বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

যে পথগুলোতে পায়ের চিহ্ন আ্ঁকা আছে-

কাল মেয়েকে নিয়ে নিলক্ষেত গিয়েছিলাম ওর একটি বই কিনতে।কি মনে করে ওর হাত ধরেে হেটে হেটে চলে যাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। যে পথ দিয়ে ওকে নিয়ে হাটছিলাম সে পথগুলো দিয়ে একসময় আমি অনেক হেটেছি।প্রথমেই মহসিন হলের মাঠের পশ্চিম পাশে রাউফুন বসুনিয়ার ছোট্র মূর্তিটি দেখালাম,বললাম-এই ছেলেটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলো।তারপর চলে যাই কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।বললাম-এটি নির্মাণ করেছে ভাস্কর আব্দুল্লাহ খালিদ।এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি সেরা ভাস্কর্য। কলাভবনের দোতালায় হাত দেখিয়ে বললাম- ঐখানেই আমাদের বাংলা বিভাগ- যেখানে আমি পড়েছিলাম ছয় বছর।আমাদের শিক্ষক ছিলেন- ডঃ আহমদ শরীফ,ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম,ডঃ মনিরজ্জামান,ডঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। তা্ঁরা কেউ আর আজ বে্ঁচে নেই। কলাভবনের বটতলা দেখিয়ে বললাম,এখানেই একদিন আমাদের দেশের পতাকা প্রথম উত্তেলিত হয়েছিলো।তারপর আস্তে আস্তে হেটে চলে যাই মধুর রেস্তোরার দিকে।ডানদিকে গুরুদ্বুয়ারা নানক সাইয়ের মন্দিরটি দেখিয়ে বলি,এটি একটি শিখ উপসানালয়।মধুর রেস্তোরার পুরানো একতলা বিল্ডিংটি দেখিয়ে বলি,এই সেই রেস্তোরা যেখান থেকে আমাদের দেশের সমস্ত আন্দোলনগুলো পরিচালিত হয়েছিলো। এটির মালিক ছিলেন,শহীদ মধু দে।তা্কে বেওনেট দিয়ে কুচিয়ে ুকুচিয়ে ্হত্যা করেছিলো পাকসেনারা। ওখান থেকে হেটে হেটে লাইব্রেরীর দিকে চলে যাই। নভেরার তৈরী ভাসকর্যগুলো দেখিয়ে বলি,এই শিল্পীটি আর বে্ঁচে নেই।সুদূর ফরাসী দেশে নিঃসঙ্গ একাকী নির্বাসিত অবস্থায় মারা গেছেন।তারপর দুজন লাইব্রেরীর বারান্দায় এসে বসি।ভাষা ইনিস্টিউটের পূর্ব জায়গাটা দেখিয়ে বলি,এইখানে বা্ঁশের চালার শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন ছিলো।একদিন গরম সিঙ্গারা খেতে যেয়ে আমি আমার জিহবা পুড়ে ফেলেছিলাম।বাম দিকের খালি ঘাসের চত্বরটি দেখিয়ে বলি,এটির নাম হাকিম চত্বর।ঐ যে কড়ই গাছটি দেখছো,ওখানে বসে হাকিম মিয়া চা বিক্রী করতো।আমরা চা খেয়ে অনেক সময় পয়সা দিতাম না। বলতাম 'আজ নেই।' কিছুু বলতো না হাকিম মিয়া। সেও আজ বে্ঁচে নেই।অনেকদিন পর হাকিম মিয়ার ছেলের কাছ থেকে আমরা দুজন চা খেলাম।মেয়ের হাত ধরে হাটতে হাটতে টিএসসি র দিকে যাই,ডানদিকে রোকেয়া হলটি দেখিয়ে বলি-এই হলে তোমার বকুল ফুপি থাকতো। সামনে পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতেই বাম দিকের সৌধটি দেখিয়ে বললাম-এটি শহীদ ডাঃ মিলন স্মৃতি সৌধ।নব্বইয়ে গণআন্দোলনে ঠিক এই জায়গাটিতে তিনি শহীদ হয়েছিলেন।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মেয়েকে নিয়ে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মূর্তির পাদদেশের কাছে যেয়ে দাড়াই।মূর্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম-একাত্তরের অনেক নাম না জানা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েেছে।প্রখ্যাত ভাস্কর শিল্পী শামিম সিকদার এটি তৈরী করেছেন।আমি মেয়েকে নিয়ে ভা্স্কর্যের পাশে পাকা সোপানের উপর বসি। নিরব হয়ে বসে আছি,কোনো কথা বলছিলাম না। মেয়ে একটু উদ্বেগের সহিত বলছিলো-বাবা,তুমি কি ক্লান্ত ? আমি বললাম- না মা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন