রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭

দান

অনেক বছর আগের কথা। একটি সরকারী প্রকল্পের মূল্যায়নের কাজে বাগেরহাট গিয়েছিলাম। এক ছুটির দিনে ইচ্ছা হলো খান জাহান আলীর মাজার যিয়ারত করবার।
বাগেরহাট সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খানজাহান (রহ:) এর মাজার শরীফ।আমি বাগেরহাট থেকে ট্রেনে খান জাহান আলী স্টেশনে নেমে সুপারী আর নারিকেল গাছের সারি বেস্টিত পথ ধরে মাজার প্রাঙ্গনের দিকে হেটে যাচ্ছিলাম।মাঝারে ঢুকবার আগেই পথের উপর একটি পা্ঁচ টাকার নোট পড়ে থাকতে দেখি।ছোটো বেলায় মা বলেছিলো- 'পড়ে পাওয়া টাকা পয়সা ফকির মিসকিনদের দিয়ে দিতে হয়।' আমি পাঁচ টাকার নোটটি হাতে তুলে নেই।এবং হাটতে থাকি মাজারের দিকে। মাজার প্রবেশের আগেই এক বৃদ্ধা ভিখারিনীকে দেখতে পাই।সে একটি গাছ তলায় বসে ভিক্ষার হাত পাতছে।সত্যিই হত দরিদ্র সে।দেখে মনে হলো অভুক্ত,সারাদিন কিছু খায়নি।আমি কুড়িয়ে পাওয়া সেই পাঁচ টাকার নোটটি তাকেই দিলাম এবং বললাম- এটা দিয়ে তুমি কিছু খেয়ে নিও।বৃদ্ধা পরম খুশীতে আমার হাত তার বুকের কাছে টেনে নিয়ে আমাকে দোয়া করে দিলেন।
মাজার যিয়ারত করে ঘন্টাখানেক পর ঐ পথেই স্টেশনের দিকে ফিরছিলাম।সেই ভিকারিনীকে আবার চোখে পড়লো। দেখলাম- সে এক বালকের সাথে কি যেন কথা বলছে। একটু এগিয়ে যাই, কিন্তু এ কি ! আট নয় বছরের বালকটি এতো অঝোরে কাঁদছে কেন? আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কি-ই বা বলছে সেই বৃদ্ধাকে ! আরও একটু কাছে এগিয়ে গেলাম।কানে এলো বালকটির দুঃসহ কাতরোক্তি। ছেলেটি বার বার বলছে,পাঁচ টাকার নোটটি সে হারিয়ে ফেলেছে।কথাায় আরো বুঝতে পারলাম,বালকটি বৃদ্ধার নাতি হয়।ওকে পা্ঁচ টাকা হাতে দিয়ে খাবার কিনতে পাঠিয়েছিলো ঐ বৃদ্ধাই।এবং ঐ বালক তা পথে হারিয়ে ফেলে।
দুঃখে কাতর সেই বালক ও বৃদ্ধার কাছে এগিয়ে যেতে গিয়েও আমি আর গেলাম না। অনেকটা দ্বিধার কারণে বলা হলোনা যে,,ঐ টাকা আমিই কুঁড়ে পেয়েছিলাম।একটু আগে আমি যে দান করেছিলাম,আমার সে দানের মহিমা যেন মুহূর্তেই ধুলোয় মিশে গেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন