সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এখনো টিউলিপ

পাহাড়ের কোল ঘেসে বিসর্পিলের মতো আঁকাবাঁকা করে চলতে চলতে টয় ট্রেনটি যখন দার্জিলিং স্টেশনে পৌঁছে, তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। নেমেই দেখি হাতের কাছে মেঘ ভাসছে। একেবারে হাত দিয়ে মেঘ ধরা যায়। হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে মেঘ উড়ে যায়। হ্যাপি বিস্ময়ে দেখছিলো ধূপের কুন্ডলীর মতো সাদা মেঘ। ওর মাথার চুল দুলছিলো মেঘে মেঘে। এসব দেখতে না দেখতেই দেখি বেশ কয়েকজন নেপালি,ভূটানি,গূর্খা তরুণ প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে। ওরা আগত যাত্রীদের কাছে এসে ওফার করছে হোটেল ঠিক করে দেবার কথা।

আমাদের কাছে এগিয়ে আসে তেরো চৌদ্দ বছরের এক কিশোর। দেখে ঐরকমই মনে হলো ভূটানি কিংবা নেপালি হবে। ওর হাতে দুইটি টিউলিপ ফুল, ভাঙা হিন্দি আর ভাঙ্গা বাংলায় বলছিলো -- 'মে সনেম ভালদারো হু, কেয়া আপকো কিসি গাইড কি জরুরাত হ্যায়? ' আমি দ্বিধা দ্বন্দ্ব করছিলাম। ছেলেটি খুব মায়াভরে আবার বলছিলো, ' স্যার, আপ মুঝে কাম রুপি দিজিয়েগা। লেকিন মে আপকেহি সাথ সারেদিন রেহেনা চাহাতা হূ।' হ্যাপি বলছিলো, 'ছেলেটি মনে হয় ভালোই হবে। তুমি রাজি হয়ে যাও। ' আমি সনেমকে বললাম - 'ঠিক হ্যায়, আবসে হামারে সাথ রয়হেনা।' সোনেম ওর হাতে থাকা দুটি টিউলিপ আমাদের দুইজনকে দিয়ে দেয়। এবং আমাদের হাত থেকে ব্যাগেজগুলো নিয়ে নেয়। আমরা দুই দিন থাকবো দার্জিলিংএ। এই দুই দিন সনেমই আমাদের গাইড করবে।

সনেমের পরামর্শেই আমরা হিল ক্রাউন হোটেলে উঠি। এই হোটেলটির বৈশিষ্ট্য হলো এর এক দিকে তাকালে পাহাড়, নদী,ছরা, গিরি খাদ, সবুজ বনরাজি, পাহাড়ের ঢালে বাড়ি ঘর, নীল আকাশ, শৈল শহর দার্জিলিংকে উপভোগ করা যায়। আরেকপাশ থেকে তাকালে দেখা যায় অনেক দূরের কান্চনজঙ্ঘা।

সনেমের সাথে আমাদের কথাগুলো বোঝার সুভিধার্থে আমি এখানে বাংলাতেই লিখছি। সনেম বলছিলো - সন্ধ্যার পরে রাতে শহরের চৌরাস্তার মলের সামনে ওপেন কনসার্ট হয়। আমরা ইচ্ছে করলে সেটি উপভোগ করতে পারি। ও আরো বলছিলো - আমরা রাতে কোথায় খাবো? আমরা ইচছা করলে হোটেল ক্যাফেতে খেতে পারি, আবার বাইরের কোনো হোটেলেও খেতে পারি। আপাতত সনেমকে কোনো প্রয়োজন নেই বিধায়, আমরা একশত রুপি হাতে দিয়ে বললাম কাল সকাল নয়টায় তুমি চলে এসো। ও আমাদের দু'জনকে নমস্কারের ভঙ্গিতে সালাম করে চলে যায়।

সন্ধ্যার পর রাতের খাবার খেয়ে আমরা শহরের ভিতরে বের হই। শহরের রাস্তার দুই পাশে ছোট ছোট ওয়াইনের দোকান। লাল নীল আলো জ্বলছে দোকান গুলোতে। ঠিক খাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, কৌতুহল বশতঃ একটি দোকানে আমরা ঢুকে পড়ি। সেলসম্যান আমাদের দেখাচ্ছিল বিভিন্ন ব্রান্ডের ওয়াইন। বেশিরভাগ সব ইন্ডিয়ান। ছোট্ট একটি সোনালি প্যাকেটে অনেকটা  আতরের শিশির মতো দেখতে,একটি ওয়াইন আমাদের দেখায়। ওটি নাকি ভেষজ ওয়াইন। তিব্বতের তৈরি। আমার খুব লোভ হলো ঐটি কেনার। এবং কিনেও ফেলি। হ্যাপি অবশ্য কোনো আপত্তি করেনি।

আমরা হাটতে হাটতে চলে যাই চৌরাস্তার দিকে। মলের সামনে খোলা জায়গায় উন্মুক্ত মন্চে গান হচ্ছিলো তখন। কেউ একজন আমাদের বললো, কোলকাতা থেকে ব্যান্ড গোষ্ঠী 'ভূমি' এসেছে। সুরজিৎও নাকি এসেছে। আমরা এসব কাউকেই চিনিনা। তবে গানগুলো খুব সুন্দর ছিলো। কোনো একজন গাইলো এই গান দুটি - 'তোমার দেখা নাইরে' এবং 'মধু মধু চাহনি রে তোর।' অনেক রাত পর্যন্ত গান শুনে আমরা হোটেলে ফিরে আসি।

রাতে শোবার আগে আমরা ব্যালকনিতে এসে দাড়াই। দেখছিলাম রাতের দার্জিলিং। পাহাড়ের গায়ে বাড়িগুলোতে জ্বলছে মিটিমিটি করে অসংখ্য বাতি। আঁধার ভেধ করে দাড়িয়ে আছে  দূরে সুউচ্চ শৃঙ্গ। সবকিছু কেমন যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছিলো আমরা কোনো স্বপ্ন রাজ্যের রাজা রানী। চারদিকে ছোট ছোট আলো দেখে মনে হয়েছিলো - আমরা আছি তারাদের মাঝে। এমন তারা ভরা রাতে আমরা কেবল পাশাপশি, এমন স্বপ্নের জগতে শুধুই  দুজন। ভালো লাগছিলো তারাদের, বিস্ময়ে কাতর হচ্ছিলাম স্বপ্নের মাঝে। আজকের এই রাত, আজকের এই স্বপ্ন, মিটিমিটি জ্বলে থাকা সব তারা যেনো আমাদের জন্যই।

আমাদের ঘুম ভাঙ্গে সকাল দশটারও পরে। সনেম ভালদারো ঠিক নয়টায় এসে অপেক্ষা করছিলো নীচে ওয়েটিং রুমে। রুমেই প্রাতঃরাশ করে নেই। তারপর ডাকি ভালদারোকে। ও ঢুকেই আমাদের দুই হাত উচু করে নমস্কারের ভঙ্গিতে সালাম দেয়। ও একটি পলিথিন ব্যাগ থেকে নীল রঙের লিলিয়ান ফুলের মালা বের করে। মালাটির মাঝে মাঝে হলুদ রঙের টিউলিপ গাঁথা। লকেটটা লাল টিউলিপ দিয়ে করা। সনেম এগিয়ে যায় হ্যাপি র কাছে এবং বলে - ম্যাম এই মালাটি আপনার জন্য এনেছি।

হ্যাপি খুশিতে মালাটি পড়ে নেয় গলায়। হ্যাপির এইভাবে মালাটি পড়া দেখে ভালদারোও খুব খুশি হয়। ভালদারোকে কালকের চেয়ে আজ বেশি স্মার্ট লাগছে। ও পড়েছে একটি গ্রাবাডিনের এ্যাশ ট্রাউজার এবং ইয়েলো টি সার্ট। রুমে বসে বসে আমরা কথা বলছিলাম ভালদারোর সাথে। ওর সাথে আলাপ করে জানা গেলো, ভালদারোর বাবা হচ্ছে তিব্বতী আর মা হচ্ছে নেপালি।ওর বাবা মা দার্জিলিংয়ের বৃহৎ হ্যাপি ভ্যালী চা বাগানের শ্রমিক ছিলো। প্রেম করে তারা বিয়ে করেছিলো। ভালদারোরা থাকে দার্জিলিং থেকে পাঁচ মাইলা দূরে 'ঘুম' নামে একটি জায়গায়। 'ঘুম' একটি টয় ট্রেন স্টেশনও। যা আমরা দার্জিলিং আসতে দেখে  এসেছিলাম। 'ঘুম'ও একটি ছোট্ট মায়াময় পার্বত্য বাজার। এখানে অনেক ভালো ভালো স্কুল আছে। নয়নাভিরাম চা বাগান আছে। নদী আছে। ঝর্ণা আছে। আছে জল প্রপাত।

আজ হ্যাপির পড়ার কথা ছিলো সালোয়ার কামিজ। কিন্তু তা না পড়ে ও পড়লো ঢাকা থেকে নিয়ে আসা লাল পেঁড়ে সাদা রঙের জামদানি। লিলিয়ান ও টিউলিপ ফুলের মালাটি গলায় না পড়ে বাঁধলো খোঁপায়। অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো ওকে। আর ভালদারোও ওকে বার বার দেখছিলো পরম বিস্ময়ে। ক্রাউন হিল হোটেল থেকে আমরা যখন নিচে নেমে আসছিলাম তখন রিসেপ্সোনিস্ট ও আন্যান্যরা দেখছিলো হ্যাপি কে। তারা  হ্যাপি কে দেখছিলো, না জামদানি শাড়ি দেখছিলো, নাকি খোঁপায় বাঁধা টিউলিপ ফুল দেখছিলো, তা বোঝা গেলোনা।

ভালদারো আজ আমাদের রক গার্ডেন এর ঝর্ণা দেখাতে নিয়ে যায়। রক গার্ডেন দার্জিলিং শহর থেকে অনেক নিচে। যাওয়ার পথে অনেক গুলো চা বাগান চোখে পড়লো। আর নিচ থেকে দেখা যায় দার্জিলিং শহর। আবহাওয়াটা বেশি ভালো থাকায় সব কিছু অনেক দারুণ লাগছিলো।

রক গার্ডেন একটা ঝর্ণা। আমি মনে করেছিলাম বাগান হবে। যদিও বাগানও আছে। কারণ জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো ফুল গাছ দিয়ে। ঝর্ণাটা অতো বেশি বড়ো না। কিন্তু সুন্দর। ঝর্ণা থেকে ঝর্ণার চারপাশ বেশি সুন্দর। ঝর্ণার উপরের দিকে উঠার জন্য সিঁড়ি করে দেওয়া আছে। পাহাড়, মেঘ আর আকাশের নীল মিলে দারুণ লাগছিলো রক গার্ডেন।

ভালদারো গার্ডেন থেকে কখন এক গুচ্ছ হিমালয়ান ব্লু পপি তুলে হ্যাপি র হাতে দিয়েছে আমি খেয়াল করিনি। হ্যাপিও খুশিতে সনেমের সাথে গল্প করছিলো। সনেম ওর সাথে কখনো ম্যাম, কখনো দিদি সম্বোধন করে কথা বলছে। আমরা রক গার্ডেন থেকে ফেরার পথে
বাতাসিয়া লুপে যাই। হরেক রকমের ফুল গাছ সুন্দর করে সাজানো আছে সেখানে। এটা ছোট রেইল লাইনের একটা রাস্তা বা লুপ। যেটা সুন্দর, তা হচ্ছে বাতাসিয়া  লুপ থেকে দার্জিলিং শহরের অসাধারণ ভিউ দেখা যায়। বাতাসিয়া লুপ দেখার  পর আমরা হোটেলে ফিরে আসি।

বিকেলে কেবল কারে উঠতে যাই। ভালদারোকেও আমাদের সঙ্গে নেই। কেবল কারে এক কারে ছয়জন বসা যায়। আমরা তিনজন এবং আমাদের সাথে  ওঠে ওড়িশা থেকে আসা একটি বাঙ্গালি পরিবার। ভালোই লাগছিলো ওদের সাথে সখ্যতা। ভালদারো বলছিলো, সে বসবে তার হ্যাপি দিদির পাশে। ভাবলাম, বসতে চাচ্ছে বসুক।

আমরা জানলাম কেবল কারে মোট চার কিঃমিঃ আসা যাওয়া করতে হয়। নামতে দুই কিলো, উপড়ে উঠতে দুই কিলো। এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টার মত লাগে। ক্যাবল কার থেকে চারপাশ দেখতে এতো বেশি ভালো লেগেছে বলার মতো না। পাহাড়ের উপর থেকে পাহাড় দেখা যায়। হ্যাপি খুব ভয় পাচ্ছিলো। দেখলাম, ভালদারো ওকে খুব সাহস দিচ্ছে। হ্যাপি র একটি হাত ও শক্ত করে ধরে রেখেছে।

সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসি। ভালদারোকে আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দেই। ওকে বলি কাল আটটায় আবার অাসতে। এও বলি কাল দুপুরে আমরা শিলিগুরি চলে যাবো। পকেট থেকে একশত রুপি বের করে সোনেমকে দিতে চাই। কিন্তু ও নেয়না। বলে বাবুজি - পরে একসাথে নিয়ে নিব। আমাকে নমস্কার দেয় আর হ্যাপি র দুই হাতের করতল ওর কপালে নিয়ে স্পর্শ করে এবং কিছুটা খুশি আর কিছুটা বিষাদ নিয়ে ভালদারো চলে যায়।

সন্ধ্যার পর হাটতে হাটতে আমরা 'ক্যাফে ডি কফি'- তে যেয়ে কফি খেয়ে নেই। ক্যাফে থেকে বেরিয়ে দার্জিলিং শহরের ফুটপাতে আলো আধাঁরির ভিতর দিয়ে হাঁটছিলাম দুইজন। আশেপাশের রংবেরঙের আলো জ্বলা ওয়াইনের দোকান থেকে মৃদু স্বরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলো, ওদের ওখানে বসতে। আমি হ্যাপি কে বলছিলাম - 'ওখানে বসবে নাকি? সফট কিংবা হট্ কিছু চলবে ?' ও বললো - না।

রাতে হোটেল ক্যাফেতে খেয়ে নেই। রিসিপশনে যেয়ে কালকের চেক আউট করে রাখি। আজও হোটেল ব্যালকনিতে যেয়ে দুজন অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকি।
দেখি রাতের দার্জিলিং কে। পাহাড়ের গায়ে আজকেও মিটিমিটি করে বাতি জ্বলছে। দূরে অনেক দূরে পাহাড়ও ঘুমিয়ে পড়েছে। চারিদিকে নিঝুম নিস্তব্ধ। বাতাসের কানে কথা নেই। হ্যাপি নিরব হয়ে আমার কাঁধের উপর মাথা রেখে দুরে অন্ধকারে গিরিশৃঙ্গ দেখছে। কেন জানি আজ এই পাহাড়ি নিঝুমরাতে মনে পড়ছে শৈলেন্দু রায়ের লেখা গানের এই কথাগুলি --

'তখনো গহন রাত্রি,
শান্ত কুজন পথ নির্জন, ঘরে ফিরে গেছে যাত্রি
আমি তাহারই স্বপনরথে
চলিনু পুলকে মধু অভিসারে ধূলায় ধূসর পথে --
এলোনা তো হার, স্মৃতিতে শুকায়
যে ফুল ফুটিল প্রাতে। '

সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি হ্যাপি ওপাশের ব্যালকনিতে একাকী দাড়িয়ে কান্চনজঙ্ঘা দেখছে। যা গত দুইদিন দেখা হয়নাই। শৃঙ্গে সাদা মেঘ তুলার মতো উড়ছে। পূর্ব দিক থেকে আসা সূর্য রশ্মি পড়ে সাদা মেঘগুলি চিকচিক করছে। আমি এবং হ্যাপি আমরা যেনো একই নয়নে এই স্বর্গীয় রূপ সুধা অবলোকন করছিলাম।

সনেম ভালদারো সকাল আটটায়ই চলে আসে। আজও ও হ্যাপি র জন্য মালা নিয়ে এসেছে। তিন রকমের ফুল দেখলাম সেই মালাতে।  অপরাজিতা রঙের অর্কিড, লিলি আর লাল রঙের টিউলিপ। এই মালাটি পেয়ে হ্যাপি র মুখে এক চিরায়ত হাসি ফুটে ওঠে। কিশোর ভালদারোর মুখেও দেখলাম একই রকম সেই মোহনীয় হাসি।

ভালদারোকে সাথে করেই আমরা নাস্তা করে নেই। ওকে বলি আমরা একটার সময় টয় ট্রেনে করে শিলিগুড়ি চলে যাবো। এই সময়টুকু আমরা কোথায় যেতে পারি? ভালদারো বলছিলো -- 'আমার মা বাবা দুইজনই দিদি কে দেখতে চায়। আপনারা 'ঘুমে' আমাদের বাড়িতে চলেন। 'ঘুম' স্টেশন থেকে পরে শিলিগুড়িতে যেতে পারবেন। আমারা রাজি হই।

একটি জীপ নিয়ে 'ঘুম' চলে যাই। বাজারের অদুরেই উপত্যকার ঢালে ভালদারোদের ছোট্ট কাঠের বাড়ি। ঘরে একটি বড়ো কাঠের চোকি আছে। পরিপাটি বিছানা পাতা তাতে। আমাদের ঐ চোকিতেই বসতে দেয়। ভালদারোর বাবা মা দুজনকেই দেখলাম। পন্চাশোর্ধ বয়স তাদের। ভালদারোর মা হ্যাপি কে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। কান্নার সাথে পাহাড়ি আন্চলিক ভাষায় বলছিলো অনেক কথা। যার কোনো অর্থ আমরা বুঝি নাই।

ভালদারোর বাবা কাঁচের ফ্রেমে বাঁধা চোদ্দ পনেরো বছরের একটি বালিকার ছবি নিয়ে এসে আমাদের সামনে মেলে ধরে। ছবিটি দেখে আমরা দুইজনই চমকে উঠি। চেহারা অবিকল হ্যাপি র মতো দেখতে। ছবিতে মেয়েটির গলায় লিলি আর টিউলিপ ফুলের মালা। হাস্যজ্জ্বল মুখ তার। মেয়েটি ভালদারোর বড়ো বোন। সে পর্যটকদের কাছে ফুল বিক্রি করতো। চার বছর আগে পাহাড় ধসে গিরি খাদে পড়ে মেয়েটি মারা যায়।

আমরা বেলা একটা পর্যন্ত ভালদারোদের বাড়িতে ছিলাম। খেয়েছিলামও সেখানে। শিলিগুড়িতে হ্যাপি কিছু কেনাকাটা করতে চেয়েছিলো। কেনা কাটা সেই টাকা থেকে দুই হাজার রুপি ভালদারোর মার হাতে হ্যাপি তুলে দেয়। বেলা দেড়টায় ট্রেন ছাড়বে। আমারা চলে আসি 'ঘুম' স্টেশনে। ভালদারোও আমাদের সাথে  স্টেশন পর্যন্ত চলে আসে।  টয় ট্রেনটি যথাসময়ই ছেড়ে চলে আসে। ডালদারো স্টেশনের প্লাটফর্মেই দাড়ানো ছিলো। ভালদারো তার দিদি'র জন্য কাঁদছিলো কিনা, দেখা যায় নাই। আমি হ্যাপি র চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম - দুর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সে অঝোর ধারায় কাঁদছে। ট্রেনের মিউজিক সাউন্ড বক্স থেকে এই গানটি ভেসে আসছিলো তখন --

"দূরে কোথায় দূরে দূরে
আমার  মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে।
যে বাঁশিতে বাতাস কাঁদে সেই বাঁশিটির সুরে সুরে
যে পথ সকল দেশ পারায়ে,উদাস হয়ে যায় হারায়ে
সে পথ বেয়ে কাঙাল পরান যেতে চায় কোন্‌ অচিনপুরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন