শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

শেষ বিকেলের কথা

রাতে খাবারের পর কেমন যেনো আলস্য লাগছিলো।শুয়ে ছিলাম বালিশে মুখ গুজে।ভালো লাগছিলোনা।উঠে তাই ছাদে চলে আসি।ছাদের এককোনে আমি দাড়িয়ে আছি।আজ আকাশে চাঁদ নেই।ছড়ানো ছিটানো আছে কয়েকটি তারা।আমার পরনে টি-সার্ট এবং ট্রাউজার্স।একটা সিগারেট ধরাই।সিগারেট টানছিলাম আর ভাবছিলাম আজকের শেষ বিকেলের কথ।সিগারেটের ধূয়ার টানে মনটা চলে গেল- বিকালে পার্কের সেই বিবর্ণ সময়ের কাছে ।

দু'টো প্রজাপতি একটাই গোলাপের উপর বসে আছে।পাশে আরো গোলাপ আছে,আরো আনেক ফুল আছে।সেখানে কোনো প্রজাপতি নেই।একটি ফুল থেকেই দু্'টো প্রজাপতি সুবাস নিচ্ছে।ওরা মধুরাক্ষী কিনা জানিনা।এই অপূর্ব মোহনীয় দৃশ্যটি দেখছিলাম আমি আর পাঁপড়ি।

পাঁপড়ি আমার সহপাঠী।আমাদের ক্লাশ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো।আজকে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেলো।ক্যাম্পাসকে বিদায় জানিয়ে এসেছি।কাল থেকে কেউই আমরা ক্যাম্পাসে থাকবোনা।সেমিনার কক্ষে কতো ছাত্র বসে থাকবে,আমরা সেখানে থাকবোনা।ক্যান্টিনে আর চা'র কাপে ঝর উঠবেনা।লাইব্রেরী বারান্দায় বসে আর কোনো আড্ডাও হবেনা।

আমার আর পাঁপড়ির এইসব নিয়ে এমনিতেই মন খারাপ ছিলো।তারপরেও আজকের এই শেষ বিকালটা কাটানোর জন্য পার্কে চলে আসি।এসেই প্রজাপতিদের ঐ মোহনীয় দৃশ্যটি দেখতে পাই। এলোমেলো ভাবে হাটছিলাম দু'জন।এক সময় লেকের পারে ঘাসের উপর যেয়ে বসি।পাঁপড়ি কালকেই চলে যাবে দেশের বাড়ী। ওর বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে আছে।অপেক্ষা ছিলো শুধু পরীক্ষা শেষ হবার।পাঁপড়ি বলছিলো- তুমি যাবেনা আমার বিয়েতে ?
আমি :  তুমি বললে অবশ্যই যাবো।
পাঁপড়ি মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো- তুমি অবশ্যই যাবে।
আমি:  যাবো। কিন্তু কোনো কারণে যদি না যেতে পারি -

আমি আমার ঝুলানো কাপড়ের ব্যাগ থেকে রবীন্দ্রনাথের 'গীতবিতান' বইটি বের করি। পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে এই গানটি চোখে পড়ে-

'অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে 
কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে 
সে কি তোমার মনে আছে তাই শুধাতে এলেম কাছে–
রাতের বুকের মাঝে মাঝে তারা মিলিয়ে আছে সকল খানে।'

গীতবিতানের প্রথম পাতায় লিখি- ' তোমার শুভ দিনে আমার এই শুভাশীষ '।নীচে আমার নাম ও তারিখ লিখি। তারপর বইটি পাঁপড়ির হাতে দিয়ে বলি- সেদিন যদি কোনো কারণে তোমার বিয়েতে না যেতে পারি, তোমার জন্য আমার এই গীতবিতান।

বইটি আমার হাত থেকে নিতেই দেখি পাঁপড়ির মুখ।মহুয়া গাছের ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদ এসে মুখে পড়েছে।লেকের নিস্তব্ধ জলের মতো চোখ বিনম্র হয়ে আছে। উদ্ভান্ত বাতাসে কড়ই গাছ থেকে তখন মরা পাতা ঝরঝর করে ঝরে পডছে।কি কথা যেনো বলতে চেয়েছিলো পাঁপড়ি কিন্তু আর বলতে পারেনি। দেখলাম-পাঁপড়ি কাঁদছে। 



Options











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন