষটি বাইরে দাড়িয়ে আছে । তখনকার সেই অনুভূতিটি কেমন হবে, বলুনতো?

একাকী সী-গাল

ক্যাপ্টেন সাহেব যখন বাসায় আসলেন তখন রাত্রি বারোটা। তার স্ত্রী কুমকম মির্জা তখন সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ক্যাপ্টেন জুতার খটখট শব্দ তুলে সোজা বেডরুমে চলে যায়। তার পায়ের শব্দে কুমকুমের ঘুম ভেঙে যায়। কুমকুম যেয়ে দেখে তার স্বামী সু পায়ে দিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়েছে এবং চোখ বন্ধ করে রয়েছে। কুমকুম তাকে ডাকলো কিন্তু সে আর উঠলোনা। এতোক্ষণ কুমকুম না খেয়েই তার জন্য অপেক্ষা করেছিল। সেই রাতে কুমকুমের আর খাওয়া হলোনা।
সেদিন সন্ধ্যা থেকেই ঝরঝর বৃষ্টি হচ্ছিল। কখনো হালকা দমকা বাতাস। দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকে কুমকুম, একে একে রাত বারোটা, এক টা, দুই টা বেজে গেলো। তারপর এক সময় ডাইনিং টেবিলে মাথা রেখে কুমকুম ঘুমিয়ে পড়ে। রাতের আলোছায়ার ভিতরে ক্যাপ্টেন রেইনকোট গায়ে দিয়ে বৃষ্টিমুখর রাতে একাকী বড়ো রাস্তা থেকে হেটে হেটে বাসার গলিতে প্রবেশ করে। বাসার দরজায় যখন নক্ করে তখন রাত্রি আড়াইটা। কুমকুম দরজা খুলে দেয়। ক্যাপ্টেন সোজা বেডরুমে চলে যায়।
কুমকুম: খাবেনা তুমি?
ক্যাপ্টেন : না, খেয়ে এসেছি।
কুমকুম নিজেই আজ স্বামীর পায়ের জুতা খুলে দেয়। ক্যাপ্টেন বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে এবং ঘুমিয়ে পড়ে। আজ রাতেও আর কুমকুমের খাওয়া হলোনা।
সকালে যখন ক্যাপ্টেন বেরিয়ে যায়, তখন সে কুমকুমকে বলে - দুই দিন বাসায় ফিরবোনা।
কুমকুম : কেন, কোথায় যাবে?
ক্যাপ্টেন : মংলা পোর্ট, খুলনা।
কুমকুম : আমার একাকী ভালো লাগেনা।
ক্যাপ্টেন শুনলো কিনা সে কথা,বোঝা গেলোনা। সে কোনো কথা না বলে গলির পথ দিয়ে হেটে হেটে বড়ো রাস্তার দিকে চলে গেলো। কুমকুম শুধু তার স্বামীর চলে যাওয়াটাই দেখলো। কিন্তু ক্যাপ্টেন পিছনের দিকে আর ফিরে তাকালোনা।
ক্যাপ্টেন মংলা থেকে এসে তিন দিন ঢাকায় ছিলো। এই তিন দিনও সে অধীক রাতে বাড়ী ফিরেছে। এই তিন দিনও কুমকুম স্বামীর জন্য অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। কখনও ঘুমে কখনও নির্ঘুমে বসে থেকেছে। ক্যাপ্টেন এবার পাঁচ দিনের জন্য চট্টগ্রাম পোর্টে চলে যায়। চট্টগ্রাম থেকে যথারীতি আবার ঢাকায় চলে আসে।
একদিন ক্যাপ্টেন সকালে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য বের হবে, তখন কুমকুম স্বামীর কাছে এসে বলে - কখন ফিরবে বাসায়?
ক্যাপ্টেন : কেন? আজও রাত হবে।
কুমকুম : তুমি বাসার চাবিটি তোমার কাছে রাখো।
ক্যাপ্টেন : কেন?
কুমকুম : আমি একটু বড়ো আপার ওখানে যাবো। আজ নাও আসতে পারি।
ক্যাপ্টেন : ঠিক আছে, চাবি দাও।
ক্যাপ্টেন আজ রাতে যখন বড়ো রাস্তা দিয়ে একাকী হেটে হেটে গলিতে ঢুকেছিল, তখন মহল্লায় বিদ্যুৎ ছিলোনা, আজকের আকাশে কোনো চাঁদও নেই । রাত তখন বারোটার উপরে বাজে। নির্জন অন্ধকারে শুধু তার জুতার খটখট শব্দ শোনা যাচ্ছিল। জনশূন্য রাস্তায় হাটতে হাটতে সে বাসায় চলে আসে। প্রতি দিনের মতো আজও সে দরজায় নক করে। কিন্তু ভিতরে থেকে কেউ দরজা খুলে দিলোনা। হঠাৎ তার মনে হলো, ঘরের চাবি তো তারই কাছে!
তালা খুলে ক্যাপ্টেন যখন ঘরে প্রবেশ করে, দেখে ভিতরে নিঃসিম এক আঁধার। দিয়াসলাই দিয়ে সে আলো জ্বালায় একবার। কিন্তু সে আলো নিভে যায়। অন্ধকারেই সোফার উপরে যেয়ে বসে পড়ে। প্রায় তিরিশ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে। সে রুমের সুইসগুলো জ্বালিয়ে দেয়। বুকের ভিতরে শুন্যতায় হূহু করে ওঠে। আজ আর কেউ অপেক্ষায় নেই। টেবিলে কোনো খাবারও রেডী নেই। সে খেয়েও আসে নাই। রাতে তার আর খাওয়া হলোনা। পায়ের জুতোও কেউ খুলে দিলোনা। জুতা পায়ে রেখেই সে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়ে এবং ঘুমিয়ে যায়।
সকালে ক্যাপ্টেনের যখন ঘুম ভাঙে তখন আর সকাল ছিলোনা। অনেক বেলা হয়ে গেছে তখন। বিছানা থেকে উঠে বসে সে। বালিশ সরাতে যেয়ে দুই বালিশের মাঝে সে একটি চিঠি দেখতে পায়। চিঠিটি কুমকুমের লেখা।
'' প্রিয়তম, মনকে তৈরী করছিলাম অনেক দিন ধরে। তুমি আমাকে একটা মুহূর্ত বুঝতে পারোনি। অসীম একাকীত্ব আর তোমার অবহেলা প্রতিদিনই তোমার থেকে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাই আজ আমি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে কোনোদিন খুঁজবেনা। সন্ধ্যায় বাসার সামনে গলি আর বড়ো রাস্তা পর্যন্ত আমি আজও তাকিয়েছিলাম। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন তোমার চলে যাবার দিকে আমি তাকিয়ে থাকতাম। একটু পর চাঁদহীন এই রাতে এই পথ দিয়ে হেটে হেটে আমি অনেক দূর চলে যাবো। অথচ তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা। "
অনেক বেলা করেই ক্যাপ্টেন আজ ঘর হতে বের হলেন। বাসার সামনে গলিতে নামতেই দেখে ঠিক সামনের বাসার কাছে কতোগুলো মানুষের ভীড়। জানতে পারে সাবলেটে থাকা এক যুবক গতরাতে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। ক্যাপ্টেন মুহূর্তে বুঝতে পারে পুরো ঘটনাটি। এরপর দিন কয়েক ঐ বাড়িতে ক্যাপ্টেন ছিলো। তারপর সে ঐ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
যে থাকে, যখন থাকে, অন্তরে অন্তরেই থাকে। বোঝা যায়না তা। সে ভালবাসা অনেক সময় দূরেরও হয়ে যায়। সে তখন প্রকৃতই একা হয়। বড়োই মায়া হয় ক্যাপ্টেনের জন্য। কিন্তু কুমকুমের জন্য নয়। কী আশ্চর্য! কেন? অথচ তারই তো সহানুভুতি প্রাপ্য ছিল। তবু কেন জানিনা বৃষ্টি নামলে আজও ক্যাপ্টেনকেই মনে পড়ে। হতভাগ্য একজন মূর্খ দুঃখী। আজও সে না জানি কোন বন্দরের সোঁ সোঁ লোনা হাওয়ায় সী-গালের ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে। বুড়ো চামড়ার গালে অনেকদিনের দাড়ি। কেউ একবারও তাকে বলেনা, এত কষ্টভোগের পরও তুমি তাকেই চাও? যাকে কারণে অকারণে এত অবহেলা করেছিলে?
ক্যাপটেন কি কাউকে জবাব দেয়? নাকি বালির ওপর অস্তসূর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে হেটে হেটে সে কোনো অচিনপুরের দিকে চলে যায়?

এই গান এই সুর

দুইজনেরই মন আকুল হয়েছিল, তাই চলে গিয়েছিলাম দিয়াবাড়িতে। খালপাড় পার হতেই রিক্সা চলতে থাকে কাশবনের দিকে। পাশে বসে ছিলো সারা জীবনের সেই সাথী একজন। কানের কাছে ফোন ডিভাইসটি নিয়ে আনমনে শুনছিলাম দরবারি কানাড়া রাগ। কতো শতো বছর আগে মিঁয়া তানসেন সম্রাট আকবরের জলসায় আবেশ ছড়িয়েছিলো এই সঙ্গীত । তারপর এই রাগের পথ ধরে গেয়েছে আরো কতোজন।
রাতভর ঝরেছিলো শ্রাবনের বৃষ্টি। কাশবনের পাতায় পাতায় জমে আছে সেই জল। এই মায়াবী বিকেলে উড়ছে তার এলোমেলো মাথার চুল। চারটে শালিক আনন্দ করছে লেকের পাড়ে দূর্বা ঘাসের উপর। পাশের সঙ্গিনীর মুখের উপর তাকিয়ে দেখলাম সেই চিরকালীন হাসিটি, লাল আভার রোদ্র পড়ে তাতে স্নিগ্ধ রূপ নিয়েছে।
এই সন্ধ্যায় এখানে আমরা কোনো দুঃখ নিতে আসিনি। এসেছি নির্মল আনন্দ মুঠো মুঠো উজার করে নিতে। পেয়েও গেলাম হঠাৎ কিছু নস্টালজিক গানের সুর। এক বহিমিয়ান তরুণ গীটার বাজিয়ে গেয়ে যাচ্ছে গান। 'ঝনক ঝনক তোরি বাজে পায়েলিয়া ', অতি অবশ্যই বৈজু বাওরার 'ও দুনিয়া কে রখওয়ালে ' । আর যেটি মন কেড়ে নিলো ' আজি নিঝুম রাত কে। '
সব আশা ভরে দিয়ে নেমে আসতে থাকে আঁধার। এই পৃথিবী এমনিতেই অনেক সুন্দর, তারপরও যদি এমন ক্ষণে পাশাপাশি থাকি দুইজন। আমরা চেয়েছি দু'হাত ধরে পথ চলতে। আজ এই মায়াময় সন্ধ্যা রাতের এই গান আর এই সুর আমার ফেসবুকের ওয়ালে লিখে রেখে গেলাম।

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

তুমি নেই

তুমি নেই, সেই রোদ্র মাখা বিকেল আর নেই
ছেঁড়া কাগজে লেখা কবিতার পংক্তি সব
ধূলো বাতাসে উড়ে উড়ে চলে গেছে
দরজায় খিল দিয়ে বসে আছি একাকী
সময় বয়ে যায় বহিমিয়ান বিষন্নতা ভরে--
তুমি নেই, তোমার শূন্যতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে
খিড়কি বদ্ধ ঘর, নিঃশ্বাসে যাতনা হয়
বসে বসে সিগারেট খাওয়া শেষ হয়না আর
মায়াজালে ফেলে রেখে তুমি চলে গেলে
অলৌকিক ইস্টিমারে চরে দূরে বহূদূরে--

তুমি নেই, শুধু অথৈ জলরাশি চারদিকে
যেথায় আকাশের মেঘ ঝরে পড়ে 
বিন্দু বিন্দু জলকণার মতো সারা রাত্রিতে 
আমি কেবল এক সিন্ধু শূন্যতা নিয়ে বসে আছি
বিনম্র চোখ মেলে অনিঃশেষ প্রহরান্তরে।

জলের শব্দ

সেই সব জলের শব্দ
সেই সব ভাংগোনের শব্দ শুনতে আজো উদ্গ্রীব হই
কতো নতুন শব্দের ঢেউ এখন সেখানে --
মন চায় জলে নেমে দেহটা শীতল করে আসি।

কঙ্কাবতী

অনেক বছর আগের কথা। কুস্টিয়ার জগতি স্টেশনে বসে আছি, আসবো রাজবাড়িতে। দেখি অদুরেই পুরোনো একটি কাঠের বেন্চিতে একটি সাঁওতাল পরিবার বসে আছে। তাদের সাথে সতেরো আঠারো বছরের একটি তরুণী। গায়ের রং ধুসর কালো। অপূর্ব দেহ বল্লরী তার ! গোপনে দেখছিলাম সেই মেয়েটিকে। সেদিন ওকে দেখে তারুন্যের উদ্দাম দোলায় দুলে উঠেছিলাম। মনে হয়েছিলো, আহা! যদি হতে পারতাম কোনো সাঁওতালী যুবক! ঠিক ঘটক পাঠিয়ে দিতাম ওদের বাড়িতে। ঐ মেয়ের নাম কি ছিলো, তা আমার জানা হয় নাই। হয়তো কঙ্কনা, কঙ্কাবতী, কৃষ্ণা, কৃষ্ণকলি এইরকম কোনো নাম হবে। হঠাৎ উল্টো দিক থেকে একটি ট্রেন আসে। সাঁওতাল পরিবারটি এবং ঐ মেয়েটিও সেই ট্রেনে উঠে চলে যায়। তারও অনেক পরে আমার প্রতিদিনের রোজ নামচায় লিখেছিলাম নীচের এই পংক্তিগুলো --
সাঁওতাল মেয়েটিকে দেখেছিলাম আমি
জগতি ইস্টিশানের প্লাটফরমে,
সারা পিঠ ঢেকেছিলো তার ঘন কালো চুলে
গলায় ছিলো চলনবিলের শুভ্র মুক্তার মালা
তারপর অনেকদিন সে আমার স্বপ্নে ছিলো--
তারপর অনেক হয়েছে ভ্রম
জগতি স্টেশন থেকে ট্রেনটা ছেড়ে গেলো যেই
বুকের পাজরে হাতড়িয়ে দেখি
সেখানে সেই মেয়েটি আর নেই।

ভালোবাসা যতো

তুমি সেই রমণী যে আমার প্রথম যৌবনকে 
হঠাৎ থমকে দিয়েছিলে
যেনো দখিনা উদ্ভ্রান্ত বাতাস জানালার কাছে এসে
থেমে গিয়েছিলো
ভালোবাসার উদ্বেলিত রং ছড়িয়ে গিয়েছিলো
সারা দিগন্তময়
তোমার জ্যোতির্ময় যতো আলো এসে পড়েছিলো
আমার গায়ে
আমি পান করেছি তোমার শরীরের যতো মাতাল গন্ধ
হৃৎ স্পন্দনে বুঝতে পেরেছি
দেহের খাঁজে খাঁজে লুকায়িত তোমার যতো অনুভব।
জগৎ সংসারে তোমার সকল সংসার পরমায়ূ
তখন থেকে আমার হয়ে উঠেছিলো
তুমি তখন থেকে কেবল পূর্ণতাই দাও ---
দাও অতৃপ্তির গ্লানিও আর স্বাপ্নিক ভালোবাসা যতো।

কুসুমিত রাত্রি

এই রাত্রিকে সুন্দর করো তুমি
আবার এই রাত্রিকে দুঃখময়ও তুমিই করো
অপার রূপ সুধা নিয়ে তুমি যখন কাছে আসো
নিশীথের স্তব্ধ প্রহর তখন উৎসব করে
তখন খান খান করে ভেঙে পড়ে সকল প্রগল্ভ
মনে হয় ভাংচুর জীবনকে জোরা করছো তুমি
মনে হয় যোজন যোজন আঁধারের পথ
একসাথে হেটে চলেছি আমরা দু'জন।
আমরা আলিঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারিনা
যেমন বিচ্ছিন্ন হতে পারেনা আকাশ থেকে তারা
যেমন ভৈরবী রাগে বাজে ঐকতানের সংগীত
তখন সৌন্দর্য তীব্রতর হয় কুসুমিত রাত্রির গভীরে।
যখন শেষ হয় রাত ভোরের আলোর স্পর্শে
তুমি সম্বিতেই স্পন্দিত হয়ে ওঠো সূর্য কিরণে
আলিঙ্গন থেকে স্বর্গমুখী হয়ে এগিয়ে যাও
অনিঃশেষ আবেগে জড়িয়ে ধরো নিঃশব্দ চরণে।

বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭

তোমার সেই আমি

তোমাকে দেখতে দেখতেই চোখ বন্ধ হয়ে যাবে
নিরাভরণ অন্ধকার নামবে যখন সেই বিকেলে
অথবা নিঃস্তব্ধ কোনো সন্ধ্যায়
তারপর থেকে প্রতি রাতে প্রতি রাত জাগা সময়ে
আমার চোখ দেখে যাবে তোমাকেই আঁধার ছেনে --
সন্ধ্যার বাতাসে আমার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাবে
তোমার চোখে তোমার চুলে
যদি সন্ধ্যার বাতাস কোনোদিন না থাকে
যদি কখনো সুগন্ধ না ঝরে শিউলির ঝাঁরে
স্বর্গলোক থেকে ধূপের গন্ধ আসবে তখন তোমার ঘরে
তুমি বুঝতে পারবে সে যে আমারই শরীরের
সেই পুরনো গন্ধ মিশে আছে সেখানে।
আমি যেথায় থাকি কিংবা না থাকি
আমার আত্মা সেথায়ই থাকবে, বাজবে অনন্তকালের বাঁশি, দূর বহু দূর থেকে --
এই ব্রহ্মাণ্ডেই তোমার অস্তিত্ব জুড়ে রবে
আমারই অসীমত্বের আত্মা, সেকি তোমার সেই আমি!

রূপালী মসলিন

রূপালী মসলিন থেকে নয়, জয়পুরের কারুকার্যখচিত ঘাঘরা থেকেও নয়
পড়েছিলে তুমি বালুচুরি শাড়ি
ঝিমঝিম গন্ধ ঝরেছিলো কোথা থেকে কোন্ অন্তপুরে
মায়াবী কুসুম প্রস্ফুটিত হয়েছিলো কোন্ কাননে --
আমি হতে চাই কুসুম হন্তারক
নিঃশব্দে গোপণ গুহায় পৌঁছতে চাই আদিম প্রগলভে
ভূলোকে তোমার বুক কাঁপে নেশার মতো অবিরাম
শুষে নেয় রক্ত দু'পার্শ্বের বিহ্বল পাঁজর থেকে
লোহিত রক্ত কনিকা তখন থেমে যায় হঠাৎ -
বসন্ত হাওয়ায় উড়তে থাকে তোমার শাড়ির আঁচল।
তারপর কি মধুর পরম্পরায় আকন্ঠ ডুবে থাকি
হে প্রিয়তমা! হে প্রনয়ণী!
তুমি আমাকে যন্ত্রণার ক্লেদ মেশানো কুসুম দাও
সনির্বন্ধ উজ্জ্বল ঠোঁটের চুম্বন দাও
শোনিতের ঋণে প্রেম দাও
আমার মৃত প্রণয় সব জেগে উঠুক তখন -
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাক সকল আকুল রস আস্বাদনে।

সকল মনিরত্নমে

যদি কখনো নিদ্রাহীন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠো
যদি বসো অলিন্দের পাশে ইজিচেয়ারে সারারাত
এই যে শোকাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে তোমার বিছানা
আমার শূন্যতায়
একাকী জেগে ওঠো
কেঁপে ওঠো
প্রশ্ন করো বাতাস নক্ষত্র তরংগায়িত নদীর কাছে
কূল ভাংগা মৃত্তিকার কাছে
যা কিছু সংবেদনশীল যা কিছু জ্যোৎস্নার
তাদের তুমি বলো -- এসো।
এই যে আকাশ থেকে নক্ষত্র ঝরে পড়ে
এই যে বাতাসের নীল গ্লানি
এই সবই আমার অনুপস্থিতিকে বলে দেয়,
তারপরও তুমি প্রকাশিত করো তোমার প্রাসাদের
সকল বিস্ময়কর সম্পদরাজি
সকল তারাখচিত আনন্দরূপ --
যেথায় চুম্বনরাশি ঢেলে দিতাম
মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সকল মনিরত্নমে।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

তার চুলের গন্ধ

যে গন্ধটি মাতাল করে ভোরের ক্যামেলিয়ার মতো
সে তোমার চুল
মুহূর্তেই যেনো আমি বাগানের মালি হয়ে যাই
সমুদ্রে ভাসমান জাহাজের নাবিক খোঁজে
উত্তাল জলের ঢেউ 
আমি তেমনি মুখ লুকাই তোমার চুলে
ভুল করে কখনো ভ্রুণে, সেখানেও মদিরার সুবাস!
তুমি জল নিতে দাও উদ্দাম ঝর্ণার মতো
তৃষ্ণার্ত ডাহুক জল ভরে ঠোঁটে দ্রাঘিমার দিকে মুখ রেখে,
ক্যামেলিয়ার পালকগুলো খসে পড়তে থাকে তখন দিগ্বিদিক
প্রাগৈতিহাসিক বিধ্বস্ত নগরীর যতো আঁধার
নেমে আসে যেনো সেই নিষ্প্রভ সন্ধ্যায়--
আমি তখন তোমার অবিন্যস্ত চুলের গন্ধ নিয়ে
উদ্বাস্তুর মতো চূড় হয়ে পড়ে থাকি।

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

দুঃস্বপ্নবাস

দুই চোখে যখন অবসাদ নেমে এলো তখনই ঘুম এলো। জীবন এতো ক্লান্ত হলো কেনো ? একদুপুর লুকিয়ে ঘুমিয়ে কাটলো প্রহর।তারপরই সেই দুঃস্বপ্নটি দেখা। কেনো আর্তনাদ করে উঠলো হৃদয়ের কোণে।সৃষ্টিকর্তার নামও মুখে এলো।নাকি অসহায় সমর্পণ তারই কাছে।সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম তখন, আর তখনই এই দুঃস্বপ্নে জেগে ওঠা।

'কোন্‌ দূরের মানুষ যেন এল আজ কাছে, তিমির-আড়ালে নীরবে দাঁড়ায়ে আছে।
বুকে দোলে তার বিরহব্যথার মালা , গোপন-মিলন-অমৃতগন্ধ-ঢালা।  
মনে হয় তার চরণের ধ্বনি জানি-- হার মানি তার অজানা জনের সাজে।'

বিছানায় বসে নিঃশব্দে রোদন করলাম। যেখানেই চোখ মেলি, দেখি চারদিকে কংক্রিটের দেয়াল। কোনো অলিন্দ্য নেই।কাঁচের দরজার ওপাশে পুরু কাপড়ের পর্দা ছিলো। একবিন্দু শীতল হাওয়ার জন্য বিফল চাওয়া।এক ঝিলিক আলোর জন্যেও।কি দুঃসহনীয় অতিক্রান্ত  সময়কাল ! কেউই দেখতে পেলোনা আমাকে। আমার চোখওনা, এবং লুকায়িত অশ্রু...।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭

যদি একদিন

যদি একদিন হাটতে হাটতে পাহাড়ের কাছে এসে পড়ি
যদি বলি পাহাড় তোমার চূড়া আমি ছুঁইতে এসেছি
যদি একদিন হাটতে হাটতে নদীর কাছে চলে যাই
যদি বলি নদী তোমার জলে আমার ঠাঁই মিলবেনা?
যদি চলে যাই অরণ্যের কাছে
যদি বনের বিহংগেরা আর গান শোনাতে না চায়
যদি আঁধারে একাকী হাটতে হাটতে পথ হারিয়ে ফেলি একদিন -
খুব ভয় হয় এখন
এসো আমার হাত ধরো -
আজ বাইরে সেই সিদ্ধার্থের পাগলকরা পূর্ণিমার রাত
চলো দূরে কোথাও বোধিবৃক্ষ তলে আসন পাতি
যেথায় আমাদের প্রেম হবে ধ্যানমগ্ন, কস্তুরী শোভাময়।

আফ্রিকার একটি দেশের অন্যতম সরকারি ভাষা বাংলা।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা যে বাংলা সেটা সবাই জানেন। কিন্তু এটা জানেন কি যে আফ্রিকার একটি প্রায় নাম না-জানা দেশের অন্যতম সরকারী ভাষা বাংলা। এই খবরটি সব বাঙালীরই জানা উচিত।

পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ সিয়েরা লিওন। এই দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম টাইটানিয়াম এবং বক্সাইট উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে একটি। তাছাড়াও সোনা এবং হিরে উৎপাদনেও এগিয়ে সিয়েরা লিওন। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরের এই দেশের অন্যতম সরকারি ভাষা বাংলা। অবিশ্বাস্য হলেও এটি সত্যি। তা বলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে সেদেশের আপামর জনসাধারণ বাংলায় কথা বলেন। তাহলে?

এর কারণ জানতে গেলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় এই দেশটি। স্বাধীনতার ৩০ বছরের মাথায়, ১৯৯১ সালে, প্রবল দুর্নীতি এবং দেশের সম্পদ নয়ছয়ের প্রতিবাদে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এই দেশে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। 
এই গৃহযুদ্ধ থামাতেই হস্তক্ষেপ করে  জাতিসংঘ এবং এই পর্যায়েই জাতিসংঘের পিসকর্পের প্রতিনিধি হিসেবে সিয়েরা লিওনে আসেন প্রায় ৫৩০০ বাংলাদেশী সৈনিক। পিসকর্পের অবদানেই শেষ পর্যন্ত শান্তি ফিরে আসে সিয়েরা লিওনে এবং এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই সেদেশের রাষ্ট্রপতি আলহাজ আহমেদ তেজান কাবাহ্ ‘বাংলা’ ভাষাকে সিয়েরা লিওনের ‘সরকারী ভাষা’ হিসেবে ঘোষণা করেন।

আমাদের আত্মহুতি

ভালোবাসা জমতে জমতে পাহাড় হলো
অরণ্যে হারালো সমগ্র গভীরতা
চুম্বনগুলো মুছে গিয়েছিলো তারও আগে
মেঘে মেঘে তখনো বৃষ্টি ঝরেনি-
শুধু বিহব্বলতায় আকুল হলো হৃদয়ের তন্ত্রী
জমাটবদ্ধ রক্ত হলো জল
তারপর পাহাড় থেকে ঝর্ণাধারায় জল নেমে এলো
নদীর সীমানায় জল পৌঁছতে পৌঁছতে
বহমান স্রোতধারায় আমরা আত্মাহুতি দিলাম।

বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭

বৃষ্টি ঝরঝর রাতে

বৃষ্টি ঝরঝর এক বর্ষা রাতে
এসেছিলো সে বাতাসের মর্মর ধ্বনিতে
আকাশ দীর্ণ করা আলোর ঝলকানিতে
জড়িয়েছিলো বুকে রিমঝিম সংগীতে।




মা আমার সাধ না মিটিলো

' মা আমার সাধ না মিটিলো আশা না পুরিলো, সকলেই ফুরায়ে যায় মা।' পান্নালাল গেয়েছিলেন এই গান। বিহন গহীনে হাজার রাতের স্তব্ধতার ভিতরে সেই সুর এখনও বাজে। বৃন্তে বৃন্তে যে ফুল ফুটেছিলো রাত ভোর, তা আরেক রাত আসার আগেই ঝরে গেছে। যিনি এই গান গাইতে পারেন, তিনি কিভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? কি এমন শোক ছিলো তার? মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে আত্মহনন! কি এমন দুঃখ ছিলো তার, বেঁচে থাকার হাজারো আনন্দের কাছে তা তুচ্ছ হয়ে গেলো! নিজের চাওয়া পাওয়ার উপর এমন অনাস্থা হয়?
প্রত্যেকের জীবনেই কি এমন কৃষ্ণপক্ষের রাত আসে? নাগকেশরের সুবাসিত পাঁপড়িগুলো হাওয়ার উড়ে উড়ে চলে যায়। মানুষ অনেক সময় অনেক জোরে চিৎকার করে কাঁদতে চায়। কেউ পারে, কেউ পারেনা। হতভাগ্য সেই যে পারেনা, যেমন পারে নাই পান্নালাল। এরাই অকালে ঝরে যায়।
মা, কতো অসহনীয় রাত পেরিয়ে গেছে। কেমন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কে আমায় ক্ষমা করবে? এতো চাওয়া, এতো সাধ সবই কি ফুরিয়ে গেছে? তুমিও তো নেই। কে এসবের জবাব দেবে?

বিভ্রমে হারাতে চাইনা

আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটিই সত্য ছিলো। কার্নিশে দাড়িয়ে আজকের এই বর্ষার মেঘের বিকেল দেখছি, একটু পর আর থাকবেনা। সন্ধ্যার আলোছায়ার সাথে মেঘের নীচে ডুবে যাবে লাল আভা ছড়ানো ঐ সূর্য। এখানে জীবনের কোনো বিভ্রম নেই, ভ্রান্তিও নেই। বিভ্রম এবং ভ্রান্তি এই দু'টোর ওপারেই তোমাকে আমি দেখেছি। একটু পর পর এই যে ঝিরঝির বৃষ্টি এও সত্য হয়ে ঝরে। এবং তা অশ্রু বিন্দুর মতো নয় কখনো।
সেই শুরু থেকেই জীবনকে ভালোবেসেছি। সব ঐশ্বর্যই পাওয়ার জন্য একসময় ব্যকুল ছিলাম। এইসব চাওয়ার আকুলতা কখনো কখনো বন্চনার মতো এসেছে। হঠাৎ কখনো তাই সামনে এগুবার প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ভ্রান্তি ছিলো সবই। এখন এসব আর মনে ঠাঁই দিতে ইচ্ছা হয়না। কয়টা দিনই আর বাকি আছে! সামনে চলবার এই শক্তিটুকু এই সায়াহ্নে এসে বিভ্রমে হারাতে চাইনা।

আষাঢ়ের প্রথম জলে

আষাঢ়ের প্রথম বন্যার জলে ভরে যেতো পুকুর নালা মাঠ ঘাট। আমরা নতুন পানিতে সাঁতার কাটতাম। শীতল হতো শরীর। ধূয়ে যেতো ক্লান্তির ঘাম। সকালবেলা কূলে দাড়িয়ে দেখতাম ভরা পুকুর। জলে টইটুম্বর হয়ে যেতো মাঠ। তারপর দখিনা নৌকা চলতো বাদাম তুলে। সেই বেনোজল, সেই ডুবে যাওয়া আউশের ধানখেত আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। সেই মাঝি মাল্লার গানও এখন নেই। বিনম্র চোখ আজো ফিরে তাকায় ভেসে যাওয়া কস্তুরির দিকে। আমি খুঁজি সেই সব নদী, ডুবে যাওয়া ফসলের খেত। কিন্তু সেখানে সেই নদীর জলে চাঁদের রাত্রিতে এখন আর জ্যোৎস্নার বান ডাকেনা।

তুমিই যদি রহিতে

বাতাসের গায়ে ভালোবাসা খুঁজি বৃষ্টির গায়ে জল
সারাদিন তোমার পথাপানে চাহি আঁখি করে টলমল
যদি সব পাওয়া হয়ে যায় মিছে
ভালোবাসা আর হবেনা জানি সব আয়োজন বৃথা হয়ে যায় পিছে
আমাদের দায় আর কারো নয় আমাদের পরিণয় 
যদি পারিতাম সব সহিতে -
জীবন ভোর তুমিই যদি আমার কাছে রহিতে ।

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

পথ চাওয়াতেই আনন্দ

হঠাৎ করেই মনটা অস্থির হয়ে উঠলো। তাকিয়েছিলাম অনেক দূর পর্যন্ত। কোথাও কোনো ছায়া নেই। অনেক দূর পর্যন্ত সমান্তরাল পথ চলে গেছে। এই সবকিছু শুরু হয়েছিল জীবনের এইমাত্র সেদিনের। শুরু হতে না হতেই শেষ হলো পথের প্রান্তেই। যা মনে হয়েছিল অনেক দূরের। আনন্দ সব নিয়ে গেছে। যা কিছু আ়ফসোস, যা কিছু অপ্রাপ্তির তাই পড়ে রইলো পথের উপরে।
আমি পথপানে চেয়ে আছি। যতোদূর আমার দৃষ্টি যায়, তারও চেয়ে বেশী চেয়ে থাকি। তারও চেয়ে বেশী শূন্যতার হাহাকার অন্তরের ভিতরে। আমি অন্তর্যামীকে স্মরণ করি। মেনে নিতে পারিনা জীবনের ফুড়ানোর কথা। জীবনের সব গল্পই অকালেই শেষ হয়ে গেলো। কেউ আর রইলোনা কোথাও। না জীবনে, না পথের উপরে। তারপরেও পথের দিকেই চেয়ে থাকি। 'আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। '

ছুটি

কে কাকে ছুটি দেবে! ঘুম ভেংগেছিলো আযান শুনেই। প্রা্র্থণার সময় জগতের তাবৎ জল চোখের উপরে নীচে এসে হাজির হয়। ভাবছি কিছু দিন দূরে দূরে থাকি। কিংবা অসহায় লুকিয়ে রাখি নিজেকে। সেই কবে ছোটবেলায় কানামাছি খেলেছিলাম। সেইসব কথা মনে পড়ে!
ফিরে আসবো মাঝে মাঝে এই আংগিনায়! হয়তো চুপিচুপি। হয়তো 'তখন কে বলেগো সেই প্রভাতে নেই আমি! '

অসুখ

প্রথমে ভেবেছিলাম ভালো হয়ে গেছি। কিন্তু হলামনা। মস্তিষ্কের ভিতরে সবকিছু কেমন যেনো এলোমেলো বিষন্ন হয়ে থাকে। শুয়ে থাকতেও কেমন ঝিম হয়ে আসে। মেঘগুলো তুলার মতো আকাশে উড়তে থাকে। মানুষের বিষন্নতা শুধু অসুখেই আসেনা। গ্লানি থেকেও আসে। আমি উজ্জীবিত হতে চাই, স্পন্দনে জীবন জাগুক, এ আমি চাই মনে প্রাণে।
আঁধারকাল ক্ষণকালের। সারাদিনমান ক্লান্তি শেষ করে এই সন্ধ্যায় ভাসিয়ে দিতে চাই যতো দুঃখবোধকে। গাংগে জোয়ার আসে। আবার ভাটাও পড়ে। একদিকে অন্ধকার হলেও, আরেক আকাশে আলো জ্বলে ওঠে। জীবনকে স্পন্দিত করতে আমি ভালোবাসি। আর ভালোবাসবোই না কেন, জীবন যে আমি একবারই পেয়েছি । তাইতো ভালোবাসি এই জীবনকেই বারবার।

রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭

ক্যারাভান জীবন

রমণী যেদিন প্রথম ভালোবাসার কথা বলেছিলো, আমি তখন নিতান্তই বালক ছিলাম। সে ছিলো নদীর মতো তরঙ্গায়িত, তাবৎ জমিনের ভিতর দিয়ে তার গতি প্রবাহমান ছিলো। হিন্দুকুষ পর্বত থেকে নেমে আসা সহস্র জল রাশি ব্রহ্মপুত্র হয়ে সাগরে যেয়ে মিশেছিলো । আমি ছিলাম যাযাবরের মতো ঘরহীন ঠিকানাহীন। নদীর জলে চরণ দু'টিও ভিজাইনি কখনো। রমণী হতাশ হয়েছিলো। তারপর সেই নদীর বাঁক অন্য মোহনায় মিশে গেলো। বালক থেকে গেলো ক্যারাভানেই উদ্বাস্ত যাযাবরের মতো, লোভহীন ।

মৃত্যু

এই পৃথিবী দেখার সাধ আমার শেষ হয়নি
তুমি আমাকে ডেকোনা
জীবনের সবকিছুই এখনো রয়েছে বাকি
আমাকে নিতে এসোনা
আমি যাবোনা যাবোনা

এতো মায়ায় এতো ভালোবাসায় বেঁধেছি ঘর
এই ঘর থেকে বের করোনা
এতো প্রেম এতো সুখ এতো প্রাণ এখানে
তুমি কাছে টেনোনা
আমি যাবোনা যাবোনা

তুমি আচমকা ধেঁয়ে এসোনা আমার এই জীবনে
আমাকে তুমি ধরোনা
পৃথিবী চাঁদ গ্রহ তারায় আমার আত্মা মিশে আছে
তুমি তাকে এইসবে খুঁজোনা
আমি যাবোনা যাবোনা।।

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

দূরে কোথাও

এই শহর থেকে দূরে কোথাও বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। এমন একটি গৃহে, যেথায় দখিনের জানালা খুললেই দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ দেখা যায়। পাশে দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। কিংবা যদি চলে যেতে পারতাম অন্য আর একটি শহরে। এখন ধূলো দেখলে ভয় পাই। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে পায়ে পায়ে ধূলি উড়িয়ে বাড়ী ফিরতাম। সেই আমার ধূলি দেখে এতো ভয় !
মন্ট্রিয়েলের মাটিতে বড়ো বোন শুয়ে আছে। জীবনের তরে একবার সাধ্ হয়, তার সমাধির পাশে যেয়ে বসে থাকতে। সে তো অপূর্ণই রয়ে গেলো। তার চেয়ে ট্রেনে করেই একদিন বাড়ী চলে যাই। কেউ সেখানে না থাক, বাবা মা'র সমাধি তো আছে। আর একদম প্রাথমিক স্কুলবেলার সহপাঠিও কেউ কেউ আছে। ওদের সাথেও কথা বলা যাবে। আর ফেরার পথে আরো একবার দেখতে পাবো- সেতু পার হওয়ার সময় ট্রেন থেকে মমুনার দিগন্ত বিস্তৃত অথৈ জলরাশি।

দুঃস্বপ্নের সারারাত

দুঃস্বপ্নের মধ্যেই সারারাত ছিলাম। ঘুম ভাংগার পর জানালা খুলে ভোরের একচিলতে রক্তিম আকাশ দেখতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। যাকে চাইনি তাকেই গ্রহন করা। বাকি সবাই দূরে সরে গেলো। হতাশাবোধ এমনিতেই অংগার করে। তারচেয়ে নদীর মতো উদ্দাম করে রাখি জীবন। যতোদিন আছি, ভাসতে চাই এই বর্ষায় বিনম্র দিগন্ত ছুঁয়ে .....

সমস্ত নৈঃশব্দ

কারো কাছে কোনো কৈফিয়ত চাইনা। কারো কাছে কোনো ভালোবাসাও না। নিজেকে কখনো কাঙ্গাল হতে দেইনি। দুপুরেে যখন ঘুমিয়েছিলাম,তখন বৃষ্টি হলো। মনটা ভালো হওয়ার কথা, কিন্তু হলোনা। পড়ছিলাম ইমতিয়াজ ভাইয়ের স্টাটাস। লংগেদুর পর রামগড়। অজানা কিছু আশংকার কথার কথা মনে হলো। মনটা ভালো করার জন্য মিষ্টি প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হলোনা।

আজ আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভাসলো সমতল
মেঘে মেঘে ঝির ঝির করে ঝরেছে জল
সমস্ত নৈঃশব্দ এখন রামগড়ে
তারা ওখানে নিরাশ্রয়ী,
জ্যোৎস্নায় ভিজে যায় চাঁদ
টুপটাপ বৃষ্টি ঝরে,সবাই চুপচাপ।