বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৭

সন্ধ্যারাতের শেফালি

প্রথম বাঙালি ক্যাবারে ডান্সার মিস শেফালি তাঁর আত্মজীবনী 'সন্ধ্যারাতের শেফালি'তে বলছেন, 'আমি জানতাম আমার শরীর সুন্দর৷ আমার বুক, আমার কোমর, হাত-পা, আমার কোমর-ছাপানো চুল, এমনকী আমার চাহনি, আমার হাসিও লোকের হার্টবিট বন্ধ করে দিত কয়েক সেকেন্ডের জন্য৷ রাতের কলকাতার হুল্লোড়কে এক লহমায় থামিয়ে দিতে পারতাম আমি।'
রঙ্গমঞ্চের নটীদের ভাগ্য এমনই হয়ে থাকে, নরম শরীরে যৌবনের আগুন জ্বালিয়ে তাঁরা দপ করে জ্বলে উঠে নগরবাসীদের ক্ষণকালের আনন্দ দেন, পানশালায় প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, কিন্তু দৃষ্টির নগদবিদায় ছাড়া আর কিছুই হয় না। এঁদের খ্যাতি তেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। খেয়ালি ঈশ্বরও অন্ধকারের জোনাকিকে দীর্ঘজীবনের সৌভাগ্য দেন না। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিস্মৃতির মেঘ এসে সব কিছু দুঃখ ঢেকে দেয়।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নারায়নগঞ্জ থেকে চলে যাওয়া এক বালিকা ভাগ্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে হৃদয়হীন এক মহানগরীর মনোমোহিনী হয়ে উঠেছিলেন।সন্ধ্যারাতের শেফালি’টি মঞ্চ আলোকিত করে বসেছিলেন, তাঁর আদি নাম আরতি দাস। এক সময় রোটারি সভাগৃহ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে চৌরঙ্গির ফারপো নামক তুলনাহীন রেস্তোরাঁয় মহানগরীর হৃদয়েশ্বরী হয়ে তিনি যে দীর্ঘস্থায়ী স্পন্দন তুলেছিলেন, সত্য কথা বলতে কী, সংখ্যাহীন আঘাত ও অপমানের ধারাবাহিক হেমলক বিষ পান করেও বিশ শতকের ক্যাবারে-রানী যে আজও দেহধারণ করে কলকাতা শহরেই বেঁচে রয়েছে, সে খবরটাও নতুন প্রজন্মের মানুষদের কাছে অজানাই রয়ে গিয়েছে।

তথ্য কৃতজ্ঞতা:  শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন