শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

করবী

'যখন বিদায়-বাঁশির সুরে সুরে
শুকনো পাতা যাবে উড়ে সঙ্গে কে র'বি ।'
'আমি রব, উদাস হব ওগো উদাসী, 
আমি তরুণ করবী ।' 
 করবী ফুল সম্পূর্ণ বিষাক্ত। সুন্দর ফুলের জন্য বাগানে লাগানো হয়। লাল (রক্তকরবী), সাদা(শ্বেতকরবী) আর গোলাপি রঙের ফুল গাছ পাওয়া যায়। গোলাপি রঙের করবী ফুলের ডাবল ফুলের জাত আছে, একে বলে পদ্মকরবী। পদ্মকরবীর পাপড়ি অনেকগুলো, দেখতেও সুন্দর। প্রায় সারা বছরই করবী ফুল ফোটে। গাছের মূল, কান্ড, পাতা, ফুল, ফল- সবই বিষাক্ত।
এই করবী ফুলের কথা লিখতে গিয়ে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।১৯৮৫ সালে একটি অফিসিয়াল এ্যাসাইনমে্ন্টে তামাবিল/জাফলং গিয়েছিলাম।উঠেছিলাম তামাবিল রেস্টহাউজে।পাহড়ী টিলার উপর নির্জন পরিবেশে বাংলোটির অবস্থান।এই বাংলোর কেয়ার টেকার হচ্ছে আমির আলী।বয়স ৩৫ হবে।সুঠাম দেহ ও সুদর্শন। বিয়ে করে নাই,বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাংলোর পিছনে একটি ছোটো কাঠের বাড়ীতে থাকে।একদিন বিকালে ওর বাড়ীটির দিকে যাই।দেখি বাড়ীর চারদিকে করবী ফুলের বাগান।ফুল দিয়ে ঢেকে গেছে ছোট্ট কাঠের বাড়ীটি।আমি আমির আলীকে জিজ্ঞাসা করি- তুমি মনে হয় করবী খুব পছন্দ করো।দেখলাম ওর মুখটা বিষাদে ভরে উঠলো।একদিন বাংলোয় আমির আলীকে ডেকে জানতে চাই,এই করবী ফুলের রহস্য। ও বলতে চায়নি,তারপরও শুনি আমির আলীর কথা-

মেয়েটির নাম বৈজয়ন্তীমালা।খাসিয়া মেয়ে। জাফলং নদীর ওপারে ভারতের অংশে পাহাড়ের ঢালে ওদের বাড়ী।জাফলং নদীতে পাথর কুড়াতে যেয়ে ওর সাথে পরিচয়।মেয়েটি আমাকে ভালোবাসতো,আমি ঠিক ততোটা নই।পাহাড়ের ঢালে একটা জায়গা ছিলো,করবী ফুলের ঝারে ঢাকা।আমরা সেখানে প্রায়ই মিলিত হতাম।একদিন ঐ করবী ফুলের ঝারে বসে বৈজয়ন্তীমালার সাথে কথা হচ্ছিলো-
বৈজয়ন্তী:  তুমি আমাকে তোমার বাড়ীতে নিয়ে যাও।বিয়ে করো।
আমি:   এখন না। আমি তোমাকে ভালোবাসি,কিন্তু বিয়ে এখন না।পরে।
বৈজয়ন্তীমালা আমার ছলনাটুকু বুঝতে পেরেছিলো।বৈজয়ন্তী বললো- তাহলে আমি যাই।
যাবার সময় ওর খো্ঁপায় একটি করবী ফুল পড়িয়ে দিয়েছিলাম।
সেদিন ছিলো দোল পূর্ণিমা।শুনেছি- সেই রাতেই ঐ করবীর ঝারে করবী ফুল খেয়ে বৈজয়ন্তীমালা আত্মহত্যা করেছে।ময়না তদন্তের রিপোর্ট ছিলো-ও নাকি দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলো। কিন্তু কেউ জানতো না,ঐটি ছিলো আমারই দেওয়া একটি পাপ।











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন