সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

চিপাচসের ৪০তম বছর পূর্তি উদযাপন

চিপাচসের ৪০তম বছর পূর্তি উদযাপন এবং মহান বিজয়দিবসকে সামনে রেখে গত ২১ শে নভেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে বাংলাদেশ শি্ল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালা মিলনায়তে এক বর্নাঢ্য অনুষঠানমালার আয়োজন করা হয়। অনুষঠানটি দুটি পর্বে সাজানো ছিলো। প্রথম পর্বে ছিলো নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'গেরিলা' ছবির প্রদর্শনী,যেটি দেখানো হয়েছিলো বিকেল পা্ঁচটায়। আর ২য় পর্বে ছিলো আলোচনা অনুযঠান। আলোচনা অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ত করেন চিপাচসের সভাপতি জনাব সুসীল সূত্রধর, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিপচসের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিয়া খোন্দকার,  আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো;"বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্তরায়ঃ সরকারী আন্তরিক পৃষ্ঠোপোষকতা ও অনুদানের অর্থের অপ্রতুলতা।" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথীর আসন অলংকৃত করেছিলেন গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এম,পি । আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাধারণ সম্পাদক, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ফিলম সোসাইটির জনাব বেলায়েত হোসেন মামুন, , বিশিষ্ঠ  চলচ্চিত্র নির্মাতা জনাব আকরম হোসেন,  চলচ্চিত্র নির্মাতা জনাব আবুু সাঈদ, বিশিষ্ঠ চলচ্চিত্র গবেষক জনাব অনুপম হায়াৎ ও তরুণ কথা সাহিত্যিক জনাব স্বকৃত নোমান। দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ঠ মিডিয়া ব্যক্তিত্ত ও চিপাচসের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিউজ্জামান খান লোদী,বিশিষ্ঠ মিডিয়া ব্যক্তিত্ত জনাব শামিম আলম দীপেন ও চিপাচসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনাব কোয়েল তালুকদার। সমগ্র অনুষঠানটি সঞ্চলনা করেন জনাব ..........।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

চিপাচসের সভাপতি সুসীল সূত্রধরের জোড়ালো আমন্ত্রণে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'গেরিলা' ছবিটি দেখলাম। চলচ্চিত্রের প্রতি অনিহার কারনে ছবি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি বহু বছর ধরে। যার ফলে কিছু ভালো ছবি দেখা হয়নি। তেমনি একটি missing ছিলো গেরিলা ছবিটি।আমরা নাসির উদ্দীন ইউসুফকে ্রধানতঃ নাট্যজন হিসাবে জানি, তিনি যে একজন ভালো চলচ্চিত্রকারও তা গেরিলা ছবিটি না  দেখলে জানা যাবে না।
চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে ৷ চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। গেরিলা ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসানফেরদৌসএটিএম শামসুজ্জামানরাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।


ছবির শুরুতেই আমরা দেখি ছবির প্রধান চরিত্র বিলকিস বানু (জয়া আহসান) এবং হাসানকে (ফেরদৌস), হাসান, বিলকিসের স্বামী এবং পেশায় সে সাংবাদিক। পরে আমরা দেখি যে তাকে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী গুম করে ফেলে এবং বিলকিস বানু তখন তার সাংবাদিকতার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বের করেন গেরিলা নামক একটি পত্রিকা এবং এখান থেকেই শুরু হয় ‘গেরিলা’ ছবির কাহিনী।
বিলকিস বানু নিজের ব্যাংকের চাকরী, নিখোঁজ হাসানের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি ঢাকার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। তার মতোই আরো অনেক নারী চাকুরী বা নিজ সামাজিক অবস্থানের ছত্রছায়ায় গেরিলা যুদ্ধের নানা সাংগঠনিক যোগাযোগ ও পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে নিয়োজিত থেকে গেরিলা যুদ্ধকে সম্ভব করে তুলেছিলেন।
সময়ের আবর্তে ১৯৭১ এর আগষ্ট মাসের শেষ দিকে একটি বড় অপারেশনের পর ঘটনা পরিক্রমায় ঢাকা ছাড়তে হয় বিলকিসকে। তসলিম সর্দার নিহত হন, আলতাফ মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র রাখার দায়ে পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক ধৃত হন। একাকী বিলকিস নিজগ্রাম রংপুরের জলেশ্বরী যাবার জন্য ট্রেনে পাড়ি জমায়।বাড়ির পথে নানা ঘটনার পাশাপাশি নিজের বাড়ি লুট হওয়া আর আপন মামার উপর মিলিটারী-রাজাকারদের নির্যাতন দেখে শিউরে উঠে সে। অতঃপর একমাত্র ভাই খোকনকে দেখবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় যুদ্ধের ডামাডোলে জীবনের সকল সূত্র হারানো এক নারী, বিলকিস। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এরইমধ্যে জবাই করা হয়েছে খোকনকে। ভাইয়ের লাশ দাফন করতে গিয়ে বন্দি হয় পাকিস্তানী মিলিটারীর হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্নাহুতি দেয় বিলকিস। নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প।    
                                                                                                                                                    ‘গেরিলা’ ছবির চিত্রগ্রহনের কাজটি করেছেন ভারতের সমীরণ দত্ত। তার চিত্রধারণের কাজে আমরা হাই এঙেল, লো এঙেল, লংশট, মিড লংশট, ক্রেন শট, মিড ক্লোজ-আপ এবং হ্যান্ড-হেল্ড শটের কিছু ভালো প্রদর্শন পাই তবে চমৎকৃত হওয়ার মতো কোনো কাজ আমরা দেখিনা। কিন্তু বেশ ভালো কিছু ফটোগ্রাফি সিনেমাটিতে রয়েছে অন্ধকারে প্রদীপের আলো খূঁজে পাওয়ার মতো।ছবিটিতে শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন অনিমেষ আইচ। শিল্প নির্দেশনার এই কাজটি তিনি দক্ষতার সাথেই করেছেন। সংগীতের ব্যবহার খুবই দুর্বল। মু্ক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাজানো গানগুলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্ররণা দিয়েছিলো তার ব্যবহার গেরিলা ছবিতে উপেক্ষিত হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন