রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬

ঊষা চক্রবর্তী

আমার বিবাহের মেয়ে দেখবে। তাই ছুটি নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ীতে এসেছি। বাড়ীতে মা আর এক দু'জন কাজের মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই। শরীর ক্লান্ত ছিলো,খাওয়া দাওয়া করে একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়ি। আমি একাকী এক ঘরে শুয়েছিলাম।হেরিকেন এক কোনে টিম টিম করে জ্বলছিলো।গ্রামের রাত। ক্রমেই  নিঝুম হয়ে আসছে কিন্তু ঘুম আসছিলো না । ঝি্ঁঝি্ঁ পোকা আর পিছনের বা্ঁশ ঝাড় থেকে থেমে থেমে পে্ঁচার ডাক শোনা যাচ্ছিলো।রাতও গভীর হতে থাকে।হঠাৎ,দড়জায় কড়া নারার শব্দ শোনা যায়।আমি কান পেতে আছি, দড়জা খুলছি না। একটুু পর  মেয়ে কণ্ঠের গুমরে গুমরে কান্নার ধ্বনি শোনা গেলো।ভাবলাম কে কা্ঁদছে ? আমি হেরিকেনের আলোটা বড়ো করে দরজা খুলে দেই। দেখি- সাদা ধবধবে একটি শাড়ি পড়ে আমাদের গ্রামের ঠাকুরবাড়ীর অকাল বৈধব্য ঊষা চক্রবর্তী দাড়িয়ে আছে।ও সোজা ঘরে ঢুকে আমার বিছানায় বসে পড়ে। তখনও সে কাঁদছে। ঊষা আমার সাথে একই স্কুলে পঞ্চম ক্লাশ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে,সুচি্ত্রা সেনের মতো চোখ।আমি ওকে বললাম, তুমি এতো রাতে একাকী আমার ঘরে আসিলে কেন ? উষা বলিলো- তুমি আমাকে ঢাকা নিয়ে যাও। যদি না নাও, তাহলে কালকেই আমি আত্মহ্ত্যা করিব। মনে মনে ভাবিলাম-বিবাহের পাত্রি দেখিতে আসিয়াছি, এ কোন্ আপদ ! আমি বলিলাম- আমিতো তোমাকে কখনো ভালোবাসি নাই। তুমি এসব কথা বলিতেছো কেন ? উষা বলিল- তুমি ভয় পাইয়ো না,আমি তোমার ঘর করিবো না। তুমি কেবল আমাকে কাশীতে যাওয়ার ব্যবস্থা করিয়া দেবে।'এই বলে ঊষা চক্রবর্তী ঘর হতে বের হয়ে চলে গেলো।

        পরের দিন ভাবলাম- আপদটি আবারও যদি আজ রাতে আসে, তাই ভয়ে মা'কে সরল মনে ঘটনাটি বলে দেই। মা বিস্ময়ে বললো- ঊষা চক্রবর্তী আসবে কোত্থেকে ?ওতো  দুই দিন আগে ওদের বাড়ীর বকুল গাছের ডালে ফা্ঁসি দিয়ে   আ্ত্মহত্যা করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন