শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

অহংকার ছিলো যৌবনের

তোকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম,অহংকার ছিলো যৌবনের
অহংকারে হেটেছিস তোর বাড়ীর উঠানে
কাঁদা লাগাসনি পায়ে,জলে ভিজাসনি শাড়ি
বলেছিলাম তোকে- বু্ঁনো জ্যোৎস্নায় স্নান করতে এক সাথে
তুই খুলেসনি শাড়ি,খুলেসনি অন্তর্বাস,
কিসের এতো অহংকার ছিলো তোর ?

যৌবনতো শুকিয়ে ফেলেছিস,অহংকার চূর্ণ করেছিস বলিরেখায়
নদীর জল শুকিয়ে ফেলেছিস
কোথায় সেই ফেনায়িত ঝর্ণাধারা ?
অনুর্বর ভুমি,শুকিয়ে চৌচির হয়েছে মৃৃত্তিকা
এমন অনুর্বর ভুমি এমন জলহীন নদী পছন্দ করিনা

যদি পারিস আবার নদী হ,আবার জলে ভর্ নদী
আবার উর্বর কর্ ভূমি
তবেই আমি লাঙ্গলের ফলা চালাবো,সাঁতরাবো নদী।

জীবন যেখানে যেমন

আজ তিরিশ উত্তর প্রথম দিন।সময়ের সংখ্যা নীচের দিকে নামছে।শেষ সেকেন্ডের পর প্রথম সেকেন্ড শুরু হবে।আতশবাজি করে সেলিব্রেশন নয়।আকাশে উড়ানো যাবেনা কোনো আলোর ছটা।পানশালা বন্ধ থাকবে।নুপুরের নিক্কনও বাজবেনা।গানও হবেনা এই রাতে।খোকা খুকুদের ঘরে ফিরতে হবে রাত আটটার মধ্যে।সব আনন্দ বন্ধ ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে।জন্মেছি এই দেশে। হায় ! জীবন যেখানে যেমন।

্প্রবেশাধিকার

কানে কানে কোনো কথা শুনতে চাইনা
বুকে বুকে ব্যর্থ প্রেমের উচ্ছাস নয়
সাগরের ঢেউ ভাঙ্গুক উদোম বালুকাবেলায়-
যদি থাকে প্রেম যদি জ্বলে আগুন অন্তর্জালায়
কোনো আপোষ করো না প্রেম কস্তরী লাভে
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজুক সুর কোমল গান্ধার                                                                                                           শরীর কেন্দ্রবিন্দুতে হোক ্প্রবেশাধিকার।

শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬

সামনে শ্বাস পিছনে দীর্ঘশ্বাস

মহাকাল কেড়ে নিলো আর একটা বছর।আয়ু থেকে ঝরে গেলো আর একটা ঝরা পাতা।জীবন কেবল নিঃশেষই হয়।পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই উপচে পড়ে জল।সামনের জীবনটা শ্বাস,পিছনের জীবন দীর্ঘশ্বাস।শেষ রোদ্র আর শেষ সূর্যাস্তের সাথে মিলিয়ে গেলো বছরের যতো সুখ দুঃখ হাসি বেদনার নির্যাস।দিন চলে যায়,আসে আগামী। চলছি কালের স্রোতে ভেসে মহাকালের দিকে, চলছি ধেয়ে শেষ প্রা্ন্তরেখার দিকে।সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

যদি চলে যাই

আসছে বসন্ত দিনে- যদি না থাকি
যদি চলে যাই যেখানে বসন্ত নেই
যদি না থাকি তোমাদের কাছে
তারপরে তো ফুল ফুটবে
পৃথিবী ঘুরবে সূর্যের চারদিক
সন্ধ্যাতারা জ্বলে উঠবে সন্ধ্যাবেলায়
আমার তখন প্রয়োজন নেই।

আমি কি জানতে পারবো
সামনে বসন্ত আসার আগেই চলে যাবো
মৃত্যু এতো ভিখারী কেন ?
দিতে চাইনা ভিক্ষা-
তবু ঘরের দরজায় চলে আসে।

 যদি চলে যাই সামনের বসন্তে
তোমরা কি মনে রাখবে- এই পাখীকে
সন্ধ্যারাতের নিষ্প্রভ এই তারাকে
আর এক কোনো বসন্ত সন্ধ্যায়।

যা কিছু দেখি

বুক থেকে খসে পড়ে প্রেম
ঠো্ঁট থেকে চুমু
চোখ থেকে তারা,
যা কিছু দেখি তাই খসে পড়ে
প্রেম চুমু তারা।

আজন্ম প্রেমিক

আজন্ম প্রেমিক আমি,বুদ হয়ে থাকি আনন্দে
আনন্দ আমার পূর্বপুরু্ষ থেকে পাওয়া অধিকার
তুমি কি আনন্দ করতে পারবে ?
পারলে পারবে,না পারলে চলে যাবে
যেমন চলে গেছে পূর্বের অক্ষম প্রেমিকারা
আমিতো ভিখারী রাঘব নই
আমৃত্যু আনন্দ করা আমর অধিকার।

বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

আগুন

নয়নে নয়ন রেখে দেখলাম তোমাকে,তুমি চাইলে অন্তর।অন্তরে অন্তর ছু্ঁয়ে ভালোবাসতে চাইলাম,চাইলে বুক।বুকে বুক রাখতেই শীতের সকালে চারদিকে আগুন জ্বলে উঠলো।আগুনের লেলিহান ছড়িয়ে গেলো দেহ থেকে দেহান্তরে।তুমি জ্বললে,আমাকেও পুড়ে ছারখার করলে।দেহ ছাই ভস্ম হয়ে আকাশে উড়ছে।

গীত ও সংগীত

রাতের নির্জনতায় অন্তর মহলের দরজাটা খুলে দাও।এই তো তুমি আছো, তোমার মতো করে। হৃদয় ভরে নিয়ে শিউলি আর চন্দনের গন্ধে ! সব দুঃখকে ভুলে দিতে পারো তুমি। আমি চাই বাগদাদের একটি রাত অথবা রাজস্থানের একটি সকাল।যেখানে রাতের ভলোবাসা শরাব আর সাকীতে বিভোর থাকে এবং সকালবেলা ধবনিত হয় মীরা বাঈয়ের কণ্ঠে প্রভুর জন্যে গাওয়া গীত ও সংগীত  ।

হে রমণী

 বসন্তরাতে যদি কোনো ভ্রমর এসে পড়ে তোমার বুকে
যদি সে ভক্ষক হয় মধুর তাকে তুমি তাড়িয়ে দিওনা,
তোমার বুকের ছায়ায় তাকে তুমি আগলে রাখো
যদি সে ধ্বংসন করে তবে তাই করুক
মায়াবী নাভীর সুবাস দিয়ে তাকে সুরভিত করো
যদি লুকিয়ে রাখতে চাও চন্দনের ঝাড়ে তবে তাই রাখো
যদি পেয়ে যাও পেশীময় কোনো যুবকের অগ্নি রশ্মি,
তবে ঝলসে ফেলো তোমার শরীরের সুবর্ণরেখা
কাঞ্চন শোভার তোমার নাভীমূলে মুক্তা ছড়াও
কাঠপোড়া রোদ্রের আগে  প্রার্থণা করো জলের
যদি দীঘির জলে পদ্ম হয়ে সিক্ত হতে চাও তাই হও
তবুও কোনো সঙ্গমের আমন্ত্রণকে ফিরিয়ে দিওনা।




সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

প্রেমের কবি

গ্রীক দার্শনিক প্লেটো মনে করতেন,কবিরা মানুষের মনের যত বেহায়া আবেগ উসকে দেয় । সেই আবেগের ফলে মানুষের মাথা হয়ে যায় খারাপ।দেশের উন্নতির জন্য যা যা করা দরকার,তা না করে কাব্য পড়া দুর্বল চিত্ত মানুষেরা নিম্নগামী আবেগে মজে। আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের ঠাঁই নেই, তাদের নির্বাসিত করা উচিত।বিশেষ করে প্রেমের কবিদের–এইটাই প্লেটোর ফতোয়া ।

ঝরে পড়ুক স্বেদ বিন্দু

মধ্যরাতে চা্ঁদ ডুবে যায়, তারাও ডুবে যায় কৃষ্ণগহ্বরে
তোমার শরীর ডুবে থাকে আলো আ্ধা্ঁরের ছায়াতলে
কে্ঁপে ওঠে আকাশ,কেঁপে ওঠে বুক,কে্ঁপে উঠি আমি
 ঠো্ঁটের বিষাক্ত লালা লেগে থাকে সাপের ফনায়
তুমি উন্মোচন করো, দেখাও কিংবদন্তীর কারকার্য
দেখাও রূপ রহস্য লুকিয়ে আছে দেহের ভাজে ভাজে
আমার লোহিত কনা ঊষ্ণতায় জ্বলতে থাকে
কামাতুর বাজপাখী শিকার খো্ঁজে নিশীথ রাতে
 অবদমনের জল প্রবাহিত হয় তোমার শরীরে থেকে
আমি ভালোবাসি তোমার যতো অসংলগ্ন অসংযম,
তুমি ধ্বস্ত হও,নিংড়ে নিংড়ে ঝরে পড়ুক স্বেদ বিন্দু।



রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

বসন্ত দিনের কথা

অনেক বৎসর আগে কোনো এক ভুলে যাওয়া বসন্ত দিনের কথা। এক বিকালে আমি আর মনিকা নামে একটি মেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে পাকা পথ ধরে হাটছিলাম।দু'পাশের গাছ তখন আজকের মতো এতো বড়ো ছিলোনা। পিছনে বেড়ী বাধও তখন হয়নি।আমরা হাটতে হাটতে চলে যাই ঝিলের পাড়ে।সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতের পাখীরা সেদিনও ছিলো। মনিকা আমার বন্ধু।আমরা বাফা'র নাচের ক্লাসের ছাত্র ছিলাম।ঝিলের পাড়ে হাটতে হাটতে আমরা কথা বলতে থাকি।দু'দিন পর মনিকার এ্যানগেজমে্ন্ট,পানচিনি অনুষ্ঠান হবে, এই সব কথা বলেছিলো মনিকা।সাথে আরো অনেক কথা।তারপর আমরা ফিরে আসি গার্ডেনের বাইরে মেইন রোডে।একটি বেবী ট্যাক্সিতে উঠে মনিকা চলে যায় শ্যামলী।আমি চলে যাবো মিরপুর ৬নং সেকশনে।মনটা খুব উদাস লাগছিলো।কি মনে করে আমি আবার ঢুকে যাই গার্ডেনের ভিতর।একাকী হাটতে হাটতে চলে যাই ঝিলের পাড়ে।বসি একটি ছাতিম গাছ তলায়।পশ্চিমের সূর্য তখন অস্তাচলের দিকে যাচ্ছিলো। ভাবছিলাম- মনিকা আমার জীবনে কি না হতে পারতো ! আজ থেকে সে আমার কেউ না। কি এক মায়ায় মনটা বিষাদ হয়ে যায় । ধূসর সেই সন্ধ্যায় দূর আকাশে লাল আভার দিকে তাকাই।সেখানে মনিকার করুণ মুখচ্ছবিই দেখতে পাচ্ছিলাম।

ঠিক কবে থেকে

ঠিক কবে থেকে তোমাকে ভালো লেগেছিলো
ঠিক কবে থেকে তুমি আমার হয়েছিলে-
স্বপ্নটা তৈরী হয়েছিলো ঠিক কখন থেকে                                                                                                         কখন থেকে তোমাকে পাওয়া হয়েছিলো শুরু।

শ্রাবন বৃষ্টি থেমে গিয়েছিলো তোমার চোখে
বাতাস বেগ পেয়েছিলো তোমার জানালায়
সন্ধ্যা তারার আলো ঝরেছিলো  উঠোনে
হাস্নাহেনা মাতাল হয়েছিলো তোমার ঘরে
 ভালোবাসার উৎসবের শুরু ছিলো সেখান থেকেই
 সেখান থেকেই দুই আত্মা একাত্মা হয়ে গিয়েছিলো ।  

শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

এই সমাধি তোমার নয়

দূরে বহুদূর থেকে ক্রন্দন ধবনি শোনা যায়
তুমি কখনোই ছিলেনা আমার প্রেমে অপ্রেমে
এখানে যার সমাধি রচিত হবে সে তোমার নয়
তুমি কেবল সমুদ্র চোখ লবনাক্তই করতে পারো
যে প্রেম তৈরী হয়েছিলো এক নিঃসঙ্গ সময়ে
সে প্রেমে কখনোই তুমি ছিলেনা
এখানে যার সমাধি হবে,সে আমার প্রথম সৃষ্টি
প্রথম উল্লাস,প্রথম দুঃখ প্রথম অশ্রুপাত
তুমি কেবল ক্রন্দন ধবনি শোনো একাকী
খুরতে যেওনা মাটি পা রেখোনা এর মৃত্তিকায়।

বেশ্যারও হৃদয় আছে

বেশ্যারও হৃদয় আছে,তারও আছে তারাখচিত বুক
তারও আছে নীলাভ ঠো্ঁট,চুলে মাখে চন্দনের সুবাস
তার বুকেও সুগন্ধী আছে,চকিত অস্থির দু'চোখ
যার কাছে নমিত হয়ে রক্ত ঝরায় নস্ট পুরুষ।

আমি বে্শ্যাকে বে্শ্যা বলতে চাইনা
সেতো বেসাতি করে রূপের, বিকায় টগবগে যৌবন
তারও ভালোবাসা আছে,মুক্তার দানা আছে নাভীমূলে
কি সব অচেনা গন্ধ ভেসে আসে মুখের লালা থেকে।

আমি বে্শ্যাকে বে্শ্যা বলিনা, সে এক ময়ুরাক্ষী
 যৌবনের ফুল দিয়ে শয্যা পাতে ক্ষূধার্ত প্রজাপতির।

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

দুঃখ বেদনা

যেদিন জ্যোৎস্নার রাত থাকে সেদিন কোনো দুঃখ থাকেনা আমার। তুমি জ্যোৎস্না থেকে আমার দুঃখগুলো তোমার দু'হাতের আজলায় ভরে তোমারই চোখে মুখে মেখে ফেলো কিন্তু আরেক অন্ধকার রাতে সব দুঃখগুলো এসে আমার হৃদয় বেদনায় পূর্ণ করে তোলে।

তুমি চলে গেলে

তোমাকে শেখালাম,স্বপ্নের ভিতর কিভাবে ভালোবাসতে হয়
কিভাবে শিকারী শিকার করে ,কিভাবে ডাহুক হয় তীরবিদ্ধ
কিভাবে আগুন জ্বালাতে হয় দিয়াশলাই দিয়ে চন্দন কাঠে-
সভ্যতা কিভাবে ভাঙ্গে,কিভাবে ভাঙ্গতে হয় পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য !

এরপরেও কি ভালোবাসা গান হয়ে উঠবেনা,তুমি চলে গেলেও ?
ছাতিম তলায় বসে উষ্ণতায় যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ছিলো
এক লহমায় তা কি সব ম্লান হয়ে যাবে ?
 তুমি চলে যাবে,উত্তরাধিকারের কোনো দায় না মিটিয়েই ?

কতো প্রেমইতো ব্যর্থ হয়, স্মৃতিতে ঝরে পড়ে শিশির
সূ্র্যরশ্মি ম্লান হয়, মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি থেমে যায়
তুমি চলে গেলে দীর্ঘশ্বাস ক্লান্ত হয়,গোপনে ভাঙ্গতে হয় হৃদয়
এতো কিছুর পরেও কি আমাদের প্রেম স্বর্গীয় হয়ে উঠবেনা  ?

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

রক্তাক্ত হয় ডাহুকের পালক

অপেক্ষায় থাকি  চা্ঁদের আলোয় দেখবো তোমাকে
 দেখবো তোমার শাড়ির আ্ঁচল তুলে পিঠের আ্ঁচিল
দেখবো কালো তিলক যেখানে আছে, খু্ঁজবো বাটি চালিয়ে
 রমণীর কাছে কবিরা পরপুরুষ, প্রেমভোগী প্রজাপতি
ভালোবাসে পরকীয়া চা্ঁদের আলোয় একাকী-
নরম মাংসের শরীর শুয়ে আছে গ্রীবা বা্ঁকিয়ে নদীর মতো
ঝরে জ্যোৎস্না কা্ঁপে বসন্তের বাতাস দিগ্বিদিগ ঊর্ধশ্বাসে
 ভালোবাসি কলাবতী নারীর শরীর করি প্রণাম পত্রপল্লবে
দেখি তার ভোগচিহ্ন,যখন রক্তাক্ত হয় ডাহুকের পালক।

ভোরের আলোর জন্য

রাতের নির্জনতার মধ্যেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।এখনও সকাল হওয়ার বাকি। চোখ বন্ধ করে রাতের শব্দ শুনছি। চারিদিকের অন্ধকার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করছে, যেন গ্রাস করছে আমার সমস্ত সত্তাকে।বুকের ওপর দুটো হাত রেখে চেষ্টা করি চোখ খুলতে, তখনই চোখ চলে যায় জানালার ওপারে আকাশের দিকে।একঝাঁক তারা সেখানে মিটমিট করে জ্বলছে। তারাদের আলোতে অন্ধকার কিছুটা কেটে আসে।এখন শুধু অপেক্ষা,এই রাত শেষ হওয়ার, অপেক্ষা করছি ভোরের আলোর জন্য!

আমাকে ফিরিয়ে নাও

ভালোবাসাহীন পৃথিবী দেখলেই মনটা অস্থির হয়ে ওঠে।নিজেকে তখন একাকী লাগে। মনে হয় দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে কেউ থাকবেনা। সামনে থাকবে সুউচ্চ পাহাড় না হয়  কোনো উদ্দাম জলরাশি।সেখানেই নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে চাই, তাকে বলতে চাই - তুমি আমাকে ফিরিয়ে নাও।আমার আত্মাকে তুমি গ্রহণ করো।

বালিকার সুখ দুঃখ

জানতাম না কি ভাবে প্রেম করে, সে পাঠ তুমিই দিলে প্রথম
জানতাম না কেন মুখে শ্লেশ তৈরী হয়,শুস্ক হয়ে েযায় ঠো্ঁট,
জানতাম না রজঃক্রিয়া কি,কেন হয়- কেনই বন্ধ হয়ে যায়
এক শরীরে এতো রহস্য এসব জানতাম না এই অবুঝ আমি
কবে কি ভাবে মায়াবী পর্দা ছি্ঁড়ে রক্তাক্ত হয়েছিলো অকস্মাৎ
তাও জানিনা- হয়েছিলো বা ঋতুকালীন কোনো এক অসময়ে।

একাকী একজন মানুষ কি ভাবে আরেক অস্তিত্বে মিশে যায়
রাজহংসী কিভাবে সা্ঁতার কাটে দীঘিতে,কি ভাবে জলে ভাসে
কি ভাবে শরীর ভিজাতে হয়,কিভাবে খেতে হয় জল,তাও শেখালে
ছিলাম আমি বালিকা,হয়ে উঠি যুবতী তোমার স্পর্শের উৎসবে।

মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

সুবাস ছড়িয়ে দাও

 সকালবেলা কানে কানে বাতাস যে কথা বলে যায়- হিমালয় থেকে আজ শৈত্য প্রবাহ আসবে ।শীতের রৌদ্রে যতোটুকু উত্তাপ পাও, তাই দিয়ে উষ্ণতা দাও প্রিয় মানুষকে।যদি কোথাও চন্দ্রমল্লিকা ফুটে থাকে,যদি কোনো চম্পা বকুল গন্ধ বিলিয়ে যায়- তাই দিয়ে দয়িতার দেহ মনে সুবাস ছড়িয়ে দাও।দেখতে পাবে কেমন করে মাতাল হয় দখিনা বাতাস।সুপ্রভাত সবাইকে।

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুমি স্বৈরিণী নও

পুরুষকে তুমি কি মনে করো ? পুরুষ মানেই মধুকর ?
তুমি স্বৈরিণী নও,ময়ুরাক্ষীও নও,তুমি প্রেমিকা
আমি চাইলেই স্ত্রৈণ হতে পারিনা,তুমি পারো না স্বৈরিণী হতে,
আমরা যাই হই,স্ত্রৈণ কিংবা স্বৈরিণী
আমরা প্রেম বুভূক্ষু এক যুগল,ভালোবাসি প্রেম
যে প্রেম উৎসব করে দেহে,স্বর্গে কিংবা নরকে।



ফিরিয়ে নেবো প্রেম

 হঠাৎ একদিন দেখি তুমি বদলে গেছো
বদলে গেছে তোমার চুলের সি্ঁথি,
বদলে গেছে তোমার টিপের রং
অন্য কারো দেনমহরে বে্ঁধেছো ঘর
আমি তো বহুগামী প্রজাপতি ছিলামনা
নস্ট নর্দমার জলও ছিলামনা
আমি নিজকে কখনো রাজহংসও ভাবিনি
তবে তুমি বদলে গেলে কিসের জন্যে।

আমি চলে যেতে চাই অজ্ঞাতে কোনো নিরুদ্দেশে
তার আগে তুমি ফিরিয়ে দাও আমার যতো চুম্বন
ফিরিয়ে দাও বসন্ত দুপুরে দেওয়া যতো আলিঙ্গন
ফিরিয়ে দাও আমার প্রজন্মের জল
যে জলে ভিজিয়েছিলে তোমার উর্বর ভূমি
আমি কোনো অভিজ্ঞান চিহ্ন রেখে যেতে চাইনা
ফিরিয়ে নেবো প্রেম,যতো দুঃখ,যতো গ্লানি ।

শুচি হবে ভালোবাসা

তুমি কোথায় যাবে ? যাওয়ার রাস্তা নেই কোথাও
তুমি অন্ধকারেই দাড়িয়ে থাকো ,তোমার মুক্তি নেই আলোর,
ভালোবাসা চৌচির করেছো চৈত্রের ধূধূ মাঠের মতো
শুকিয়ে ফেলেছো সব ্শ্রাবণের জল।

জল আবার তোমাকেই ঝরাতে হবে
তোমাকেই আনতে হবে জোয়ার
কবে ভাসবে তুমি জলে আকুল হয়ে
তোমার জন্যেই আমি কুলে বসে আছি
তুমি জলে নামো, ভিজাও শরীর
মুছে ফেলো পাপ,শুচি করো ভালোবাসা।

নীল নীল- নীল আকাশ

দিনের বেলায় অনেকটা অসময়ে ঘুমিয়ে যাই।ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি ছেলেবেলার।সাবানের ফেনায় ফু্ঁ দিয়ে শতো শতো বেলুন উড়িয়ে দিচ্ছি আকাশের দিকে।উড়ে যাওয়া বেলুন দেখতে দেখতে- ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম ভেঙ্গে শুনতে পাই ঘরের কার্নিশে বসে একটি কাক কা-কা করে ডাকছে।ডাকটা কর্কস মনে হলোনা।ওতো পাখী,এটি ওর কথা, কান্নাও হতে পারে। খোলা জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাই, নীল নীল মেঘে ঢাকা নীল আকাশ দেখতে পাই।আহা ! পাখি কিংবা মেঘ হয়ে যদি উড়ে যেতে পারতাম। মনে মনে ভাবি- এই জীবনের চেয়ে আকাশের ঐ নীল মেঘ হয়ে থাকা অনেক ভালো ! নীল মেঘেই যেন জীবনের সৌন্দর্যগুলি লুকিয়ে আছে !

রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

অনন্ত রাত

কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে - তুমি ঘুমাও।যে রাতটা তুমি দেখছো, এটি একটি অনন্ত রাত।তুমি কেবল স্বপ্নই দেখতে পাবে।যে স্বপ্ন দেখা কোনো দিন শেষ হবে না।

কতো স্বপ্ন ছিলো

সারাটা জীবন একটা ঘোরের মধ্যেই কাটিয়ে দিলাম। জীবনটা যেনো একদিন আর এক রাত্রির সমান।দিন শেষে ঘুমালাম, ঘুম ভেঙ্গে দেখি- জীবনই শেষ।কতো স্বপ্ন ছিলো,সে সব আর দেখা হলোনা। সব স্বপ্নই কি এক রাত্রিতে দেখে শেষ করা যায় ? সব চাওয়া পাওয়া অপূর্ণই রয়ে গেলো।

পথ খু্ঁজে পাবে

প্রতিক্ষায় থাকি তুমি আসবে, তাই ঘরের দরজা খুলে রাখি। উঠানের কাছে এসে থেমে গেলে তুমি।মনে হলো পথ ভুল করেছো। না চিনেই চলে গেলে।তুমি না আসো।আমার দেহ এক সময় নীল হবে।নীল পাথরের দ্যূতি ছড়াবে তোমার ঘরের পথ পর্যন্ত । সে আলোয় তখন তুমি পথ খু্ঁজে পাবে আমাকে খু্ঁজে পাবার।তখন এসে পাথরে লিখো তোমার নাম।

ভালোবাসা কারে কয়

জীবনে কাউকেই ভালোবাসিতে পারি নাই।এখন বউকে ভালোবাসিতেছি। ভালোবাসা কারে কয়,এ কথা আজো বুঝিতে পারি নাই। লোকে বলে প্রেমের মরা নাকি জলে ডোবে না।এ কথার অর্থও বুঝি নাই।এ রকম অনেক কিছু না বুঝিয়াই জীবন শেষ হইয়া গেলো। ভাবি, আবার একটা জীবন হয়তো পাইবো, সেই জীবনেই সবকিছুই অসুল করিয়া ফেলিবো। কিন্তু এই ভাবনাটাও যে একজন গাধার।এ কথাও দেরীতে বুঝিতে হয়।

তুমি যতো দূরেই রাখো

আমাকে তুমি যতো দূরত্বেই রাখো
তারচেয়ে বেশী তোমাকে স্বপ্নে কাছে রাখি
উৎসবহীন সময় কাটে উদাসীনতার টেবিলে
মেঘ নেই তবু বৃস্টি নামে এই অসময়ে
জলে ভিজে যায় দু'চোখ,দুঃখও তখন জল হয়
তুমি যতোটুকু দুরত্ব তৈরী করেছো
তারচেয়ে বেশী তোমাকে অন্তরে রাখি
নিঃসঙ্গ দুপুর কেটে যায়,দুরাগত পাখির কান্না শুনে
জীবনের পূর্ণতাগুলি আজ অপূর্ণতার চাদরে ঢাকা
জীবন থেমে যায়,ক্লান্ত পথিকের পা থামে যেভাবে
তবুও চলছে জীবন যে ভাবে চলে চন্দ্র সূর্য গ্রহপথে
তুমি যতোটুকু দূরত্ব সৃস্টি করেছো
তারচেয়ে বেশী তোমাকে মায়া মমতায় বে্ঁধে রাখি।

শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

করবী

'যখন বিদায়-বাঁশির সুরে সুরে
শুকনো পাতা যাবে উড়ে সঙ্গে কে র'বি ।'
'আমি রব, উদাস হব ওগো উদাসী, 
আমি তরুণ করবী ।' 
 করবী ফুল সম্পূর্ণ বিষাক্ত। সুন্দর ফুলের জন্য বাগানে লাগানো হয়। লাল (রক্তকরবী), সাদা(শ্বেতকরবী) আর গোলাপি রঙের ফুল গাছ পাওয়া যায়। গোলাপি রঙের করবী ফুলের ডাবল ফুলের জাত আছে, একে বলে পদ্মকরবী। পদ্মকরবীর পাপড়ি অনেকগুলো, দেখতেও সুন্দর। প্রায় সারা বছরই করবী ফুল ফোটে। গাছের মূল, কান্ড, পাতা, ফুল, ফল- সবই বিষাক্ত।
এই করবী ফুলের কথা লিখতে গিয়ে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।১৯৮৫ সালে একটি অফিসিয়াল এ্যাসাইনমে্ন্টে তামাবিল/জাফলং গিয়েছিলাম।উঠেছিলাম তামাবিল রেস্টহাউজে।পাহড়ী টিলার উপর নির্জন পরিবেশে বাংলোটির অবস্থান।এই বাংলোর কেয়ার টেকার হচ্ছে আমির আলী।বয়স ৩৫ হবে।সুঠাম দেহ ও সুদর্শন। বিয়ে করে নাই,বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাংলোর পিছনে একটি ছোটো কাঠের বাড়ীতে থাকে।একদিন বিকালে ওর বাড়ীটির দিকে যাই।দেখি বাড়ীর চারদিকে করবী ফুলের বাগান।ফুল দিয়ে ঢেকে গেছে ছোট্ট কাঠের বাড়ীটি।আমি আমির আলীকে জিজ্ঞাসা করি- তুমি মনে হয় করবী খুব পছন্দ করো।দেখলাম ওর মুখটা বিষাদে ভরে উঠলো।একদিন বাংলোয় আমির আলীকে ডেকে জানতে চাই,এই করবী ফুলের রহস্য। ও বলতে চায়নি,তারপরও শুনি আমির আলীর কথা-

মেয়েটির নাম বৈজয়ন্তীমালা।খাসিয়া মেয়ে। জাফলং নদীর ওপারে ভারতের অংশে পাহাড়ের ঢালে ওদের বাড়ী।জাফলং নদীতে পাথর কুড়াতে যেয়ে ওর সাথে পরিচয়।মেয়েটি আমাকে ভালোবাসতো,আমি ঠিক ততোটা নই।পাহাড়ের ঢালে একটা জায়গা ছিলো,করবী ফুলের ঝারে ঢাকা।আমরা সেখানে প্রায়ই মিলিত হতাম।একদিন ঐ করবী ফুলের ঝারে বসে বৈজয়ন্তীমালার সাথে কথা হচ্ছিলো-
বৈজয়ন্তী:  তুমি আমাকে তোমার বাড়ীতে নিয়ে যাও।বিয়ে করো।
আমি:   এখন না। আমি তোমাকে ভালোবাসি,কিন্তু বিয়ে এখন না।পরে।
বৈজয়ন্তীমালা আমার ছলনাটুকু বুঝতে পেরেছিলো।বৈজয়ন্তী বললো- তাহলে আমি যাই।
যাবার সময় ওর খো্ঁপায় একটি করবী ফুল পড়িয়ে দিয়েছিলাম।
সেদিন ছিলো দোল পূর্ণিমা।শুনেছি- সেই রাতেই ঐ করবীর ঝারে করবী ফুল খেয়ে বৈজয়ন্তীমালা আত্মহত্যা করেছে।ময়না তদন্তের রিপোর্ট ছিলো-ও নাকি দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলো। কিন্তু কেউ জানতো না,ঐটি ছিলো আমারই দেওয়া একটি পাপ।











তুমি শুধু আমার

চা্ঁদে আকাশ ভরেছে
তারায় আকাশ জ্বলেছে
আমার মন আলোয় ভরেছে
চিত্ত ঝলমলিয়ে উঠেছে
মন খারাপের মুখে হাসি ফুটেছে
জীবন প্রফু্ল্লিত হয়েছে
তুমি আছো আকাশের কাছে
তুমি জ্বলছো তারার পাশে
ঐ চা্ঁদ শুধু আমার
ঐ তারা শুধুু আমার
ঐ আকাশ শুধু আমার
তুমি শুধু তুমি আমার।

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

সা্ঁতার কাটি রাজহংসের মতো

পরম মমতায় কাছে টেনে করেছো চুম্বন
ঢেলেছো লালা জিহবা থেকে ঝর্ণাধারার মতো
গলার মাদুল ঝুলেছিলো উদোম বুকের মধ্যখানে
দুদিকের প্রজ্জ্বলিত শিখায় ্জ্বলছিলো কালো দুই বিন্দু
আলিঙ্গনের উত্তাপে পুড়ছিলো পর্বতমালা
তুমি টানতে থাকো নাভিতলের দিকে
যেখানে জলে ভেসেছে,যেখানে প্লাবন হয়েছে
যেখানে রাজহংস কাটবে সা্ঁতার
তুমি তখন মৎস্য কন্যার মতো উন্মূল পাখা মেলো
চরম উত্তেজনায় কাছে টানো যেনো আমি জলে ডুবি
যেনো আমি সা্ঁতার কাটি রাজহংসের মতো উন্মত্ততায়।

কথা ছিলো

কথা ছিলো- আমাদের ভালোবাসার কথা কবিতায় বলা হবেনা
যমুনার তীরে কাশবনের বালিয়ারীতে পড়েছিলো শয্যা চিহ্ন
ডিঙ্গি ভাসিয়ে সারারাত ভেসেছিলাম আমরা জলে
আধার বিদীর্ণ করে জোনাকিরা জ্বেলেছিলো আলো
কথা ছিলো- সেই জোনাক জ্বলা রাতের কথা কবিতায় বলা হবেনা।
স্বপ্নভূক চা্ঁদ ডুবেছিলো মেঘে,লুব্ধক হারিয়েছিলো নৈঋতে
আমরা হারিয়েছিলাম রাতের নির্জন অন্ধকারে কাশঝা্ঁরে
শিয়াল বাজপাখী বু্ঁনো হাস দিয়েছিলো আমাদের পাহাড়া
আমরা রাতকে করেছি কুটিকুটি,তারাদের পাঠিয়েছি মেঘে
ভালোবাসায় শরীর ভেঙ্গেছি,শীৎকারে কে্ঁপেছে হৃদয়
কথা ছিলো- আমাদের সেই ভাঙ্গনের কথা কবিতায় বলা হবেনা।


বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুমি একা নও

নিজেকে নিয়ে কি ভাবছো তুমি
হে রমণী হে বৃক্ষ,তুমি কি খুবই একা
তুমিতো প্রেমভূক ,হরিদ্রাভ তোমার বুক
 তোমার চিবুক,তোমার গভীর অন্তরতল
তুমি খুলে ফেলো পৃথিবীর পরিধান
এই সভ্যতা তোমার জন্যে নয়
ভিতরের সব আলো জ্বলুক ঈষাণে
তুমি একা নও,পুরুষ এখানে সত্য
রাতের সফল সঙ্গম শেষে চলে যাও
সমস্ত রক্ষণ ভেঙ্গে পরম শুদ্ধতায়।


ছোবল

রাতের অন্ধকারে কোথাও দেখা হোক
যেখানে আকাশ দেখতে পায় না মাটি
দীঘির জলে কোনো বৃক্ষের ছায়া নেই
আমাদের দেখা হোক কোনো বদ্ধ ঘরে
কাঠ চোকির উপর তুমি উন্মোচিত হও
কাল সাপের বিষাক্ত বিষ উঠবে মগজে
 আ্ঁচলে ঢাকতে পারবে না সেই ছোবল।

Victory Day Celebration

কাল বিজয় দিবস।কাল চলে যবো পার্কের পাশে বড়ো রাস্তার উপর।ওখানে যেয়ে বা্ঁশি বাজাবো।সে বাজাবে হারমনিকা।ছেলে উড়াবে আকাশে রঙ্গিন ঘুড়ি।বড়ো মেয়ে বাজাবে কাগজের ঝুনঝুনি আর ছোটো মেয়ে পায়ে আলতা মেখে নুপুর পড়ে রাস্তার উপর নাচবে তা ধিন্ ধিন্, তা ধিন ধিন্ তা ! তারপর আমরা ফুসকা আর বেলপুরি খাবো। সন্ধ্যায় পা্র্কে শুনবো শিল্পীদের কণ্ঠে বিজয়ের গান -
                                                                                                                                                              "পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল 
জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল 
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল, হয়েছে কাল, হয়েছে কাল।"

অপার আনন্দধারায়

 তুমি আমার কাছে এসেই ত্রস্ত হরিণীর মতো ছটফট করো, তাড়া করো চলে যাবার। দ্রোপদীও এমন করেনা দেবতার সাথে মিলন পর্বে । ,তোমার অম্লান দেহখানিি ধূসর ধূলায় মিশিয়ে দাও।আমি পেতে চাই সৃষ্টির সুখের উল্লাস ।ভালোবাসার আকুলতায় কোনো কান্না রাখতে নেই।তুমি থেকে যাও এখানেই, আমার বাহু লগ্নে, এই অপার আনন্দধারায়।

বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

ফসল

কানামাছি খেলতে যেয়ে ছু্ঁয়েছি তোমার চোখ
গোল্লাছুট খেলতে যেয়ে চিবুক,
এক্কা দোক্কায় ছি্ঁড়েছি তোমার ঠো্ঁট
ফুসকার ঝালের মতো চুম্বনে আভা ঝরেছে,
এসবই কোনো খেলা ছিলোনা কোনো সময়।
জরায়ুর উর্বর ভূমির জন্য লাঙ্গলের ফলা খুঁজে বেড়াও
 মেঘের দিকে চেয়ে জলের জন্য চাতকী হও
 আমার শুক্রাণু তখন ছুটতে থাকে ফুৎকারে
 তোমার উর্বর ভূমির দিকে ফসল ফলাতে।





বুভূক্ষু এক হরিণী

তোমার ঠো্ঁট থেকে খসে পড়ে শুষ্ক আশ্লেষ
বুক থেকে নেমে আসে পাথরের ঘর্ষণ
ভারী প্রস্তুরের আলিঙ্গনে আমি ক্লান্ত হইনা
তৃষ্ণার্ত হরিণীরা জল খায় শীতল নদীর জলে
আমিও বুভূক্ষু এক হরিণী তোমার কাছে
যে মায়া্ নাভী তলে শূল বিদ্ধ হয় অস্থির সৈনিকের
আমি আমার রক্তা্ক্ত ভ্র্রূণের ভিতর আনন্দ খু্ঁজি
পৃথিবী যে ভাবে ঘুরছে তার কক্ষপথে
 আমিও ঘুরছি তেমনি তোমার ছায়াপথে                                                                                                           মেতে থাকি প্রজন্ম জন্ম দেবার উৎসবে।

একজন ভাই/বোন

আমরা এখন পা্ঁচ ভাই বোন জীবিত আছি।ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা একটাই- আমার মৃত্যু যেনো সবার শেষে না হয়।কারন,আমার মৃত্যুর পর কোনো একজন ভাই/বোন কা্ঁদবে না,তাই কি হয় ?

সকালের শিশির

তুমি কাছে থাকলে সকালের শিশির হয়
ভালোবাসার মুক্তা বিন্দু ,
তুমি কাছে না থাকলে সকালের শিশির হয়
আমার দুঃখের অশ্রু বিন্দু।

নতুন আরেক পৃথিবী

তুমি আমার জীবনকে জ্যোতির্ময় করেছো।সূর্য চন্দ্র গ্রহ তারা আলোকিত হয়েছে।নদী সাগর পোতাশ্রয়ে জলের বান ডেকেছে।আমরা হেটেছি আমাদের কক্ষপথে অনন্তকাল।আমাদের প্রেম উদ্ভাসিত হয়েছে তপ্ত আগ্নেয়গিরির দাবানলে।আমাদের ভালোবাসা লুপ্ত হয় নাই।এই ব্রহ্মাণ্ডের সব আলো বাতাস আকাশ একদিন মহাপ্রলয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।কিন্তু আমাদের দেহ আত্মা অবিনশ্বর থাকবে। আমাদের প্রেম ধ্বংসস্তুপের উপর জন্ম দেবে আর একটা গোলাপের। যে গোলাপ সৌরভ ছড়াবে নতুন আরেক পৃথিবীকে।

মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

বালুঘাট থেকে শিলিগুড়ি

নব্বই দশকের কথা।পশ্চিম বঙ্গের বালুঘাট থেকে বাসে উঠেছি শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য।বাসে উঠেই দেখি আমার পাশের সিটে একটি বাইশ তেইশ বছরের তরুণী বসে আছে।আমি অনেকটা দ্বিধা নিয়েই ওর পাশে বসে পড়ি।মেয়েটির সি্ঁথিতে সি্ঁদুর নেই,হাতে শঙ্খ চূড়ি নেই।মনে হলো মেয়েটি কুমারী হবে।বাস চলছে।আমাদের মাঝে কোনো কথা নেই। ঢাকা থেকে রাতের বাসে হিলি এসেছিলাম।চোখে তাই ঘুম ঘুম ভাব ছিলো।অনেকটা পথ ঘুমে অনেকটা পথ তন্দ্রাচ্ছন্নে আমি চলতে থাকি।মেয়েটিকে খেয়াল করা কিংবা আগ বাড়িয়ে কথা বলা হয়ে ওঠে নাই।এই ভাবেই কখন তিন/চার ঘন্টা কেটে গেছে বুঝতে পারিনি।বাসটি তখন বিহার টেরিটরী অতিক্রম করছিলো।এ্যাটেনডেন্ট বলছিলো,সামনে ইসলামপুর স্টপেজ।মেয়েটিকে দেখলাম,রেডী হচ্ছে নামার জন্য।মন চাইলো ওর সাথে একটু কথা বলি-
আমি:  Can you speak in Bengali ?
মেয়েটি: আমি বাঙ্গালী,বাংলাদেশের মেয়ে।
আমি: আমিতো বাংলাদেশ থেকে এসেছি।বাংলাদেশে কোথায় তোমার বাড়ী ?
মেয়েটি:  সিরাজগজ্ঞের ঢলডোব গ্রামে।
আমি চমকে উঠি।বললাম,আমার বাড়ীও তো সিরাজগঞ্জে, আমি বাগবাটি স্কুলের ছাত্র ছিলাম।ঢলডোব গ্রামে আমার একজন সহপাঠি ছিলো,নাম মিহির কুমার বৈদ্য।মেয়েটি বলে: মিহির আমার বড়দা,আমি ওনার ছোটো বোন নির্মলা বৈদ্য।১৯৭১ সনে স্মরণার্থী হয়ে আমরা এদেশে এসেছিলাম।তারপর আর যাওয়া হয় নাই।  এই ইসলামপুরেই আমরা থেকে যাই। নির্মলার দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছলোছলো করে ওঠে। ওকে দেখেছিলাম ওর দুই বছর বয়সে।কোলেও নিয়েছিলাম।বাসটি এসে ইসলামপুর থামে।নির্মলা এখানেই নেমে যায়।নামার সময় বলেছিলো- দাদা নেমে যান।বাড়ীতে বড়দা আছে।দেখা করে যান।' আমার আর নামা হয় নাই।কর্কস স্বরে হর্ণ বেজে ওঠে।বাসটি তখন চলতে থাকে শিলিগুড়ির দিকে।

স্বপ্ন

আমি স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসি,কিন্তু যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো- সে সব সময় আমার কাছেই থাকে।যদি কখনো সে দূরে চলে যায়, তখন আমি স্বপ্ন দেখবো, আর সেই স্বপনগুলোর মধ্যে সে আমার কাছেই থাকবে।

রাতের ব্লাক আউট

রাত্রির একাকীত্ব আমাকে অন্ধকারের মধ্যে নীল করে রাখে
আমি তোমার মধ্যে কোনো দায় দেখিনা
আমার প্রেমের সব অস্ত্র তোমার আলিঙ্গন থেকে দূরে থাকে
আমার যন্ত্রণার কোনো নিষ্কৃতি নেই
অসীমের পরে কোনো শেষ আছে কিনা জানিনা
আমার শরীর ধুসর হয়ে পড়ে থাকে রাতের চিবুকে
জীবনের সব প্রেমই কি ভুল ছিলো
আজকের রাতের ব্লাক আউট,আহত নদীর ঢেউ
তোমার মৃগানাভি তলে মিশে যেতে থাকে সব ক্লান্তি
আমি তখন নিঃশব্দতার ভিতর ঘুমিয়ে পড়ি
তোমার তন্দ্রাহীন জাগরণের বিপরীতে।

সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬

প্রথম প্রেম, প্রথম বিষন্নতা

আমি অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখেছি
তুমি যমুনা নদীর তীরে দাড়িয়ে আছো
যেনো তুমি রাধা, তুমি পান্ডবদের দ্রোপদী
তুমি কৃষ্ণপক্ষের আমার স্বপ্ন
তুমি উন্মত্ত বসন্তের এক ঝরো বাতাস
চোখে তোমার হিমালয় পর্বতের কুয়াসা
তুমি চর্যাপদের মায়ময় হরিণী
আমার প্রথম প্রেম, প্রথম বিষন্নতা
শ্লেশে আর ভোগে নস্ট জলে আমি মিশিনি
ঋতুবতী মেঘ হয়ে তুমি উড়ে গেছো বসন্ত বাতাসে।



এই হেমন্ত রাতে

এই হেমন্ত রাতের অন্ধকারে
আমার আকাঙ্খা কি ম্লান হয়ে যাবে ?
আকাশের তারা মেঘের ফা্ঁকে
কি আড়াল হয়ে যাবে ?
ভোরের আলো স্পর্শ পর্যন্ত
আমি অপেক্ষা করবো
আমার রাতের কালো ভূষন
ধবল তুষারপাতে শুভ্র হবে
যতোক্ষণ পতিত না হয় ততোক্ষণ।

কোনো সভ্যতা মানিনা

ওখানে কোনো সভ্যতা নেই
ব্রহ্মারও তপস্যা ভাঙ্গতো
অনার্যরাও মত্ত হতো প্রেমে,
নদীও নগ্ন হয়
আমি কোনো সভ্যতা মানিনা
অসভ্যতাও কোরবো না
তোমাকে ভেজাতে চাই জলে
যে জলে সাগর ভিজে যায়।

রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুমি হবে নদী

তোমাকেই অন্তরের মধ্যে রেখে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম।বারান্দায় দাড়িয়ে দেখেছি শ্রাবন ধারার উৎসব। কখনো সন্ধ্যা রাতে স্বপন দোলায় চলে গেছি মাধবী তলায় ,শুনেছি ঝি্ঁঝি্ঁ পোকাদের গান।সেখানেই দাড়িয়ে কতো যে চুম্বন আমরা এ্ঁকেছি । আমরা দেখেছি নদী, ভেসেছি জলে উন্মত্ততায়।প্রেমের পূর্ণতার জন্য, তুমি হয়েছিলে উত্তাল এক সাগর,আমি হয়েছিলাম তার অবাধ্য জল।

যখন তোমাক দেখি

আমি তাকিয়ে থাকি যখন তোমার মুখের দিকে
 তোমার মুখ থেকে তখন অমৃত ঝরতে থাকে
তোমার নয়ন শোভায় স্নিগ্ধ হয় আমার চোখ
যখন তোমাক দেখি,সব দুঃখ যেনো হারিয়ে যায়।

দহনে জ্বলতে থাকি

তুমি সবসময় আমাকে কা্ঁপাও
তোমার প্রেমে আমার শরীর কা্ঁপে
নদীর ঢেউ উন্মাতাল হয়
আগুনে পুড়ে দূরের পাহাড়
যেমন করে পোড়াও আমার অন্তর,
আমি তখন দহনে জ্বলতে থাকি
নদী ভেবে তোমার শরীরে দেই ঝাপ।

কেড়ে নাও তুমি সময়

হেমন্তের দুপুর সবসময় মাদকতাময় হয়
আমি বসে আছি একাকাী,
সূর্য রোদ ছড়াচ্ছে পৃথিবী মন্ডলে
সময়গুলো কি একাকী ক্ষয় হতে থাকবে-
কেউ কি আসবে না এই সময় উদযাপনের সঙ্গী হতে !
এই হেমন্ত দুপুরে ূ তুমি আসো
কেড়ে নাও তুমি সময়,আমার যতো প্রেম।


উৎসবের যতি চিহ্ন

চোখের উপরে ঝরে পড়ে ক্লান্ত দুপুরের ঘুম
পাখীদের গান নেইৃ,পথগুলোতে গাড়ীর হর্ণ নেই
নির্জনতা এখন ঘরে,নির্ঘুম স্বপ্ন এখন চোখে
বন্ধ সব জানালা,নীল আকাশও দেখা যায়না
দিনের অন্ধকারের ভিতর খু্ঁজি অচিনপুর
যেখানে প্রেম বিমুগ্ধ হবে এই ক্লান্ত দুপুরে
আমাদের উৎসবের যতি চিহ্ন পড়বে তখনই।  

শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

কতো অফুরন্ত ভালোবাসা

জীবনের কতো অফুরন্ত ভালোবাসা এখনো পাওয়া হয়নি, এখনো হাঁটা হয়নি হেমন্তের শিশির ভেজা দূর্বাঘাসের পথে, এখনো শোনা হয়নি কোজাগরী পূর্ণিমা রাতের গান,বোস্টুমিদের কীর্তন, এখনো দেখা হয়নি চন্দ্রাহত কোনো প্রেয়সীর জীবনের সুখ দুঃখের আলেখ্য।এই সব আকুলতাগুলো আছে দেখেই এখোনো পৃথিবীর পথে পথে ঘুড়ে বেড়াই।

বিমুগ্ধ অন্তর্জল

 স্বর্গীয় মুগ্ধতায় নির্ভাজ জরায়ুর আরষ্ঠতা ভেঙ্গে
উন্মোচন হয় এক  হেমন্তের শিশির ভেজা ভোর,
প্রেমে থাকেনা পাপ, জলে থাকেনা কোনো বিষাদ
 উৎসবের আনন্দে তোমার লজ্জা ভাঙ্গে শয্যায়
দরজার ওপাশে ভ্রুনেরা ঝা্ঁকে ঝা্ঁকে উড়তে থাকে
 নির্জন সরোবরে ছুটতে থাকে তৃষ্ণাতুর অশ্বারোহী
তোমার লোহিত কনিকাগুলি কামাতুর হয়ে ওঠে
বিমুগ্ধ অন্তর্জল তখন গড়তে থাকে প্রজন্মের দিকে।
                                                                                                                                                                   

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

আমাদের আনন্দ থেকে

একটা একটা করে প্রেম বুঝে নিব
একটা একটা করে শরীরের ভা্ঁজ শবদেহ হবে
রাত্রি নিশীথে নৈঃশব্দরা চিৎকার করে উঠবে
কঠিনের সমস্ত স্পর্শে ক্ষতবিক্ষত হবে জরায়ু গহ্ববর
ভালোবাসার উৎসবে ভাসবে রাত্রিতে
ভ্রুণেরা জেগে উঠবে শত সহস্রবার
আমাদের আনন্দ থেকেই জন্ম নেবে শিশু।

আনন্দ কোথায় আছে

আমাকে ডাকছে ঘর
প্রেম ছু্ঁইতে চায় আকাশ
কোথায় শব্দ হচ্ছে জলপতনের
জলের মধ্যে প্রেম খু্ঁজি
নাভিতলে কিসের এতো নৈঃশব্দ
কোথায় আলো জ্বলে
কোথায় লুকিয়ে থাকে নীলাভ প্রেম
আনন্দ চাই চতুর্দিক থেকে
যন্ত্রণারা লুপ্ত হোক অতল গহবরে
এতো প্রেম এতো জল ভরেছে জীবন
আনন্দ কোথায় আছে কোন উচ্চতায়।

স্পন্দন শুনি শরীরে

কিছু সময় আসে ভালোবাসা উন্মাতাল হয়
তোমার নম্র বুকের উপত্যাকায় মেলে রাখি চোখ
শরীর থেকে অচেনা গন্ধ ভেসে আসে
যেখানে স্বপ্ন ভেঙ্গে দমরে মুচরে যায়
মনের গভীরতা ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়
শরীর থেকে শরীরে হয় লেনদেন
বেহিসাবী চাওয়া পাওয়া পায় পূর্ণতা
প্রাচীন জল পতনের শব্দ ভেসে আসে
স্পন্দন শুনি শরীরে,সে এক প্রগাঢ় আলোড়ন।

আমি তোমার যন্তণা

আমি তোমার প্রেম আমি তোমার যন্তণা
যা তুমি আরধ্য করেছিলে তা অভিশাপের জ্যোৎস্নায় ঢাকা
কণ্ঠে তোমার বেঁধে আছে হেম পাথরের মালা
বিপন্ন সময়ে কোনো ভালোবাসাই মমত্ব পায়না
সংসারী হতে যেয়ে হয়েছো বৈরাগ্য
হেমন্তের পূর্ণিমার চা্ঁদ হয়েছে তোমার যন্ত্রণা
আমার প্রেমে নেই মদিরতা,নেই গোলাপের সুবাস
না পারো আমাকে ছাড়তে,না পারো ভালোবাসতে।

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

তোমার চোখের অশ্রু

তুমি সুন্দর করে ঘর দুয়ার গোছাও,ঝকঝকে রাখো ঘরের মেজে।পরিপাটি রাখো আলনা।বারান্দায় ঝুল পড়েনা।আসবাবপত্রে জমে না ধূলো।মাঝে মাঝে ভাবি,আমি না থাকলে তুমি এমনি করেই কি ঘরদুয়ার গোছাবে ? ফুলদানিতে সাজাবে ফুল ? কিংবা জ্বালবে সন্ধ্যা বাতি ঠিক আগের মতো করেই ? আঙ্গিনার ধুলোবালি মুছতে যেয়ে আমার পায়ের চিহ্নগুলিও একদিন মুছে ফেলবে। আমার জন্যে কে্ঁদে থাকা  তোমার চোখের অশ্রুবি্ন্দুগুলিও একদিন শুকিয়ে যাবে, মুখে ভাসবে তখন তোমার করুণ কোনো হাসি।

আকাশ ছো্ঁয়ার স্বপ্ন

একবার দার্জিলিং এ যাবার পথে আমরা কার্সিয়াং নেমেছিলাম।পাহাড়ের গা কেটে রাস্তা। সেই রাস্তার উপর দাড়িয়ে দূরের পাহাড় দেখছিলাম।পিছেনেও পাহাড়,সামনেও পাহাড়,মাঝ দিয়ে ছড়ার মতো নদী।আমরা যে জায়গাটাতে দাড়িয়ে ছিলাম,একটু পা বাড়ালেই গিরি খাদ।পাহাড়ের ফা্ঁক দিয়ে দূরের নীল আকাশ দেখা যায়।এমন নৈসর্গিক ও স্বর্গীয় জায়গায় দাড়িয়ে ওকে বললাম- চলো,আমরা পাহাড়ের উপরে ঐ নীল আকাশ ছু্ঁইয়ে আসি।সে বললো- এটা কেবলই স্বপ্ন।আমি বললাম,তাহলে নীচে ঐ গিরি খাদে ঝাপ দিয়ে পাতালপুরী দেখে আসি।ও তখন বললো, এটা পারবে,এখানে মৃত্যু আছে।আমি তখন বললাম- আমি তোমাকে নিয়ে পাহাড়ের উপর আকাশ ছো্ঁয়ার স্বপ্নই দেখতে চাই, এতে করে গিরি খাদে পড়ে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তবে তাই হোক।

বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

অতলান্ত জল

তোমাকে নিয়ে সাগরের জলের দিকে চোখ রেখে বলেছিলাম- এ জল সব আমার।তুমি বলেছিলে- এই জল যদি কখনো আমার চোখের জল হয়,তাও কি তোমার ? বলেছিলাম- চোখে এতো জল হয় নাকি ? উদ্দাম সাগরের অতলান্ত জল রাশির দিকে তাকিয়ে সেদিনের সেই বিষন্ন সূর্যাস্তবেলায় তুমি বলেছিলে- এই রকমই চোখের জলে সাগর হবে আমার,যেদিন তুমি থাকবে না।

বিদায়ী পংতিমালা

যে ছেলেটি একদিন ্ট্রেনে করে এসেছিলো এই ঢাকা শহরে
সে আজ শববাহি যাত্রি হয়ে চলে যাচ্ছে তারই শহরে,
তার জ্বলজ্বলে চোখ ভালোবেসেছিলো বাংলাদেশের মানচিত্র
উদ্দাম তারুণ্যে বার বার হেটে গেছে রবীন্দ্র সরোবরের কাছে
যেখানে নিহত হয়েছিলেন স্থপতি,জাতির পিতা
 ইতিহাসের সেই আদর্শিক পিতার ছবিকে করেছো কুর্নিশ।
তুমিতো বহিমিয়ান ছিলে না,তুমি লিখতে কবিতা
জীবন থেকে শব্দ তুলে এনে লিখতে গল্প
কি অভিমান ছিলো তোমার ! ধূসর এই হেমন্ত সন্ধ্যায়
চলে গেলে তুমি বহ্মপুত্রের তীরে,শেষ খেয়াটির অপেক্ষা না করে।

যমুনা পাড়ের মাঝি

জীবনে যশ খ্যাতি কোনাটাই হলো না। তারচেয়ে যমুনা পাড়ের খেয়া নৌকার মাঝি হতাম,অথবা কোনো জেলে।অদ্বৈত মল্লোবর্মণের তিতাস পাড়ের বাসন্তির মতো কোনো মালো মেয়েকে বিয়ে করতাম অথবা পদ্মাপারের কোন এক মালাকে। সেখানেও কপিলার মতো যৌবনবতী কারো সাথে পরকিয়া করতাম। নিঝুম চরে শেয়াল ডাকা ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাত নামতো।বয়ে চলা নদীর শো-শো শব্দে হৃদয় কা্ঁপতো  কপিলা অন্ধকার ঘরে কেরোসিনের কুপি জ্বেলে অপেক্ষা করতো।রাতের আকাশে দেখা দিতো ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। নিঝুম রাতে কপিলাকে নিয়ে নদীর তীর ঘেষে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম অনেক দূরে । উদ্দাম জনশূন্য নদীর জলে খেয়া নৌকায় ভাসতাম দু'জন।রাতভোর জ্যোৎস্নাা ঝরতো সেই কালো নৌকাটির ভিতর।

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

যানজটের তলায়

এই শহর আর ভালো লাগে না।রাজপথে যানজটের তলায় পিষ্ট হয় প্রিয় সময়।আমার ঘরে ফেরার জন্য স্ত্রীর অপেক্ষা  ক্রমাগত লম্বা হয়।বাড়ীর গেটে গাড়ীর হর্ণ শোনার জন্য কন্যাটি কান পেতে বসে থাকে।বেলা গড়িয়ে যায়,সে হর্ণ আর বাজে না।



সংসারভূক

একটি কোমল হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে কি ছু্ঁয়েছিলো আমার কপাল ? ঘুম ভাঙ্গবার আগে হাতের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ বেজেছিলো কি ? চোখ মেলে রাতের স্বপ্নগুলি মনে করতে পারিনি কিছুতেই। চুম্বনগুলো কি স্বপ্নের মধ্যে ছিলো ? তার দিকে অপলক চেয়ে থেকেই সকাল শুরু হয়ে যায।কোর্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে সে অফিসের চাবীটাও তুলে দিয়েছিলো আমার হাতে।এতো যে ভালোবাসা,এতো যে টান,তারপরও নিজকে আজো সংসারভূক করতে পারিনি।

শাকিল ভাই

 প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী,সদা হাস্যজ্বল মাহবুবুল হক শাকিল ভাই আর নেই।তার সাথে.আমার পরিচয় হয়েছিলো ফেসবুকে,তার লেখা আমার ভালো লাগতো,আমার লেখাও তিনি পছন্দ করতেন।আাাচমকা আজ তিনি আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ।কস্টে বুকটা ভারী হয়ে আসছে। কি লিখবো।আপনি জান্নাতবাসী হন শাকিল ভাই।
ফেসবুকে তার শেষ স্টাটাসটা ছিলো একটি কবিতা।সেই কবিতার ক'টি লাইন-
"তোমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাস,
আরো একবার তোমাদের মোথিত চুম্বন দেখবে বলে।
মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই,
নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই।
হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাৎ বুকে নিয়ে স্মৃতি,
তোমাদের উত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে।ভালবাসা, তোমার জন্য।"

My death note

আমার দায়ভার যখন শেষ হবে,তখন অপেক্ষাই বা কেন করবো ? সেই উদ্দাম,আনন্দময় জীবন যদি আর নাই থাকে, অক্ষমতা আর বোঝা হয়ে থাকা এই সুন্দর পৃথিবীর কাছে গ্লানিকর।সব সু্ন্দর শেষ হবার সন্ধিক্ষণেই ঘরের জানালা দরজা সব খুলে রাখতে চাই। আত্মার ্প্রস্থানের সাথে মানুষের সকল দুঃখের নাকি পরিসমাপ্তি ঘটে।পৃথিবী থেকে চলে যাবার আনন্দটাই তখন সেখানে।

সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

নতুন দিন

আয়নায় মুখ চেয়ে ভাবছিলাম জীবনে কি পেয়েছি।ভাবতে যেয়ে গ্লাসটি হাত থেকে পড়ে খান খান হয়ে ভেঙ্গে গেলো।কবিতা লিখতে যেয়ে অনেক কবিতাই যেমন অসমাপ্ত রাখতে হয়েছে,ছন্দ মেলাতে পারি নাই।তেমনি জীবনের অনেক প্রাপ্তি আছে,অনেক আলিঙ্গন আছে যা অতৃপ্তই রয়ে গেছে। বঞ্চনা আর না পাওয়ার ব্যাথা বেদনা নিয়েই জীবন এগিয়ে চলছে।এই যে আমি এখনো জেগে আছি।তারপরেও চোখে ঘুম আসবে।ঘুমিয়ে যাবো।তারপর সকাল হবে।পাখী ডাকবে।আরো একটি নতুন দিন আবার শুরু হবে।

মৌন বেদনা

কাল অর্ধেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়।জানালা খুলে দেখি বাইরে শিশির ঝরছে।রাতের অন্ধকারে কুয়াশাগুলো পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে।খুব ইচ্ছা করছিলো বাইরে যেয়ে শিশিরে ভিজে আসি।একাকী নয়,দু'জনে মিলে।এই রকম আদিগন্ত শিশির ঝরা রাতে স্নাত হতে মন চাইছে।কিন্তু আমি জেগে আছি,সে জেগে নেই।আমি ব্যাকুল হয়েছি,সে হয় নাই।এ রকম কতো ইচ্ছা,কতো আকাংখা মায়াবী রাতের গভীরে লীন হয়ে গেছে।সে মৌন বেদনাগুলো আমিই একাকী পেয়েছি।সে পায় নাই।আবার এমনও তো হয়তো অনেক হয়েছে , তারও অনেক কামনা বাসনা আমি পূরণ করি নাই।তার সেই মৌন বেদনাগুলি সে লুপ্ত রাখিয়াছে, এমনি করে সেও একাকী ভোগ করিয়া গিয়াছে।সে খবর আমি রাখি নাই।

আমাদের ভালোবাসাগুলো

মাঝে মাঝেই কেমন অস্থির হয়ে উঠি।পরিপূর্ণ করে তোমাকে ভালোবাসতে পারিনা। কোনো এক চোরাবালিতে মায়া মমতার সৌরভগুলো হারিয়ে যায়, কোথায় কোন্ বালিয়ারিতে চলতে যেয়ে বাধা পড়ে যাই।তুমিও এ জন্যে বিষন্নতায় কা্ঁদো । ভালোবাসার অনুভবগুলো এই রকমই মনে হয়- এই মেঘ হয়ে জল ঝরে, আবার শুস্ক নদীর মতো সব  যেনো শুকিয়ে যায়।

রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

সবাইকে ভোরের শুভেচ্ছা

নদী যেমন চলতে চলতে এক জায়গায় এসে থমকে সরোবর হয়,তেমনি কোন দেবতার মঙ্গল আলোকের মতো অসিম ভালোবাসা নিয়ে সে আমার কাছে এসে সরোবর হয়েছে। যেনো পলাতকা কোনো ঝর্নার জল,প্রতিদিন জলে ভরি। তার মনটি আজ সকালের শিশির ঝরার মতো ঝির্ ঝির্ করে কাঁপছে। সবাইকে ভোরের শুভেচ্ছ।

ভালোবাসা

ভালোবাসার প্রথম পা‌ঠ নিয়েছিলাম কোনো নদীর কাছে, খোলা আকাশের নীচে, মূর্তে-বিমূর্তে, গ্রীষ্মের প্রখর দীপ্তিতে, বর্ষার ধারায়, শীতের উষ্ণতায়, প্রাণখোলা বসন্ত বাতাসে,শরতের ঔদার্যে, হেমন্তের পেলবতায়, সৌন্দর্যে আর বীভৎসতায়, উৎস আর মোহনায়, নগ্নতায় এবং আড়ালে, ধূসর সাম্রাজ্যে নিষিদ্ধ সেই সব শব্দগুলির সাথে তোমার নামটিই জড়িয়ে আছে।

শূণ্য নদী তীরে

নব্বই দশকের কথা।বাড়ী থেকে হঠাৎ খবর পেলাম মা অূসুস্থ।অফিস থেকে তৎক্ষণাৎ ছুটি নিয়ে সোজা মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে চলে যাই।তখন টাংগাইলের ভূ্ঁয়াপুর পর্যন্ত বাসে যেয়ে লঞ্চে সিরাজগঞ্জ যেতে হতো।,মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে চলে আসি। মহাখালী থেকে বাস ছাড়ে দুপুর একটায়।ভূ্ঁঁয়াপুরের চর গাবসারা পৌ্ঁছতে পা্ঁচটা বেজে যায়।চর গাবসারা থেকে আরো দেড় মাইল বালুচর পায়ে হেটে লঞ্চ ঘাটে পৌ্ঁছি। ঘাটে পৌ্ঁছে দেখি লঞ্চ ছেড়ে মাঝ দরিয়া পর্যন্ত চলে গেছে।ঐটি ঐদিনের শেষ লঞ্চ ছিলো। ভট ভট শব্দ করে লঞ্চটি ছুটে চলেছে।আমি সারেংকে ইশারা করে ডাকলাম,কিন্তু কে শুনে কার কথা।কে জানবে আমার মা যে গুরুতর অসুস্থ।আমাকে যে যমুনা পাড়ি দিতে হবে। সেদিনের আর কোনো লঞ্চ নাই, কোনো নৌকাও রাত করে যেতে রাজি হলো না । কি করবো। তখন সন্ধ্যা ঘনে এসেছে।শূণ্য নদীর তীরে নির্জন বালুচরে একাকী পড়ে রইলাম।

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

একটাই স্বপ্ন দেখা

এক সময় মনে হতো আমি সবার রাজকুমার।বিয়ের পরে হয়ে গেলাম শুধু তোমার।আগে সাগরের জলে ভেসেছি এখন দিঘীর জলে ভেসে বেড়াই।আগে রঙ্গিন চশমায় দেখতাম পৃথিবী,এখন স্বচ্ছ গ্লাসে তোমাকে দেখি।আগের স্বপ্ন গুলো ছিলো এলোমেলো, এখন স্বপ্ন দেখি একটাই- তোমাকে নিয়ে সুখের ঘরবা্ঁধা।

আমার বর

কিশোর বয়সে পাড়ার এক ভাবীর গোলাপী গালে টোকা দিয়ে বলেছিলাম- খুবই সুন্দর তোমার গাল। আর একদিন তার কাজল কালো চুলের গন্ধ নিয়ে বলেছিলাম- তি্ব্বত কদুর তেলের সুবাস আমার ভালো লাগে।আর একদিন, পিছন থেকে তার চোখ চেপে ধরেছিলাম- বলতে হবে কে ? সে ভুল করে বলছিলো- আমার বর।

এসো রাত্রি এসো জ্যোৎস্না

এসো রাত্রি এসো জ্যোৎস্না এসো তুমি
এসো আলোতে এসো আধারেতে
এসো নৈঃশব্দে এসো একাকীত্বে
দখিন দুয়ার খোলা,দখিন জানালাও খোলা
এসো বুকে এসো অলক্ষ্যে এসো আনন্দলোকে
এসো যামিনী এসো ওগো কামিনী
এসো চরণ নাচিয়ে এসো বক্ষ দুলিয়ে
এসো রাত্রি এসো জ্যোৎস্না এসো তুমি
খোলো বাস খোলো অনর্বাস,হবে সহবাস।

ভালোবাসি

 নির্জন শ্মশাণ ঘাটের পুড়ে থাকা করোটি আর হাড়গোরের গন্ধের মধ্যে বসে তোমাকে আমি বলতে পারি- ভালোবাসি।গোরস্থানের কবরের বাঁশের চাটাই আর কাফনের কাপড়ে বসে রাত্রি নিশীথে ঝি্ঁঝিঁ পোকাদের গান শুনতে শুনতে তোমাকে আমি বলতে পারি- ভালোবাসি। শিয়াল,কুকুর,সরিসৃপ,গিরগিটি,,কীট পতঙ্গ ঘেরা কোনো জঙ্গলে ভয়লেশহীন কন্ঠে তোমাকে বলতে পারি- ভালোবাসি।

ধরিত্রীর উষ্ণতা

কি করে ভুলে থাকতে পারি এই আকাশ, ধরিত্রীর উষ্ণতা, বাতাসের সতেজতা, জলের ঝিকিমিকি। এই ধরিত্রীর প্রতিটি অংশই আমার  কাছে পবিত্র। পাইন গাছের প্রতিটি চকচকে ডগা, বালুকাময় প্রতিটি সমুদ্রতট, অন্ধকার বনভূমিতে জমে থাকা কুয়াশা, প্রতিটি প্রান্তর, প্রতিটি পতঙ্গ আমার পবিত্র। কি করে ভুলতে পারি ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা সেই ঝিলিমিলি বাতাস।অশোথের গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতার শব্দ।এই সবই আমাকে ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যায়।

শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুমি আসো বসন্ত দিনে

তোমার প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ আমার প্রিয়
এই যে আনত গ্রীবা বে্ঁকে আছে প্রথমা চা্ঁদের মতো
তোমার করতল,তোমার কু্চকানো ভ্রু,গালের পাশে খয়েরী তীল
কখনো প্রিয় হয় রোদ্রের ঝিলিক মাখা ঠো্ঁট
যেখানে গোলাপের পা্ঁপড়ি ঝরে পড়ে সকাল বিকেল
আমার ভালোলাগে জলভরা চোখ
যে কা্ঁদে মেঘে কা্ঁদে বৃস্টিতে কা্ঁদে
আমার কাছে তোমার আসাটা প্রিয় হয়
তুমি আসো কখনো তপ্ত দুপুরের রোদ্রে পুড়ে
তুমি আসো কাদাজল ভেঙ্গে বূস্টিতে ভিজে
তুমি আসো বসন্ত দিনের উদ্ভ্রান্ত বাতাসে।

এই দেশ আমাদের মা

তোমার সন্তানদের বলবে যে এই মাটিতে মিশে আছে শহীদদের রক্তের দাগ, পায়ের তলায় যে মাটি তাতে আছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবাশেষ।আমাদের স্বজনদের,আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রাণ মাটিতে মিশে একে সমৃদ্ধ করেছে, তাই এই মাটিকে যেন তারা শ্রদ্ধা করে। তোমার ছেলেমেয়েদের শিখিও- এই দেশ আমাদের মা।মায়ের মতোই একে ভালোবাসতে হবে।যদি প্রাণ দিতে হয়- দেবে প্রাণ।

নাফ নদীর কান্না

 আরাকান,জ্বলছে রাখাইন,জ্বলছে মংডু,জ্বলছে
 রোহিঙ্গাদের,মারছে রোহিঙ্গা,গণহত্যা চলছে
ধর্ষিত হচ্ছে তরুণী,যুবতী,দাসী,যৌনকর্মী
রক্তে ভাসছে কালাদান,লেশ্রু,মায়ু নদী
রক্ত গড়িয়ে  নামছে সাবরিনি,কাইন দিয়ে
লুসাই পাহাড় দেখছে গণহত্যার বিভৎসতা,
ইয়োম পর্বতমালা শুনছে রোহিঙ্গাদের গগনবিদারী কান্না                                                                                 নারী শিশুর আর্তনাদে ভারি হয়েছে লংগিয়েতের বাতাস
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘশ্বাসে বিষন্ন পেরিসের আকাশ।

ছি! অংসান সূচি ! কি লজ্জা ! কি শান্তির ছো্ঁয়া তোমার নভেল পদকে
পদদলীত করি তোমার পুরস্কার,তুমি শুনে যাও এসে নাফ নদীর কান্না,
এই যে এতো মৃত্যু এখানে এই উপত্যাকায়
কোথায় এ্যামনেস্টী ? কোথায় জাতিসংঘ ? মানবধীকার ধ্বজাধারী্রা ?
ধিক্কার মুসলিম জাহান, আহা ! কোথায় পাকিস্তান ?
কোথায় আরব বিশ্ব ? কোথায় ইরান,তুরান, আফগানিস্তান ?
ছি! ধিক্কার দেই,অভিশাপ দেই,থুথু দেই তোদের চোখে মুখে।

নাফ নদী দিয়ে ভেসে আসা লাশ দাফন করতে হবে আমাদেরকে
নাফ নদী দিয়ে ভেসে আসা মানুষের কান্না থামাতে হবে আমাদেরকে
যতো দায় যেনো আমাদের, বাংলাদেশের, এ দেশের মানুষের !


তুমিতো বিরহিনী নও

তুমি আমাকে না বলে দিগন্তে নেমে আসা আকাশ ছু্ঁইতে গিয়েছিলে
তুমি একা পাহাড়ের ঝর্ণাতলায় স্নান করে শীতল হতে গিয়েছিলে                                                                     পাথরে রেখেছিলে পা, জলে ভিজিয়েছিলে চোখ,মুুখ ও শরীর।
তুমি একদিন বকুল তলায় একা হেটে হেটে গান গেয়েছিলে
নীল রং শাড়ী পড়ে একাকী দাড়িয়েছিলে বিকেলের বারান্দায়
দখিনের হাওয়ায় উড়েছিলো তোমার চুল,শাড়ীর আঁচল
তুমি রাতের আধার দিয়ে একা ঢেকে রেখেছিলে তোমার মুখ
তুমিতো বিরহিনী নও,তবে কেন নিজেকে এমন একা করে রাখা।


এই জীবন,এই পথ

ঘর হতে বেরিয়ে আলোতে এসে দাড়াই।বাইরে এতো আলোর ছ্বটা, ঝলমল করছে বৃক্ষরাজি,অ্ট্টালিকা,পশু,পাখী, পাহাড়,নদী,সাগর ।মনে হচ্ছে এই আলো মেখে পরিপূর্ণ করি আমাদের জীবন।আমাদের স্বপ্ন দেখা শেষ হয় নাই, জীবন পরিপূর্ণ হয় নাই। আমার সাথে তো একজন সাথী আছে, সে এখনো আমার হাত ধরে আছে। যে আলো আজ দেখছি সে আলোয় দু'জনে মিলে পথ চলে যেতে পারবো অনেক দূর। জীবন কোথাও শেষ করতে চাইনা। পথ চলাও না।এই জীবন,'এই পথ কোনো দিন যেন শেষ না হয়।'

বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

সুন্দর আছি

মুঠোফোনে আজ আমাকে একজন বললো- সুন্দর আছেন তো ? ওপাশে ছিলো সুন্দরী বিবাহিত এক রমণী।তার চোখ দিয়ে কি সুন্দর দেখতে চেয়েছেন- জানি না।আমি পরকিয়ায় অভ্যস্ত নই। অবিবাহিত পরকিয়ারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই। খুবজোড় আমি তাকে নিয়ে লিখতে পারি একটি কবিতা।সেখানেই বলে দিতে পারি, সুন্দরের সব কথা।আমি সেই রমণীকে বললাম- সুন্দর আছি।ওপাশ থেকে কোনো কথা বললো না । তখন আমি আবার বললাম- You may check your Inbox tomorrow.

আধারে তোমাকে খু্ঁজি

তুমি নেই আমার মন ঘুরে বেড়ায় তোমার ছায়ায়
যে বিকেলে বিছিয়েছো তোমার আ্ঁচল অসীম মায়ায়
সে বিকেলও সন্ধ্যা আসার আগেই অস্তমিত হয়ে যায়                                                                                        দূরে কোথাও বাজে কেবলই তোমার নিঃশব্দ পদধ্বনি
রাতের গভীরে সে পদধ্বনিও নীলিমায় যায় মিলিয়ে
রাতের আধারে তোমাকে খু্ঁজি ভিজায়ে চোখের জল
সে রাতও কখনো ভোর হয় নাই হয়েছি কেবল আকুল।

বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬

যে অপেক্ষায় আছে

বসন্তের যামিনী তোমার আমার
 প্রেম দোলায় দুলবে আমাদের প্রাণ
 আনন্দলোকের গাওয়া  কোনো গান নয়
 আনন্দ বীর্য ঘুরবে সেখানে নিরন্তর
 আমাদের দায় আছে প্রজন্মের কাছে,
যে অপেক্ষা করছে- ও পাশের দরজায়
যে আসতে চায়- আনন্দ ধারায়।


ঘরেও আছি,বাগানেও আছি

এখন শিশিরের সকাল, রোদ্র শুরু হয়েছে আরো সকালে
তুমি ঘুমহীন থাকো, বিছানায় এলোমেলো রাতের পোষাক
সকালের ঘুম শুরু মধ্যরাতে, চা্ঁদ ছিলো না কাল যামিনীতে
তোমার গ্রীবা নতো হয় নাই, আমার চু্ম্বনের সময়ে
তুমি যদি সকালের ঘুম ভেঙ্গে যেতে চাও,যাবে-
মিটিয়ে আমার সকল চাহিদা যতো, যদি থাকতে চাও,থাকবে-
 দুপুরের রোদ্রে হেটে বেড়াও গোলাপের বাগানে
যদি প্রজাপতি এসে পড়ে তোমার গালে
তাকে তুমি চুম্বনে ফেরাও ঠো্ঁটে
আমি তোমার ঘরেও আছি,বাগানেও আছি
যেখানে মধুকর ্প্রজাপতি ঘুরে বেড়ায়,আমি সেখানেও আছি
আমি তোমার থেকেই অমৃত সুধা করবো পান।


আমাদের প্রেম

অনেকদিন আমরা একে অপরে আলিঙ্গন করিনি
আমাদের বুক হয়ে গেছে তাই মরুভূমির ধূধূ মাঠ
অনেকদিন আমরা একে অপরে চুম্বন আ্ঁকিনি
আমাদের ঠো্ঁট হয়ে গেছে তাই শুস্ক নদীর ঘাট
অনেকদিন আমরা একে অপরে মিলিত হইনি
আমাদের অস্থি হাড় হয়ে গেছে তাই চৌচির বালুচর                                                                                             আমাদের একে অপরে মাঝে কোনো প্রেম নেই
আমরা  ম্লান হয়ে গেছি তাই শূণ্যতার গহীন ভিতর
 অরণ্য ছেড়ে আমরা চলে গিয়েছি দূরের পথ ছাড়িয়ে
আমাদের পায়ের ছাপগুলি পথের ধূলিতে গেছে হারিয়ে।

জীবনের পরিসংখ্যান

কোনো কিুই আজ আর মেলাতে পারি না।জীবনের কতোগুলো সময় আলস্যে কর্মহীন ভাবে পার করেছিলাম। কতোগুলো দিন ছিলো নির্মল আনন্দের।কতোগুলো দিন ছিলো দুঃখ আর বেদনার।কার কাছ থেকে কতোটুকু অনাদর পেয়েছিলাম, কে কতো ভালোবাসা দিয়েছিলো । জীবনের এই প্রান্তবেলায় অনেক কিছুই মিলছে না। তারচেয়ে বরং হিসাবের এই পাতাটি বন্ধ করে রাখি।

নক্ষত্রের রাত

নক্ষত্রের রাত বলি আর তারার রাতই বলি
পূর্নিমার রাত বলি কিংবা অমানিশার রাতই বলি
তোমাকে পাওয়ার জন্য সব রাতই মধুর।
নক্ষত্র ঝরে পড়ে আকাশ থেকে,
পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় স্নাত হয় পৃথিবীর জমিন
তুমি তখন শুয়ে থাকো ঘাসে
রাতের কালো ঝালর জড়িয়ে থাকে তোমার শরীরে
কালো পর্দার নিচে থাকে তোমার বু্ঁনো রূপ
যে রূপ দেখে নক্ষত্রের আকাশ
যে রূপ দেখে বিমুগ্ধ হয় লতা গুল্ম ঘাস
আমাকেও তুমি কেড়ে নাও তখন
আমাকেও তখন মগ্ন থাকতে হয় নক্ষত্রের জলে
তখন পতন হতে থাকে সৌরজগতের সকল গ্রহ তারা
সব গ্রহ তারারা হারায় তখন তার আপন কক্ষপথ
আমরা তখন আত্মহত্যায় মেতে উঠি জমিনের উপর।




মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬

হৈমন্তিক শুভেচ্ছা

এই হেমন্তে এবার আর গ্রামে যাওয়া হলো না।দেখা হলো না সেই ছোট নদীটির তীরে ভোরের শিশির ভেজা ধানক্ষেত।এই শহরের ইট পাথরের মাঝেই চলছে জীবন। চলতে চলতেই কতো হেমন্ত চলে গেল।সময় বহিয়া যায়,আমাদের বার্ধক্যের বলিরেখাগুলি উজ্জ্বল হতে থাকে।প্রাণশক্তিও কালের স্রোতে হারিয়ে যায়।সবাইকে হৈমন্তিক শুভেচ্ছা।

হেমন্তের জনারণ্যে

অনেকটা হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেলো আজ দু'জনের
শহরের পিচ পথে লাইট পোস্টের নীচে যেখানে অন্য কেউ ছিলো না
আলো আধারের নিমগ্নতায় তোমাকে দেখলাম
শুস্ক খুসকো খুসকো ঠো্ঁট যেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি অনেককাল
দেখলাম বুকের ্আঁচল ম্রিয়মান, যেখানে কোনো সুগন্ধি ছিলো না
মনে হলো কতোকাল এই বুকে কারো একটি আলিঙ্গন পড়েনি।

আজ আর তোমার হাতখানি ধরা হলো না
 মেহেদিহীন কোমল নোখগুলো হয়ে গেছে পর
হাটছিলাম এলোমেলো দু'জন এভাবে হাটে না কোনো ্প্রেমিক প্রেমিকা
তোমার সেই কাজল আ্ঁকা চোখ দু'টো দেখছিলাম বার বার
কাজল নেই সেখানে কালচে পড়েছে জল পড়া  নুরীর মতো
যেখানে কোনো দুঃখ ছু্ঁইতে দেইনি কোনো সময়ে কোনো অনাদরে
সেই তোমাকে দেখছি আজ হয়ে গেছো দীনহীনা অভাগীর মতো।

পথচারীরা আজ কোনো দুঃখ দেখলো না তোমার
এরাই সাক্ষী ছিলো একসময় কতো ভালোবাসার স্পর্শের
কতো চুম্বন দেখেছে পার্কের পাখী,কতো আলিঙ্গন দেখেছে বনের কাকাতূয়া
আজ এই হেমন্ত সন্ধ্যায় সে সবই দুঃখ জাগানিয়া নস্টালজিক
কোনো কথা না বলে কোনো চুম্বন আর আলিঙ্গন না রেখেই
 বিষাদময় এই সন্ধ্যায় জনারণ্যে তুমি হারিয়ে গেলে।

সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬

তুমি আছো

আমি যখন কবিতা লিখি সে কবিতার শব্দ উপমা হয়ে তুমি আসো
আমি যখন গান লিখি সে গানের ছন্দ ও সুর হয়ে তুমি চলে আসো
আমি যখন গল্প লিখি সে গল্পের অতৃপ্ত চাওয়া পাওয়া হয়ে তুমি ধরা দাও
আমি যখন উপন্যাস লিখি সে উপন্যাসের দুঃখ বেদনাগুলি তুমি হয়ে যাও
আমি যখন আমার জীবনী লিখি সেই জীবনীর সবটাই জুড়ে তুমি থাকো
তুমি কখনো শ্বাস কখনো প্রশ্বাস কখনো দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঝরে পড়তে থাকো
তুমি আছো ভোরের পাখীর গানে তপ্ত দুপুরে আর নীশিথ অন্ধকারে
তুমি আছো সকল কর্মে সকল নির্ঘুম স্বপ্নে আর আমার ক্লান্ত অবসরে।


প্রেমিক তুমি

আমার মাথায় জিপসীদের মতো বড়ো বড়ো চুল
পিছন থেকে দেখে মনে হয় আমি একজন তরুণী
পরনে ছে্ঁড়া তালি দেওয়া জিন্স প্যান্ট
হাতে পিতলের ব্রেসলেট,কাউবয়ের মতো মুখে দাড়ি
ঠো্ঁটে জ্বলে থাকে জ্বলন্ত সিগারেট সর্বক্ষণ
তুমি বললে-আমি এমন ছেলেকেই প্রেমিক করি।

মাঝে মাঝে ইয়াবা খাই,গা্ঁজাও টানি
খাওয়া নাওয়া নেই ঠিকমতো,মলিন কাপড় পড়ে থাকি
দুপুরের রোদ্র্রে পিচ ঢালা পথে হাটি একা একা
পায়ে চপ্লল কানে জ্যাক লাগিয়ে গান শুনি
তুমি বললে- এই ধরণের ছেলেই আমি লাইক করি।

নিজের ঘর নেই ঘর বাধা্ঁর স্বপ্নও নেই
সংসার বৈরাগ্যেই আমি সুখ খু্ঁজে বেড়াই
তারপরও পার্কের ব্রেঞ্চে বসে একদিন চৌচির দুুপুরে
তোমার এলোমলো চুলের সুগন্ধি নিয়ে বললাম
তুমি আমার বউ হবে ? তুমি বললে-ে না,
এমন ঊড়নচন্ডিদের আমি বিয়ে করি না।'

শান্তি ও সৌম্যের পথে ফিরে আসে

ধর্মীয় জঙ্গি এবং নাস্তিক এই দুটো গোস্ঠীর কারণে পৃথিবী আজ এতো অশাান্ত হয়ে উঠেছে। আমি এদের নিপাতও চাইনা, ধ্বংসও চাইনা। আমি এদের জন্য মঙ্গল প্রার্থণা করি,এরা যেনো শান্তি ও সৌম্যের পথে ফিরে আসে।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬

ঘুম

মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে সে তখন বুুঝতে পারে সে একটি জগতে আছে।কারণ ঘুমেরও একটি জগৎ আছে,সে জগৎ কিছু স্বপ্ন দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে।সে স্বপ্নগুলি বাস্তব ও লৌকিক জীবনের মতোই। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আমি অন্ততঃ বুঝতে পারি, এতোক্ষণ আমি অন্য একটি জগতে ছিলাম।তেমনি মানুষের মৃত অবস্থারও একটি জগৎ আছে।সেটা অনেকটা ঘুমের মতোই।মৃতের জগৎটা হয়তো গভীর কোনো স্বপ্ন দ্বারা আচ্ছন্ন থাকবে।সে স্বপ্নগুলোতে সে তার প্রিয় মানুষগুলো ও লৌকিক জীবন দেখতে পাবে।পার্থক্য এইটুকুই ঘুমের ঘুম ভাঙ্গে,কিন্তু মৃতের ঘুম আর ভাঙ্গে না।

আমি তো তোমারে চাহিনি

সিডি রাখার রেকর্টিতে ধুলো জমে গেছে।আগের মতো আর সিডিতে গান শোনা হয়না।আজ রেকটির ধূলো পরিস্কার করতে যেয়ে রজনীকান্তের লেখা এবং হেমন্তের গাওয়া একটি পুরানো সিডি পেয়ে যাই।এই সিডিটি আমার স্তীকে দিয়েছিলো আমাদের কোলকাতার বন্ধু হিমাদ্রি চক্রবর্তী ২০০৮ সালে।হিমাদ্রির পূর্বপুরুষেরা ঢাকার সাভারের ছিলো।ওর স্ত্রীর নাম পৃথা চক্রবর্তী।শান্তি নিকেতনের মেয়ে।ওদের আতিথীয়তায় সেবার সেখানে তিনদিন ছিলাম।শান্তি নিকেতনের আমতলায় সবুজ ঘাসে বসে হিমাদ্রি খালি কণ্ঠে গেয়ে শোনায়েছিলো রজনীকান্তের লেখা এই গানটি।হিমাদ্রি আর নেই।পৃথা গত বছর আমাদের দু'জনকে উদ্দেশ্য করে একটা মেইল পঠিয়েছিলো, সেই মেইলের কিছু অংশ এই রকম ছিলো- 'কর্কটের কাছে হিমাদ্রির দেহ হার মেনেছে কিন্তু ওর চিত্ত পরাভূত হয়নাই।বেলেভিউর কেবিনের অ্ন্তিম শয্যায় শুয়ে শুয়ে হিমাদ্রি তোমাদের কথা অনেক বলেছে।তোমরাতো ভুলেই গেছো । সেই যে চলে গেলে আর এলে না।হিমাদ্রির ছাই ভস্ম রেখে দিয়েছি।যদি আসো আর একবার তাহলে তোমাদেরকে দিয়ে দিব এই ছাই ভস্ম।এগুলো ফেলে দিবে হিমাদ্রির পূর্বপুরুষদের বংশী নদীর জলে।' এবার শুনি রজনীকান্তের সেই গানটা-
আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে তুমি অভাগারে চেয়েছ;
আমি না ডাকিতে, হৃদয় মাঝারে নিজে এসে দেখা দিয়েছ।।
চির-আদরের বিনিময়ে সখা! চির অবহেলা পেয়েছ......."

পৃথা,কে বলে হিমাদ্রি আর নেই। আমরা  আবার আসবো শান্তি নিকেতনে,বসবো আমতলার সবুজ ঘাসে।সেদিনও  হিমাদ্রি গেয়ে শোনাবে এই গান।

সেলিয়া - ফিডেলের প্রেম

তারা দু'জনই দ্রোহ করেছিলো বাতিস্তার বিরুদ্ধে একসাথে
তারা দু'জনই বিপ্লবী, যুদ্ধ করেছিলো  রনাঙ্গনে একসাথে
তারা কি প্রেম করেছিলো দু'জনই হৃদয়িক বিপ্লবে একসাথে?

সেলিয়া ফিডেলকে বলেছিলো তুমি আমার প্রেম
ফিডেল বলেছিলো আমি তোমার দেশপ্রেম
যুদ্ধমাঠে সেলিয়া  বিপ্লবী যোদ্ধাদের সেবা করেছে
সেলিয়া যুদ্ধমাঠে ফিডেলকে শুধুই কি সেবা করেছে ?

সেলিয়া তোমার রূপ কি বারুদের গন্ধে মেশেনি কিউবার আকাশে ?
তোমার অপরূপ রূপ কি একবারও বিমোহিত করেনি ফিডেলকে ?
তা্ঁবুতে তা্ঁবুতে সেদিন কি কেবলই অস্তের ঝনঝনানি বে্ঁজেছে-
তোমার অন্তরদোলায় একবারও কি দুলে ওঠেনি ফিডেলের অন্তর আকাশ ?

ময়মনসিংহ জংশন

অনেক দিন আগের সে কথা। নতুন বিয়ের পরে বউকে নিয়ে ময়মনসিংহে এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।যেদিন ঢাকায় ফিরবো সেদিন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ময়মনসিংহ জংশনে।ট্রেন আসতে অনেক লেট।স্টেশনের একটু পূর্বদিকে পুরানো একটা ব্রেঞ্চে বসে আমরা অপেক্ষা করছিলাম।একজন পঞ্চাশোর্ধ লোক তখন আমাদের কাছে ঘুর ঘুর করছিলো,বার বার তাকিয়ে দেখছিলো আমার বালিকা বধূকে।কিন্তু তার সেই চাহনীতে কোনো লাম্পট্য ছিলো না। খুব মায়া করে দেখছিলো ওকে।এক পর্যায়ে লোকটি আমাদের পাশে এসে বসে।এবং আগ বাড়িয়ে সেই কথা বলছিলো বেশী।সে নেত্রকোনা যাবে।লোকটি আমাদের এটাওটা কিনে খাওয়াতে চায়।আমরা বিরক্ত হই।সে আমার বউয়ের সাথে টুকটুক করে কথাও বলছিলো । হঠাৎ লোকটি উঠে চলে গেলো।মনে মনে ভাবলাম,যাক,বা্ঁচলাম। ঢাকার ট্রেন আসতে তখনো আরো দেরী।আমরা বসেই আছি। প্রায় আধা ঘন্টা পরে লোকটা আবার ফিরে আসে।তার হাতে একটি প্যাকেট। আমার স্ত্রীকে প্যাকেটটি দিয়ে বলে- মা,এই তা্ঁতের শাড়ীটি তোমার জন্য্ এনেছি।' আমার দিকে তাকিয়ে বলে- বাবাজি ঠিক ওর মতো দেখতে আমার একটি মেয়ে ছিলো।মাত্র একমাস আগে আমার সেই মেয়েটি মারা গেছে।' ওনার চোখে মুখে একটি মায়ময় পিতৃমুখ দেখতে পেলাম।  ওনার হাত থেকে শাড়ীর প্যাকেটি আমার স্ত্রীকে নিতে বলি।আমাদের ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে তখন স্টেশনে এসে পৌ্ঁছে ।খুব তাড়াহড়ো করে লোকটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ট্রেনে উঠে পড়ি।ট্রেনের সিটে বসে আছি, আমার স্ত্রী খুব মন খারাপ করে বলছিলো- তুমি ওনাকে আমাদের বাসার ঠিকানাটা দিয়ে আসো।' ভাবলাম নেমে গিয়ে ঠিকানাটা দিয়ে আসি । কিন্তু নামা হলো না।ট্রেন ছাড়বার হূইসেল তখন বেজে উঠেছে। ঝিকঝিক করে ট্রেনটি ছেড়ে চলে আসতে থাকে ঢাকার দিকে।

শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬

শত সহস্র দিনের অপেক্ষা

আমার স্বপ্নগুলো এখন আর স্বপ্নে নেই
সহস্র দিনের অপেক্ষার পর আজ পূর্ণতা পেলো প্রেম
আজ এখানে সুখের ঝলক আজ এখানে বইছে আনন্দধারাা
স্বপ্নেও যে চুম্বনগুলো কখনো পাইনি
আজ শত সহস্র চুম্বন যেনো ঝরে পড়ছে কপাল থেকে কপোলে।

আজ আর স্বপ্ন দেখা সেই রাত্রি নেই
যে মধুময় রাতের জন্য শত সহস্র রাত অপেক্ষা করেছিলাম
আজ এই রাতে অপেক্ষাগুলো অনন্ত ভালোবাসা হয়েছে
বঞ্চনার প্রেমগুলো পূর্ণ হলো এই অপার রাতের মহিমায়।

আজ এখানে আর কোনো স্বপ্ন নেই
আজ এখানে কেবল ভালোবাসার জয়োৎসব চলছে
যে প্রেম ছিলো দূর আকাশের মিটিমিটি এক নিস্প্রভ তারা
সে তারা আজ রাতে এখানে পূর্ণিমার চা্ঁদ হয়ে জ্বলছে।

তুমি, নির্মল কর

 ফিডেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, 'আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।' কথাটা এখন প্রায় কিংবদন্তি।   ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, 'মুজিব তোমার মত আমারও শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রাম।'কিউবার এই সাড়া জাগানো বি্প্লবী কমিউনিস্ট নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে শোসিত মানুষগুলোর কাছ থেকে আজ বিদায় নিয়ে  চলে গেলেন।পৃথিবী আর কখনো ফিরে পাবে না ক্যাস্ট্রোর মতো এই রকম একজন বিপ্লবী মহান কমরেডকে ? হে ধরিত্রী, হে ঈশ্বর-
'তুমিনির্মল করমঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে। তব, পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক্, মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।'

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

মধ্যরাতের কবিতা

তুমি শোনো আমার কথা,প্রেম নেবে আমার ?
শরীর গে্ঁথে নেবে তোমার শিল্পে,
আমাকে দেনমোহরে বা্ঁধতে চাও ?
তোমার রূপ রূপকথার রূপবানের মতো
আমি দাড়িয়ে তোমার চোখের মায়া দেখি
আমি তোমাকে লিখে রাখি আমার কবিতায়
তুমিতো একসময়ে ছিলে খৈয়ামের রূবাইয়াতে
আমি সরাব শেষ করি,তুমি তখন সাকী হও
তোমাকে যখন ভালোবাসি তখন সীমান্ত মানি না
নো ম্যান্স ল্যন্ড মানি না
তোমাকে তখন শরীর শিল্পে বে্ঁধে রাখি,
তুমি মধ্যরাতের ্প্রেমগুলো আমাকে দিয়ে দাও                                                                                                  তোমাকে আমি শিল্প করে রাখবো  কবিতায়।

তোমাকেই বাসিতে ভালো

তোমার কাছেই আনন্দ চাই তোমার কাছেই চাই যে সুখ
মুছে দাও যাতনা যতো মুছে দাও তুমি আমার মলিন মুখ
নয়ন খুলে দেখতে চাই না আধার, দেখতে চাই আলো
তোমাকেই মনে রাখতে চাই তোমাকেই বাসিতে ভালো।

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

যে পথগুলোতে পায়ের চিহ্ন আ্ঁকা আছে-

কাল মেয়েকে নিয়ে নিলক্ষেত গিয়েছিলাম ওর একটি বই কিনতে।কি মনে করে ওর হাত ধরেে হেটে হেটে চলে যাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। যে পথ দিয়ে ওকে নিয়ে হাটছিলাম সে পথগুলো দিয়ে একসময় আমি অনেক হেটেছি।প্রথমেই মহসিন হলের মাঠের পশ্চিম পাশে রাউফুন বসুনিয়ার ছোট্র মূর্তিটি দেখালাম,বললাম-এই ছেলেটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলো।তারপর চলে যাই কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।বললাম-এটি নির্মাণ করেছে ভাস্কর আব্দুল্লাহ খালিদ।এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি সেরা ভাস্কর্য। কলাভবনের দোতালায় হাত দেখিয়ে বললাম- ঐখানেই আমাদের বাংলা বিভাগ- যেখানে আমি পড়েছিলাম ছয় বছর।আমাদের শিক্ষক ছিলেন- ডঃ আহমদ শরীফ,ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম,ডঃ মনিরজ্জামান,ডঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। তা্ঁরা কেউ আর আজ বে্ঁচে নেই। কলাভবনের বটতলা দেখিয়ে বললাম,এখানেই একদিন আমাদের দেশের পতাকা প্রথম উত্তেলিত হয়েছিলো।তারপর আস্তে আস্তে হেটে চলে যাই মধুর রেস্তোরার দিকে।ডানদিকে গুরুদ্বুয়ারা নানক সাইয়ের মন্দিরটি দেখিয়ে বলি,এটি একটি শিখ উপসানালয়।মধুর রেস্তোরার পুরানো একতলা বিল্ডিংটি দেখিয়ে বলি,এই সেই রেস্তোরা যেখান থেকে আমাদের দেশের সমস্ত আন্দোলনগুলো পরিচালিত হয়েছিলো। এটির মালিক ছিলেন,শহীদ মধু দে।তা্কে বেওনেট দিয়ে কুচিয়ে ুকুচিয়ে ্হত্যা করেছিলো পাকসেনারা। ওখান থেকে হেটে হেটে লাইব্রেরীর দিকে চলে যাই। নভেরার তৈরী ভাসকর্যগুলো দেখিয়ে বলি,এই শিল্পীটি আর বে্ঁচে নেই।সুদূর ফরাসী দেশে নিঃসঙ্গ একাকী নির্বাসিত অবস্থায় মারা গেছেন।তারপর দুজন লাইব্রেরীর বারান্দায় এসে বসি।ভাষা ইনিস্টিউটের পূর্ব জায়গাটা দেখিয়ে বলি,এইখানে বা্ঁশের চালার শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন ছিলো।একদিন গরম সিঙ্গারা খেতে যেয়ে আমি আমার জিহবা পুড়ে ফেলেছিলাম।বাম দিকের খালি ঘাসের চত্বরটি দেখিয়ে বলি,এটির নাম হাকিম চত্বর।ঐ যে কড়ই গাছটি দেখছো,ওখানে বসে হাকিম মিয়া চা বিক্রী করতো।আমরা চা খেয়ে অনেক সময় পয়সা দিতাম না। বলতাম 'আজ নেই।' কিছুু বলতো না হাকিম মিয়া। সেও আজ বে্ঁচে নেই।অনেকদিন পর হাকিম মিয়ার ছেলের কাছ থেকে আমরা দুজন চা খেলাম।মেয়ের হাত ধরে হাটতে হাটতে টিএসসি র দিকে যাই,ডানদিকে রোকেয়া হলটি দেখিয়ে বলি-এই হলে তোমার বকুল ফুপি থাকতো। সামনে পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতেই বাম দিকের সৌধটি দেখিয়ে বললাম-এটি শহীদ ডাঃ মিলন স্মৃতি সৌধ।নব্বইয়ে গণআন্দোলনে ঠিক এই জায়গাটিতে তিনি শহীদ হয়েছিলেন।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মেয়েকে নিয়ে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মূর্তির পাদদেশের কাছে যেয়ে দাড়াই।মূর্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম-একাত্তরের অনেক নাম না জানা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েেছে।প্রখ্যাত ভাস্কর শিল্পী শামিম সিকদার এটি তৈরী করেছেন।আমি মেয়েকে নিয়ে ভা্স্কর্যের পাশে পাকা সোপানের উপর বসি। নিরব হয়ে বসে আছি,কোনো কথা বলছিলাম না। মেয়ে একটু উদ্বেগের সহিত বলছিলো-বাবা,তুমি কি ক্লান্ত ? আমি বললাম- না মা।

শেষ প্রান্তরেখা

মুহূর্তেই জীবন ফুরিয়ে গেল।আজ সকালে যে রং যে আভা দেখলাম,কাল সকালে তা খু্ঁজে পাওয়া যায় না।পলকেই সবকিছু বদলে যায়।জীবন যে রেখা থেকে শুরু হয়েছিলো সে রেখায় ফিরে যাবার কোনো পথ নেই।চলতে চলতে পথের মাঝেই জীবন শেষ হয়ে গেলো। আজ যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে পথের শেষ প্রান্তরেখাটি দেখা যায়।

যদি আর ঘুম না ভাঙ্গে

আধার নেমে এসেছে পৃথিবীতে,জোনাকীরা জ্বালিয়েছে সব আলো
একে একে জ্বলে উঠেছে সব তারা- ্ধ্রবতারা,অরূন্ধতী,স্বাতি
নয়ন মেলে দেখো আমাকে আর একবার
ঘুমিয়ে পড়ার আগে সব চুম্বনগুলো আমাকে দিয়ে দাও
যদি আর ঘুম না ভাঙ্গে কাল সকাল বেলায়।

‘বেথেলহেম ফুল’

রাতের রানী ( Night Queen) নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বহু কাহিনী বিখ্যাত হয়ে আছে। দু'হাজার বছর আগে বেথেলহেম শহরের এক রাত্রি। শহরের প্রত্যেক বাড়িতে ফুটে আছে রাতের রানী । সবাই ভালোবাসে এই ফুলটিকে।সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফুল ফুটতে দেখে কৌতূহলী হয়ে পাশের বাড়িতে ছুটে যায় জানাতে, গিয়ে দেখে তাদের বাড়িতেও ফুটেছে নাইট কুইন। আরেক বাড়িতে ছুটে যায়,অন্য জন অন্য বাড়িতে। তারা সবাই অবাক ! প্রতিটি বাড়ীতে নাইট কুইন ফুটে আছে। প্রকৃতি কেন এমন অজানা উৎসবে মেতে উঠল কেউ বুঝতে পারলো না। পরে সবাই বুঝতে পারলো, সেই রাতে বেথেলহেমের ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহেমের সব রাতের রানী (Night Queen) মেতে উঠেছিল প্রভু যিশুর জন্মোৎসবে। এজন্য আজও ‘বেথেলহেম ফুল’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত এই নাইট কুইন !  

অমরাবতী

তুমি ভালোবাসায় পুড়ে ছাই হলে,ছাই হয়ে উড়ে চলে গেলে অমরাবতীতে।তুমি আমাকেও পোড়ালে,আমিও ভস্মিত হলাম, আমার ভস্মগুলো উড়ে চলে গেলো সেই পুণ্যভূমিতে,যেখানে অমরাবতী হয়ে তুমি অপেক্ষা করছো আমারই জন্যে।

ভালোবাসা ঝরে পড়লো অনাদরে

আমি তোমার উঠানে ফুল হাতে দাড়িয়েছিলাম,তোমার খোপায় ফুল পড়াবো বলে।দুপুর পর্যন্ত ঠায় অপেক্ষা করলুম, তারপরও তুমি আসলে না। পাথরের মূর্তির মতো শুয়ে রইলে।আমার হাতের সব ফুল রোদ্রে পুড়ে ঝরে গেলো,।যেনো সব ভালোবাসা ঝরে পড়ে গেলো অনাদরে।পাষাণির কোনো মন খারাপ হলো না।

এই শহরের মায়া

এই শহরে যৌবনের সেই প্রথম প্রহর থেকে  মায়ায় বে্ঁধে আছি। অট্রালিকার ফা্ঁকে যে চা্ঁদ আমি দেখি,তা আমি দেখেছিলাম জারুল আর বা্ঁশঝারের ফা্ঁক দিয়ে আমাদের গ্রামে।এখানেও নদী আছে, স্বচ্ছ জল আছে,রবীন্দ্র সরোবর আছে। পীচ ঢালা মসৃন পথ আছে। এখানে পথের পাশে ইট সুরকি বালি ফেলে রাখা আছে। ছে্ঁড়া কাগজ বাতাসে উড়ছে। সেই কাগজ থেকেএকটি কাগজ কুড়িয়ে পড়ে দেখো- সেখানে আমার নাম লেখা আছে।

তোমার আনন্দে

তোমার আনন্দে আমি আনন্দিত হই।আমার হৃৎপিন্ডের রক্তের চলাচল তখন গতি পায়।শরীরের সকল ধমনীগুলো প্রাণ পায়,হিল্লোলিত হয় হৃদয়।যখন তুমি দুঃখে থাকো,তখন রক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ে,ধমনীগুলো অবশ হয়ে যায়।নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হয়।আবার যখন ভালোবাসা দাও, তখন আমার সমস্ত যাতনাগুলো সুখ হয়ে যায়।

দুঃখিনী উপমা

আমার ভালোবাসাগুলো স্বপ্ন বানিয়ে রাখতে চাইনা।স্বপ্নের মধ্যে ভালোবাসা থাকুক এটাও চাইনা।তুমি আমার স্বপ্ন নও,স্বপ্নচারিণীও নও।তুমি আছো দিবস রজনীতে,আমার কর্মে,আমার কবিতা লেখায়।কখনো সুখের শব্দ হয়ে,কখনো দুঃখিনী উপমা হয়ে।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬

স্নাত হবো

জ্যোৎ্স্না রাতের গান আমি শুনতে চাইনা।রূপকথার রাজকুমারীদের কথাও নয়।আমি পূর্ণিমার মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখতে চাই তোমাকে।যেখানে বাইরের কোনো আলো স্পর্শ করবে না। অন্য কারোর পাপ নয়,পুণ্যও নয়।যে পূর্ণিমায় স্নাত হবো শুধু তুমি আর আমি।

নার্গিস

গ্রীক পুরাণের সুদর্শন যুবক নার্সিসাসের প্রেমে পড়ে মায়াময়ী কন্যা ইকো। কিন্তু নার্সিসাস ইকোর প্রেম প্রত্যাখান করে। প্রেমের দেবী  ভেনাসের অভিশাপে এবার নার্সিসাস নিজের প্রেমে পড়েন। বনের মাঝে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পিপাসার্ত নার্সিসাস হঠাৎ এক ঝরনার সন্ধান পেয়ে আসেন পানি পানের আশায়।আজলা ভরে পানি মুখের কাছে নিতেই সে পানিতে প্রতিবিম্বিত হয় এক অনিন্দ্য সুন্দর মনুষ্য মূর্তি_নার্সিসাসের নিজের মুখশ্রী। সেই অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান নার্সিসাস। কিন্তু কয়েক মুহূর্তেই আঙুলের ফাঁকা দিয়ে আঁজলার পানিটুকু পড়ে যায়। প্রতিবিম্বিত চেহারাটা হারিয়ে যায়। আবার আঁজলা ভরে পানি তোলেন। কিন্তু পানি মুখের কাছে আনতেই আবার সেই নিজেরই মুখশ্রী।এভাবেই নার্সিসাসের আঁজলায় পানি উঠতে থাকে আর পড়তে থাকে, পিপাসার নিবারণে একবিন্দু জলও পৌ্ঁছেনা ঠোঁটে কিংবা জিভে। পিপাসার যন্ত্রণায় প্রেম প্রত্যাখ্যানের পাপে অভিশপ্ত নার্সিসাসের এক কঠিন করুণ মৃত্যু হয়। পিপাসার যন্ত্রণাহত নার্সিসাসের এই মৃত শরীর থেকে প্রকৃতির আশীর্বাদে জেগে ওঠে একটি ফুল। গ্রীক মিথে সেই ফুলের নাম নার্গিস।

Forget Me Not

ঈশ্বর একদিন পৃথিবীতে বৃক্ষ ফুল লতাগূল্মের খো্ঁজ খবর নিচ্ছিলেন, কিন্তু এই ছোট্র ফুুলটির কাছে তিনি আসছিলেন না। তখন পাশ থেকে এই ফুলটি বলেছিলো- 'Forget me not' । সেই থেকে এই ফুলটির নাম হয়ে যায় 'Forget Me Not' বা 'আমাকে ভুলে যেওনা'।
একদিন হয়তো আমি এখানে থাকবো না। স্টাটাস লিখবে না কেউ আর এই পাতায়।তখন আমি কেবলই Remembering কোনো জন। এই ছোট্র ফুলটির মতো তাই বলে যাই,সেদিন যেনো তোমরা- Forget me not.


মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

সকালের শুভাশীষ

সকালবেলায় ঢাকার আকাশকে আজ ভালো লাগছে না,  ভোরের এই বাতাস, সূর্যোদয়, এই রৌদ্র কোনো কিছু না।ইচ্ছা হচ্ছে গ্র্রামের সেই সরিষা ক্ষেতের মাঠ মারিয়ে শিশিরে পা ভিজিয়ে দৌড়ে দৌড়ে চলে যাই, দিগন্তজোড়া সেই প্রান্তরের দিকে, যেখানে স্বপ্নগলো মিশিয়ে আছে দূরের নীলিমায়। সবাইকে সকালের শুভাশীষ।

ক্ষমতা

আমি তোমার সব দুঃখ মুছে ফেলতে চাই,কি্ন্তু কিছু দুঃখ আছে মানুষ চাইলেই মুছিয়ে ফেলতে পারে না।এই ক্ষমতাটা ঈশ্বর তার হাতে রেখে দিয়েছে।আমি আমার অসীম ভালোবাসা দিয়ে তোমার জীবনটাকে ভরে তুলতে চাই।এটা আমি করতে পারবো,কারণ এই ক্ষমতাটা ঈশ্বরের হাতে নেই, এই ক্ষমতা আমার হাতেই আছে।

তোমার চোখ

সকালে জেগে দেখি- তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেনো ঘুমের ঐ চোখ দুটো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।দেখলাম- চোখের পাতায় কোনো অশ্রু কনা নেই,আবার হাসিরও কোনো ঝিলিক নেই।কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হলো- এই চোখ রাতে কে্ঁদে কে্ঁদে ঘুমিয়ে গিয়েছে।

সাগর স্নান

প্রথম আমি যেদিন সাগরের জলে পা রেখেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো এ জল আমারই,জলে নেমে তাই সেদিন স্নান করেছিলাম।এর কয়েক বৎসর পর আবার যেদিন সাগরে গিয়েছিলাম, জল দেখে মনে হয়েছিলো,এ জল আমার নয়। তাই জলে নেমে স্নান করা হয়নি। পাপটা কখন ছিলো এখনো জানতে পারিনি।

যতো দূরেই যাই

আমি যতো দূরেই যাই,তোমার দৃস্টির সীমার মধ্যেই থেকে যাই।তুমি দেখতে পাও আমার  চোখ তোমার দিকেই চেয়ে আছে।যদি কখনো প্রাণহীন হয়ে যাই, মাটির ছায়ায় ঢেকে যায় সবকিছু, তখন আর দেখতে পাবে না আমাকে।আমিও দেখতে পাবো না,তোমার চোখ আমার জন্য কা্ঁদছে কিনা ?

তোমার আকুলতা

তুমি তাকিয়ে ছিলে আমারই দিকে,আমি দেখছিলাম তোমার নিষ্করুণ মুখখানি।অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলো এসে পড়েছিলো তোমার মুখে।দেখলাম- আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোমার মুখখানি কাঙ্গাল হয়ে আছে।আমিতো তোমার অজান্তে আমার সমস্ত ভালোবাসা তোমাকে আগেই দিয়ে দিয়েছি।এখন আমি নিজেই ভালোবাসার জন্য কাঙ্গাল হয়ে আছি।

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

চিপাচসের ৪০তম বছর পূর্তি উদযাপন

চিপাচসের ৪০তম বছর পূর্তি উদযাপন এবং মহান বিজয়দিবসকে সামনে রেখে গত ২১ শে নভেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে বাংলাদেশ শি্ল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালা মিলনায়তে এক বর্নাঢ্য অনুষঠানমালার আয়োজন করা হয়। অনুষঠানটি দুটি পর্বে সাজানো ছিলো। প্রথম পর্বে ছিলো নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'গেরিলা' ছবির প্রদর্শনী,যেটি দেখানো হয়েছিলো বিকেল পা্ঁচটায়। আর ২য় পর্বে ছিলো আলোচনা অনুযঠান। আলোচনা অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ত করেন চিপাচসের সভাপতি জনাব সুসীল সূত্রধর, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিপচসের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিয়া খোন্দকার,  আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো;"বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্তরায়ঃ সরকারী আন্তরিক পৃষ্ঠোপোষকতা ও অনুদানের অর্থের অপ্রতুলতা।" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথীর আসন অলংকৃত করেছিলেন গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এম,পি । আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাধারণ সম্পাদক, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ফিলম সোসাইটির জনাব বেলায়েত হোসেন মামুন, , বিশিষ্ঠ  চলচ্চিত্র নির্মাতা জনাব আকরম হোসেন,  চলচ্চিত্র নির্মাতা জনাব আবুু সাঈদ, বিশিষ্ঠ চলচ্চিত্র গবেষক জনাব অনুপম হায়াৎ ও তরুণ কথা সাহিত্যিক জনাব স্বকৃত নোমান। দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ঠ মিডিয়া ব্যক্তিত্ত ও চিপাচসের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিউজ্জামান খান লোদী,বিশিষ্ঠ মিডিয়া ব্যক্তিত্ত জনাব শামিম আলম দীপেন ও চিপাচসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনাব কোয়েল তালুকদার। সমগ্র অনুষঠানটি সঞ্চলনা করেন জনাব ..........।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

চিপাচসের সভাপতি সুসীল সূত্রধরের জোড়ালো আমন্ত্রণে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'গেরিলা' ছবিটি দেখলাম। চলচ্চিত্রের প্রতি অনিহার কারনে ছবি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি বহু বছর ধরে। যার ফলে কিছু ভালো ছবি দেখা হয়নি। তেমনি একটি missing ছিলো গেরিলা ছবিটি।আমরা নাসির উদ্দীন ইউসুফকে ্রধানতঃ নাট্যজন হিসাবে জানি, তিনি যে একজন ভালো চলচ্চিত্রকারও তা গেরিলা ছবিটি না  দেখলে জানা যাবে না।
চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে ৷ চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। গেরিলা ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসানফেরদৌসএটিএম শামসুজ্জামানরাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।


ছবির শুরুতেই আমরা দেখি ছবির প্রধান চরিত্র বিলকিস বানু (জয়া আহসান) এবং হাসানকে (ফেরদৌস), হাসান, বিলকিসের স্বামী এবং পেশায় সে সাংবাদিক। পরে আমরা দেখি যে তাকে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী গুম করে ফেলে এবং বিলকিস বানু তখন তার সাংবাদিকতার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বের করেন গেরিলা নামক একটি পত্রিকা এবং এখান থেকেই শুরু হয় ‘গেরিলা’ ছবির কাহিনী।
বিলকিস বানু নিজের ব্যাংকের চাকরী, নিখোঁজ হাসানের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি ঢাকার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। তার মতোই আরো অনেক নারী চাকুরী বা নিজ সামাজিক অবস্থানের ছত্রছায়ায় গেরিলা যুদ্ধের নানা সাংগঠনিক যোগাযোগ ও পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে নিয়োজিত থেকে গেরিলা যুদ্ধকে সম্ভব করে তুলেছিলেন।
সময়ের আবর্তে ১৯৭১ এর আগষ্ট মাসের শেষ দিকে একটি বড় অপারেশনের পর ঘটনা পরিক্রমায় ঢাকা ছাড়তে হয় বিলকিসকে। তসলিম সর্দার নিহত হন, আলতাফ মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র রাখার দায়ে পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক ধৃত হন। একাকী বিলকিস নিজগ্রাম রংপুরের জলেশ্বরী যাবার জন্য ট্রেনে পাড়ি জমায়।বাড়ির পথে নানা ঘটনার পাশাপাশি নিজের বাড়ি লুট হওয়া আর আপন মামার উপর মিলিটারী-রাজাকারদের নির্যাতন দেখে শিউরে উঠে সে। অতঃপর একমাত্র ভাই খোকনকে দেখবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় যুদ্ধের ডামাডোলে জীবনের সকল সূত্র হারানো এক নারী, বিলকিস। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এরইমধ্যে জবাই করা হয়েছে খোকনকে। ভাইয়ের লাশ দাফন করতে গিয়ে বন্দি হয় পাকিস্তানী মিলিটারীর হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্নাহুতি দেয় বিলকিস। নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প।    
                                                                                                                                                    ‘গেরিলা’ ছবির চিত্রগ্রহনের কাজটি করেছেন ভারতের সমীরণ দত্ত। তার চিত্রধারণের কাজে আমরা হাই এঙেল, লো এঙেল, লংশট, মিড লংশট, ক্রেন শট, মিড ক্লোজ-আপ এবং হ্যান্ড-হেল্ড শটের কিছু ভালো প্রদর্শন পাই তবে চমৎকৃত হওয়ার মতো কোনো কাজ আমরা দেখিনা। কিন্তু বেশ ভালো কিছু ফটোগ্রাফি সিনেমাটিতে রয়েছে অন্ধকারে প্রদীপের আলো খূঁজে পাওয়ার মতো।ছবিটিতে শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন অনিমেষ আইচ। শিল্প নির্দেশনার এই কাজটি তিনি দক্ষতার সাথেই করেছেন। সংগীতের ব্যবহার খুবই দুর্বল। মু্ক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাজানো গানগুলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্ররণা দিয়েছিলো তার ব্যবহার গেরিলা ছবিতে উপেক্ষিত হয়েছে।

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

আমার সম্তর্কগুলি

তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মাথার চুল পর্যন্ত
তুমি বললে তার নীচে কি আর কিছু নেই ?
আমি বললাম আছে-সুবর্ণরেখার একটি কপাল আছে
কপালের নীচে বা্ঁকা চা্ঁদের দুটো ভ্রু আছে
ভ্রুর নীচে কাজল কালো চোখ আছে।
তুমি বললে তারপর কি আছে ? আমি বললাম-
কৃষ্ণের বা্ঁশির নাক আছে,গোলাপ পাপ্ঁঁড়ির গাল আছে
লজ্জাপাতার ঠো্ঁট আছে,ঠো্ঁটের নীচে কপোল আছে
গলায় তোমার পু্ঁতির মালা আছে
মালার নীচে চোলী আছে, চোলীর নীচে -----
তুমি বললে থামলে কেনো ? বলো কি আছে ?
আমি বললাম- এখানে আসলেই চোখ আমার থেমে যায়
আর সম্পর্কটাও নাভীর নীচ পর্যন্ত নেমে যায়।

তিন পর্বের জীবন

তুমি যখন ছিলে না-
কোনোদিন ঘরে সন্ধ্যা বাতি জ্বালানো হয়নি
ঘরের দেয়ালে আর ছাদে ঝুল জমে থাকতো
টেলিফোনের রিসিভারের নীচে জমে থাকতো ধূলো
বাড়ীর আঙ্গিনা আগাছায় ভরে যেতো
সকালের ঘুম ভাঙ্গতো দুপুরে, সন্ধ্যাকে মনে হতো সকাল
দুপুরের ভাত খেতাম রাতে-
রাতের ঘুমগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে যেতো নির্ঘুমে।

তুমি যখন আসলে-
ট্রাউজার্স পরিপাটি,হ্যাঙ্গারে ইস্ত্রারী করা সার্ট ঝুলে থাকে
জুতার সক্ গুলোতে সুগন্ধি দেওয়া থাকে, ফুলদানিতে ফুল
মেঘের আকাশ হয় তারাভরা রাত, আলোয় ভরে ওঠে ভূবন
মেঝেতে বে্ঁজে উঠলো তোমার পায়ের শব্দ
আমার একাকীত্বগুলো পেলো প্রাণ,প্রেম হলো গান
সন্ধ্যার কলিরা ফুল হয়ে ফোটে রাতের পূণ্যতায়।

তুমি যখন থাকবে না-
সাদা চুলগুলোতে আর কলপ মাখা হবে না
গো্ঁফ হয়ে যাবে ঋষিদের মতো শভ্র সমুজ্জল
পার্কের বেঞ্চে শুয়ে থাকবো রৌদ্রছায়ায়
ঘরে ফেরা হবে না অস্তমিত সন্ধ্যাবেলায়
রেল লাইনের স্লিপারের উপর দিয়ে বিপন্ন পথিকের মতো
হাটতে হাটতে চলে যাবো দূরের কোনো স্টেশনে
হূইসেল বাজিয়ে ট্রেন আসবে,ট্রেন চলে যাবে
 উদাসীন পথে হেটে হেটে আর ফেরা হবে না ঘরে।



শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

তৈলচিত্র

 মৃত্যুর পর আমার লাশ তৈলচিত্র করে রেখে দিও তোমার ঘরে
আমিতো ছিলাম তোমার সুখহীনতার এক অপ্রাণ পুরুষ
আমার লাশ তুমি মমী করে রেখে দিও তোমার শয়ন ঘরে
আমার ষৌবনগুলো ছিলো পোড়া মাটির মতো পুড়ে থাকা গন্ধের
আমার যৌনতাগুলো ছিলো বিদর্ভ্ নগরের অন্ধকারের মতো বিমর্ষ
আমার নির্মোহ ভালোবাসার চোখ তোমার জন্য কে্ঁদেছে বারবার
তোমার উদাসীন শরীর কালো ্আলোয় ঢেকে যেতো চা্ঁদনী রাতে
নিঃশেষিত এই জীবন সায়াহ্নে তুমি অবমুক্ত করো আমাকে
 মৃত্যুর পর আমার লাশ তৈলচিত্র করে রেখো দিও তোমার ঘরে ।

সম্পর্ক

তোমার সাথে আমার সম্পর্ক নাভির নীচ পর্যন্ত নেমে গেছে।

শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬

তোমাকে পাওয়া হলোনা।

তোমার জন্য আমার এইযে এতো ভালোবাসা
সেতো তোমাকে ভালোবাসার কারণে
তোমার জন্য আমার এইযে এতো হাহুতাস
সেতো তোমার উদাসীন থাকার কারণে
তোমার জন্য আমার এইযে এতো হাহাকার
সেতো তোমার দূরে দূরে থাকার কারণে
তোমার জন্য আমার এইযে এতো দীর্ঘশ্বাস
সেতো তোমার প্রেম না পাওয়ার কারণে
আমার ভালোবাসা,হাহুতাস, হাহাকার,দীর্ঘশ্বাস
কোনোকিছু দিয়েই তোমাকে পাওয়া হলোনা। 

ক্যামেলিয়া

বাড়ীর আঙ্গিনায় দাড়িয়ে যে আকাশ আজ দেখলাম,সে আকাশ যেনো মৌনতায় কা্ঁদছে।বাগানে যে ক্যামেলিয়া ফুলগুলো হেমন্তের গোলাপ হয়ে ফোটার কথা ছিলো,ওরা তা ফোটে নাই।গোবিন্দগঞ্জের ঐ কালো সাওতাল মেয়েটার কানে আজ আর ক্যামেলিয়া ফুল নেই।এই সুন্দর শ্যামল মাটিতে  নেই আর সেই সোদা গন্ধ।ভেবেছিলাম ক্যামেলিয়ার সুবাস মেখে আজকের দিনটা শুরু করবো,তা আর হলো না।

তোমার প্রস্থানের পথ

তুমি চলে যেতে চেয়েছো, কিন্তু কেন তুমি চলে যাবে ?
তুমি চলে গেলে এক ফুৎকারে নিভে যাবে ল্যাম্পপোস্টের সব আলো
 করুণ সাইরিন বাজিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকবে
মুুমূর্ষ রোগীবাহী সব এ্যাম্বুলেন্সগুলি।

তুমি চলে গেলে মাতালগুলো উল্লাস করবে রাজপথে
রঙ্গিন জলের নহর বইবে মেট্রোপলিটনের স্ট্রীটগুলোতে
শহরের পানশালায় নর্তকীদের নুপুরের নিক্কণ ধ্বনিত হবে                                                                               রাতের বারবনিতারা ফিরে যাবে না ঘরহীন সংসারে।

তুমি কেন চলে যাবে ? কেন রক্তপাত ঘটাও আমার হৃৎপিন্ডে
আমার ভালোবাসার স্বপ্ন দোলায় তুমিতো দুলেছিলে
আজ কেন সেই মায়াবী পর্দা কালো করে নামিয়ে ফেলা
কেন আধারে ঢেকে ফেলতে চাও এই ঝলমলে রাত।

আত্মার আত্মহত্যা যদি তুমি চাও তাও দেবো তোমাকে
তবু তুমি বন্ধ করো,থামিয়ে দাও তোমার এই প্রস্থানের পথ।

যদি আর গন্ধ না বিলায়

আর যদি কখনো ফিরে না আসি,সন্ধ্যার আকাশে যদি আর একটি তারা না জ্বলে,ষদি আর গন্ধ না বিলায় কোনো সন্ধ্যা মালতীর ঝা্ঁর, তখনো কি তুমি বসন্ত রাতে দীপ জ্বেলে অপেক্ষা করবে আমারই জন্যে ? হয়তো হ্যা্ঁ হয়তো না।

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬

স্বপ্নচারিনী

সারাদিনের কর্মশেষে যখন সন্ধ্যা হয়,ক্লান্ত শরীর নিয়ে  ফিরে আসি ঘরে,তখন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে তুমি আলো করে বসে থাকো। আমি এলেই তোমার অপেক্ষাগুলি প্রাণ পেয়ে যায়।আমার ক্লান্তি সব মুছে যায় তোমার ছো্ঁয়ায়।রাতের স্বপ্ন আর তখন স্বপ্নে থাকে না। সব স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়ে শয্যায়, তখন তুমি কেবলই হয়ে ওঠো স্বপ্নচারিনী।

বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

সুরের কোমলগান্ধার

 তোমার সকল অস্তিত্তগুলো আমার মাঝে উঞ্চতায় ধরা দেয় বারবার
তোমার উষ্ণতায় সূর্য জ্বলে ৃপ্রেম জ্বলে আগুনে পুড়ে হয় সব ছারখার
তুমি ভস্ম হও ভস্মতায় হিমালয় পোড়াও,থাকেনা কোনো শূভ্র তুষার
তুমি শুচি হও,শূচিতে অন্তর বাজাও,সুরে ভরে ওঠে ঐ কোমলগান্ধার।

জগতে আনন্দ যতো

তুমি ভালবাসলেই আমার স্বপ্নগুলো পেম হয়
আমার প্রেমগুলো তখন  তোমার স্বপ্ন হয়ে যায়                                                                                                        
তুমি থাকলে জগতে আনন্দ হয় যতো
তুমি না থাকলে জগতে দুঃখ বেদনা ততো

তুমি আমার থাকলেই আমি বে্ঁচে থাকি
তুমি না থাকলে তখন আমি মরণকে ডাকি।

আমি ভালোবাসলে

আমি ভালোবাসলে ভালোবাসা হয়
না বাসলে হয়না
আমি চাইলে তুমি আমার হও
না চাইলে হওনা
আমি স্বপ্ন দেখলেই তুমি স্বপ্ন দেখো
না দেখলে দেখোনা
স্বপ্ন ঝালরে তোমাকে বা্ঁধলেই তুমি বে্ঁধে থাকো
না বা্ঁধলে বাধো্ঁনা
দুঃখ বেদনা নৈরাশ্য তোমাকে দিলেই নাও
না দিলে নাওনা
জীবন তোমার মাঝেই থেমে যেতে চায়
তবে তাই থেমে যাকনা
তুমি আর আমি আর আমাদের প্রেম
চির অমরতা পাকনা।


পদ্মকমল

আমি না থাকলে তুমি জলে ভিজে হয়ে থাকো পদ্মকমল
যেদিন বৃস্টি থাকেনা সেদিন কোথা পাও এতো জল
জলে ভেজে পদ্ম পাতা জলে ভেজে তোমার চোখ
আমি না থাকলে কে্ঁদে প্রকাশিত করো যতো শোক
জল থাকুক আর বৃস্টি না ঝরুক তুমি হয়ে থাকো পদ্মকমল
যখন জলও থাকেনা বৃস্টিও ঝরেনা তখন কোথায় পাও অশ্রুজল।

গোপন দীর্ঘশ্বাস

আজ এই ধূসর সন্ধ্যায় মন কেমন যেন বিষন্ন হয়ে উঠলো।কি ভেবে এই মন খারাপ হওয়া বুঝতে পারছিনা।সুখের আতিশয্যে তো জীবন চলছে, তবে কেন এই বিষাদ,কেন এই বিষন্নতা ! অতীতের কোনো গ্লানি কিংবা কোনো কিছু না পাওয়ার আর্তি নেইতো ? যা গোপনে এই ধূসর সন্ধ্যায় দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঝরে পড়ছে। 

প্রেমময় কবিতা

প্রথমে যে চোখ দেখেছিলাম সে চোখে কাজল ছিলো না
তোমার কাজল কালো চোখ আমার চাহনী কেড়ে নিয়েছিলো
দেখেছিলাম ভ্রূ-যুগল যেনো দ্বিতীয়ার চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে
দেখেছিলাম তোমার মেঘবরণ চুল
যে চুলে কালো মেঘের  জল ঝরতো অনবরত
তোমার ঠো্ঁট সব সময় হলুদ গা্ঁদা ফুল হয়ে থাকতো
আমি নিঃশ্বাসে তার সুবাস নিতাম
 আমার ঠো্ঁট তখন কে্ঁপে উঠতো
তোমার পরনে শাড়ি ঝিলমিল করে উড়তো বাতাসে
আমি দেখতাম নদীর বা্ঁকের মতো ভরা শরীর তোমার
তোমার আ্ঁচল উড়তো দমকা হাওয়ায় অসভ্যতায়
আমার চোখ তখন গিরিশৃঙ্গে আটকে যেতো
সন্ধ্যার নীল নীল আলোয় তূমি শরীরে সুবাস ছড়াতে
প্রজাপতি মাতাল হতো তখন মহুয়া বনে
আকাশের সব মেঘ হিম হয় আসতো
সব বৃস্টি ঝরে পড়তো তোমার শরীরের উপরে।


মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬

ঝরা পাতার গান

আজ খুব ভোরবেলায় ঘুম ভেঙ্গে যায়।সূর্য তখনো ওঠে নাই।কম্পিউটারে বসে ফেসবুকে নিউজ ফিডগুলো দেখছিলাম।হঠাৎ বন্ধু নেয়ামুলের টাইমলাইনে রবীন্দ্র সঙ্গীতের একটি অডিও ক্লিপের উপর চোখ স্থির হয়ে যায়।অনেক বৎসর আগে এক চৈত্রের পাতা ঝরা দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুকুরপাড়ে বসে এই গানটি গেয়ে শোনায়েছিলো একটি মেয়ে। জীবনের পাদপ্রদীপের আলোয় সে মেয়ে আজ আর নেই।সেই গান সেই ভালোলাগার মুহূর্তগুলোও বিস্মৃত হয়ে গেছে । আমি অডিও ক্লিপটা অন্ করলাম, শুনলাম সেই গানটি-
"তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম. নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥ মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন. তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥ জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি। মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন. তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥"
গানটি শুনতে শুনতে চোখ চলে যায়- সেদিনের সেই  উদ্যানের পুকুরপাড়ে। চৌচির করছে গাছগাছালি, খা্ঁখা্ঁ করছে রোদ্দুর। তপ্ত হাওয়ায় কড়ই গাছটি থেকে জীর্ণ পাতাগুলি ঝরে পড়ছে।