রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭

যেতে যেতে পথে

ঈদের পরে, না হলে অক্টোবরে বাড়ী যাবো। মা মরে যাবার পর তেমন বাড়ী যাওয়া হয়না। গত পাঁচ বছরে গিয়েছি মাত্র দুই বার। মা বেঁচে থাকতে প্রায়ই যেতাম। বিমানবন্দর স্টেশন থেকেই ট্রেনে উঠবো। হ্যাপিকেও সাথে নিয়ে যাবো। ওকে যখন আগে বাড়ী নিয়ে যেতাম, তখন লাল রঙ্গের শাড়ী পড়িয়ে নিয়ে যেতে হতো। মা পছন্দ করতো লাল রঙ্গের শাড়ী।এখন মা নেই। তাই কোনো বাধ্য বাধকতাও নেই। মৌচাক স্টেশনে যদি ট্রেনটা আধা ঘন্টা থেমে থাকে, তবে ভালো হতো। পাশে শালবন থেকে একটু হেটে আসা যেতো। প্লাটফরমে চা'র দোকানে কাঠের বেঞ্চিতে বসে দুজন চা'ও খেতে পারতাম।

যমুনায় ব্রীজের উপর দিয়ে যখন ট্রেন পার হয়, তখন আশ্চর্য রকম শিহরণ লাগে। ট্রেনের জানালা খুলে ভরা যমুনার অথৈ জল দেখতে খুব ভালো লাগে । অনেক দূর পর্যন্ত দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখা যায়। ট্রেন পার হয়ে পশ্চিম পাড়ে গেলেই  গ্রামগুলো কাছে চলে আসে।

এই নদী আমাকে ডাকে,ঐ দিগন্ত জোড়া জলধীতে
পরাণ আমার ডুবে যেতে মন চায়,
ঐ যে ওপারের গ্রাম, জামরল গাছের নীচে
আমরা খেলেছিলাম কতো ডাংগুলি,
ট্রেনের টিকেট কেটে চলে যেতাম পাকসী
পদ্মার ঢেউ দেখতাম,আর দেখতাম
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের লোহার খাঁচাগুলি।


সয়দাবাদ স্টেশনে নেমে রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে আমাদের বাড়ী যাওয়া যায়। আমরা রিক্সাতেই যাই। রিক্সার হুড নামিয়ে পথ চলতে ভালো লাগে। রাস্তার দু'পাশের সারিবদ্ধ গাছের ছায়াতল দিয়ে রিক্সা চলতে থাকে। আমরা দেখি ফসলের ক্ষেত, ছোট ছোট খাল ডোবা আর পুকুর। গাছে গাছে ঘুঘুদের ডাক শোনা যায়।

শৈলাভিটা নদীর কাছে গেলেই যতো নস্টালজিয়া। এই নদীতে একসময় অনেক জল থাকতো। এখানে খেয়া পারাপার হতো। প্রায়ই বোষ্ঠুমীদের গানের আসর বসতো নদীর কুলে। গান শুনতে শুনতে কতো খেয়া যে মিস করেছি। এখন এখানে খেয়া নৌকা নেই। কংক্রীটের বিশাল ব্রীজ। নীচে ধূধূ বালুচর। খরস্রোতা জলও নেই। এখন আর কোনো বোষ্ঠুমীদের গান শোনা যায়না।

তারপর আর বেশী পথ নেই। ছোনগাছা বাজার থেকে মেঠো পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। মন প্রফুল্ল হয় ফসলের গন্ধ নিয়ে। হ্যাপি মাথায় বড়ো করে ঘোমটা টেনে নেয়। সে যে তার শ্বশুর বাড়ীর গাঁয়ের পথে হাটছে।

এই পথে চলতে পা যে এখন অবশ হয়ে আসে,
জানালার পাশে মা আর বসে থাকেনা
কখন আসবে তার খোকা ঢাকা শহর থেকে
মলিন মুখ তার অনেক আগেই
আকাশের মেঘে মেঘে মিশে গেছে-
বাড়ী যেতে মন চায়না আর, এতো ধূলি পথে !
চোখের নীচে কেবল অজস্র ক্রন্দণ ।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন