সিরাজগঞ্জে শহীদ মনসুর আলী স্টেশন থেকে সিল্কসিটি ট্রেনে ঢাকা আসছিলাম।আমার পাশের সিটে মধ্য বয়সী এক বিদেশী বসা ছিলো।প্রাথমিক পরিচয়ে যতোটুকু জানতে পারি- ওর নাম পল এ্যান্ডারসন। সে একজন ধর্ম যাজক এবং পরিব্রাজক।অনেকটা ক্যারাভান লাইফ তার,যাযাবরীয় জীবন করে। গিয়েছিলো দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দির দেখতে। সেখান থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাট। সোনা মসজিদ দেখে এখন ঢাকার পথে। তারপরে যাবে রেঙ্গুন।
সিল্কসিটি ধীরে ধীরে যমুনা অতিক্রম করছিলো।তখন বর্ষার সময় ।জেগে থাকা চরগুলো জলে ডুবে গেছে।সারা যমুনার বুক জুুড়ে জল থৈথৈ করছে।সাগরের মতো লাগছে যমুনাকে।ওপারের কোনো কূল কিনারা দেখা যায়না।ট্রেনের জানালা দিয়ে পল বিস্ময়ে দেখছিলো যমুনা নদী !
পল : তোমাদের এই নদীটির নামই তো যমুনা ?
আমি: হ্যাঁ, এইটিই যমুনা নদী।
পল: খুবই সুন্দর একটি নদী। ঐ যে দূরে পানি আর পানি দেখছি। তারপরে কোন শহর বা গ্রাম আছে ?
আমি: ঐ জলের ওপারে কোনো শহর নেই, নদীর কূল ঘেসে আছে শুধূ গ্রাম আর ফসলের ক্ষেত।
পলের সাথে এইভাবেই কথা বলতে থাকি।ট্রেনটি ইতোমধ্যে যমুনা পার হয়ে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।মির্জাপুর পর্য্ন্ত যেতে যেতে পল সম্বন্ধে যতোটুকু জানতে পারি- পলের জন্ম আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের হার্স্ট শহরে।ওর মা ছিলো বার্মিজ।পলের বাবা চাকুরী সূত্রে রেঙ্গুনে থাকাকালীন সময়ে পলের মা'র সাথে প্রণয় হয় ও পরবর্তীতে বিয়ে হয়।পলের বাবা'র পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিলো বোম্বে।আর পলের কৈশরকাল কাটে এই ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতেই। এই নগরীতেই পলের মায়ের অকাল মৃত্যুও হয়।
ট্রেনটি মির্জাপুর স্টেশনে থেমে আছে।জানতে পারি, অন্য আর একটি ট্রেন এখানে ক্রসিং হবে।ট্রেনটি ছাড়তে দেরী হবে দেখে আমি আর পল স্টেশনে নেমে প্লাটফর্মের উপর দিয়ে হাটছিলাম।
আমি : পল, তারপরের কথা বলো।
পল: আমার য়য়স যখন নয় বছর তখন বাবা হার্স্টে চলে আসে।এমনই দূর্ভাগ্য যে, আমার বাবা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সে বছরেই।
আমরা যেয়ে একটি চা'র দোকানে বসি।দু'জন দুই কাপ চা খেলাম।পলই আমাকে সিগারেট অফার করে।সিগারেট খেতে খেতে বলছিলাম- পল এবার তোমার ঘর সংসারের কথা কিছু বলো।
পল: আমার স্ত্রী একজন আইরিশ মেয়ে। সে এখন ডাবলিনে থাকে।বিচ্ছিন্ন জীবন।ওর কাছে আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে।নাম মিলিশা।
পল ওর মানি ব্যাগ থেকে ওর মেয়ের একটি ছবি বের করে আমাকে দেখায়।ফুটফুটে পরির মতো দেখতে ওর মেয়ে।
দেখলাম- পল আরো একটি সিগারেট ধরিয়ে টানছে। ঢাকার দিক থেকে আসা ট্রেনটি স্টেশনে এসে দাড়ায়। আমরা যেয়ে আমাদের ট্রেনে উঠে পড়ি।
ট্রেনটি যখন রাজেন্দ্রপুর বনাঞ্চল অতিক্রম করছিলো- দেখি বনারণ্যের গভীরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পল।আমি পলকে ডাকি - 'পল ?'
পল: জ্বী, কোয়েল।
আমি: তুমি তো এখন অনেক নিঃসঙ্গ ! তোমার সময়গুলো কি ভাবে কাটাও ?
পল: এই তো ধর্ম কর্ম করছি। দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর পথে পথে একাকী হাটছি। বিভিন্ন উপাসানালয়ে ঘুরে বেড়াই।বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ মানুষের সাথে কথা বলি। আমার ধর্মের বাণী অন্য মানুষদের শোনাই।কাল চলে যাবো রেঙ্গুনে। মাতামহ ও মাতামহীর গ্রেবইয়ার্ডে যাবো।তাদের জন্য প্রার্থনা করবো। ওখানকার বৌদ্ধ উপাসানালয়গুলো ঘুরবো। এইতো এইভাবেই জীবন চলছে।এই ভাবেই সময় কাটাই।
আামাদের ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে। কখন টঙ্গী চলে এসেছে বুঝতেই পারি নাই। আমি পলকে বললাম- 'সামনে বিমান বন্দর স্টেশনে আমি নেমে যাবো।' আমি পলকে শেষ যে প্রশ্নটা করলাম,তাহলো- ''পল,তুমিতো পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছো,কোন দেশে বা কোথায় তোমার মরতে ইচ্ছা করে ? '' আমার এ ্প্রশ্ন শুনে,পলের মুখটা বিষন্ন হয়ে গেলো।চোখ দু'টো কেমন যেনো ভারী হয়ে উঠলো।
পল : তোমাদের ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতে আমি মরতে চাই ।ওখানে আমার শৈশব ও ছেলেবেলা কেটেছে।ওখানকার আকাশ বাতাস এখনো আমাকে টানে।আরব সাগরের তীরে ছোটোবেলায় আমার হাতধরে বাবা মা কতো ঘুরেছে। আমার মায়ের সমাধিস্থল ঐ শহরেই। ঐ শহর আমাকে ডাকে।ঐ আরব সাগরের তীরে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।মেরিন ড্রাইভ রোডের আমাদের ছোট্ট বাড়ীটার কথাও মনে পড়ে।
ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে বিমান বন্দর স্টেশনে এসে থেমে যায়।আমি পলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়ি।
বিদায় মুহূর্তে পলকে বলেছিলাম- তোমার সাথে আমার আর কি দেখা হবে কখনো ? পল বলেছিলো- হহতো হবে,এই পৃথিবীর কোনো এক পথে। এই রকমই কোনো এক ট্রেনে।
সিল্কসিটি ধীরে ধীরে যমুনা অতিক্রম করছিলো।তখন বর্ষার সময় ।জেগে থাকা চরগুলো জলে ডুবে গেছে।সারা যমুনার বুক জুুড়ে জল থৈথৈ করছে।সাগরের মতো লাগছে যমুনাকে।ওপারের কোনো কূল কিনারা দেখা যায়না।ট্রেনের জানালা দিয়ে পল বিস্ময়ে দেখছিলো যমুনা নদী !
পল : তোমাদের এই নদীটির নামই তো যমুনা ?
আমি: হ্যাঁ, এইটিই যমুনা নদী।
পল: খুবই সুন্দর একটি নদী। ঐ যে দূরে পানি আর পানি দেখছি। তারপরে কোন শহর বা গ্রাম আছে ?
আমি: ঐ জলের ওপারে কোনো শহর নেই, নদীর কূল ঘেসে আছে শুধূ গ্রাম আর ফসলের ক্ষেত।
পলের সাথে এইভাবেই কথা বলতে থাকি।ট্রেনটি ইতোমধ্যে যমুনা পার হয়ে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।মির্জাপুর পর্য্ন্ত যেতে যেতে পল সম্বন্ধে যতোটুকু জানতে পারি- পলের জন্ম আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের হার্স্ট শহরে।ওর মা ছিলো বার্মিজ।পলের বাবা চাকুরী সূত্রে রেঙ্গুনে থাকাকালীন সময়ে পলের মা'র সাথে প্রণয় হয় ও পরবর্তীতে বিয়ে হয়।পলের বাবা'র পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিলো বোম্বে।আর পলের কৈশরকাল কাটে এই ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতেই। এই নগরীতেই পলের মায়ের অকাল মৃত্যুও হয়।
ট্রেনটি মির্জাপুর স্টেশনে থেমে আছে।জানতে পারি, অন্য আর একটি ট্রেন এখানে ক্রসিং হবে।ট্রেনটি ছাড়তে দেরী হবে দেখে আমি আর পল স্টেশনে নেমে প্লাটফর্মের উপর দিয়ে হাটছিলাম।
আমি : পল, তারপরের কথা বলো।
পল: আমার য়য়স যখন নয় বছর তখন বাবা হার্স্টে চলে আসে।এমনই দূর্ভাগ্য যে, আমার বাবা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সে বছরেই।
আমরা যেয়ে একটি চা'র দোকানে বসি।দু'জন দুই কাপ চা খেলাম।পলই আমাকে সিগারেট অফার করে।সিগারেট খেতে খেতে বলছিলাম- পল এবার তোমার ঘর সংসারের কথা কিছু বলো।
পল: আমার স্ত্রী একজন আইরিশ মেয়ে। সে এখন ডাবলিনে থাকে।বিচ্ছিন্ন জীবন।ওর কাছে আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে।নাম মিলিশা।
পল ওর মানি ব্যাগ থেকে ওর মেয়ের একটি ছবি বের করে আমাকে দেখায়।ফুটফুটে পরির মতো দেখতে ওর মেয়ে।
দেখলাম- পল আরো একটি সিগারেট ধরিয়ে টানছে। ঢাকার দিক থেকে আসা ট্রেনটি স্টেশনে এসে দাড়ায়। আমরা যেয়ে আমাদের ট্রেনে উঠে পড়ি।
ট্রেনটি যখন রাজেন্দ্রপুর বনাঞ্চল অতিক্রম করছিলো- দেখি বনারণ্যের গভীরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পল।আমি পলকে ডাকি - 'পল ?'
পল: জ্বী, কোয়েল।
আমি: তুমি তো এখন অনেক নিঃসঙ্গ ! তোমার সময়গুলো কি ভাবে কাটাও ?
পল: এই তো ধর্ম কর্ম করছি। দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর পথে পথে একাকী হাটছি। বিভিন্ন উপাসানালয়ে ঘুরে বেড়াই।বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ মানুষের সাথে কথা বলি। আমার ধর্মের বাণী অন্য মানুষদের শোনাই।কাল চলে যাবো রেঙ্গুনে। মাতামহ ও মাতামহীর গ্রেবইয়ার্ডে যাবো।তাদের জন্য প্রার্থনা করবো। ওখানকার বৌদ্ধ উপাসানালয়গুলো ঘুরবো। এইতো এইভাবেই জীবন চলছে।এই ভাবেই সময় কাটাই।
আামাদের ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে। কখন টঙ্গী চলে এসেছে বুঝতেই পারি নাই। আমি পলকে বললাম- 'সামনে বিমান বন্দর স্টেশনে আমি নেমে যাবো।' আমি পলকে শেষ যে প্রশ্নটা করলাম,তাহলো- ''পল,তুমিতো পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছো,কোন দেশে বা কোথায় তোমার মরতে ইচ্ছা করে ? '' আমার এ ্প্রশ্ন শুনে,পলের মুখটা বিষন্ন হয়ে গেলো।চোখ দু'টো কেমন যেনো ভারী হয়ে উঠলো।
পল : তোমাদের ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতে আমি মরতে চাই ।ওখানে আমার শৈশব ও ছেলেবেলা কেটেছে।ওখানকার আকাশ বাতাস এখনো আমাকে টানে।আরব সাগরের তীরে ছোটোবেলায় আমার হাতধরে বাবা মা কতো ঘুরেছে। আমার মায়ের সমাধিস্থল ঐ শহরেই। ঐ শহর আমাকে ডাকে।ঐ আরব সাগরের তীরে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।মেরিন ড্রাইভ রোডের আমাদের ছোট্ট বাড়ীটার কথাও মনে পড়ে।
ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে বিমান বন্দর স্টেশনে এসে থেমে যায়।আমি পলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়ি।
বিদায় মুহূর্তে পলকে বলেছিলাম- তোমার সাথে আমার আর কি দেখা হবে কখনো ? পল বলেছিলো- হহতো হবে,এই পৃথিবীর কোনো এক পথে। এই রকমই কোনো এক ট্রেনে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন