বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

One for Sorrow

পার্কে গিয়েছিলাম হাটতে। গেটের পাশে নেরি কুকুরটা শুয়ে নেই। গাছ গাছালিগুলো  চৌচির করছে।ওয়াকওয়ে ধরে হাটছিলাম।রাস্তার ওপাশে বৃদ্ধ ভিকারীটাও আজ দাড়িয়ে নেই।একজন মৃত মানুষকে স্বপ্ন দেখে আজ ঘুম ভেঙ্গে যায়।মনটা বিষাদে তাই জড়িেয় আছে।পাশের স্কুলে একবার মাত্র ঘন্টা বেজে উঠলো। সন্ত্রস্ত হয়ে একটি গিরগিটি ঝোপে লুকালো। ছাতিমের ডালে একাকী বসে আছে একটি শালিক। 'One for Sorrow' এই কথাটি বলেছিলো  অনেক বছর আগে একটি মেয়ে।সে আজ আর নেই। ঝরা পাতা ঝরছিলো পার্কে।আরো মানুষ হাটছে।কোথাও কোনো শূণ্যতা নেই।

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

শহীদ কাদরী,তোমাকে শেষ অভিবাদন

 এই শহরে আজ বিউটি বোর্ডিং- র সেই মুকুটহীন রাজপুত্র এসেছে।পরনে তার সাদা কাপড় । খাটিয়ায় উপরে শুয়ে  আছে আমাদেরই চেতনার জায়গা শহীদ মিনারের পাশে। প্রাণহীন কফিনের উপর ঝরছে পুষ্প বৃষ্টি। তার নিথর শরীরে এখন আতর গোলাপ আর চন্দনের সুবাস।  আজ এখানে সমবেত হয়েছে হজারো শোকার্ত মানুষ।তুমি বলেছিলে,কোথাও কোনো ক্রন্দনধ্বনি নেই। মানুষ এখানে কা্ঁদছে। আকাশে বাতাসে কেবলই কান্নার ধ্বনি। একটুপর তোমার শবযাত্রা শুরু হবে।তোমাকে নিয়ে যাবে তুরাগ নদীর পারে।সেখানে মাটির নীচে কবরে শোয়ায়ে রেখে তোমাকে শেষ অভিবাদন জানাবে ভক্তকুল। তারপর পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্তাচলে যাওয়ার পূর্বেই শোকা্র্ত মানুষগুলো ঘরে ফিরে আসবে।

আজ জ্যোৎস্না রাতে

এই শহরে কখন পূর্ণিমা আসে , কখন  আসে শুক্লা দ্বাদশী বোঝাই যায়না। আজ শারদীয় পূর্ণিমা।'আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে'। এই শহরে বন নেই, আছে দিয়াবাড়ীর কাশবন।মায়াবতীকে বলি, চলো যাই কাশবনে, পূর্ণিমার চা্ঁদ দেখে আসি।মায়াবতী তৈরী হলো, পরনে সাদা শারি। রিক্সায় উঠি।নিয়ন বাতির নীচ দিয়ে চলে যাই দিয়াবাড়ী। যেয়ে দেখি, সত্যি চা্ঁদের আলোর বান ডেকেছে কাশবনে। আমাদের মতো আরো পাগল আছে সেখানে। লেকের জলে ভাসছে সোনালী আভা।মায়াবতীর শারি জ্যোৎস্নায় ভিজে যায়। তারপর অবগাহন । তারপর রাত নিশি হবার আগেই পূর্ণিমার আলোয় ভিজতে ভিজতে আমরা ঘরে ফিরে আসি।

সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

তখন নাইবা মনে রাখলে

কাল বিকেল থেকেই  শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না। ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে দেখছিলাম দূরের আকাশ।
অমঙ্গল ভাবনাগুলো মেঘের তলায় ভেসে বেড়াচ্ছিলো।আমি চলে গেলে কেমন হবে আমার স্ত্রী সন্তানদের পৃথিবী।
আমার ছোট মেয়ে কা্র্টুন ছবিগুলো আর দেখতে চাইবে না। বড়ো মেয়ে পড়তে বসে কা্ঁদবে অঝোর ধারায়। ছেলেটা একাকী পার্কে মন খারাপ করে ঘুড়ে বেড়াবে।সংসারের কাজ গুলো করতে যেয়ে হাত অবশ হয়ে আসবে প্রিয়তমা স্ত্রীর।তারপরেও জীবন কেটে যাবে ওদের প্রতিদিনের জীবনের মতো করেই। ' তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে, কাটবে দিন আজো যেমন দিন কাটে, তখন  আমায় নাইবা মনে রাখলে।'                                                                                 

ভিজে যাই ভিজে যাই

নিয়নের আলো দেখি রাস্তায়। দুপুরের রোদ দেখি বৃষ্টির সন্ধ্যায়।
জানলা দিয়ে হাত বাড়াই, দু হাতে মেখে নিই বৃষ্টিজল।
রাস্তায় হাঁটলে ছাতা বন্ধ করে দিই, ভিজে যাই ভিজে যাই।
একা ভিজি, দুজনেও ভালোবাসি,
তিল দেখি, চেনা হাসি দেখি, দৃষ্টি দেখি।
মত্ততা দেখি, ভালোবাসাবাসি দেখি, দুহাতে মেখে নিই জলের মতো।
তখন ভরে যাই, ভরে যাই আকুলতায়।

তাহাজ্জতের নামাজ

কাল রাতে শরীরটা খারাপ ছিলো। শুয়ে পড়েছিলাম তাড়াতাড়ি।ঘুমিয়েও পড়েছিলাম তাড়াতাড়ি।একটু আগে ঘুম ভেঙ্গেছে।ঘুম ভাঙ্গার পর খুশী লাগছে এই জন্য যে,আমি তাহলে বে্ঁচে আছি। ঘড়িতে দেখি- রাত প্রায় তিনটে বাজে । রাতের শেষ প্রহর। নিস্তব্ধ চারদিকে। বিছানা থেকে উঠে ওযু করে চার রাকাত তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেসে প্রার্থনা করেছি এই সুন্দর পৃথিবীতে বে্ঁচে থাকবার জন্যে।স্ত্রী সন্তানদের জন্যেও প্রার্থনা করেছি।পরলোকের বাবা মা'র জন্যও করেছি। তাহাজ্জতের নামাজ পড়লে অন্তরটা প্রশান্তি লাগে। মনটাও ভালো হয়ে যায়। আমার খুব ভালো লাগছে এখন।


শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬

ধরিত্রী কন্যা

কাল তুমি অনেক কথাই বললে,অনেক কিছুই বোঝালে।তারপরও মনে অজানা আশংকা থেকেই গেল। ধরিত্রী কন্যা তোমাকে খুবই বিনয়ের সাথে বলছি, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কি আর একটুু দূরে কোথাও সরিয়ে নেওয়া যায় না ? ঐ যে অজানা আশংকা আমার- কালো ধোয়ার বিচ্ছুরনে যদি সুন্দরী গাছের পাতাগুলো অসুন্দর হয়ে যায়, অনবরত জাহাজ আর বার্জের চলার শব্দে মায়াবি হরিণগুলো যদি আতঙ্কিত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে, যদি বিকট হুইসেলের শব্দে বক, মুনিয়া, টিয়া, মৌমাছিদের ঘুম ভেঙ্গে যায়, যদি ঘুঘু ময়না পানকৌড়ি'রা দূরে উড়ে চলে যায়। যদি ভয়ে বাঘদের মুখ মলিন হয়।যদি কালো বিবর্ণ হয়ে যায় সুন্দরবন। জাতীয় সঙ্গীতের সেই চরনটির মতো তখন আমাদের মুখটিও মলিন হয়ে যাবে। তখন নয়নজলে ভাসবে এ দেশের মানুষ।

মায়াবতী

 তপ্ত দুপুরবেলা কিংবা পরন্ত বিকেলে, সন্ধ্যায়,বা নিশিথ রাত্তিরে যখনই ঘরে ফিরি না কেন, দরজার কড়া নাড়লেই একজন মায়াবতী এসে দরজা খুলে দেয়। আমাকে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হয়না । টেবিলে খাবার রেডি পাওয়া যায়।পরিপাটি থাকে বিছানা।ফুলদানিতে ফুলের সুবাস ঝরতে থাকে। শোবার সময় মশারিটাও টানাতে হয় না । অথচ শুক্লপক্ষ কোনো জ্যোৎস্না রাতে এই মায়াবতীর জন্য কখনো আনিনি একটি রজনীগন্ধার বৃন্ত ! কিংবা নীলকন্ঠ পাখির একটি পালক।



যতো দূরেই থাকি

তোমাদের সাথে আর কি কখনো দেখা হবে ? কবে দেখেছিলাম সা্ন্তা মনিকার সাগরবেলায়।
প্রশান্ত মহাসাগরের নিথর কালো জলে আর কি আসবে না  জোয়ার ?
কোথায় কোন্ দেশ,কোন্ শহরে আছো ! যতো দূরেই থাকি--                                                                                 পাহাড়,নদী,সাগর উপত্যাকা আমাদেরকে কি আড়াল করতে পারে ?

‘তারে যখন আঘাত লাগে,/ বাজে যখন সুরে-/ সবার চেয়ে বড়ো যে গান/ সে রয় বহু দূরে।’ (গীতাঞ্জলি)
“When we die, we will turn into songs, and we will hear each other and remember each other.” 
― Rob SheffieldLove Is a Mix Tape








মহূয়া বনে

আজকের ভোরের আকাশে ঝিরিঝিরি মেঘ নেই বৃষ্টি ঝরার সর্বনাশের ইশারা নেই আজ ভোরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই মহূয়া বনে মহুয়ার গন্ধে মাদকতা ছড়ায় উত্তর দক্ষিণে তোমার খোপার চুলে ঝরে পড়ে মহুয়ার বনে।

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

স্বর্ণালী সন্ধ্যার গান

সন্ধ্যা নদীর পারে সে বারের নভেম্বরটা ছিল সত্যিই অন্যরকম। তাজুল,মোতাহার তোমাদের কি মনে পড়ে? সন্ধ্যা নদীতে সন্ধ্যা বেলায় নৌকা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ানোর সেই মনোরম এক সন্ধ্যার কথা? সন্ধ্যা নদীতে সেদিন ছিলো ভিন্ন আভা, ভিন্ন দীপ্তি ! আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম দু'পারের মানুষ।কতো নৌকা চলছিলো,কতো পাখি আকাশে উড়ছিলো।কতো মাঝি গেয়েছিলো গান।রক্তিম আভার মৌনতায় সন্ধ্যা নেমে এসেছিলো সন্ধ্যা নদীতে। আমরা সন্ধার সেই স্বর্গীয় আস্বাদনে গেয়েছিলাম 'হসপিটাল' ছবিতে গাওয়া গীতা দত্তের সেই কালজয়ী গান -
এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু।
. .......বাতাসের কথা সে তো কথা নয় ,
রূপ কথা ঝরে তার বাঁশিতে
আমাদেরও মুখে কোন কথা নেই,....
কিছু পরে দূরে তারা জ্বলবে, হয়তো তখন তুমি বলবে। ......
( সুরকারঃ অমল মুখার্জী
গীতিকারঃ গৌরী প্রসন্ন মজুমদার
বছরঃ ১৯৬০ )
ফটো: সন্ধ্যা নদী, বানরীপাড়া,বরিশাল।

                                                

কাঁদালে তুমি মোরে


তখন ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ।একটা মেয়ে আমাকে একটি গানের ক্যাসেট উপহার দিয়েছিলো।
ক্যাসেটটির এপাশ ওপাশ দুপাশেই অসীমা ভট্রাচার্যের গাওয়া একটিমাত্র গান পুণঃ পুণঃ রেকর্ড করা ছিলো।
আমি তখন মাঝে মাঝেই গানটি বাজিয়ে শুনতাম। অনেক দিন ঘরেও ছিলো ক্যাসেটটা।
 সেদিন ছিলো আমার গায়ে হলুদের দিন। গায়ে হলুদের লগ্ন শুরু হওয়ার আগেই সকালবেলায় ক্যাসেটটি ভেঙ্গে ফেলি, ফিতাগুলোও টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলি।ভাঙ্গা ক্যাসেট আর ফিতার টুকরো বাড়ীর আঙ্গিনার লতাপাতার ঝাড়ে ফেলে দিয়ে আসি।

সেই গানটি শোনা যাক---
কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে--. নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে॥                                                 তোমার অভিসারে যাব অগম-পারে. চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে॥                                                   পরানে বাজে বাঁশি, নয়নে বহে ধারা--. দুখের মাধুরীতে করিল দিশাহারা.                                                         সকলই নিবে-কেড়ে, দিবে না তবু ছেড়ে--. মন সরে না যেতে, ফেলিলে একি দায়ে॥

বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

আমারে তুমি অশেষ করেছ

দিনের বেলায় ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার বানিয়ে একাকী শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। কোনো আলো যেনো চোখে না লাগে।কোনো কোলাহল যেনো শুনিতে না পাই, নৈঃশব্দের মধ্যে কাটুক আমার সময়। জীবন যখন শুকায়ে যায় তখন কি এই ইচ্ছাগুলো হয় ! কেন যে সংসারে থাকি ! জগতের সব আনন্দ কেন জানি করুণ ধারায় কা্ঁদে। তারপরেও নিস্তব্ধ এই অন্ধকার থেকে বা্ঁধ ভাঙ্গা আলোয় বেরিয়ে যেতে মন চায়। কেউ একজন আমার জন্য সন্ধ্যা বাতি জ্বালিয়ে রাখে। তার জন্যেই আমার এই পৃথিবী, আমার সন্তানেরা।.সেইই আমার জীবনকে মহিমান্বিত করেছে ।
'আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব।'



চৈত্রের বিকেলের কথা

   সে কোনো এক পাতা ঝরার চৈত্রের বিকেলের কথা । মা জানালার ধারে গালে হাত দিয়ে বসে ছিলো। মনে হয়েছিলো সে দেখছে দূরের শস্যক্ষেত। যেথায় মেঠো পথটা অনেকদূর পর্যন্ত নির্জনে মিলিয়ে গেছে। কোনো পথিকই সে পথ ধরে আসছিল না।হঠাৎ দমকা একটা হাওয়া উঠলো।জানালার পাঠ বন্ধ হয়ে গেলো। মার গাল বেয়ে নেমে আসলো লোনা জলের ধারা। তার হাত ছুঁয়ে সে জল বয়ে গেল আমার নিরুদ্দিষ্ট বাবার পথের উদ্দেশ্যে। যে পথ দিয়ে কোনোদিনই  বাবা আর ফিরে  আসবে না ।


বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

দূর আকাশের স্বপ্ন

  সব মানুষেরই  কিছু স্বপ্ন থাকে.। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো দূর আকাশের ধ্রবতারার মতো কাছে এসে ধরা দেয় না। স্বপ্ন পূরণের প্রকৃত আনন্দটা রয়ে যায় তাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে । মানুষ অস্থিরপ্রাণ,দূরকে কাছে টানার আকুলতা তার, স্বপ্নগুলো ধরার জন্য সে ব্যকুল হয়। কিন্তু.প্রতিনিয়ত স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় সে নীল হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো তখন  দূরেই থেকে যায়,  দূর আকাশের ধ্রবতারা হয়ে সে স্বপ্ন দেখায় ! 

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

যদি প্র্রেমহীন থাকো

তুমি যদি প্র্রেমহীন হয়ে থাকো, মেঘদূতের সম্ভোগের শ্লোক পড়েও যদি নির্বিকার থেকে যাও,যদি না থাকে তোমার রাগ-অনুরাগ-কস্তরীনাভি কোমলগান্ধার, যদি বিহব্বল না হয় তোমার শরীর, রক্তে শোনিতে যদি না ভেজে তোমার পড়নবাস, তাহলে তুমি আমার কবিতা পড়োনা।

পত্রহীন অরণ্যে বৃষ্টির গান

'পত্রহীন অরণ্যে বৃষ্টির গান' বন্ধু চাষী সিরাজের কবিতার বই। কবিতা নয়তো যেন ছোট ছোট প্রেম ছোট ছোট অনুভতিতে গা্ঁথা মুহূর্তিক পংতিমালা।ছন্দপ্রেমী, অক্ষরপ্রেমী এক শব্দশ্রমিকের হৃদয়ের আকুতি সুগভীর বোধ উঠে এসেছে পংতিতে পংতিতে। কোথাও যেন সুমধুর বিচ্ছেদের করুণ বাঁশির সুর,আবার কোথাও অভিমান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চরনে চরনে। চাষী সিরাজের কবিতা একের পর এক শব্দের কাঠামো বোধের রোদ জ্বেলে আলোকিত করে গেছে মননের চারপাশ, ছোট ছোট ভাবনা বিন্যাসে, উপলব্ধিতে, স্মৃতিতে কিম্বা প্রীতিতে।
"থৈ থৈ টইটু্ুম্বুর ভালোবাসায়
ফুলের ইঙ্গিতে
চা্ঁদ খুলে দিয়েছে জোসনারাত
এসো কাশ্ঁবনে
বদ্বুদ হয়ে ডুবে যাই
তুলে আনি নীলকণ্ঠ বিষ।"

"

হেটে গেছি সন্ধ্যাতারার দিকে

এখনো স্বপ্নে আসে আমার নদীটাকে। মেঠোপথ ধরে হেটে গেছি কতো প্রান্তরের পর প্রান্তর,                                        পথই টেনে নিয়ে গেছে যেদিকে নদী আছে । তারপর হাটতে হাটতে পাড়ে চলে যাওয়া।                                            তারপর শুনেছি এর জলতরঙ্গের গান।কতো সন্ধ্যা মগ্ন হয়েছে রাতের আধারে।                                                        সব তারা ডুবে যেতো যমুনার জলে।
নদীর পাড় ধরে আমি হেটে গেছি কতো সন্ধ্যাতারার দিকে,
নদীর ঝুমঝুম শব্দগুলো চোখের জলপতনের শব্দ হয়ে ফিরে অসতো ।

আমি আজো অলস পায়ে হাটি ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে। হাটি আর হাটি। কোনো ক্লান্তি নেই।
মাটির সোদা গন্ধ চিনিয়ে নিয়ে যায় নদীর টানে।
তখন দখিনের  হাওয়া উতাল হয় , বেগ পায় নিঃশ্বাসের বাতাস
তখন আমার সারা অ্র্ন্তর্ময়  করুণ এক গানের সুরে কা্ঁদতে থাকে-
'যে পথ সকল দেশ পারায়ে উদাস হয়ে যায় হারায়ে. সে পথ বেয়ে কাঙাল পরান যেতে চায় কোন্‌ অচিনপুরে'

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

হৃদয় মর্মরে

আমরাই বেসেছি ভালো
আমরাই করেছি অমৃত সুধাপান
ধরার বুকে আমরাই গড়েছি প্রেম উপাখ্যন
এতো আনন্দ আজ হৃদয় মর্মরে
এতো প্রেম  বাজে বা্ঁশির সুরে সুরে
আমরাই গীত করেছি অমর কবিতাখানি-
দুজনারই অ্ন্তরে অন্তরে। 

কোমলে কুসুমে

 ধ্রুপদী কবিতার মতো তোমার নারী-শরীর, বৃষ্টিস্নাত ভেজা চোখ, তোমার দেহের প্র্গলভ আর্তি,নদী গর্ভের সকল উত্তাল স্রোত, তোমার নির্লিপ্ত অন্তর্দাহ, আনন্দময় আকুতি- সমস্তই তোমাকে অমরতা দিয়েছে। বহতা নদীর মৌমৌ যৌবন, উদ্দাম জলধারা  কোনো কিছুই তোমাকে পৃথক করেনি।তোমার মধ্যেই আমার সকল নিবৃতি,সকল পাপমোচন।কোনো নিরাসক্তি রাখতে চাইনা। অ্ন্ধ বন্ধ সকল দুয়ার কোমলে কুসুমে উন্মোচন করতে চাই

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

মেঘমল্লারের সন্ধ্যাপ্রদীপ


আকাশ ভরা চন্দ্রতারা, পৃথিবী আজ আলোয় ভরা। তুমি এতো কাছে এসেছো যে মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরেই তুমি আছো আমারই কাছে।এই শরৎ হেমন্তেই তুমি আমার সকল আনন্দলোক, মেঘমল্লারের সন্ধ্যা প্রদীপ, আমার সুখ দুঃখ,শব্দ নৈঃশব্দ।এই শুভ্র মেঘের আকাশ দেখতে দেখতে, ভূবনজুড়ে তোমার স্পর্শের অনুভব পেতে পেতে -এই জীবন শরৎ হেমন্তের শুভ্রতার মতোই চির সুন্দর হয়ে যাবে।

পথের যতো ভাবনা

পথকে নিয়েই পথিকের যতো ভাবনা।পথের উপর যেসমস্ত চরণপাত পুষ্পবৃষ্টির মতো পড়েছিল আজ তারা কি কোথাও নেই?' পথ কি নিজের শেষকে জানে, যেখানে লুপ্ত ফুল আর স্তব্ধ গান বেদনাহত হয়।যেখানে পথিকরা পথ হাড়ায়।

হৃদয়ের শ্রাবণমেঘ

মানুষ সমুদ্র পার হল, পর্বত ডিঙিয়ে গেল, রোজই মনে হয়, সেদিনকার কাজে, সেদিনকার আলাপে সেদিনকার সব কথা দিনের শেষে বুঝি একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়। ভিতরে কোন্ কথাটি যে বাকি রয়ে গেল তা বুঝে নেবার সময় পাওয়া যায় না। আজ মেঘলা দিনের সকালে সেই আমার বন্দী কথাটাই মনের মধ্যে পাখা ঝাপটে মরছে। ভিতরের মানুষ বলছে, `আমার চিরদিনের সেই আর-একজনটি কোথায়, যে আমার হৃদয়ের শ্রাবণমেঘকে ফতুর ক'রে তার সকল বৃষ্টি কেড়ে নেবে !'

নীলকন্ঠ পাখি

আমার এক সহপাঠী Chapa Rahman এর timeline আজকে পাখির উপরে একটি link post দেখলাম। post টি দেখে আমি চমকে উঠি- আরে ! এতো দেখছি সেই নীলকন্ঠ পাখি !
নীলকন্ঠ পাখির নামটা শুনেছেন নিশ্চয়ই। এই পাখিটিকে বলা হয়। ইংরিজিতে Indian roller.
ইংরিজিতে আরো একটা নাম ছিল, ‘Blue jay’
. কেউ ভেবে দেখেছেন,কি, ওর কন্ঠটাই তো নীল নয়। বাকি শরীরের অনেকটাই তো নীল। তবে নাম নীলকন্ঠ কেন? কোন যুক্তিতে? আর কেনই বা অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় তার উপন্যাসের নাম দিলো 'নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে'-।
নীলকন্ঠ পাখি দেখতে চান ? তাহলে চলে যান সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে--- টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। শকুন, পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে।
এখানেই সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় নীলকন্ঠ পাখিকে।

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

বনমল্লিকার গন্ধে

শক্ল পক্ষ চা্ঁদের রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়; তখন বিছানার জেগে বসে থাকি; চোখ মেলে দেখি পাশে শুয়ে থাকা চিরন্তন মেয়েটিকে। যার মাঝে আমার ভালোলাগার উপলব্দি। তাকে জাগিয়ে তুলি, জ্যোৎ্না প্রহরে তার সাথেই কথা বলি । বনমল্লিকার গন্ধে নিবিড় হই,ভালোবেসে ভেসে যাই অফুরন্ত রাতের অন্ধকারে !

বিস্মৃত পদচিহ্ন

আজ ধূসর সন্ধ্যায় একবার পিছন ফিরে তাকালাম; দেখলাম,,একটি পথ,যা বহুবিস্মৃত পদচিহ্নের পদাবলী, ভৈরবীর সুরে বাঁধা।যত কাল যত পথিক চলে গেছে তাদের জীবনের সমস্ত কথাকেই এই পথের ধূলিরেখায় সংক্ষিপ্ত করে এঁকে গেছে; সেই একটি রেখা চলেছে সূর্যোদয়ের দিক থেকে সূর্যাস্তের দিকে, এক সোনার সিংহদ্বার থেকে আর এক সোনার সিংহদ্বারে।

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬

চিরদিনের নীল আকাশ

শরতের শুভ্র মেঘের আকাশ আমি দেখেছি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি,আর মেঘের ফাকে ঝিকিমিকি রোদ আমার গায়ে পড়েছে।  রংধনুও দেখতাম আমি সাতরং চোখে।  যমুনার পাড়ে দাড়িয়ে শেষ পাড় ভাঙ্গার শব্দ কবে শুনেছিলাম মনে নেই।কবে  দেখেছিলাম দূর গ্রামের উপর দিয়ে চিরদিনের সেই নীল আকাশ।
আবার ফিরে চাই আমার সোনালী গ্রামে। হাটতে চাই বসন্তের সেই পূর্নিমার চা্ঁদের নীচ দিয়ে।যেখানকার আকাশ কেবলই নীল ।যেখানে বাতাস বহে সঙ্গীতে।

খানকি ও ক্ষণিকা

তখন সন্ধ্যা হয়েছে। আধারও নেমে এসেছে । লাইটপোস্টের বাতি দু'একটি জ্বলে উঠেছে।বিমান বন্দর স্টেশনের খোলা জায়গায় দাড়িয়ে আমি চা খাচ্ছিলাম।একটু আগে ট্রেন চলে গেছে। প্লাটফর্ম ফাকা। আলোছায়ার অন্ধকারে কেউ কেউ আছে।চা খেয়ে রেল লাইনের ধার ঘেসে হেটে হেটে আমি বাসার দিকে আসছিলাম।অদূরে অন্ধকারে জিআরপি'র এক ঠোলা পুলিশ একটা মেয়েকে ধমকাচ্ছে,আর বলছে- এই খানকি মাগি,ঐযে লোকটা আমাকে দেখে দৌড়ে চলে গেল,ওর সাথে তুই কি কথা বললি ?' মেয়েটা বললো:  "আমি কইলাম ১০০ টাকা লাগবো,হ্যাতে কয়- ২০ টাকাা দিমু।" বুজতে পারলাম, মেয়েটা একটি পথ বেশ্যা।
আমি আর দাড়ালাম না।।রেল লাইনের স্লিপারের উপর পা ফেলে হাটছিলাম আর ভাবছিলাম, মেয়েটাকে আমিও কেন বললাম- পথ বেশ্যা। পুলিশ বললো- খানকি। আমরা এই মেয়েটাকে তো 'ক্ষণিকা' বলতেে পারতাম।ও টাকা নিচ্ছে কিন্তু ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দ তো দিচ্ছে। তাই ওকে খানকি না বলে 'ক্ষণিকা' ডাকতে দোষ কি ?

রথযাত্রা

রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া একটি আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষৃে মেলারও আয়োজন করা হয়।আমি যে স্কুলে পড়তাম সেটি ছিলো হিন্দু প্রধান এলকায়।রথ যাত্রা উৎসবটি আমি খুব উপভোগ করতাম।সন্ধ্যার পর কীর্তন গানের আসর বসতো। সহপাঠি পরিতোষ আমাকে নিয়ে যেতো সে আসরে।একতারা, ডুগডুগি, খমক, ঢোলক, সারিন্দা, দোতারা,খুঞ্জরী ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সেখানে বাজানো হতো।আসরের মধ্যে আমিও বসে পড়তাম।সাধু ভক্তরাও আসতো সেখানে।ভক্তির গান গাইতো ভক্তরা- 'হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।' আমিও মাথা দুলাতাম বাদ্যের তালে তালে, কন্ঠ মিলিয়ে গাইতাম- "জয় জয় শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য প্রভূ নিত্যানন্দ জয়,
জয় অদ্বৈত্য চন্দ্র জয়, শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য প্রভুর জয়।"

বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬

তোমাদের ভালবাসা এখনো গোলাপে ফোটে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কথা। সে বছর অধিক বন্যা আর বৃষ্টি হয়েছিলো। ভাদ্রের মাঝামাঝি এক বিকালে আমাদের বাড়ীর ঘাটে একটি বড়ো ছইয়ালা পানসি নৌকা এসে ভেড়ে। আমরা দেখলাম নৌকা ভর্তি ২০/২৫হ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধ। নৌকা থেকে ৫ জন মুক্তিসেনা নেমে আমাদের বাড়ীর দিকে আসে।এর ভিতর ২ জন আমার খালাতোো ভাই, ইসমাইল আর ফরিদ। ২জন পাশের গ্রামের হোসেন ও বেলাল ।অন্যজন সুলতান,ওর গ্রামের নাম জানা নেই। নৌকা ভর্তি এইসব মুক্তিযো্দ্ধারা যাচ্ছিলো স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র।শুধুমাত্র আমার মা'র সাথে দেখা করার জন্যই নৌকাটি ভিড়িয়েছিলো আমাদের ঘাটে।যে পা্ঁচজন মুক্তিযোদ্ধা নেমেছিলো তাদের সবার হাতে ছিলো স্টেন গান আর রাইফেল।সবার মাথায় পেচানো ছিলো বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা।আমি বিস্ময়ভরা চোখে দেখেছিলাম তাদের। আমার কিশোর মন ওদের দেখে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছলো।ওদের পা্ঁচজনের মধ্যে সুলতান ও বেলাল মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি শহীদ হয়। বাকী তিন জন স্বাধীনতার পরপরেই গণবাহিনীর দষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।

এই পা্ঁচজন বীর গেরিলা মুক্তযোদ্ধার সেইদিনের সেই মুখচ্ছবি আজো ভুলিনি।কি প্রত্যয় আর সাহস ছিলো ওদের চোখে মুখে ! দেশকে ভালোবেশে তারা সেদিন যুদ্ধ করেছিলো।তোমরা কেউই আজ আর বে্ঁচে নেই। কিন্তু তোমাদের ভালবাসা এখনো গোলাপে ফোটে।


অন্নপূর্ণা'র স্বপ্ন

স্বপ্নটা ভালোই দেখছিলাম,অন্নপূর্ণা'র চূড়ায় ওঠার কাহিনী। নির্মেঘ নীল আকাশ, শ্বেতশুভ্র শৃঙ্গ, লাল রঙের ছটা, নদী যেখানে জমে বরফ হয়ে যায়।নীচেই দেখি একদল আধান্যাংটো সন্নাসী গিরি পাশে জটলা করছে।সম্ভবত তিব্বতী এরা।কনকনে শীতে গা্ঁজার উষ্ণতায় বিভোর হয়ে আছে ।আমি ছুটছি শৃঙ্গের দিকে।দূর্পাম গিরিপথ,বিপদ শংকুল,পায়ের নীচে শীতল হিম।পা ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসছে।আমি দেখছি স্বপ্নচূড়ায় ওঠার স্বপ্ন- ,গা ছম ছম গিরিপথ, অনবরত তুষার ঝরছে।সাথে দমকা বাতাস আর বৃষ্টি।প্রচন্ড শীতে হুবুজুবু হয়ে কা্ঁপছি।পা ফসকে যায়। পড়ে যাই গিরি খাদে।স্বপ্ন আর এগুতে চায়না।ঘুম ভেঙ্গে যায়।অন্নপূর্ণা স্বপ্ন হয়েইি থাকে।



সবচেয়ে সুন্দরীর জন্য

একদা দেবতা জিউস অলিম্পাস পর্বতে এক বিয়ের অনুষ্টানের আয়োজন করেন। মহাবীর প্যালেয়াসের সাথে জলদেবী থেতিস এর বিয়ে। সে বিয়েতে সব দেব দেবীদের দাওয়াত দেয়া হয় শুধু কলহ দেবী এরিসকে বাদ দিয়ে। এরিস এতে খুবই রেগে গিয়ে অনুষ্ঠানের দিন হেসপেরিদাসের বাগান থেকে একটি সোনালী আপেল নিয়ে অনুষ্ঠানে ছুড়ে মারে যেটার গায়ে লেখা ছিলো '' ''সবচেয়ে সুন্দরীর জন্য''।
তিনজন দেবী ''হেরা'' ''এ্থিনা'' ও ''আফ্রোদিতি'' জিউসের কাছে সে আপেলটি দাবি করে। দেবতা জিউস কেউর দিকেই পক্ষপাত না করে, সুন্দরী নির্ধারনের দায়িত্ব ট্রোজান বীর প্যারিসকে দিয়ে দেয়।
নির্ধারিত দিনে তিন দেবী  বিবস্ত্র হয়ে আইদা পর্বতে প্যারিসের সামনে এসে দাড়ায়। তিন জন এতই সুন্দরী ছিলো যে প্যারিস কাউকেই নির্বাচন করতে পারে না।
তখন তারা তিনজনেই প্যারিসকে নজরানার লোভ দেখিয়ে তাদের বিজয়ী করতে বলে। হেরা প্যারিসকে ইউরোপ ও এশিয়ার রাজা বানানোর কথা বলে, এ্থিনা তাকে সর্বাধিক জ্ঞান ও যুদ্ধকৌশল শেখানোর প্রস্তাব দেয়, আর আফ্রোদিতি তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীকে পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখায়। যে কিনা ছিলো স্পার্টার রাণী, রাজা ম্যালেনাউস এর স্ত্রী হেলেন।
প্যারিস আফ্রোদিতির উপহার গ্রহন করে, তাকে আপেল টি দিয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে সুন্দরী ছিলো হেরা। পরবর্তীতে হেলেনকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই গ্রীকরা ট্রয় আক্রমন করে, শুরু হয় ট্রোজান যুদ্ধের, ধ্বংস হয় ট্রয় নগরী।


বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬

প্রথম জল, প্রথম অগ্নিমালা

কথা ছিলো মেঘ বৃষটির নীচে শুয়ে রবো; এই ভরা শ্রাবন নদী সন্ধ্যায়। কতোটা আধার পেলে এ রাত একা হয়ে যায়। নিজস্ব শাড়ির আড়ালে বিপন্ন বেহাগ, কেঁপে ওঠে চাঁদের শরীর । দূর কোন অতিতের পাখি উষ্ণতা নিয়ে উড়ে যাবে আরো দূর ইপ্সিত অন্ধকারে। নরম নৈঃশব্দ্যের মতো আমিও হেটে যাবো প্রগাঢ় তৃষ্ণার দিকে। কে আমার প্রথম জল, প্রথম অগ্নিমালা। কার কাছে হারাবো, ভেসে যাবো জলের তরলে অমৃতের জোৎস্নায়।

মহাকালের অমোঘ নিয়ম

আমার মূত্যু হলে আমি আমার উত্তর পুরুষের কাছে অর্থাৎ আমার ছেলে মেয়েদের কাছে পূর্ব পুরুষ হয়ে যাবো। যেমন হয়ে গেছে আমার পিতা মাতা,.দাদা দাদি ও তাদের তৎপিতা মাতা।মহাকাল যতো এগুতে থাকবে,আমরা ততোই মহাকালের পিছনের দিকে হারিয়ে যেতে থাকবো। আমার ছেলে মেয়েরা আমাদের কবরে বছরে একবার হলেও জিয়ারত করতে যাবে।নাতি পুতিদের হয়তো যওয়ার সময়ই হবেনা।আর তাদের তৎ ছেলে মেয়েরা তো আমাদের নামই বলতে পারবে না।মহাকালের এই নিষ্ঠুরতার স্বীকার আমাকে পেতেই হবে। যেমন পেয়েছে আমার পূর্ব পুরুষেরা। আবার আমার উত্তর পুরুষরাও পাবে।কারণ ক্রমানয়ে তারাও পূ্র্বপুরুষ হয়ে যাবে। এইটাই জগৎ সংসারের অমোঘ নিয়ম।

এই ব্রহ্মাণ্ড এই সভ্যতা

এই ব্রহ্মাণ্ড,এই পৃথিবী যদি আর না থাকে,যদি ধ্বংস হয়ে যায় এর পাহাড়,নদী,সাগর,গিরি ও পর্বতমালা।যদি পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব বনজঙ্গল, গাছগাছালী,লতাগুল্ম ও সবুজ বৃক্ষরাজি।যদি ধবংস হয়ে যায় শহর, ব্ন্দর, গ্রাম, বাড়িঘর  যতো অট্টালিকা।যদি বিরান হয়ে যায় ফসলের ক্ষেত আর সবুজ প্রান্তর। মানব সভ্যতা পরিনত হয়ে যায় যদি মহেনজোদারোর মতো ধ্বংসস্তুুপে। আমি তখন সেই ধ্বংস স্তুুপ আর পোড়ামাটির নতুন পৃথিবীতে তোমাকে নিয়েই আবার গড়তে চাই নতুন সভ্যতা।

মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬

একজন মায়ের কথা

আমার সহপাঠী নিলুফার লুসীর Face book এ এই comments টি দিয়েছিলাম।
"Koyel Talukder সম্ভবত ১৯৭৬ সালের কথা।মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলো অপরাজেয় বাংলা।তারা এটি ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলো।প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ সেটি প্রতিহত করছিলো।মোশারফও ছিলো প্রতিহতদের দলে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো ।তখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো।আমি হাসপাতালে মোশারফকে দেখতে যাই। মোশরফ বললো- তোমাকে খবরটি দিতে।তোমরা তখন ইব্রাহিমপুর থাকতে। এতো অট্টালিকা তখন সেখানে ছিলো না।গ্রামের মতো তোমাদের টিনসেড বাড়ী।আমি সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিলাম।কথা বলতে বলতে সেই দিনের সন্ধ্যাটা সন্ধ্যা রাত হয়ে গিয়েছিলো।তোমার মা আমাকে ভাত না খেয়ে আসতে দেয় নাই। এতো যত্ন করে খাওয়াছিলো যে হলে এসে আমাকে আর খেতে হয় নাই। এই মহোয়সী একজন মায়ের আজ মৃত্যু দিন চলে গেলো।আজ তা্ঁর আত্মার মাগফেরাতই কেবল কামনা করছি।আমিন।"

পৃথিবী আমারে চায়


বাড়ীর কেউই আমাকে পছ্ন্দ করেনা।একদিন সুন্দর সকালে হারমনিতে গান ধরেছি-'পৃথিবী আমাকে চায়,রেখো না বে্ঁধে আমায় ' অমনি বাবা এসে বললো-'বন্ধ করো গান। কামাই কাজি নাই এক পয়সা।হু,পৃথিবী আমাকে চায়।বের হ বাড়ী থেকে।অকর্মা কোথাকার।'
কি দোষ আমার ! আমিতো অভিমান করতে পারি।মরতেও পারি।চলে যাই গঙ্গার ধারে ব্রীজে।কি স্নিগ্ধ শীতল গঙ্গার জল।আমার কেউ নেই।আমার আছে জল।সিদ্ধান্ত নিলাম- ঝাপ দিবো জলে।দেখি অদূরে দাড়িয়ে মালা সিনহা।কাছে যাই এগিয়ে। আহা ! কি সুন্দরী মেয়ে।কথা বলি ওর সাথে।কি আশ্চর্য মিল।সেও মরতে এসেছে।দুজনে অনেক কথাই বললাম।দুজনেরই বা্ঁচবার সাধ হলো।কারোরেই আর মরা হলোনা।কারণ,পৃথিবী আমাদের চায়।

সে সীমানা মানেনি

হাতিটি সীমান্তের কা্ঁটাতারের বেরা কিংবা কোনো সীমানা সে মানেনি।যে নদী দিয়ে ভেসে এসেছিলো সেই যমুনা ব্রহ্মপুত্রের উযান স্থল ভারতে।একই নদী,একই জল,একই স্রোত। কিন্তু সে কোনো ভীন্ন দেশ মানতে চায়নি।সীমা্ন্ত এলাকায় প্রতিদিন কতো পাখীই তো আকাশে উড়ে উড়ে সে দেশে যাচ্ছে ,এখানে আসছে।হাতিটিও এমনি করেই এসেছিলো আমদের দেশে।সে আন্তর্জাতিকতাই চেয়েছিলো।আমার খুব মন খারাপ লাগছে আমরা এই বু্ঁনো হাতিটকে বাঁচাতে পারলাম না! বানের জলে ভেসে আসা এই অসহায় হাতিটি দেড় মাস প্যা্ঁক-কাদায়, জলে স্থলে, বনে-জঙ্গলে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে মারা গেলো।

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

কাওসার খান

কাওসার খান আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহপাঠি ছিলো।ঢাকার গোড়ান এরিয়া থেকে আসতো। হ্যাংলা পাতলা গড়ন, কপাল ছিলো একটু বড়ো ধরনের, মাথায় চুল ছিলো কম। সবার সাথেই সে মিশতো না। মেয়েদের সাথে তো আরো নয়।লাজুক স্বভাবের এই ছেলে বাবলু বাসার সম্পাদিত 'অস্বীকার' পত্রিকায় 'ইন্টারকোর্স ক্ষুধা' নামে একটি কবিতা লিখে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে কাওসার খান পাক্ষিক 'আনন্দ বিচিত্রা'য় সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগ দেয়।ওখানে চলচ্চিত্রের উপর সুন্দর সুন্দর অনুসন্ধানীমূলক ফিচার লিখতো। সেই সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা 'রোজিনার স্বামী বৃত্তান্ত' এর উপর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখার কারণে এফডিসি-তে রোজিনার সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে সে লাঞ্চিতও হয়েছিলো।
কি কারনে কাওসার খান আনন্দ বিচিত্রা ছেড়ে দেয়, তা আমার জানা নেই। তারপর নব্বই দশক থেকে ওকে তেমন্ আর কোথাও দেখা যায়নি। শুনেছি সে নাকি এখন আমেরিকায় থাকে।অসম্ভব মেধার অধিকারী আমাদের এই বন্ধুুটি এখন কেমন আছে, কিছু জানিনা।আর কেউ জানলে কমেন্টসে লিখে জানালে খুশী হবো।


প্রসঙ্গ: অস্বীকার পত্রিকা:  ১৯৭৬-৮১ সময়কালে বাংলা বিভাগের কয়েকজন স্বাপ্নিক তরুণ এই পত্রিকাটির সাথে জড়িত ছিলেন।তাদের অদম্য মেধা আর পরিশ্রমেই 'অস্বীকার' হয়ে উঠেছিলো সেই সময়ের একটি সাহসী কনঠস্বর। এইসব তরুণদের মধ্যে জনাব বাবলু বাসার ছিলেন অন্যতম।তিনিই 'অস্বীকার'-এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন। সহকারী হিসাবে ছিলো- নওশেরুল ইসলাম,আহমেদ মুসা,কাওসার খান,এমদাদ আলী আকনদ ও এনামুল হক।আমার যতোটুকু মনে পড়ে এটি ছিলো বাংলাদেশের প্রথম অধিকাঠামোমুলক পত্রিকা।কেন যে স্বপ্ন দেখানো এই তরুণগুলো পত্রিকাটির প্রকাশনা চালিয়ে নিতে পারেনি তা আমার কাছে রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। ( পত্রিকাটির কোনো সংখ্যা কারো কাছে যদি থাকে জানালে কৃতা্র্থ হবো )।

ধর্মভীরুতা

আমি একজন ধর্মভীরু মানুষ। আর এই ভয়টি ছোটো বেলায় দেখিয়েছিলেন আমার মা। তিনি বলতেন - কখনো মিথ্যা কথা বলিবেনাা, খারাপ কাজ করিবেনা, উপরে আল্লাহ আছেন, তিনি নাকি সব শুনে ফেলেন এবং দেখে  ফেলেন। মা  আরো বলিতেন - নামাজ পড়িবে, কোনো পাপ কাজ করিবেনা। অন্যায় বা পাপ করিলে দোজখের আগুনে জ্বলিতে হইবে।' মা'র এই কথাগুলো এখনো বিশ্বাসে বে্ঁধে আছে।আমার প্রতিদিনের জীবন যাপনে মা'র কথাগুলোই অনুসরণ করি।

জোৎস্না ঝরা বকুল তলায়

এই যে আমরা দু'জন দুই যুগের বেশী সময় ধরে দুজনের হয়ে আছি।
কতো পথ একসাথে হেটেছি, কতো বসন্ত পূর্ণিমা কেটে গেছে এই জোৎস্না ঝরা বকুল তলায়।
কতো ভালোবাসা কতো গান সুর হয়ে ভেসে গেছে
আমাদের ভালোবাসা ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর পথে প্রান্তরে।
দুজনের মায়ায় বেধে্ঁছি আমাদের ঘর, হয়েছে সংসার । এসেছে সন্তানেরা ।
মায়ার বা্ঁধন আরো বেড়ে গেছে।
মাঝে মাঝে ভাবি, এই পৃথিবী থেকে,এই মায়ার সংসার থেকে কে আগে চলে যাবে ?
যেই যাক না কেন আগে, যিনি থাকবেন - তার সময়গুলো কাটবে কি ভাবে ?
অসীম শূণ্যতায় বা্ঁচবেই বা সে কতোদিন ? কিংবা বা্ঁচতে পারবে তো সে ?


নীল পদ্ম


অকালে দেবী পূজা করতে গিয়ে রামচন্দ্র পণ্ডিত রাবণকে পুরোহিত হিসাবে পূজা করার অনুরোধ করেন। রাবণ বধের জন্য আয়োজন করা হয়েছে এই অকাল পূজা, তা যেনেও নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে একজন নিষ্ঠাবান পুরোহিতের কর্তব্য পালন করতে সম্মত হন ত্রিকালজ্ঞ পণ্ডিত রাবণ। মহা সন্ধির সন্ধিক্ষণে অন্ধকারকে আলোকিত করতে ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি দেবীর চরণে নিবেদন করা হয় ১০৮ টি পদ্ম । মানস সরোবর থেকে নীল পদ্ম আনেন বীর হনুমান । সেই ১০৮ টি নীল পদ্ম দেবীর চরণে নিবেদন করতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে একটি পদ্ম কম রয়েছে। একটি পদ্মের জন্য পূজো বানচাল হতে বসলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুরবাণ দিয়ে পদ্মের বদলে তাঁর নীলাভ নয়ন দেবীর চরণে নিবেদন করতে চান। সেই মত ধনুরবাণ তোলা মাত্র দেবী স্বয়ং আবির্ভূত হন। দেবী রামচন্দ্রকে বলেন, আমি তোমার স্তবে সন্তুষ্ট হয়েছি। দেবী ছলনা করে যে পদ্মটি লুকিয়ে রেখেছিল তা ফিরিয়ে দিলে মহাসমারোহে পূজিত হন দেবী দুর্গা । দেবী দুর্গার পুজায় মহাসন্ধিতে সেই সময় থেকে আজও ১০৮ টি পদ্ম দেবীর চরণে নিবেদন করা হয়।

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬

অচ্যূত কোমলগান্ধার

সে এক স্বপ্নের সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি। ১৯৭৯ সাল। শেরেবাংলা নগরে যাত্রার আসর বসতো। প্রিন্সেস লাকী খান নাচতো সেখানে। তাকে ঘিরে তারুণ্যের মধ্যে সে কি উম্মদনা ! শীতের রাতে মাথায় চাদর মুড়ি দিয়ে আমরা হল থেকে সেখানে যেতাম। সামনের সারিতে বসতাম। সেই বসে থাকার মধ্যে কত কী যে ভাবনা ! তখনতো বয়স কোথাও হারিয়ে যাওয়ার ।যাত্রা পালা শুরু হতো। বিবেক আসতো ,গান শরু হতো। কিন্তু কে শোনে কার গান !চীৎকার,হৈহুল্লর। তখন কোমর দুলে প্রিন্সেস লাকী খান মঞ্চে আসতো।অসম্ভব সুন্দরী দেহ বল্লরী তার। তবলায় ঢাকের বাড়ি,হারমোনিামে কড়া সুর।লাকী খান ঘাগরা তুলে বেলি ড্যান্সের মতো নাচতে থাকতো। গানের তালে ঢেউ উঠতো শরীরে—'হাওয়ামে উড়তা যায়ে মেরা লাল দোপাট্টা মল মল ।'ওড়না উড়ে চলে যেতো ! স্বল্পবসন,নাভিূমূলে তার অচ্যূত কোমলগান্ধার। স্বপ্নের ঘোরে উদ্বাস্ত হয় ভোগ বৈরাগ্য । তারপর পালা শেষ হলে আমরা হলে ফিরে আসতাম।

স্পর্শে নেই অস্তিত্বে নেই

 তুমি স্পর্শে নেই তুমি অস্তিত্বেও নেই 
তোমার সমস্ত স্বত্তা  উজার করেছে প্রেম
 আকাশের তারা গুণতে গুণতে
চাঁদের আলোয় পাড়ি দিতে দিতে
লক্ষ্যহীন মেঘের সাথে ভাসতে ভাসতে
এ কেমন স্বপ্ন প্রস্থান তোমার ?

তুমি হয়তো দিগন্তের ওপারে কোথাও
ঝির ঝিরে বৃষ্টি আর হিমেল বাতাস
গায়ে জড়িয়ে  অনন্ত সজ্জায় শুয়ে থাকো
দয়িতার মতো কারো অপেক্ষায়

আমিও তখন -
নৈঋত থেকে আসা প্রলয়ংকরী ঝড়ের অপেক্ষা করি
ফসলের মাঠ বিরান হয়ে যায়, নদীতে আসে ভাটার টান
চরাচর জুড়ে তখন কোনো পানকৌড়ি থাকে না
আমি তৈরি করতে চাই উর্বর জমিন
তখন চাষের সময়ে লাঙ্গলের ফলায় সব ভ্রূণ রক্তাক্ত হয়ে যায় ।

দুই পথ ( Two roads )

কোন এক সময় জীবন বোধহয় প্রত্যেক মানুষকে এক পথের বাঁকে এনে দাঁড় করায় – যে বাঁকে দুই পথ চলে গেছে দুই দিকে।একটি অনিশ্চিত এক গভীর হলুদ জঙ্গলের দিকে, আরেকটি পথ অচেনাই থেকে যায়, থেকে যায় রহস্যে ঘেরা। আর সেই মুহূর্তে সে যে পথ বেছে নেয়, সেই পথেই হয়তো তার সম্পূর্ণ জীবন, সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।

কিন্তু, কোন পথ বেছে নেবে জীবন? যে পথে মানুষ হেঁটে গেছে, যে পথ মসৃণ,সুগম সেই পথ, নাকি যে পথে মানুষের চলাচল কম, যে পথের খবর কেউ রাখে না – সেই পথ। যে পথই মানুষ বেছে নিক না কেন, জীবন একটি পথই বেছে নেয়, কিছু দূর এগিয়ে যায়, এবং সে পথেই সে চলতে থাকে – কারন জীবন তো আর দুটো নয় ,জীবন একটাই।

জানেমন

জীবনে বড়ো সাধ ছিলো ,কবি হইবো। কিন্তু হইতে পারিলাম কই। কবিদের নাকি অনেক প্রেমিকা থাকে।
কবি হইতে পারিলে আমারও থাকিতো। তখন এক একজনকে এক এক নাম ধরিয়া ডাকিতাম। কাউকে ডাকিতাম ওগো মধুমালা, কিরণমালা, চম্পাকলি,কুসুমকলি বলিয়া। কাউকে বলিতাম, আমার জুলেখা বিবি, সোনাভান,রূপবান। আবার কাউকে কাউকে ডাকিতাম, ধ্রবতারা,নয়নতারা, সেতারা বলিয়া। আবার কেউ হইতো আমার পদ্মাবতী, চন্দ্রাবতী এবং পা্র্বতী। কিন্তু এ জীবনে কবি হইতে পারিলাম না বলিয়া কাউকেই কোনো নামে ডাকিতে পারিলাম না।

শেষ পর্যন্ত একজন মায়াবতীকে লইয়াই আমার ঘর করিতে হইলো।তাহাকেই সকালে বিকালে ডাকি 'জানেমন।'

রুবাইয়াৎ

'নিদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে,
খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে,
পর তুমহারি ইয়াদ মে,
ন নিদ আয়ে,ন খোয়াব আয়ে...'

.বাংলা করলে এমন হয়: 

ঘুম এলেই স্বপ্ন আসে, স্বপ্ন এলেই তুমি আসো
যখন তুমি আসো, তখন ঘুমও আসেনা স্বপ্নও আসেনা।

'মেমসাহেব' উপন্যাসেও পড়েছিলাম এই রুবাইয়াৎ টি।

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬

দুই বিন্দু নয়নের জল

আমার দুই মেয়ে, একজন যেন পরমা, হৃদি পরমাত্মা
আরেকজন আমার ঐশ্বর্য, নম্রতা ঐশ্বর্যময়ী।                                                                                                  আমার দুই বিন্দু নয়নের জল !

এই শহর আমার জন্য নয়


এই শহর আমার জন্য নয় পার্কের পাশে লাইটপোস্টের নীচে স্ট্রীট বেশ্যারা উন্মাতাল -
চারপাশে দেখে তারা কিছু অধিক চর্বিওয়ালা লোকের চাহুনি
আর অসংখ্য মদ পিপাসু মানুষ - আমি তখনো সঙ্গীবিহীন
প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেঁটে যাই
এক উদ্বাস্তু উদাসীনতার রাজপথে ধরে।
এই শহর আমার জন্য নয়
লাল আলোর জানালার ধারে মায়াবী চোখ দেখি, সিগারেট হাতে
মৃদু সংগীত আর চোলীর মাঝখানে লুকানো ক্লান্তি
সেইসব রমনীর দিকে আমি ফিরে তাকাতে চাইনা
সেখানে রাত গভীর হতে থাকে পাপের গভীরে।
এই শহর আমার জন্য নয়
এখানে সেই ইছামতির স্নিগ্ধ সচ্ছ জল নেই
প্রথম স্বাদ প্রাপ্তির জলপথ দিয়ে ঘুরতে থাকি অবিরাম বৃত্তাকারে
সিগারেটের ধূঁয়ায় সেই মায়াবী চোখ খু্ঁজি
যার আ্ঁচল তলে মুখ ঢাকতে চাই পূণ্যতার জন্য।

জীবন যখন শুকায়ে যায়

জীবন যখন শুকায়ে যায় 

যব দিল হি টুট গয়া, হম্‌ জী কে ক্যা করে। প্রেমিকা কিংবা বউ যখন ছেড়ে চলে যায়, ত্যক্ত পুরুষের জীবনে বেশ একটা ট্র্যাজিক আঁধার নেমে আসে, কেউ দেবদাস হয়ে যায়, কেউ জগজিৎ সিং শোনে, কেউ পানপাত্র হাতে নিয়ে কুন্দনলালের এই রকম গান গায় টায়, আর ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস সহ ভাবে, এ জীবন রেখে আর কী লাভ! 

শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬

নৌকা বাইছ


তখন কৈশর বয়স।বর্ষার ভরা যমুনায় নৌকা বাইছ হতো। পাড়ে জমা হতো হাজার হাজার মানুষ।চরের মানুষেরা আসতো বড়ো বড়ো রংবেরং এর নৌকা সাজিয়ে।ঢাক ঢোল বাদ্য বাজনা বাজতো নৌকা নৌকায় । কোনো কোনো নৌকায় থাকতো  একজন সং। উদ্ভট সাজে সে নাচতো আর গান গাাইতো। তা দেখে আমরা ছোটোরা যমুনার পাড়ে নাচতাম আর ছুটোছুটি করতাম।কি আনন্দই না করতাম আকাশে বাতাসে ! সে সবই আজ নস্টালজিক।

যে কবিতাটি মনে নেই

আজ ১৫ই আগস্ট,২০১৬,সোমবার।
ফ্লাসব্যাক: ১৫ই আগস্ট,১৯৭৫,শক্রবার।
কিছুদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।সবে ক্লাশ শুরু হয়েছে।মিরপুরে বোনের বাসায় থাকি।সেদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠি।খবর শোনার জন্য রেডিওর নব ঘুরাতেই শুনতে পেলাম-"আমি মেজর ডালিম বলছি ,শেখ মুজিবকে হত্যা করা হইয়াছে। অদ্য সকাল হইতে খন্দকার মোস্তাক আহম্মদের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে । শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে । এখন থেকে সামরিক আইন জারি করা হলো । বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।' .
.
রেডিওতে ঘোষণাটি শুনে দেশের কোটি কোটি মানুষের মতো আমিও স্তম্ভিত,নির্বাক ও পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।কেমন যেনো উদভ্রান্তের মতো লাগছিলো।কি করবো,কোথায় যাবো ! কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অসহায়ের মতো পড়ার টেবিলে যেয়ে বসি। কবিতার খাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা লিখি । কবিতা লেখার সময়ে চোখের জলে খাতা ভিজে ফিলেছিলাম।।আমার লেখা সেই কবিতাটি আমার সংরক্ষণে নেই। কি লিখেছিলাম কোনো লাইনও মনে নেই।

নিকষিত হেম

১. সত্তর দশকের শেষের কথা। চিপাচস করার কারণে সাপ্তাহিক চিত্রালীর সাথে আমি সম্পর্কিত ছিলাম। ওখানে পাঠকের পাতায় লিখতামও। তাসলিমা নাসরিন,নামে ময়মনসিংহের একটি মেয়ের লেখাা মাঝে মাঝে চোখে পড়তো।। ছোটো ছোটো দুঃখ বেদনা অনুভুতির কথা মেয়েটা সুন্দর করে লিখতো। একবার সাপ্তাহিক সন্ধানীতে "নিকষিত হেম" নামে ওর  একটা ছোটো লেখা  ছাপা হয়েছিলো । প্রেম সম্পর্কিত লেখাটি ভীষন ভালো লেগেছিলো । সেই থেকেই তাসলিমা নাসরিনকে আমার জানা । তারপর ওর অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা গল্প আমি পড়েছি। এই প্রেমময়ী মিষ্টি স্নিগ্ধ মেয়েটার পরবর্তীতে যে কি হলো, কে যে ওর মাথা বিগরে দিলো, আমার কাছে অবাকই মনে হয়।কারন,এখনকার লেখার সাথে তখনকার সেই লেখার  কোনো মিলই নেই।
২. পদাবলীতেই আছে, 'কানুর প্রেম নিকষিত হেম কামগন্ধ নাহি তাহে।' তবু প্রেম যে কামকে একেবারে বাদ দিয়ে তা তো নয়। রাধার অন্তর্যাতনা ও উপলব্ধি লক্ষ করলে তাতে স্পষ্টতই সাধারণ নারীর পরিচয়ই ফুটে উঠবে। যেমন, এই পদটি- সই, কে বলে পিরীতি ভালো / হাসিতে হাসিতে পিরীতি করিয়া কান্দিতে জনম গেল।


মন ভালো নেই।


আজ ফেসবুকে কি স্টাটাস লিখবো, মন ভালো নেই।                                                                                   শরতের আকাশ শুভ্র মেঘে ঢাকা,লেখা যায় এ নিয়ে দু'চার পংতিমালা
কিংবা কালরাতের স্বপ্নবুভূক্ষু সেই রমণীর কথা
যার পদধ্বনি উত্তরের বাতাসে ঘরের জানালায় এসে দোল খেয়েছিলো !
না,ঐ সবও লিখতে চাইনা। আমার স্ত্রী এখনো জেগে আছে,
অবিশ্বাস দেহেও নয়,দ্রোহেও নয়,আমিতো তারই কাছে ঋদ্ধ বিশ্বস্ত।

বরঞ্চ কবি  মহাদেব সাহার কাছে যাই -
“ বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই ,মন ভালো নেই
ফাঁকা রাস্তা শূন্য বারান্দা সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ, পথ ভুলকরে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে?


বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

নীলিমার নীল

  শ্রাবন বর্ষার আজ শেষ দিন।বৃষ্টি কি আর ঝরবেনা !  সব কদম ফুলগুলো কি ঝরে যাবে কাল শরত সকালের আগেই ! নীলিমার সব নীল  কি ফুরিয়ে গেল ! দখিনের জানালা খুলে দেখলাম আজ সকালের আকাশ। সাদা মেঘ জমা হতে শুরু হয়েছে।ধবল মেঘ দেখলেই সাদা তুষার ঝরানোর কথা মনে হয়। কাছেতো কোথাও বৃ্ন্দাবন নেই।আর থাকলেই বা কি ! কোনো বিনোদিনী তো অপেক্ষায় নেই।


অবগাহনের সময়

আমরা হাত ধরে নেমে যাই ধূ ধূ মাঠে, প্রান্তরে
সেখানে তখন আদিগন্ত শূন্যতার বুকে
জ্যোৎস্নার প্লাবন নামে মধ্যরাতে।
অসংলগ্ন শরীরময় লতগুল্ম ঝিঝি পোকারা জড়িয়ে ধরে
ঘর হয়ে যায় নির্ঘর,তখন নদীও যেন সামনে চলে আসে
অবগাহনের সময় ঘরে ফেরার কথা আমরা ভুলে যাই।


মুক্তির গান

১৯৯৫ সালের কথা।'মুক্তির গান` ছবির প্রদর্শনী চলছিলো তখন শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে।দর্শনীর বিনিময়ে ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম, সম্ভবত সেদিন ছিল ছবিটির সপ্তম প্রদর্শনী। হল ভর্তি দর্শকরা রুদ্ধশ্বাসে দেখছিলেন মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত এক ছবি! ছবিতেে দেখা যায় অপারেশনে যাবার আগে মক্তিযোদ্ধারা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রওয়ানা হচ্ছেন। অপারেশন শেষ করে ক্যাম্পে ফিরে আবার বজ্রকন্ঠে বলছেন `জয়বাংলা`। শাহীন সামাদ সহ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পীদের একটি দল নৌকায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে গাইতেন উদ্বুদ্ধ করার সব গান। ছবির শেষ দৃশ্যে বিজয় উল্লাসে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে একদল মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের সেই শ্লোগান,দেয় জ-য়-বাং-লা ! সেই থেকে তারেক মাসুদকে আমি চিনি। মূলত`মুক্তির গান’ই তাকে চিনিয়েছে আমাকে! এরপর আরও অনেক স্মরণীয় ছবি। তারপর তিনি নিজেই একদিন এক বিয়োগান্তক ছবির শেষ দৃশ্যে অবতীর্ন হন।২০১১ সালের ১৩ আগস্ট কাগজের ফুল-ছবির শুটিং স্পট নির্বাচন করে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াজুড়িতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।


বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬

ডঃহুমায়ুন আজাদ

ডঃ হুমায়ুন আজাদ ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক । তিনি ছিলেন একাধারে একজন ভাষাবিদ,সমালোচক ও কলামিষ্ট। কবিতা ,গল্প ও উপন্যাসও,লিখতেন । হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক।
আজ তা্ঁর দ্বাদশ মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৪ সালে তা্ঁর ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন। বিদেশে নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও ঐ বছরে ১১ আগস্ট রাতে জার্মানিতে নিজের ফ্ল্যাটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ।
তা্ঁর লেখা একটি কবিতা থেকে আবৃতি করে এই মহান মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি--
"যখন আমরা বসি মুখোমুখি, আমাদের দশটি আঙুল হৃৎপিন্ডের মতো কাঁপতে থাকে
দশটি আঙুলে, আমাদের ঠোঁটের গোলাপ ভিজে ওঠে আরক্ত শিশিরে
যখন আমরা আশ্চর্য আগুনে জ্বলি, যখন আমরাই আমাদের স্বাধীন স্বদেশ
তখন ভুলেও কখনো আমাকে তুমি বাংলাদেশের কথা জিজ্ঞেস কোরো না
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না – তার অনেক কারণ রয়েছে
তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।

জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের কথা।"

মা এসেছিলেন

স্বপ্নে নয় জাগরনেও নয়, ঘুমে নয় তন্দ্রাচ্ছন্নেও নয়,আমি দেখলাম মা আসলেন,
বসলেন পুরানো হাতলহীন কাঠের সেই চেয়ারটায়।যেখানে বসতেন আমার বাবা।
বললেন,ভোরবেলায় কোরান শরীফ পড়ার সুর শুনতে পাইনা তোমার,
 তোমাকে না ইদ্রিস মৌলানার কাছে কোরান শরীফ পড়া শিখিয়েছিলাম,ভুলে গেছো কি সব ?
বৌমাকে তো আমিই পছন্দ করে এনেছিলাম, তাকে কি কোনো কষ্ট দিয়ে কা্ঁদাও তুমি?
কেমন আছে আমার মুমু,পরমা আর ছোট্ট ঐশ্বর্যময়ী,!

চোখ মেলতেই দেখলাম- মা দূর আকাশে শুভ্র মেঘের নীচে ভেসে ভেসে চলে গেলেন।






,মাধবীরা কেউ নেই।

এই ক্যাম্পাসে এখন আর মাধবীরা কেউ থাকে না.. নীলক্ষেতের মোড়ে আর বেলায়েত নেয়ামুলদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না । টিএসসি'র সামনে বাসের জন্য অপেক্ষায় নেই হামিদা,বীনা,পান্না'রা। সবাই চলে গেছে অন্য কোথা,অন্য ভূবনে,অন্য মানুষ হয়ে.. আমাদের সেই আকাশের তারায় নেই লুসি,চা্ঁপা. ইকবাল আর মোশারফ। নীলা চলে গেছে নীলাঞ্জনায়,শাহিন হয়ে গেছে মিলন ভাইয়ের বঊ। বাবলু,সুজন,ভবতোষদের কবে শেষ দেখেছিলাম মনে নেই। হেনা স্যার চলে গেছেন না ফেরার দেশে,  তাই পদাবলীর ক্নাশে কখনো দেখা যাবেনা মনজু,হক,তালেব,শাকিলা আর প্রভাতীকে। শরতের বিকেলে লাইব্রেরী বারান্দায় আড্ডায় নেই লিটন,নওশের, রবি আর শাহ আলমগীর। মনি,মুসা,শিশির,অশোক'রা তো অনেক দূরের স্বপ্ন হয়ে গেছে। মধুর ক্যান্টিনে চা'র কাপে আর কোনো ঝড় নেই। ক্যাম্পাস হয়ে গেছে শামসুর রাহমানের শূণ্যতায় তুমি শোকসভা'র মতো ফা্ঁকা । নির্জন রোদদুরে চো'খ মেলে দেখি মাধবীরা কেউই নেই।  

মহাকালের অতলে

আমার ছোট ভাইটি আট দিন বে্ঁচেছিলো। আমিও তো মরে যেতে পারতাম ওর মতই জীবনের প্রথম প্রহরে। মায়াময় পূথিবীতে জড়িয়ে গেলাম। শিশুকাল কৈশর যৌবন এসব আর নেই। চারপাশের অনেকেই চলে গেছে। সময় কেটে যাচ্ছে অবিরাম। স্বপ্ন দেখি বলে এখনো বাঁচতে ইচ্ছে করে। জীবন দ্রুতই ফুরিয়ে যাছ্ছে। দূরে চলে যেতে হবে আমাকেও একদিন । হারিয়ে যেতে হবে মহাকালের অতল তলে । আমার অমঙ্গল গুলো আমার প্রিয় মানুষদের যেন না ছোঁয়। সন্তানদের ভালো থাকা দেখবো তখন দূর থেকেই। মানুষের আত্মারা কি পৃথিবীতে নেমে আসে ? হয়তো শ্রাবণের ভোরের বাতাস হয়ে আমিও আসবো । হাওয়ায় দুলবে কপালে ছড়ানো প্রিয়তমা স্ত্রীর চুল। বুকের কাছে কান নিয়ে শুনবো তার কান্নার মর্মরধ্বনি। আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেব বাড়ির আঙিনা। পৌষের হিম কুয়াশার রুপালি চাদরে জড়িয়ে রাখবো প্রিয় মানুষগুলোকে। দেখবো তাদের প্রতিদিনের হাসি কান্নার জীবন । আমাকে তখন তারা দেখতে পাবেনা , আমি দেখতে পাবো তাদের।

সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১৬

রডোডেনড্রনগুচ্ছ

'..হঠাৎকখন সন্ধেবেলায় নামহারা ফুল গন্ধ এলায়, প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ, উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোডেনড্রনগুচ্ছ।'
এই রডোডেনড্রনকে রবীন্দ্রনাথ অমর করে গেছেন শেষের কবিতায়। দার্জিলিংএর নির্জন পাহাড়ি পথের পাশে রডোডেনড্রন দেখতে দেখতেই লাবণ্যর সঙ্গে অমিত রায়ের পরিচয় ঘটে। অমিত লাবণ্যকে দেখে বিমুগ্ধ হয়, বাড়ি ফিরে এসে নোট-বই নিয়ে লিখতে লাগল “পথ আজ হঠাৎ এ কী পাগলামি করলে। দুজনকে দু জায়গা থেকে ছিঁড়ে এনে আজ থেকে ... পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।
ঠিক দার্জিলিঙের কোনো পাহাড়ী পথে নয়, আমি আর Happy Rahman ২০০৯ সালের শ্রাবনের কোনো একদিনে জলপাইগুড়ির মহানন্দা,ও কালজানি নদীর পাশ পেড়িয়ে চিলাপাতা আর চাপড়ামারির মতো অরণ্য যখন পাড়ি দিচ্ছিলাম তখন রাস্তার দু'পাশে দেখেছিলাম রডোডেনড্রনগুচ্ছের ঝা্ঁর। রডোডেনড্রনগুচ্ছের ঐ ঝা্ঁর দেখে চিত্ত আমাদেরও নেচে উঠেছিলো।মনে হয়েছিলো যেনো---'রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল. পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল,. ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে. দিগঙ্গনার নৃত্য,. হঠাৎ-আলোর ঝল্‌কানি লেগে. ঝলমল করে চিত্ত।'