শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

সুসিলা দেবী

সুসিলা দেবী। আমাদের পাশের গ্রামের এক পৌঢ়া মহিলা, বিধবা এবং নিঃসন্তান। ডিস্টিক বোর্ডের কা্ঁচা রাস্তার পাশে তাহার বাড়ী।বাড়ীর সামনে সান বাধা্ঁনো পুকুর। বাড়ীর ভিতর পাকা ই্দাঁরা। সারা বাড়ী বিভিন্ন ফল আর ফুল গাছে ঢাকা ।এই ছায়া সুনিবিড় বাড়ীটির পাশ দিয়াই ছোটবেলায় স্কুলে যাইতাম।যখন বাড়ীটি অতিক্রম করিতাম তখন পায়ের চলার গতি থামিয়া যাইতো, শুধু মাত্র সুসিলা দেবীকে এক নজর দেখিবার জন্য। খুবই পরিপাটি সুন্দরী মহিলা ছিল।সাদা ধবধবে ধুতি শাড়ি পড়িতো। চুলগুলোও ছিলো সাদা। কোনো কোনো দিন দেখিতাম সুসিলা দেবী একাকী ঘাটে কাপড় ধৌত করিতেছে। আবার কোনো কোনো দিন দেখিতাম,ফুল বাগানের কা্ঁটালতা পরি্স্কার করিতেছে।আবার কোনো কোনো দিন দেখিতাম সে খুব বিষন্নভাবে কেদেরায় একাকী বসিয়া আছে।
তখন ছোট ছিলাম তাই বুঝিতাম না সুসিলা দেবীর নিঃসঙ্গতা ও বেদনার কথা। অস্তগামী সূর্য্ অস্তাতলে যাইবার সময়ে হয়তো তাহার মনে পড়িতো যৌবনকালের কোনো সুখ স্মৃতির কথা। প্রিয়তম স্বামীর কথা, বুকে টানিয়া নেওয়া গভীর কোনো চুম্বনের কথা। তখন চোখের কোন্ জলে ভরিয়া উঠিতো। দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিলিয়া যাইতো। দূর হইতে হাটিয়া যাইবার সময় আমি এইসবের কিছুই দেখিতে পাইতাম না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সুসিলা দেবী ভারতে চলিয়া যায়। তারপর আর ফিরিয়া আসে নাই। দেশ স্বাধীন হয়। আমার স্কুল খুলিয়া যায়। সুসিলা দেবীর বাড়ীর পাশ দিয়া প্রতিদিন স্কুলে যাইতাম, বাড়ীটির দিকে তাকিয়া থাকিতাম কিন্তু তাহাকে আর কখনো দেখিতে পাই নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন