বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০

বিদিশার অন্ধকার

বিদিশার অন্ধকার 

                                                                  
কোনো এক শণিবারের বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানের লেকের ধারে বসে বিদিশা আমার হাত ধরে বলেছিল --- 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' সেদিন সেই মনোরম বিকেলে বিদিশার কানের কাছে মুখ রেখে কানে কানে আমিও বলেছিলাম ---
' তোমাকেও আমি ভালোবাসি।' 

আমাদের ভালোবাসার কথা শুনে উদ্যানের সকল ঘাস সেদিন সবুজ হয়ে উঠেছিল। লেকের জল হয়ে উঠেছিল চঞ্চল। শিরিষ আর ছাতিম গাছ থেকে ঝরা পাতাগুলো ঝরে পড়ছিল আমাদের উপর।'

তারপর কত বিকেল, কত সন্ধ্যায় আমি আর বিদিশা কত যে ভালোবাসা রচনা করেছি, সেকথা জানে চন্দ্রিমা উদ্যানের ঘাস আর লেকের জল। দিনগুলি আমার কাটছিল ভালোই বিদিশার ভালোবাসা নিয়ে। হঠাৎ একদিন সব এলোমেলো হয়ে গেল । এক ধূসর সন্ধ্যায় চন্দ্রিমার ঘাসে বসে বিদিশা আমাাকে বলেছিল --- ' তোমার সাথে আমার ঘর বাঁধা হবে না।' সেদিন সেই সন্ধ্যায় আমি বিদিশার কাছে এর কোনো কারণ জানতে চাইনি। সোজা ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে রাজপথে এসে জনারণ্যে মিশে গিয়েছিলাম। পিছনে আর ফিরেও তাকাইনি ।

তারপর অনেক বছর চলে গেছে। একদিন বিকাল বেলা খুব মন খারাপ লাগছিল। ভাবলাম --- চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে একটু বেড়িয়ে আসি। আমি বসেছিলাম যেয়ে সেইখানে, যেখানে বসে বিদিশার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম --- 'ভালোবাসি'। এত বছর পরে আজ নিজেকে খুবই অপরাধি মনে হচ্ছিল, আফসোস করছিলাম --- কেন সেদিন বিদিশাকে বলিনি --- 'কি তোমার অসুবিধা ছিল, কেন তোমার বিয়ে করা সম্ভব নয়,?'

লেকের ধারে বসে থাকতে কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠছিলাম। উদ্যানের ঘাসগুলো সেদিনের মতো সবুজ লাগছিল না । লেকের জল কেমন অস্বচ্ছ, ঘোলাটে হয়ে আছে। শিরিষ ও ছাতিম গাছ থেকে মরা পাতাগুলো ঝরে পড়ছিল আজও। সারা উ্দ্যান জুড়ে কেমন আঁধার নেমে আসতে থাকে, কেমন যেন বিদিশার মতো অন্ধকার !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন