বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

শামিম আলম দীপেন

শামিম আলম দীপেন। আজ আপনার জন্ম দিন।আজ থেকে পঞ্চান্ন বছর আগে এই দিনে আপনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। জানিনা সেদিন হেমন্তের আকাশ কেমন ছিল। জানিনা কখন কোন্ মায়াময় ক্ষনে আপনি প্রথম কান্না করেছিলেন। হয়তো আকাশ ছিল শুভ্র মেঘে ঢাকা, নয়তো পাতায় পাতায় ছিল পূর্ণিমার রাত। আপনার জীবন এখন বরেন্য,বর্নাঢ্য। কার্ভিকের নবান্নের মতো সুবাসিত। আপনার জীবনের কোন অপূর্নতা নাই। তবুও ---
রবি ঠাকুরের কবিতার দুটো চরন দিয়ে আজকের এই দিনে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
“…জীবনে যত পূজ হল না সারা , জানি হে জানি তাও হয় নি হারা।
জীবনে আজো যাহা রয়েছে পিছে ,জানি হে জানি তাও হয় নি মিছে।…”

শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫

চিপাচসের ৪০ তম জন্মদিন

আজ চিপাচসের ৪০ তম জন্মদিন। আমার অহংকার, আমিও এই সংগঠনটির (  চিপাচস ) সাথে জড়িত ছিলাম। সব আজ নস্টালজিয়া, আবার ফিরে যেতে মন চায় সেই ৩৯ বছর আগের মায়াবি কোন এক বিকেলের রমনা পার্কে,যেখানে মিলিত হয়েছিল একদল সিনেমা আর চিত্রালী পাগল তরুণ। গঠিত হয়েছিল চিপাচস । দীর্ঘজীবী হোক চিপাচস।

শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

নিষিদ্ধ স্টাটাস

হার্ট এ্যাটাকের পর থেকে মনটা কেমন যেন প্রায়ই মনমরা হয়ে থাকে। যদিও ডাক্তারের চিকিৎসায় এখন ভালই আছি। তারপরও মন প্রাণ দুটোই কাঁদে। হার্টের রোগীরা ভালো অবস্থাতেই পৃথিবী থেকে হঠাৎ করেই চলে যায়। আমার কেন জানি মনে হয়, আমার যে কোন সময় বুকে প্রচন্ড ব্যথা উঠবে, আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। আমি আমার প্রিয় মানুসদের অজ্ঞাতসারে এই পৃথিবী থেকে চলে যবো। কিন্তু আমিতো এমনটি চাইনা। আমার আত্মা একাকী ঘর থেকে চলে যাবে,এটা হয়না। আমার মৃত্যুর সময় আমার প্রিয়তমা পত্নী কাছে থাকবে, আমার ছেলে, আমার পিয় দুই মেয়ে আমার কাছেে থাকবে, এইটাইতো চাই। আমার সন্তানেরা কাঁদবে, আমার হাত আমার স্ত্রীর হাতে নিথর হবে, ওর দু'চোখের নোনা জলে ভিজবে আমার ম্লান করুণ মুখখানি । আমি আমার প্রিয় মানুসদের দেখতে দেখতেই এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই যে ।

তোমার হাতের চূড়ি

আমার জন্য, আমাদের সংসারের জন্য, আমার স্ত্রী তার অঙ্গ থেকে একসময় সমস্ত গহনাগুলো খুলে দিয়েছিল আমাকে ।তার বিয়ের দিনের গলার হার,মালা,কানের দুল,হাতের সব চূড়ি,কপালের টিকলি,হাতের অঙ্গুরীয়সহ সমস্ত অভিজ্ঞান আমার হাতে তুলে দিয়েছিল বিক্রয়ের জন্য। বিয়ের দিনের সেই গহনা সাজের আমার স্ত্রীর সরল স্নিগ্ধ মায়াবি মুখছ্ছবি আমার চোখে ভাসতো কেবল। জীবনের অনেকগুলো বছর ছিল কেবলি দীর্ঘশ্বাসের। জীবন ছিল অনেক পরাজিতের আর গ্লানির।
এইতো সেদিন আমার স্ত্রীকে আবার দুটো চূড়ি কিনে দিলাম । আবার দেখলাম ওর মুখে স্নিগ্ধ হাসি। অস্ফুট কন্ঠে শুধু বললো, হাতে চূড়ি পরা থাকলে স্বামীর কোন অমঙ্গল হয়না।

মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫

ডঃ আহমদ শরীফ স্যার

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। ডঃ আহমদ শরীফ স্যার তাঁর প্রথম ক্লাশে আমাদের বঙ্গিম চন্দ্রের দুর্গেশ নন্দিনী পড়াতে আসেন। ক্লাশে ঢুকেই স্যার রসিকতা বলেন, " এ দেখছি ইডেন কলেজ ! " উল্লেখ্য আমাদের ক্লাশে ৮০ জন ছাত্রী ছিল, ছাত্র ছিল মাত্র ৪০ জন।

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

এখন আর সে সব নেই

সে কালে মহালয়ার ভোরে ঘুম ভাঙতো সানাইয়ের সুরে। সেই থেকে পুজার ক’দিন রোজ সকালে সানাইওয়ালা এসে সানাই বাজিয়ে যেত। পুজার কাছাকাছি তখন একটা গন্ধ পেতাম। সেই গন্ধের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল আনন্দ, আবেগ আর উৎসাহ যা একাত্ম হয়ে যেত আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে। এখন আর সে সব নেই। সব বিরান হয়ে গেছে। গত অর্ধ শতাবদীতে প্রায় সবাই চলে গেছে ভারতে।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে

১৯৭২ সাল। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের স্কুল প্রথম খোলে। সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাস হবে। আমি বাগবাটি হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের ক্লাশে প্রায় ষাট জনের মতো ছাত্র ছিলাম। প্রথম দিনের ক্লাশে অনেকেই এসেছে, আবার অনেকে আসে নাই। আমরা সবাই একে অপরের খোঁজ খবর নিছ্ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কে কোথায় ছিলাম, কেমন ছিলাম, কার কি বিপদ হয়েছিল , সেইসব অগ্নিঝরা দিনগুলোর অভিগ্গতার কথা বলাবলি করছিলাম। আমার এক সহপাঠি বন্ধু শুকুর আলিকে খূঁজছিলাম ক্লাশে। শুকুর ক্লাশে নেই। ওর গ্রামের আর একজন ছাত্রের মাধ্যমে জানা গেল,শুকুর মুক্তিযুদ্ধের সময় নৌকাযোগে যমুনা নদী দিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারি হয়ে ভারতের আসামের ধুবুরীর চরে চলে গিয়েছিল। ওখানে মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং গ্রহনকালীন সময়ে ক্যাম্পে কলেরায় আক্কারান্ত হয়ে মারা যায়। এবং সেখানেই ওকে সমাধিস্থ করা হয়। খবরটি শুনে খুব মন খারাপ হয়ে যায়। অঝোর ধারায় কেঁদেছিলাম অনেক।
     শুকুর আলিকে আমি আজো মনে রেখেছি।
"........মুক্তির মন্দির সোপানতলে 
কত প্রাণ হলো বলিদান 
লেখা আছে অশ্রুজলে 
কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা
বন্দীশালায় ঐ শিকল ভাঙা 
তারা কি ফিরিবে আর 
তারা কি ফিরিবে এই সুপ্রভাতে......।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

জীবন যখন শুকায়ে যায়

আজ থেকে তিন বছর আগে এমনি এক স্নিগ্ধ শারদীয় দিবাশেষে রাতে আমার মা না ফেরার দেশে চলে যান। দুপুর থেকেই মা কেমন যেন নিরব হয়ে যায়। মা কোন কথা বলছিলনা কারো সাথে। শুধু তাকিয়ে থাকছিল সবার দিকে। কোন খাবার গ্রহন করতে চায়নি। আসলে মা তখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। সে যে জীবনও নেই, মরনেও নেই। রাত বারোটা পার হয়ে গেছে। মা'র শয্যাপাশে আমি আর আমার ছোট বোন। আমি মা'র পায়ের কাছে বসে আছি, আর আমার বোন মা'র মাথার কাছে বসে। আমি মা'র চোখের দিকেই তাকিয়ে আছি। মা খুব স্নিগ্ধ ভাবে তাকিয়ে দেখছিল আমাকে।
আমি মা'র Puls দেখার জন্য মা'র্ পা ধরলাম। আমার হাতে মা'র নাড়ির স্পন্দন খুব সুন্দরভাবে অনুভব করছিলাম। আমি মনে মনে গুনছিলাম এক দুই তিন চার........ মা'র নাড়ির স্পন্দনে আমার চোখে হাসির ঝিলিক দেখা দেয়,....মা'র চোখের দিকে আমি তাকিয়েই আছি। আর গুনছিলাম নাড়ির স্পন্দন ...পনোর..ষোল..সতেরো....। আমার মুখ মলিন হলো, আমার হাতেই মা'র নাড়ির স্পন্দন থেমে গেল। মা তখনো তাকিয়ে,আছে, মনে হলো শেষ বারের মতো দেখে নিলো তার প্রিয় সন্তানকে। তারপর চিরতরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ঘড়ির কাটায় তখন রাত বারোটা পনেরো মিনিট। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে তখন কেবলই কান্নার শব্দ চারদিকে ধ্বনিত হছ্ছিল ।

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

অপরাজিত

কাল অনেক রাতে ডিডি বাংলায় সত্যজিৎ রায়ের অপরাজিত সিনেমাটি দেখছিলাম। সিনেমাটি এর আগেও বহুবার দেখেছি। যতবারই দেখি মনে হয় যেন এই প্রথম দেখছি।
আর মাত্র চার দিন পর আমার মা’র মৃত্যু দিবস। বাড়িতে যাবো। দেখবো মা কোথাও নেই। মা আমার জন্য জানালার পাশে বসে অপেক্ষায় নেই। আমাকেই যেয়ে দরজা খুলতে হবে। দেখবো সব কিছুতেই ধুলো জমে আছে। মা’র বিছানা, নামাজের স্থান, মা’র আলনাতে, সবখানে ধুলো জমে গেছে।
অপরাজিত দেখে আমাকে কাদঁতে হলো। তাহাজ্জতের নামাজ পড়লাম। প্রার্থনায় নিজের জন্যে, স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছুই চাইলামনা আজ। শুধু মা’র জন্যই আজ প্রার্থনা করলাম, তাঁর জান্নাতের জন্য।

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০১৫

চিপাচস

আজ কয়েকদিন ধরে "চিপাচসে"র কিছু বন্ধুর কথা খুব মনে পড়ছে। বিশেষ করে Facebook-এ বন্ধু দীপেনকে পাওয়ার পর থেকে। সেই ১৯৭৭-১৯৮২ সাল সময়ের কথা। কিছু অসম্ভব সিনেমা পাগল তরুণ চিত্রালী পত্রিকাকে ঘিরে চিপাচস সংগঠনটি গড়ে তুলেছিল। সেই সব তরুণদের মেধা আর মননে , তাদের পরিশ্রমেে আর আন্দোলনে এই দেশে একটি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছিল। যা চলচ্চিত্রের "ডিরোজিও" যুগ বলে পরিচীত ছিলো । এইসব তরুন গুলোর মধ্যে ফজলুর রব স্বপন, চাষী সিরাজ, শামীম আলম দীপেন, শফিউজ্জামান খান লোদী, সৈয়দ শহীদ, খায়রুল আলম, সুশীল সূত্রধর, রানা আশরাফ, দুলাল পাল প্রমুুখ অন্যতম ছিল। এদের অনেকের সাথে আজ কোনো যোগাযগ নেই। জানিনা কেমন আছে তারা। এইসব তরুণদের কয়জনই বা মানুস মনে রেখেছে। অথচ সেই সময়কার চিত্রালীর পাতায় পাতায় এদের নাম লিখা আছে।

অরন্যানী

১৯৭৯-৮০ সালের কথা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কবি জসিমউদ্দীন হলের আবাসিক ছাত্র।পত্র পত্রিকায় কিছু লেখালেখি করি। সেই সুবাদে আমার বেশ ফ্যান তেরী হয়েছিল দেশে বিদেশে। এমনই একজন ফ্যান ছিল আমার, নাম তার চিনু চাকমা। মেয়েটি তখন খাগড়াছরি কলেজে পরতো। খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতো আমাকে। আমিও লিখতাম। চিনু আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল একজন পত্রমিতা হয়ে উঠেছিল। কতো যে রাত জেগে ওকে চিঠি লিখেছি। চিনুকে আমি কোনদিন চোখে দেখিনি,শুধুই চিঠিতেই লিখা। তারপর একদিন সবকিছুই হারিয়ে যায় ।
এই অরন্যানী মেয়েটির কথা আজো মনে পড়ে। এতা বছর পরেও চোখের কোনে জল চিক্ চিক্ করে ওঠে। ( অসমাপ্ত)