রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কুসুম

একটি রিসার্স প্রজেক্টে কাজ করতে কুসুম ঢাকা এসেছিলো ।সাময়িক চাকুরী।ও আমার সহকর্মী ছিলো।গত সপ্তাহে কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে গেছে। তাই চাকুরী আর নেই। আজ সে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে।জানালার পাশে বসে থাকা কুসুমের বিষন্ন চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে । ট্রেনের চাকার খট্ খট্ কর্কশ আওয়াজ দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে সামনের সমান্তরাল পথের দিকে।কুসুমের চোখ আর দেখা গেলোনা।এই শহর ছেড়ে কুসুম চলে গেলো।

কতোক্ষণ প্লাটফরমে একাকী হাটছিলাম।কেমন যেনো উদাস লাগছিলো।পাশে অদূরে একটি চা'র দোকানে গিয়ে বসি।এক কাপ লাল চা খাই।তারপর সিগারেট ধরাই।পাশে কেউ ছিলোনা।ধূয়াগুলো মিলিয়ে দিচ্ছিলাম- শুন্য প্লাটফরমের দিকে।

স্টেশন থেকে পথে নেমে পড়ি।প্রখর রোদ্রে হেটে হেটেই মুগদাপাড়ায় মেসে চলে আসি।মনটা ভালো লাগছিলোনা।বিছানায় সোজা শুয়ে পড়ি।টেবিলের উপর রাখা ডাইরীটার উপর চোখ যায়।একবার প্রজেক্টের কাজে নেত্রকোনা'র বারোহাট্রা গিয়েছিলাম।কংস নদীর পাড়ে এক নিরিবিলিতে আমার ডায়েরীটা নিয়ে কুসুম লিখেছিলো-
'তুমি আমাকে পূর্ণ করো।আমাকে পূর্ণ করবেনা অন্য কেউ।আমাকে তুমি স্বপ্ন দেখাও। যে স্বপ্ন ভাঙ্গতে পারবেনা কেউ।আমি বসে থাকি তোমার পথের দিকে।তোমার সাথে পথ চলবো।,সে পথ চলা বন্ধ করতে পারবেনা কেউ।আজকের এই কংস নদীর জলকে সামনে রেখে বলছি- আমি তোমাকে ভালোবাসি।'এই ভালোবাসাও কেড়ে নিতে পারবেনা কেউ।'

একদিন দুইদিন যায়।সময় কাটতে চায়না।সব চেনা পথগুলো ফাঁকা ফাঁকা লাগে।দুটো টিউশনী করি।বিকেল হলে একাকী স্টেশনের প্লাটফরমে ঘুরে বেড়াই।কখনো অসময়ে ঘুমিয়ে থাকি।কখনো সারারাত জেগে থাকি।মাঝে মাঝে ভাবি,কুসুম আমার কি না হতে পারতো।ওকে কেন যেতে দিলাম।রেখে দিতাম আমার উদ্বাস্ত জীবনের কাছে।
                                                                                                                                                       একটি কোম্পানীতে পণ্য মার্কেটিং-এর চাকুরী পাই।প্রথম দিনেই সহকর্মী মালতী নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।যেনো কুসুম। সেই চোখ,সেই চুল,সেই স্মিত হাসি।সেই ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠা। সেই পুরানো প্রেম ফিরে পাওয়া।কুসুমকে নিয়ে যে পথগুলো দিয়ে হেটেছিলাম,সে পথ দিয়েই মালতীকে নিয়ে হাটি। পার্কে যে বেঞ্চে কুসুমকে নিয়ে বসে থেকেছি সেই বেঞ্চেই মালতীকে নিয়ে বসে থাকি।মালতীর ভালোবাসাগুলোও কুসুমের মতোই।সেই একই শরীরের গন্ধ,আলিঙ্গনের উষ্ণতা একই,চুম্বনের মাধূর্যও একই।



এক অগ্রহায়ানে মালতী আর আমার বিয়ের সানাই বেজে ওঠে। আমার পরনে শেরওয়ানী,মাথায় কারুকার্য খচিত টুপি,ওদিকে মালতীর পরনে লাল বেনারশী শাড়ি।সিঁথিতে টিকলী বাঁধা।গালে কপালে আবির মাখা সাঁজ।যখন আমার পাশে মালতীকে বসানো হলো,তথন একবার তাকালাম মালতীর দিকে। দেখি এ যেনো সেই কুসুম।সেই মায়াবী চোখ,সেই আনত ললাট। চারদিকে কতো আনন্দ, কতো হৈহুল্লুর, কতো গান বাজচ্ছিলো । সব গান ছাপিয়ে এই গানটি কানে বাজছিলো:- ''প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে। চারি দিকে হাসিরাশি, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে।''





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন