বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬

ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু

আপনি যখন আসলেন তখন এ জনপদ ছিলো বিরাণ
ফসলের ক্ষেতগুলো ছিলো চৈত্রের খরার মতো রূক্ষ উজার
খাল বিল নদী ছিলো চৌচির স্রোতহীন
শকুনেরা তখন আকাশে উড়ছে
শুকুরেরা তখন বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে
খুনীরা তখন উল্লুম্ফন করছে দেশ বিদেশে।

আপনি যখন আসলেন তখন দেখলেন রবীন্দ্র সরোবরের জল রক্তে ভাসছে
জনকের রক্ত,জননীর রক্ত,ভাইদের রক্ত,তাতৃ বধুদের রক্ত- সব রক্ত
সরোবরের সাদা কমলের সাথে মিশে এক একটা রক্ত কমল হয়ে আছে
আপনার নিযুত অশ্রু সেদিন ঝরে পড়েছিলো রক্তমাখা কমল কন্ঠের উপর
বাতাসও ভারী হয়ে উঠেছিলো আপনার আর্ত কা্ন্নার দীর্ঘশ্বাসে।

আপনি যখন আসলেন তখন কিছু উর্দি পড়া দানব
বুটের কর্কশ শব্দ তুলে হাটছে এই বাংলার জনপদে জনপথে
রাইফেলের গুলির শব্দে ভয়ে সচকিত হয়ে ওঠে বন অরণ্যের পাখী
ঠিক সেই সময়ে আপনার গলায় পড়িয়ে দেওয়া হলো এক মনিহার
যে মাল্য পড়েছিলেন আপনার প্রিয় জনক
তারপর চলে গেছে পয়ত্ত্রিশ বছর।

এরই মধ্যে অনেক অশ্রুজল মিশে গেছে যমুনা মেঘনা পদ্মার জলে
দানবের চাকায় পিষ্ট হয়েছে সেলিম দেলোয়ারের বুকের পাজর
 বুলেটে ঝাজরা হয়েছে নূর হোসেনের রক্ত মাখা জীবন্ত পোস্টার
রক্ত ঝরেছে মিলনের বুক থেকে, রক্ত ঢেলেছে রাউফুন বসুনিয়া
তারপর প্রিয় আইভির শরীর রক্তে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে।

তারপর আপনি ধরলেন নৌকার হাল
যেনো মরা গাঙ্গে জোয়ার এলো
যেনো পালে লাগলো উদাম হাওয়া
যেনো নদীতে নদীতে লাগলো জল তরঙ্গের ঢেউ
সব খরকুটো সব নোংড়া ভেসে গেলো বঙ্গোপসাগরে
শকুনরা উড়ে চলে গেলো দুর দিগন্তে দিকে।


আপনি কি খুব ক্লান্ত রাখাল রাজার মেয়ে !
আপনি কি একাকী টুংগীপাড়ায় জনকের কবরের পাশে
তসবীহ হাতে প্রার্থনায় থাকতে চান ?
 বনানীতে জননীর কবরের কাছে নিরালে ঝরাতে চান অশ্রু ?
নাকি পীরগঞ্জে প্রিয়তম স্বামীর পাশে যেয়ে প্রিয় স্মৃতি স্মরণে আনতে চান ?

,কোথায় পাবেন শান্তি, শান্তির পায়রা উড়াতে হবে যে আপনাকেই
 লাল সবুজ পতাকা বুকে জড়িয়ে বলেন- 'ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু।'














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন