বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

প্রাণের হিল্লোলে এসো

পর্ব - ১

একদিন আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজটি ছিল একটি মেয়ের। মেয়েটি লিখেছে -- "আমার নাম কঙ্কণা। কেউ কেউ আমাকে কঙ্কণ ও কঙ্কা বলে ডাকে। একজনই শুধু আমাকে কঙ্কাবতী বলে ডাকতো সে কোন্ জন তা পরে একদিন  আপনাকে বলব। 

তার আগে বলে নেই, আপনি আমাকে চেনেন না। কোনোদিন দেখেননিও। আমিও আপনাকে দেখেনি। ফেসবুকে আপনার লেখা আমি পড়ি। আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প লিখেন, আমি আপনার একজন মুগ্ধ পাঠিকা।  আপনার অনেক গল্প আমি বহুবার পড়েছি। কত গল্পে আপনি যে আমাকে কাঁদিয়েছেন। সে কান্নার কথা কেউ জানেনা। আপনিও না।

আপনার গল্প পড়ে পড়ে মনে হয়েছে আমার কিছু কথা আপনাকে বলব। আমার জীবনের কিছু কথা আপনার গল্প হয়ে থাক্। আমি গল্পকার নই, নই কথাকারও। আপনার মতো করে গুছিয়ে আমি লিখতে পারব না আমার কথা। তাই আপনার কাছে এই লেখা, আমার এই নিবেদন।... "

আমি কঙ্কণাকে উত্তরে লিখলাম -- আমার কাজই তো মানুষের জীবন কাহিনি নিয়ে গল্প কিংবা উপন্যাস লেখা। আপনি বলতে পারেন দ্বিধাহীন ভাবে সব কথা। আমি আপনার জীবন কথা নিয়ে লিখব গল্পকথা। 

কঙ্কণা লিখল -- " আমি হয়ত সব কথা একদিনে একই সময়ে লিখতে পারব না। দু একদিন পরপর বলব। আর আপনি যেন বিরক্ত না হন।... "

আমি বললাম -- আপনি যে রূপ মনে করেন, যেভাবে বলতে চান, সেইভাবেই লিখবেন। আর আমি লিখব আপনার কথা গল্পের মতো করে। সত্য বললে সত্য কথাই  লিখব, মিথ্যা বললে মিথ্যা কথাই লিখব। 

আমি কঙ্কণাকে আরও বললাম -- সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি আপনার কথাগুলো এখানে লিখে রাখবেন আপনার সুবিধা মতো সময়ে। আর আমি আমার সুবিধা মতো সময়ে আপনার কথাগুলো পড়ে গল্পের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করব। 

কঙ্কণা লিখল -- আচ্ছা, তাই হবে। তবে একটা ব্যাপারে আমাকে মার্জনা করবেন তাহলো -- আমার প্রকৃত পরিচয়টি আমি ইচ্ছা করে গোপন রাখছি আপনার কাছে। যদি কখনও মনে হয় আমার প্রকৃত পরিচয় আপনাকে বলা দরকার, -- তখন বলব আমার পরিচয়। আপনি যেন তার আগে জানতে না চান আমার পরিচয় । তাহলে আমি খুব বিব্রত হবো। 

আমি কঙ্কণাকে বললাম -- তাই হবে। আপনি আমার কাছে শুধু কঙ্কণা। কঙ্কণ, কঙ্কা কিংবা কঙ্কাবতীও নন্। আমি আপনাকে আমার গল্প লেখা পর্যন্ত কঙ্কণা বলেই ডাকব, কঙ্কণা বলেই জানব। আপনার কথা বলা যেদিন শেষ হবে, আর আপনার কথাগুলো নিয়ে আমার গল্প লেখাও যেদিন সমাপ্ত হবে , সেদিন থেকে এই নাম, এই কঙ্কণা উপাখ্যানও আমার কাছে শেষ হয়ে যাবে। আপনি হারিয়ে যাবেন আপনার পৃথিবীর কোনো জনারণ্যে। আর আমি হারিয়ে থাকব, অন্য কোনো এক কঙ্কণার জীবন কাহিনি নিয়ে গল্প লেখার জগতে। আপনার সাথে এই কথকতা, রাত জেগে আপনার এই কথা শোনা, আর আপনাকে নিয়ে এই গল্প লেখারও পরিসমাপ্তি ঘটবে।

কঙ্কণা লেখে -- এমন করে বলবেন না। খুব কোমল প্রাণের মেয়ে আমি। কোনো কিছুতে একটুতেই আমার কান্না পায়। 

আমি বললাম -- ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করব আমার কোনো আচরণে আপনাকে যেন কাঁদতে না হয়। তো, শুরু করুন আপনার জীবন কাহিনি বলা...। 

কঙ্কণা লিখল -- ঠিক আছে, আমি লিখে রাখব আমার কথা এখানে। তবে জীবনের সব কথা তো লেখা সম্ভব না। আমি লিখে রাখব জীবনের কিছু খণ্ডিত অধ্যায়ের কথা। কিছু সুখ দুঃখের কথা, কিছু বঞ্চনা ও আক্ষেপের কথা।... 

কঙ্কণার সাথে সেদিনের মতো ম্যাসেজিং শেষ হয়। 

একদিন দেখি -- কঙ্কণা ওর কিছু কথা লিখে রেখেছে। অনেকটা পয়েন্ট আউট করে লিখেছে। কথাগুলো  এলোমেলো ও অগোছালোও। অনেক কথার ইঙ্গিত আছে, কিন্তু বর্ণনা নেই।  সংলাপগুলোও কেমন ভাঙা ভাঙা। 

আমি কঙ্কণার সেদিনের কথাগুলো গুছিয়ে গল্পের মতো করে এখানে লিখলাম। কঙ্কণা যা লিখেছে  সব ঠিক আছে। শুধু প্রকৃতি, নিসর্গ, মানুষ, স্থান, কাল, পাত্র একটু হেরফের করা  হয়েছে। কঙ্কণা যা লিখেছে ঠিক তেমনটি নয়। আমার ধারণা কঙ্কণাও ইচ্চাকৃতভাবে অনেক কথা আড়াল বা গোপন করার চেষ্টা করেছে। আমি কেবল কঙ্কণার কথাগুলো, উত্তম পুরুষে কঙ্কণার হয়ে এখনে লিখলাম। 

চলবে --


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন