সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০২০

ভূমিকা - অপ্রাপণীয়া

'অপ্রাপণীয়া' উপন্যাসটি লেখা অদ্যই শেষ করলাম। আমার জন্য এই কাজটি ছিল একটি মহাযজ্ঞের মতো।  

আমি ছিলাম কবিতার মানুষ। ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময় রাত জেগে কবিতা লিখেছি অনেক। উদ্দেশ্য একটাই, মেয়েদের মন ভোলানো। আর তখন ছিল কবিতার কাল। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, শহীদ কাদরীদের তখন জয় জয়কার। তারা একএকজন মস্ত বড়ো কবি। আমিও কবি হবো। তাই  আমিও লিখতাম। কিন্তু লিখতে লিখতে কবিতাকে দিলাম ছুটি।  প্রকৃত কবিরা কখনও কবিতাকে ছুটি দিতে পারে না।  কিন্তু আমি দিতে পেরেছিলাম,  কারণ আমি কখনোই প্রকৃত কবি ছিলাম না। 
                                               
এই ফেসবুকের যুগে এসে নিজের টাইম লাইনে ছোট ছোট স্টাটাস দিতে শুরু করলাম। আমাদের চলনবিলের কাদাতে লুকিয়ে থাকা মুক্তার মতো লেখা।  দেখলাম, বন্ধুরা বেশ পছন্দই করছে। ছোট ছোট লেখাগুলোই মাঝেমাঝে অনু গল্পের আকার ধারণ করল। পোস্ট দিতে থাকি অণুগল্প। দেখলাম আমার বন্ধুরা অণুগল্প গুলো পছন্দ করছে।  কেউ কেউ আবার মন্তব্য করছে -- আহা !  আর একটু বড়ো করলে কী হতো!  পড়তে না পড়তেই শেষ হয়ে গেল।  তাদের এই অতৃপ্তি দেখে আমারও মন খারাপ হলো।  কী করব?  অনুগল্প গুলো একটু বড়ো করে লিখতে লাগলাম।  মানে ছোট গল্প লেখা শুরু করলাম। 

এখানেও বিপত্তি। রবি ঠাকুর আগেই  হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল, সে বলেছিল -- ছোট গল্প শেষ হয়েও হয় না শেষ।  অনেক বন্ধু বলা শুরু করল, তোমার গল্প অতৃপ্তিতে ভরা।  উপন্যাস লেখো তুমি।  কী করব, পাঠকরা দায় দিল আমাকে।  আর, সবচেয়ে বড়ো দায়ে ফেলালো আমার প্রকাশক বন্ধু আফজালুল বাসার। গত এক বছর ধরে আমাকে কেবল বলেই যাচ্ছে -- তুমি উপন্যাস লিখো।    

জীবনে উপন্যাস পড়েছি অনেক।  কিন্তু উপন্যাস কী ভাবে লেখে জানতাম না। লকডাউন কালে আবার নতুন করে কিছু উপন্যাস আবার নতুন করে পড়তে শুরু করলাম । পড়ার সময় খেয়াল করি -- কী ভাবে ওরা উপন্যাস লিখছে। যে উপন্যাসগুলো আবার পড়ি সেগুলো হচ্ছে -- বিভূতিভূষণের পথের পাচালি, অপরাজিত, তারাশঙ্করের কবি, বুদ্ধদেব গুহর মাধুকরী, কুর্চিবনের গান, রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা, গোরা, সমরেশম জুমদারের কালবেলা, সুনীলের প্রথম আলো, হুমায়ুন আহমেদের নন্দিত নরকে, অবনী, কবি, আমার আছে জল, জহীর রায়হানের শেষ বিকালের মেয়ে, মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন, সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড।                                                                                         
এগুলো পড়ে একদিন পরম করুণাময় আল্লাহ তায়লার নাম নিয়ে উপন্যাস  লিখতে বসলাম'।  কিন্তু শুরুতেই  একটা অবাক কান্ড ঘটালাম তাহলো উপন্যাস লেখার আগেই উপন্যাসের নাম দিয়ে ফেললাম -- 'অপ্রাপণীয়া'।  আর এই নামেই এগুতে থাকে উপন্যাসের আখ্যান ও কাহিনি।    

উপন্যাসের আখ্যান -- গ্রাম ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া এক তরুণের জীবন আলেখ্য। 
"আর কী কখনও দেখা হবে প্রিয় এই মানুষগুলোর সাথে। জানে না সে কোথায় যাচ্ছে, বিদেশ বিভূঁইয়ে কোথায় কোন ছন্নছাড়া ছিন্ন জীবনে এ জীবন কাটবে। যে জীবনই পাওয়া হোক, তাও একদিন শেষ হয়ে যাবে। কেউ জানবে না সে কেমন আছে, কোথায় আছে।     
' অনন্ত অজানা দেশ , নিতান্ত যে একা তুমি , পথ কোথা পাবে ! হায় , কোথা যাবে ! কঠিন বিপুল এ জগৎ , খুঁজে নেয় যে যাহার পথ। স্নেহের পুতলি তুমি সহসা অসীমে গিয়ে কার মুখে চাবে । হায় , কোথা যাবে !....
যাবে যদি , যাও যাও , অশ্রু তব মুছে যাও , এইখানে দুঃখ রেখে যাও।'

উপন্যাসের একটু চুম্বকাংশ --
'...  পিচঢালা পথ ধরে রিকশাটি চলতে থাকে সম্মূখপানে।  পিছনে পড়ে থাকে -- তার দূরন্ত শৈশব, মাটির সোঁদা গন্ধ, মৃত্তিকার নীচে আপন মৃত মানুষের করোটি, বাতাসে রোহিনীর কান্নার ধবনি,  মেঘের আড়ালে  দীপ্যমান  দুঃখিনী মায়ের মুখচ্ছবি। আর যে থাকল সে দুজন হতভাগ্য মানুষের  অবিচ্ছেদ্য রক্ত মাংসের তৈরি পিতৃ মাতৃহীন একটি মেয়ে । 

উপেক্ষিতা হয়ে আরও একজন থেকে গেল। সে অপার্থিব। দূরালোকে সে চলে গেছে। কেউ জানে না, রোহিত কুমার সেনের সে কী ছিল ? যাকে পায়নি সে এই জীবন কালে। সে যে জনম জনম প্রবঞ্চিতা,  সে যে অপ্রাপণীয়া..... '।


কোয়েল তালুকদার
দক্ষিণখান, ঢাকা। 
তারিখ -- ৪ আগস্ট, ২০২০ ইং      
                     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন