মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

বালুঘাট থেকে শিলিগুড়ি

নব্বই দশকের কথা।পশ্চিম বঙ্গের বালুঘাট থেকে বাসে উঠেছি শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য।বাসে উঠেই দেখি আমার পাশের সিটে একটি বাইশ তেইশ বছরের তরুণী বসে আছে।আমি অনেকটা দ্বিধা নিয়েই ওর পাশে বসে পড়ি।মেয়েটির সি্ঁথিতে সি্ঁদুর নেই,হাতে শঙ্খ চূড়ি নেই।মনে হলো মেয়েটি কুমারী হবে।বাস চলছে।আমাদের মাঝে কোনো কথা নেই। ঢাকা থেকে রাতের বাসে হিলি এসেছিলাম।চোখে তাই ঘুম ঘুম ভাব ছিলো।অনেকটা পথ ঘুমে অনেকটা পথ তন্দ্রাচ্ছন্নে আমি চলতে থাকি।মেয়েটিকে খেয়াল করা কিংবা আগ বাড়িয়ে কথা বলা হয়ে ওঠে নাই।এই ভাবেই কখন তিন/চার ঘন্টা কেটে গেছে বুঝতে পারিনি।বাসটি তখন বিহার টেরিটরী অতিক্রম করছিলো।এ্যাটেনডেন্ট বলছিলো,সামনে ইসলামপুর স্টপেজ।মেয়েটিকে দেখলাম,রেডী হচ্ছে নামার জন্য।মন চাইলো ওর সাথে একটু কথা বলি-
আমি:  Can you speak in Bengali ?
মেয়েটি: আমি বাঙ্গালী,বাংলাদেশের মেয়ে।
আমি: আমিতো বাংলাদেশ থেকে এসেছি।বাংলাদেশে কোথায় তোমার বাড়ী ?
মেয়েটি:  সিরাজগজ্ঞের ঢলডোব গ্রামে।
আমি চমকে উঠি।বললাম,আমার বাড়ীও তো সিরাজগঞ্জে, আমি বাগবাটি স্কুলের ছাত্র ছিলাম।ঢলডোব গ্রামে আমার একজন সহপাঠি ছিলো,নাম মিহির কুমার বৈদ্য।মেয়েটি বলে: মিহির আমার বড়দা,আমি ওনার ছোটো বোন নির্মলা বৈদ্য।১৯৭১ সনে স্মরণার্থী হয়ে আমরা এদেশে এসেছিলাম।তারপর আর যাওয়া হয় নাই।  এই ইসলামপুরেই আমরা থেকে যাই। নির্মলার দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছলোছলো করে ওঠে। ওকে দেখেছিলাম ওর দুই বছর বয়সে।কোলেও নিয়েছিলাম।বাসটি এসে ইসলামপুর থামে।নির্মলা এখানেই নেমে যায়।নামার সময় বলেছিলো- দাদা নেমে যান।বাড়ীতে বড়দা আছে।দেখা করে যান।' আমার আর নামা হয় নাই।কর্কস স্বরে হর্ণ বেজে ওঠে।বাসটি তখন চলতে থাকে শিলিগুড়ির দিকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন