সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

২ নং গলির বাড়িটা

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের কোনো এক সন্ধ্যার কথা। মৃত্যর আগে আমার মা শেষ ২০/২১ দিন মিরপুরে ৬ নং সেকসনে আজমল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো।আমি প্রতিদিন দুপুর তিনটা থেকে রাত দশটা অবধি হাসপাতালে অবস্থান করতাম। মিরপুরের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।আমার বড়ো বোন থাকতো মিরপুরে ৬ নং সেকসনে ২ নং গলিতে নিজ বাড়ীতে।আমি এই বাড়ী থেকেই দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছিলাম। বিয়ে করে নববধূকে উঠিয়েছিলাম এই বাড়ীতেই। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আমার বোনরা সপরিবারে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়।সেই থেকে তারা তাদের বাড়ীটি ভাড়া দিয়ে যায়। আর সেই থেকে আমারও  ঐ বাড়ীটিতে যাওয়া হয়না।
সেদিন হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। মা'র শরীরটাও ভালো ছিলো না। মনটা তাই খারাপ লাগছিলো ।  তখন সন্ধ্যা হয়েছে। আযান ও নামাজ শেষ হয়ে গেছে।হাসপাতাল থেকে আমার বোনের সেই বাড়ীতে হেটে যেতে পা্ঁচ সাত মিনিটের পথ।ওকে বললাম- চলো যাই আমাদের বাসর বাড়ীটা দেখে আসি। ওকে যেতে আগ্রহী মনে হলো। নিয়নবাতি সবগুলো জ্বলে ওঠে নাই। দুজন আলো আধারিতে হেটে হেটে ২ নং গলির ঐ বাড়ীটার দিকে যেতে থাকি।প্রায় বিশ বছর পর ঐ বাড়ীর দিকে যাওয়া। চেনা পথ সব অচেনা লাগছিলো।একটা সময় বাড়ীটির সামনে চলে আসি।দেখলাম বাড়ির সামনে খালি জায়গা আগাছায় ভরে গেছে। চূন কালি করা হয় নাই বহু বছর।পা আর চলছিলো না। কেমন যেনো থেমে থেমে আসছিলো। আমদেরকে কেউই চেনে না। একবার মনে হলো বাড়ীটার ভিতরে যাই, দেখে আসি আমাদের বাসর রুমটা।কি দ্বিধায় যাওয়া হলো না।এক বিষাদময় দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়লো দুজনেরই বুকের গভীর থেকে।সেই দীর্ঘশ্বাসের উত্তপ্ত বাতাস ঐ বাড়ীতে স্পর্শ হওয়ার আগেই আমরা ফিরে চলে আসি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন