শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তগদ্য কবিতা ( পাণ্ডুলিপি )

১.


কিছু স্বপ্ন আছে কাছে রাখতে নেই। কিছু স্বপ্ন আছে যা দেখতেও নেই। ভাবছি, এগুলো সব যমুনার জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো। ওগুলো জলেই ভাসুক।


২.

কিছু মানুষ আলোর মতো তীব্র হয়, স্বচ্ছ হয়, পবিত্র হয়। কিন্তু কাছে গেলে তাদের অস্বচ্ছতা ধরা পড়ে। তাই তাদের ভেতর ডুবে যেতে হয় দূর থেকে, কাছে থেকে নয়...


৩.


তুমি আমার কান্না নেবে? আমার মন বেদনার মর্মরতা নেবে, এবং মন খারাপের অশ্রু সিক্ত কমলগুলি? নাকি ভাসিয়ে দিয়ে আসব এই সব মর্মবেদনা দূরের কোনও স্তব্ধ নির্জরিনীতে? কিংবা শত প্রস্ফুটিত কোনও উৎপল দীঘিতে?

সব দুঃখ কষ্ট কী ভাসিয়ে দেওয়া যায়? সব প্রেম? ভালোবাসার মধুরতম স্মৃতি, সুখময় কোনও অভিজ্ঞান চিহ্ন? 

না, যায় না।


৪.


কুসুমপুরের মাটি

ঘেঁটু ফুল আর তারা ফুল দেখেছিলাম আমার গ্রামে। কিন্তু গাঁয়ের নামটা যে কী ভাবে হয়েছিল নওদাফুল কোচা, সে নামের ইতিহাস আমার জানা নেই। ইছামতীর একটি উপনদী বয়ে গেছে নওদাফুল কোচা গ্রামের উপর দিয়ে। একসময় সারাবছর জল থাকত এই নদীতে। এখন এই নদী পুরাটাই ফসলের ক্ষেত হয়ে গেছে।

এই এক গাঁও। যে গাঁয়ে দিনে দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার গান শুনতাম। সন্ধ্যায় ৰাড়ির খোলা ভিটায় চিৎ হয়ে শুয়ে খোলা আকাশ দেখতাম। আকাশ থেকে তারা নেমে আসত চোখের তারায়। পাশের আঁড়াবনে পেঁচা ডাকত কোতঁ কোঁত করে। কামাল মুন্সী খোলা কন্ঠে এশার আযান দিত মসজিদে। মুসুল্লীরা সারি বেঁধে চলে যেত নামাজ পড়তে। 

আমার গ্রামেই আছে মাঝি বাড়ি, ঘোষ বাড়ি। আছে ছোনগাছার হাট। পুঁজার মেলা আর চৈত্র সংক্রন্তির মেলা এই হাটেই বসে। মন্দিরও আছে। ঘটা করে দূর্গা পুজা, কালি পুজা এই গ্রামেই হয়।

আছে জারুল গাছের বন। বনের মাঝখানে খেলার মাঠ আছে। মাঠের ধারে কৃষ্ণচূড়া আর শিমুল গাছ আছে। বসন্ত অনুভব করতাম এই শিমুল কৃষ্ণচূড়া ফুলের দিকে চেয়ে থেকে। সন্ধ্যার বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত চারদিকে। 

বাঁশ ঝাড়ের ঝিরিঝিরি পাতার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতাম। আবার পুকুর পাড়ে যেয়ে ঘাটে বসে জলের ভিতরে চাঁদ ভাসতে দেখতাম। চাঁদও চেয়ে দেখত আমার গ্রামকে। এই গ্রামের উপরেই নীল আকাশ আছে। সবুজ ফসলের ক্ষেত আছে। জারি গান গায় কিষাণ ফসলের মাঠে। এই গ্রামের ছেলেরাই আলোমতি গানের দল বেঁধেছিল।

আবার কিছু স্মৃতি মর্মর বেদনাও আছে। একদিন সন্ধ্যায় জানালার শিকে কপাল ঠেকিয়ে দূরের প্রান্তরের দিকে তাকিয়েছিলাম। কোথা থেকে একটি ছোট্ট হলুদ প্রজাপতি আমার হাতে এসে পড়েছিল। এই রকম সুন্দর প্রাপ্তিতে মন ভাল হওয়ার কথা কিন্তু ভালো হয় নাই। সেইদিনই পৃথিবীর চেতনা থেকে আমার বাবা মুছে গিয়েছিল।

আজ কয়েকদিন ধরে এই শহরে থেকেও আমার গ্রামের মাটির গন্ধ পাচ্ছি। মহুয়ার গন্ধের মতো পাগল হয়ে থাকে মন। কেমন যেন কুসুম কুসুম সুবাস ভেসে আসে দূর বহুদূর থেকে। এই সুবাস অন্য কোথাও নেই। আছে আমার গ্রামেই। আজ কেন জানি  আমার সেই গ্রামকে 'কুসুমপুর' নামে ডাকতে ইচ্ছা করছে।

হায়!  কবে ফিরে যাব আমার সেই কুসুমপুরের মাটিতে।
ঐ মাটিতেই যে আমার মা ঘুমিয়ে আছে।


৫.


তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো শিশির কনার মতো ক্ষণকালের।বহুকাল পর আবার তার সাথে দেখা হলো। এবার আমাদের সম্পর্ক সাগরের দিকে গড়াবে।



বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪

অণু কবিতা ( পাণ্ডুলিপি )

১.


বুকের ভিতর এখনও একাত্তর জেগে ওঠে।
কোথাও এখনও অসুন্দর এবং অসুররা রয়ে গেছে।
ফয়সালা দরকার। হয় অসুররা থাকবে, 
না হয় মানুষেরা থাকবে।
বুকের নীচে আমার বিশ্বাস -
মানুষদেরই জয় হবে একদিন।


২.


যতদুরে যাও তুমি  দৃষ্টিতে তত তুমি হও সমুজ্জ্বল -
যতকাছে রবে তুমি আউট অফ ফোকাসে তত তুমি অনুজ্জ্বল...।


৩.

তোমার জন্য চোখ টলোমলো, 
কবিতার অক্ষর এলোমেলো, কলম জুড়ে প্রকাশ পেল কেবলই শোক।

আত্মার আলো নিভে গেল
প্রদীপখানি জ্বেলে ধরো, স্মৃতির সাথে কথা বলো, মৃত্যু কেবল আমারই হোক।


৪.

বিহবল হয়ে শরীর বৃত্তে যখন আবিষ্ট হয়ে থাকো 
তখন তুমি অভিমানী হও
অন্তর দুয়ার খুলে প্রগলভতায় বলো--
'আমি কী শুধু বন্ধুই তোমার?'

আমি বলি-- ওগো হতচ্ছারি, তোমার কাছেই 
যখন যা চাই তখনই তা পাই 
এমন করে অনিঃশেষ ভালোবাসা বন্ধুই দিতে পারে 
তুমিও সেইরূপ বন্ধু আমার একজন। 


৫.



আমি নামাজ পড়ি আযান শুনে যখন যেখানে থাকি
গৃহকোণে,নমসজিদে, মাঠে, নদীর কূলে জমিনের উপর,
আমি ভালোবাসি ফসলের ক্ষেত, পাখি মানুষ আর মাটি
ধর্মের নামে তোমরা অধর্ম করো না-
হাতে তুলে নিও না তুমি বোমা গ্রেনেড কিংবা চাপাতি।


৬.


কত অন্তহীন পথ হেঁটে এসে শেষে দাঁড়ালাম তোমার দ্বারে। আমি পানি চাইলাম।
তুমি দেখালে নদী। এত জল কার? এত ঝিনুক সেখানে। জলে নামতেই দেখি,  শ্যাওলা দামের ভিতরে অসংখ্য মুক্তা। 

স্রোতে ভেসে যাই। ডুবে যাই।
আমার কোথাও কূলও নাই, কিনারা নাই।


৭.


কত পথ কত প্রান্তর, কত বন্দর কত লোকালয় ঘুরেছি,
কত অন্ধকারে চোখ রেখে এতকাল যাকে খু্ঁজছিলাম  --
আর তারই কী-না দেখা পেয়ে  গেলাম  সিরাজগঞ্জের জামতৈল স্টেশনের কাছে এক নির্জন শ্রান্ত শান্ত কুটীরে।


৮.

গল্পে কেউ থাকে কেউ থাকে কবিতায়
কেউ থাকে জনম জনম কেউ হয় ক্ষণিকা 
কেউ থাকে মেঘে ঢেকে
কেউ আবার নদী হয়ে অকূলে ভেসে যায়।