শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭

ষণ্ডা

আশুলিয়া রোডের ধউর থেকে মিরপুরে যাওয়ার বেড়ী বাঁধের রাস্তাটি তখন সবে মাত্র চালু হয়েছে। একদিন সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে মিরপুরে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজি ঠিক করি । ড্রাইভার আমাকে বলে- 'স্যার,বেড়ী বাঁধ দিয়ে নিয়ে যাই, তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। রাস্তায় জ্যাম হবেনা।' আমি বললাম-'যাও'। কামারপাড়া পেরুনোর পরেই দেখতে পাই- আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে । ধউর পেরিয়ে  সিএনজি তখন মিরপুরের দিকে চলছে। চারদিকে কেমন জনমানব শূণ্য। দু'একটা টেম্পু মাঝে মাঝে চলতে দেখা যায় । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে । মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কিছু দুর যাওয়ার পর সিএনজি একটি পিটেসরা গাছের নীচে হঠাৎ থেমে যায়। আলো আধারিতে দেখতে পাই- দুটো মাস্তান টাইপের ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বলে- 'আয়াজ আলী ভাইরে কি আপনি চিনেন ?' আমি বুদ্ধি করে বললাম- চিনবো না মানে ? ও তো আমার ভাগিনা হয়।' মাস্তান ছেলে দুটো আমার কাছে আর কোনো কিছু চায়না। ওরা ড্রাইভারকে বলে দেয়- 'এই-,মামুরে ঠিকমতো পৌঁছে দিবি। কোনো অসুবিধা যেনো না হয়।'

সিএনজি পুণরায় চলতে থাকে। তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর সিএনজি আবার থেমে যায়। দেখি সামনে একটি মেয়ে দাড়ানো। সে বৃষ্টিতে ভিজছে। পরনে তার সালোয়ার কামিজ। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখে মনে হলো,মেয়েটি মোটামুটি ভালো ঘরেরই হবে। দেখতেও সুশ্রী। সে বলছে-' আমাকে একটু মিরপুরে পৌঁছে দিবেন। কোনো গাড়ী পাচ্ছিনা।' আমি বিব্রত হই এবং 'না' বলি। মেয়েটি আবার কাঁদো কাঁদো করে বলতে থাকে- 'আপনার ছোট বোন যদি এই রকম বিপদে পড়ে, তখন তার কি উপায় হতো।' আমি মেয়েটিকে সিএনজি তে উঠায়ে নেই।

বৃষ্টি আরো জোরে শুরু হয়েছে। মেঘ ডাকছে। সিএনজি চলছে। হঠাৎ মেয়েটি বলে ওঠে- 'টাকা পয়সা যা আছে দিয়ে দেন। নইলে চিৎকার করবো, এবং বলবো- আপনি আমার ইজ্জত মেরেছেন। আয়াজ আলী ভাইয়ের লোকেরা আশে পাশেই আছে। তারা এসে আপনাকে ঘেরাও করবে।' আমি কিছু বলবার আগেই ড্রাইভার সিএনজি থামিয়ে দেয়। এবং মেয়েটিকে বলে- ' নেমে পড়ো তুমি, কারে কি বলছো- ইনি হচ্ছে আয়াজ আলী ভাইয়ের মামু।' মেয়েটি তখন ভয়ে আমার কাছে মাপ চেয়ে নেমে চলে যায়।

সিএনজি আবার চলতে থাকে। মেঘ গর্জন করছে । প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বাতাসের দুলুনিতে সিএনজি চলতে পারছিলোনা। মিরপুর চিড়িয়াখানা বরাবর পশ্চিম পার্শ্বে বেড়ীবাঁধের উপর একটি কড়ই গাছের তলায় সিএনজি থামাতে বলি । সিএনজি ঝড়ে উড়ে যাবে, এই ভয়ে আমি রাস্তার উপর নেমে পড়ি এবং কড়ই গাছের গোড়ায় বসে থাকি। মুশুলধারে বূষ্টি হচ্ছিলো তখন। সাথে প্রায় ঘন্টায় সত্তর মাইল বেগে ঝড় । বিকট শব্দ করে বজ্রপাতও হচ্ছিলো। সারাদিন ভ্যাপসা গরম ছিলো। গরমে অসহ্য একটা ভাব ছিলো। বৃষ্টি এবং ঝড়কে দেখে মনে হলো আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বৃ্ষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগছিলো। শীতল হয়ে উঠেছিলো আমার প্রাণ। ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাতকে আমি দারুণভাবে উপভোগ করছিলাম।

ঝড় একসময় থেমে যায়। সিএনজিটি মিরপুর ৬নং সেকসনে আমার বোনের বাসার সামনে গিয়ে থামে। জুবুথুবু এরকম অবস্থা দেখে প্রথমেই বোন তোয়ালে দিয়ে আমার মাথা মুছে দেয়। পাশে ভাগিনা দাড়ানো ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি- 'এই আয়াজ আলী কেরে, তুই চিনিস নাকি ?' ভাগিনা তখন বলে- 'মামা,চিনবোনা,মানে ? ওতো মিরপুরের একটা ষণ্ডা।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন