শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

লক্ষ্মীজান

নতুন বিয়ে করে প্রথম গ্রামের বাড়ী গিয়েছি।তখন আষাঢ়ের প্রথম সময়কাল।তখনো বর্ষার জল খাল বিলে আসেনি।কিন্তু প্রমত্ত যমুনা ফুলে ফেঁপে উঠেছে।নতুন বউয়ের ইচ্ছা হলো যমুনা নদী দেখবার।

ভাটপিয়ারী আমার মামাদের গ্রাম।মামার বাড়ীর পাশ দিয়ে যমুনা বয়ে চলেছে। হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গে  তখন ধবল মেঘ পুঞ্জের ঘনঘটা, জিমা ইয়ংজং হিমবাহে তখন হিমেল হাওয়া।মানস সরোবরের উত্তাল তরঙ্গমালা ব্রহ্মপুত্র হয়ে যমুনাকেও উত্তাল করে তুলেছে। 

আমরা দু'জন মামা বাড়ীতে।সেদিন ছিলো পূর্ণিমার সন্ধ্যা রাত।বাড়ীর সামনে বাঁশ ঝাড়ের অর্ধেক ভেঙ্গে গেছে নদীতে।পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলছে যমুনার জলে।আমরা নদীর খুব কাছে চলে যাই।কুলে উচুঁ মাটির ঢিপির ঘাসের উপর দুজন যেয়ে বসি। থর থর করে নদীর জলের শব্দ হচ্ছে।আশে পাশে থেকে পার ভেঙ্গে পডছে জলে।এক মোহনীয় স্রোতের শব্দে ভাসছে যমুনা। সন্ধ্যার জ্যোৎস্নায় কেঁপে ওঠে আমাদের হৃদয়।মনে হচ্ছে হিমালয়ের গিরি শৃঙ্গ থেকে জল ঝরছে মানস সরোবরে।

পাগল কাড়া চাঁদের আলোয় দেখলাম ওর মুখ।স্নিগ্ধ মায়াবী এক হাসি দেখতে পেলাম সে মুখে।আমার হাত কখন সে ছেড়ে দিয়েছিলো,জানি নাই।মুহূর্তেই পার ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাই।মাটি ধ্বসে পড়া শব্দের সাথে যমুনার জল ঝলসিয়ে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ।পাশে ফিরে দেখি সে নেই।প্রমত্তা যমুনার জল তাকে ভেসে নিয়ে গেছে।

আজ থেকে অনেক বছর আগে আমার ছোটো ফুপু লক্ষ্মীজান'কে ঠিক এমনি এক পূর্ণিমা রাতে প্রমত্তা যমুনা কেড়ে নিয়ে গিয়েছিলো।এটি তারই একটি স্টাটাস রূপ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন