শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮

চম্পা বকুল চলে

১.  চম্পা বকুল তলে

আমার স্কুল সহপাঠী নারায়ণ পূজা পার্বনে প্রায়ই ওদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যেত। নারায়ণের মা নারিকেলের নারু আর গুরের বাতাসা খেতে দিত। সেবার ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর লক্ষীপূজায় গিয়েছিলাম ওদের বাড়িতে। নারু আর বাতাসার সাথে মাসীমা ক্ষীরও খেতে দিয়েছিল। ক্ষীর খেয়ে বলেছিলাম, ' দারুণ  মজা হইয়াছে।' মাসীমা এই কথা শুনে বলেছিল, 'তুমি আবার আসিও। তোমাকে আরও ভাল করে ক্ষীর রান্না করে খাওয়াব। ' কিন্তু  আমার আর যাওয়া হয় নাই। সেইটাই ছিল শেষ যাওয়া। পরে শুনেছি, সেই মাসীমা ইহলোক ত্যাগ করেছেন।

এই নারায়ণের সাথে আমার দেখা হয় তিরিশ বছর পরে কূড়াগাছা মেলায়। ও আমাকে জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যায় ওদের বাড়ি। স্কুল থেকে আগে যে পথ দিয়ে ওদের বাড়ি যেতাম, সে পথ ছিল ধূলির। সেই পথই দেখলাম ইট সুরকি বিছানো। একটি রিক্সায় করে চলে যাই ওদের ব্রহ্মগাছা গ্রামে। পথে দিয়ে চলছিলাম, আর দেখছিলাম পথের দুইপাশের চিত্রগুলি। সবকিছুই কেমন যেন অচেনা লাগছিল। সেইসময়ে পথের ধারে পাকুড় গাছতলায় দেখেছিলাম, খালি মাঠের উপরে একটি নাট্যশালা। আজ দেখলাম --- সেই নাট্যশালাটি সেখানে নেই।  ভেঙে সেখানে স্কুল করা হয়েছে।

নারায়ণদের বাড়িতে পৌঁছে মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেল। বাড়িতে নতুন কোনো ঘর দুয়ার ওঠে নাই। যা দেখেছিলাম তাই আছে। সবকিছুই কেমন জীর্ণ পুরাতন হয়ে গেছে। মুখর করা বাড়িটি কোলাহলহীন মনে হচ্ছে। সাদা ধূতি শাড়ি পড়ে কোনো পৌঢ়া মহিলা আজ আর বের হলনা। কাছে এসে মায়ের মতো আদর করে বললোনা --- ' বাবা, তুমি কেমন আছ?'

একটু পরে নারায়ণ ওর স্ত্রীকে আমার সামনে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দেয়। সাথে ওর দুটো বাচ্চাকেও। আমি ওর স্ত্রীর মুখের দিকে ভাল করে একবার দৃষ্টি মেলে তাকালাম, যাকে ভেবে এই চেয়ে থাকা, সেই মেয়ে এই মেয়ে নয়। তারপরেও তাকেই দেখলাম, বললাম, বৌদি, 'আমি নারায়ণের স্কুল সহপাঠী বন্ধু। তিরিশ বছর পর আমাদের দেখা। '

বাড়িতে তেমন কাউকে না দেখতে পেয়ে নারায়নকে বলি, অপর্ণা দিদির কোথায় বিয়ে হয়েছে? নারায়ণ বলে, দিদি এখন জলপাইগুড়িতে থাকে। ওখানেই তাঁর ঘর সংসার। '
----  সুধীন দাদা কোথায়?
----   সেও ওপারে চলে গেছে। শিলিগুড়িতেই বিয়ে করেছে।
---- তোর ছোট ভাই নৃপেন কোথায় থাকে?
---- ও কোলকাতায় চিৎপুরে থাকে। আমি এই পুরো বাড়িতে এখন একাই থাকি।

নারায়ণ আরও বলছিল, জানিস, কেমন যেন শ্মশানের মতো শূন্যতার মনে হয় -- এই বাড়ি। এই লোকালয়। কত আপন মানুষ যে স্বর্গীয় হয়ে গেল। কত আত্মজন যে চলে গেল এই দেশ পারাপার ছাড়িয়ে ওপারে, অন্য পরভূমে। অন্তর হাহাকার করে ওঠে। তোকে যখন মেলায় দেখলাম, মনটা কি যে আনন্দে ভরে উঠল। কত কথা মনে হচ্ছে তোকে দেখে। কত স্মৃতি। '

আমি নারায়ণের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, কেমন যেন বিষাদে ছেয়ে উঠেছে ওর মুখখানি। আমি ওকে বলি --- তোদের বাড়ির পিছনে তো ইছামতী নদী আছে, চল্, একটু বেড়িয়ে আসি তীর থেকে। তখন সন্ধ্যা নেমে আসছিল। আমি আর নারায়ণ হাটতে হাটতে চলে যাই ইছামতীর তীরে । হায়!  নদী আর নেই। হয়ে গেছে মরা খাল। সামান্য কিছু জল স্থির হয়ে আছে তলাতে। সেই কাজল জল, সেই স্রোতধারা, সেই উথাল ঢেউ কিছুই আজ আর নেই।

ভেবেছিলাম মনটা আমাদের ভাল হবে নদী দেখে। তা আর হলনা। চৈত্রের এই সন্ধ্যা রাতে আকাশে উঠেছিল একাদশীর চাঁদ। বুঁনো জোনাকিরা জ্বলে উঠেছিল নদীর কাশবনে। ঝিঁঝির ডাক শুনতে শুনতে আকুল হয়ে নারায়ণকে বলছিলাম --- 'তোর সেই দীপা বর্মণের খবর কী, যাকে তুই ভালবেসেছিলি।  বৌঠানের মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম -- এই তো দীপা নয়।'

আমরা নদীর কূল থেকে সন্ধ্যার আঁধারে হেটে হেটে ফিরে আসছিলাম। যে পথ দিয়ে গিয়েছিলাম নদীর কূলে, সেই পথ দিয়ে নারায়ণ আমাকে আনলো না। অন্য একটি পথ দিয়ে সে আমাকে নিয়ে আসছিল। পথের দুপাশটা খুব পরিচিত মনে হ্চ্ছিল। জ্যোৎস্নার আলো আঁধারিতে চিনতে পারছিলাম পরিচিত গাছগুলো। আজ থেকে তিরিশ বছর আগের সেই বকুলের গন্ধ, পথের পাশের ঝাড় থেকে আসছিল চম্পা ফুলের সেই  সুবাস। আমার মনে পড়ছিল এই রকম সুবাস পেয়েছিলাম তিরিশ বছর আগে দীপা বর্মণদের বাড়ি যেতে।

নারায়ণ যে বাড়িটির সামনে আমাকে নিয়ে আসে, সে বাড়িও আমার চেনা। ইটের এই বাড়িটি তখনও পুরানো ছিল।  আজ দেখলাম, এর পলেস্তারা সব খসে গেছে। ভাঙ্গা ইটের ফাঁকে পরগাছা জন্মে গেছে। নারায়ণ আমাকে বলে ----' চিনতে পারছিস বাড়িটি?'  আমি বললাম, চিনতে পারছি । এই বাড়ি দীপাদের। সেইবার লক্ষীপূজায় এখানে কীর্তন গানের আসর বসেছিল। সেদিন আকাশে ছিল কোজাগরী চাঁদ। সারা পৃথিবী খাখা জ্যোৎস্নায় ভরে উঠেছিল। পূজার প্রসাদ সেদিন দীপা তোকে না দিয়ে আমাকে দিয়েছিল। আজ তোকে বলছি --- সেদিন সেই অসম্ভব সুন্দর জ্যোৎস্নায় দীপা গোপনে ধরেছিল আমার  একটি হাত। দীপা বলেছিল -- ' দাদা, তুমি আমাকে একটু চম্পা বকুলের ছায়াতলে  নিয়ে যাবে? এই কোজাগরী চাঁদ, এই রাত তোমার জন্য মায়াময় মনে হচ্ছে।'  আমি জানি, দীপা ছিল তোর। তাই দীপার সেই হাত আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম সেদিন।'

নারায়ণ আমাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। দেখি, চল্লিশোর্ধ্ব একজন রমণী বারান্দায় শীতল পাটি বিছিয়ে বসে আছে। তার পাশে  লন্ঠন জ্বলছে। নারায়ণ লন্ঠনটি তুলে ধরে সেই রমণীর মুখের দিকে। এবং বলে, দেখত চিনতে পারিস কিনা এই মুখ। ' আমি চিনেছিলাম, সেই মুখ। এ যে দীপা। সে কোনো কথা বললনা, নির্বাক তাকিয়ে থাকল আমার মুখের দিকে। '

গন্ধে আকুল করা চম্পা বকুল তলা দিয়ে হাটতে হাটতে সেই রাতে বাড়ি ফেরার সময় নারায়ণ বলেছিল --- ' তিরিশ বছর ধরে জানতে পারিনি, দীপা কেন এমন বদ্ধ পাগল হয়েছে। আজ তোর কাছ থেকে জানতে পারলাম, দীপা কেন এমন পাগল হয়ে গেছে।'



২.       নূরী

শেষ পর্যন্ত একজন বালিকাকে আমার বিবাহ করতে হলো।  কোনো এক শীতের সন্ধ্যায় তাকে লাল বেনারশী শাড়ি পড়ানো হলো। মুখে আলপনা আঁকা হলো। হাতে চুড়ি পড়ানো হলো। মেহেদী লাগিয়ে দেয়া হলো দুই হাতে। খুব একটা উৎসব হলোনা। সানাইও বাজেনি। ইচ্ছা ছিলো দুই ঘোড়ার গাড়িতে করে বউ তুলে আনবো, তাও হলোনা। ফুলহীন, সাজসজ্জাহীন একটি সাদা গাড়ীতে করে সেদিন নববধূকে ঘরে তুলে এনেছিলাম।

এ যেনো পুতুলখেলার সংসার শুরু হলো। বাজারে যেয়ে হাঁড়ি পাতিল কিনলাম। বালতি কিনলাম। শীল পাটা কিনলাম। মাদুর,ফুলদানী সব কিনতে হলো। এ এক অত্যশ্চর্য জীবনের শুরু। যা জীবনে কোনোদিন চোখে দেখি নাই। শুনি নাই। বুঝি নাই। এখন আর সকাল বেলা পাখীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা করতে হয়না। এলার্ম দিয়ে রাখতে হয়না ঘড়িতে।এতো সুুন্দর জীবন আছে জীবনে, আগে বুঝি নাই।

ওর নাম আয়শা নূর। বলেছিলাম তুমি এষা না নুরী। ও বলেছিলো আমি নুরী।
নূরী চঞ্চল হয় সকাল বেলা। রোদ্রের উত্তাপে হয় দহন।
সাওয়ারের নীচে জল ঢালে সারা দুপুর,
সন্ধ্যায় আকুল হয় রবি ঠাকুরের গানে,
মনে পড়ে তার দূর গায়ের কথা
স্টেশনে রেল গাড়ির সেই হুইসেলের শব্দ, মনে পড়ে সেই ঝিকঝিক আওয়াজ।

নুরী ওর বাবার সাথে একদিন বাড়ী চলে যায়। সেখানে ওর ছোটো বোনকে পায় খেলার সাথী করে। দু'জন হেটে হেটে চলে যায় রেল লাইনের ধারে। দূর থেকে হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন এসে থামে প্লাটফরমে। হৈ হুল্লর করে যাত্রিরা নেমে আসে কামড়া থেকে।

আমি বুঝতে পারি আমার প্রথম শূণ্যতা।  আলনায় কাপড় হয়ে থাকে এলোমেলো। আবার পাখীর ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘুম ভাঙ্গার। জীবনের এতোটা বছর একা লাগেনি। কবিতা লেখার ভাবনা চলে যায় সমান্তরাল রেল লাইনের সেই দূরের প্রান্তে। নিঃসীম শূণ্যতা পড়ে থাকে সেখানে। একদিন ঘুম আসে সন্ধ্যাবেলা, আরেকদিন সারা রাতেও না।

আর একদিন রাতের বেলা ল্যাম্পের আলো জ্বেলে চিঠি লিখতে বসি ---
'নূরী, তুমি চলিয়া যাইবার পর হইতে আমার খাওয়ার অরুচি হইয়াছে। প্রত্যহ অফিসে যাইতে লেট হইতেছে। ঘুমও ঠিকমতো হইতেছেনা। অনেক চেষ্টা করিয়াছি,স্বপ্নে তোমাকে কাছে পাইতে। কিন্তু একদিনও তোমাকে পাই নাই। যাহা হোক,পত্র পাঠ তুমি চলিয়া আসিও। ইতি---

উত্তরে নুরী লিখলো ---
'প্রিয়তম, তোমার চিঠি পেলাম। আমি এখানে খুব ভালো আছি। আমরা প্রতিদিন রেল লাইনের ধারে বেড়াতে যাই। কাল কাজিপুরা নানী বাড়ী বেডাতে যাবো। উল্লাপাড়া ছোটো ফুপুর বাড়ীতেও যাবো। বেশী খিদা লাগলে তুমি আজিজের হোটেলে খেয়ে নিও। রবীন্দ্রনাথের গান শুনিও। তবেই ঘুম আসবে। ইতি- নুরী।

নুরীতে থাকে মুক্তা, পাথরে ভারী হয়ে থাকে বুক
যমুনার জলে রুপালী মাছের ঝাঁক ঘুরে বেড়ায়
হেমন্তের রাত্রিতে চাঁদ নেমে আসে দুই পাড়ে-
তার চোখ আমাকে বিষন্ন করে, কোথায় পড়ে আছে
বকুল ফুলের মালা খানি। আমি প্রতিদিন চেয়ে থাকি
অন্ধকারে- বালিকা চলে আসছে
রেল লাইনের স্লিপারে হেটে হেটে।.

আমি নিজেই ওকে দেখতে চলে যাই একদিন। রাজশাহী এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামলো জামতৈল স্টেশনে। তখন সন্ধ্যা হয়েছে। মুগ্ধতার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম বুকের তল থেকে। রক্তের স্পন্দন বাড়ছিলো তাকে দেখবার আনন্দে। বাড়ী পৌঁছে শুনি- ছোটো ফুফুর বাড়ীতে নুরী বেড়াতে গেছে। আজকেই ওর ফেরার কথা ছিলো। কিন্তু আসেনি।

দূর ভ্রমনে শরীরে ক্লান্তি ছিল। মন খারাপের চোখে নাকি ঘুম বেশি আসে।  অবসাদ আর মনবেদনা নিয়ে একসময় ঘুমিয়ে যাই। সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে --- তখন চোখ মেলে দেখি পাশে নুরী শুয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে ওর একটি হাত আমার বাহুতে জড়িয়ে ধরে আছে।

তারপর পাখী সব কলরব করে ডেকে উঠলো
ভোরের আলো জ্ব্বলে ওঠে হুরাসাগরের জলে.
স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় রাতের ক্লান্ত ট্রেন খানি
তখন গান কবিতা হয়,কবিতা হয়ে যায় গান।


৩.    মেহেরজান

অপ্রেমে দূরে রেখেছিলাম তাকে। প্রেমেই তাকে কাছে নিয়ে আসে। এত কাছে যে --- ওর চোখের মায়া একদিন আমার চাহনীতে না পেলে আমার মন খারাপ হয়ে যেত। আমার সমস্ত চৈতন্যে, সমস্ত অবচৈতন্যে তার ভালবাসায় জড়িয়ে যাই।

মেহেরজানকে প্রথম দেখে বিমুুগ্ধ হয়েছিলাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে। তখন সেখানে এতো অট্রালিকা ছিলো না। ওয়াইজ ঘাট থেকে হেটে হেটে আরো একটু পশ্চিমে, নদীর তীরে একটা ভাঙ্গা ইটের ঢিপির উপর দু'জন বসেছিলাম। সূর্য তখন অস্তমিত। নদীতে ভেসে থাকা লাল আভার ঝিলিক মেহেরজানের মুখে এসে পড়েছিল। আর প্রথম বিমুগ্ধ হওয়া সেখানেই।

সেদিন ঝুনু আপা ক্লাশে আসেনি। তাই ক্লাশ আর হলোনা। তবলচি কিছুক্ষণ একাকী তবলায় তাল দিল।কিন্তু সে নাচ আর কারও করা হলো না। তারপর মর্নিং শো'তে স্টার সিনেমা হলে আমি আর মেহেরজান যেয়ে ঢুকে পড়ি। সুভাষ দত্তের 'বসুন্ধরা'। সিনেমা কি দেখবো ? আমরা যেখানে বসেছিলাম,তার আশে পাশে ওয়াইজ ঘাটের এক গাদা Out of Bond এর মেয়েরা বসেছিল। উদ্ভট সাঁজ, আর পোষাক পরিহিত ঐ সব বনিতারা অকারণে হাসি আর শিষ দিচ্ছিল। বিরতির সময় আমরা বের হয়ে চলে আসি।

আর একদিন আহসান মঞ্জিলে গিয়েছিলাম। প্রকোষ্ঠের পর প্রকোষ্ঠ ঘুরছিলাম। একটি রুম আছে নবাবদের পানশালা হবে হয়ত। দেয়ালে টানানো একজন নর্তকীর তৈলচিত্র দেখতে পাই। আমি মেহেরজানকে বলি --- তুমিও তো নাচ শিখছ। নবাবরা থাকলে এই রকমই নর্তকী হতে পারতে।
মেহেরজান:   তুমি কি ঐ মেয়ের চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারছো ?
আমি:    যে মাদকতা আমি দেখছি ওর চোখে মুখে, সেখানে কেবল আনন্দই দেখতে পাচ্ছি।
মেহেরজান:   তুমি দেখেছ কেবল ওর আনন্দময়ী দুটি চোখ। আমি দেখেছি ওর চোখের পিছনে --- যেখানে অনেক বেদনার অশ্রু জমে আছে। যা দেখাও যায়না, ঝরেও পড়েনা।

আমি দেখলাম, মেহেরজানের চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে। হঠাৎ মনে হলো ঐ রুমের মধ্যে ঘুঙ্গুরের শব্দ হচ্ছে। তবলচি বাজাচ্ছে তবলা। শরাব খা্চ্ছি আমি।মেহেরজান নাচছে নুপুর পায়ে। আমি তো মেহেরজানের চোখে কোনো দুঃখ দেখছিনা, দেখছি আনন্দ। শরাব পান করছি। প্রিয়া আজ মেহেরজান। হঠাৎ মনে হলো, পাশের প্রকোষ্ঠ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মনে হলো কোনো একজন নর্তকী আথবা যৌনদাসী কাঁদছে। যখন ঘোর কাটে তখন দেখতে পেলাম --- আমি মেহেরজানের চুলে মুখ লাগিয়ে চুলের সুবাস নিচ্ছি।মেহেরজান আমার বুকে জড়িয়ে আছে।

তারপর অনেক কথা। কতো ভালবাসা হলো দুজনের।কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সেই প্রেম কালস্রোতের উল্টো দিকে ভাসিয়ে দিলো। প্রেমেই একদিন মেহেরজানকে কাছে টেনে এনেছিলো, আবার প্রেমেই তাকে দূরে রেখে দিলাম। যার চোখের মায়া দিয়ে আমাকে একদিন না দেখলে সারাদিন  মন খারাপ লাগত, তাকেই নয়নের আড়াল করে রাখলাম। মেহেরজানকে আমার সমস্ত চৈতন্যে, সমস্ত অবচৈতন্যে ভুলে যেতে থাকি, কেন ভুলে যেতে থাকি --- সে দীর্ঘশ্বাশের কথা আরেকদিন বলবো।


৪.       কুসুম

একটি রিসার্স প্রজেক্টে কাজ করতে কুসুম ঢাকা এসেছিল । সাময়িক চাকুরী। ও আমার সহকর্মী ছিল।গত সপ্তাহে কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে গেছে। তাই চাকুরী আর নেই। আজ সে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে। কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। জানালার পাশে বসে থাকা কুসুমের বিষন্ন চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে । ট্রেনের চাকার খট্ খট্ কর্কশ আওয়াজ দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে সামনের সমান্তরাল পথের দিকে। কুসুমের চোখ আর দেখা গেলনা। এই শহর ছেড়ে কুসুম চলে গেলো।

কতক্ষণ প্লাটফরমে একাকী হাটছিলাম। কেমন যেন উদাস লাগছিল। পাশে অদূরে একটি চা'র দোকানে গিয়ে বসি। এক কাপ লাল চা খাই। তারপর সিগারেট ধরাই। পাশে কেউ ছিলনা। ধূয়াগুলো মিলিয়ে দিচ্ছিলাম শুন্য প্লাটফরমের দিকে।

স্টেশন থেকে পথে নেমে পড়ি। প্রখর রোদ্রে হেটে হেটেই মুগদাপাড়ায় মেসে চলে আসি। মনটা ভাল লাগছিলনা। বিছানায় সোজা শুয়ে পড়ি। টেবিলের উপর রাখা ডাইরীটার উপর চোখ যায়। একবার প্রজেক্টের কাজে নেত্রকোনা'র বারোহাট্রা গিয়েছিলাম। কংস নদীর পাড়ে এক নিরিবিলিতে আমার ডায়েরীটা নিয়ে কুসুম লিখেছিল ----
'তুমি আমাকে পূর্ণ করো। আমাকে পূর্ণ করবেনা অন্য কেউ। আমাকে তুমি স্বপ্ন দেখাও। যে স্বপ্ন ভাঙ্গতে পারবেনা কেউ। আমি বসে থাকি তোমার পথের দিকে।তোমার সাথে পথ চলবো।, সে পথ চলা বন্ধ করতে পারবেনা কেউ। আজকের এই কংস নদীর জলকে সামনে রেখে বলছি ---- 'আমি তোমাকে ভালবাসি।'এই ভালোবাসাও কেড়ে নিতে পারবেনা কেউ।'

একদিন দুইদিন যায়। সময় কাটতে চায়না। সব চেনা পথগুলো ফাঁকা ফাঁকা লাগে। দুটো টিউশনী করি।বিকেল হলে একাকী স্টেশনের প্লাটফরমে ঘুরে বেড়াই।কখনও অসময়ে ঘুমিয়ে থাকি। কখনও সারারাত জেগে থাকি। মাঝে মাঝে ভাবি, কুসুম আমার কি না হতে পারত। ওকে কেন যেতে দিলাম। রেখে দিতাম আমার উদ্বাস্ত জীবনের কাছে।
                                                                                                                                                       একটি কোম্পানীতে পণ্য মার্কেটিংএর চাকুরী পাই। প্রথম দিনেই সহকর্মী মালতী নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। যেন কুসুম। সেই চোখ, সেই চুল, সেই স্মিত হাসি। সেই ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠা। সেই পুরানো প্রেম ফিরে পাওয়া। কুসুমকে নিয়ে যে পথগুলো দিয়ে হেটেছিলাম, সে পথ দিয়েই মালতীকে নিয়ে হাটি। পার্কে যে বেঞ্চে কুসুমকে নিয়ে বসে থেকেছি সেই বেঞ্চেই মালতীকে নিয়ে বসে থাকি। মালতীর ভালবাসাগুলোও কুসুমের মতোই। সেই একই শরীরের গন্ধ, আলিঙ্গনের উষ্ণতা একই, চুম্বনের মাধূর্যও একই।'

এক অগ্রহায়নে মালতী আর আমার বিয়ের সানাই বেজে ওঠে। আমার পরনে শেরওয়ানী, মাথায় কারুকার্য খচিত টুপি, ওদিকে মালতীর পরনে লাল বেনারশী শাড়ি। সিঁথিতে টিকলী বাঁধা। গালে কপালে আবির মাখা সাঁজ। যখন আমার পাশে মালতীকে বসানো হলো, তথন একবার তাকালাম মালতীর দিকে। দেখি এ যেন সেই কুসুম। সেই মায়াবী চোখ, সেই আনত ললাট। চারদিকে কত আনন্দ, কত হৈহুল্লুর, কত গান বাজছিল । সব গান ছাপিয়ে এই গানটি  বিষন্ন সুরে ভেসে এল ---
 ''প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে।
 চারি দিকে হাসিরাশি, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে।''


৫.        শেষ বিকেলের কথা

রাতে খাবারের পর কেমন যেন আলস্য লাগছিল। শুয়ে ছিলাম বালিশে মুখ গুজে। ভালো লাগছিলনা। উঠে তাই ছাদে চলে আসি। ছাদের এককোনে আমি দাড়িয়ে আছি। আজ আকাশে চাঁদ নেই। ছড়ানো ছিটানো আছে কয়েকটি তারা। আমার পরনে টি-সার্ট এবং ট্রাউজার্স।একটা সিগারেট ধরাই। সিগারেট টানছিলাম আর ভাবছিলাম আজকের শেষ বিকেলের কথ। সিগারেটের ধূয়ার টানে মনটা চলে গেল --- বিকালে পার্কের সেই বিবর্ণ সময়ের কাছে ।

দু'টো প্রজাপতি একটাই গোলাপের উপর বসে আছে।পাশে আরও গোলাপ আছে, আরো অনেক ফুল আছে।সেখানে কোনো প্রজাপতি নেই। একটি ফুল থেকেই দু্'টো প্রজাপতি সুবাস নিচ্ছে। ওরা মধুরাক্ষী কিনা জানিনা। এই অপূর্ব মোহনীয় দৃশ্যটি দেখছিলাম আমি আর পাঁপড়ি।

পাঁপড়ি আমার সহপাঠী। আমাদের ক্লাশ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজকে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল।ক্যাম্পাসকে বিদায় জানিয়ে এসেছি। কাল থেকে কেউই আমরা ক্যাম্পাসে থাকবনা। সেমিনার কক্ষে কত ছাত্র বসে থাকবে, আমরা সেখানে থাকবনা। ক্যান্টিনে আর চা'র কাপে ঝর উঠবেনা। লাইব্রেরী বারান্দায় বসে আর কোনো আড্ডাও হবেনা।

আমার আর পাঁপড়ির এইসব নিয়ে এমনিতেই মন খারাপ ছিলো। তারপরেও আজকের এই শেষ বিকালটা কাটানোর জন্য পার্কে চলে আসি। এসেই প্রজাপতিদের ঐ মোহনীয় দৃশ্যটি দেখতে পাই। এলোমেলো ভাবে হাটছিলাম দু'জন। এক সময় লেকের পারে ঘাসের উপর যেয়ে বসি। পাঁপড়ি কালকেই চলে যাবে দেশের বাড়ী। ওর বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে আছে। অপেক্ষা ছিল শুধু পরীক্ষা শেষ হবার। পাঁপড়ি বলছিল --- তুমি যাবেনা আমার বিয়েতে ?
আমি :  তুমি বললে অবশ্যই যাব।
পাঁপড়ি মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলছিল -- তুমি অবশ্যই যাবে।
আমি:  যাবো। কিন্তু কোনো কারণে যদি না যেতে পারি ---

আমি আমার ঝুলানো কাপড়ের ব্যাগ থেকে রবীন্দ্রনাথের 'গীতবিতান' বইটি বের করি। পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে এই গানটি চোখে পড়ে-

'অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে
কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে
সে কি তোমার মনে আছে তাই শুধাতে এলেম কাছে–
রাতের বুকের মাঝে মাঝে তারা মিলিয়ে আছে সকল খানে।'

গীতবিতানের প্রথম পাতায় লিখি --- ' তোমার শুভ দিনে আমার এই শুভাশীষ '। নীচে আমার নাম ও তারিখ লিখি। তারপর বইটি পাঁপড়ির হাতে দিয়ে বলি --- সেদিন যদি কোনো কারণে তোমার বিয়েতে না যেতে পারি, তোমার জন্য আমার এই গীতবিতান।'

বইটি আমার হাত থেকে নিতেই দেখি পাঁপড়ির মুখ।মহুয়া গাছের ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদ এসে মুখে পড়েছে। লেকের নিস্তব্ধ জলের মতো চোখ বিনম্র হয়ে আছে। উদ্ভান্ত বাতাসে কড়ই গাছ থেকে তখন মরা পাতা ঝরঝর করে ঝরে পডছে। কি কথা যেন বলতে চেয়েছিল পাঁপড়ি কিন্তু আর বলতে পারেনি। দেখলাম ---পাঁপড়ি কাঁদছে।



৬.         পৃথিবীর পথে পথে

সিরাজগঞ্জে শহীদ মনসুর আলী স্টেশন থেকে সিল্কসিটি ট্রেনে ঢাকা আসছিলাম। আমার পাশের সিটে মধ্য বয়সী এক বিদেশী বসা ছিল। প্রাথমিক পরিচয়ে যতটুকু জানতে পারি --- ওর নাম পল এ্যান্ডারসন। সে একজন ধর্ম যাজক এবং পরিব্রাজক। অনেকটা ক্যারাভান লাইফ তার, যাযাবরীয় জীবন যাপন করে। গিয়েছিল দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দির দেখতে। সেখান থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাট। সোনা মসজিদ দেখে এখন ঢাকার পথে। তারপরে যাবে রেঙ্গুন।

সিল্কসিটি ধীরে ধীরে যমুনা অতিক্রম করছিল। তখন বর্ষার সময়। জেগে থাকা চরগুলো জলে ডুবে গেছে।সারা যমুনার বুক জুুড়ে জল থৈথৈ করছে। সাগরের মতো লাগছিল যমুনাকে। ওপারের কোনো কূল কিনারা দেখা যায়না। ট্রেনের জানালা দিয়ে পল বিস্ময়ে দেখছিল যমুনা নদী !
পল :   তোমাদের এই নদীটির নামই তো যমুনা ?
আমি:  হ্যাঁ, এইটিই যমুনা নদী।
পল:  খুবই সুন্দর একটি নদী। ঐ যে দূরে পানি আর পানি দেখছি। তারপরে কোন শহর বা গ্রাম আছে ?
আমি:  ঐ জলের ওপারে কোনো শহর নেই, নদীর কূল ঘেসে আছে শুধূ গ্রাম আর ফসলের ক্ষেত।

পলের সাথে এইভাবেই কথা বলতে থাকি। ট্রেনটি ইতোমধ্যে যমুনা পার হয়ে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।মির্জাপুর পর্য্ন্ত যেতে যেতে পল সম্বন্ধে যতটুকু জানতে পারি --- পলের জন্ম আমেরিকার টেক্সাসের হার্স্ট শহরে। ওর মা ছিলো বার্মিজ। পলের বাবা চাকুরী সূত্রে রেঙ্গুনে থাকাকালীন সময়ে পলের মা'র সাথে প্রণয় হয় ও পরবর্তীতে বিয়ে হয়। পলের বাবা'র পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিলো বোম্বে। আর পলের কৈশরকাল কাটে এই ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতেই। এই নগরীতেই পলের মায়ের অকাল মৃত্যুও হয়।

ট্রেনটি মির্জাপুর স্টেশনে থেমে আছে। অন্য আর একটি ট্রেন এখানে ক্রসিং হবে। ট্রেনটি ছাড়তে দেরী হবে দেখে আমি আর পল স্টেশনে নেমে প্লাটফর্মের উপর দিয়ে হাটতে থাকি।
আমি :  পল, তারপরের কথা বলো।
পল:  আমার য়য়স যখন নয় বছর তখন বাবা হার্স্টে চলে আসে। এমনই দূর্ভাগ্য যে, বাবা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সে বছরেই।

আমরা যেয়ে একটি চা'র দোকানে বসি। এবং চা খেয়ে নেই । পলই আমাকে সিগারেট অফার করে। সিগারেট খেতে খেতে বলছিলাম --- পল এবার তোমার ঘর সংসারের কথা কিছু বলো।

পল:  আমার স্ত্রী একজন আইরিশ মেয়ে। সে এখন ডাবলিনে থাকে। বিচ্ছিন্ন জীবন। ওর কাছে আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে। নাম মিলিশা।

পল মানি ব্যাগ থেকে ওর মেয়ের একটি ছবি বের করে আমাকে দেখায়। ফুটফুটে পরীর মতো দেখতে ওর মেয়ে।
পল আরও একটি সিগারেট ধরিয়ে টানছে। ঢাকার দিক থেকে আসা ট্রেনটি স্টেশনে এসে দাড়ায়। আমরা আবার ট্রেনে যেগে উঠে পড়ি।

ট্রেনটি যখন মৌচাক বনাঞ্চল অতিক্রম করছিল --- দেখি বনারণ্যের গভীরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পল। আমি পলকে ডাকি --- 'পল ?'
পল:   জ্বী, কোয়েল।
আমি: তুমি তো এখন অনেক নিঃসঙ্গ ! তোমার সময়গুলো কি ভাবে কাটাও ?
পল:  এই তো ধর্ম কর্ম করছি। দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর পথে পথে একাকী হাটছি। বিভিন্ন উপাসানালয়ে ঘুরে বেড়াই। বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ মানুষের সাথে কথা বলি। আমার ধর্মের বাণী অন্য মানুষদের শোনাই। কাল চলে যাবো রেঙ্গুনে। মাতামহ ও মাতামহীর গ্রেবইয়ার্ডে যাব। তাদের জন্য প্রার্থনা করব। ওখানকার বৌদ্ধ উপাসানালয়গুলো ঘুরব। এইত এইভাবেই জীবন চলছে। এই ভাবেই সময় কাটাই।

আামাদের ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে। কখন টঙ্গী চলে এসেছে বুঝতেই পারি নাই। আমি পলকে বললাম--- 'সামনে বিমান বন্দর স্টেশনে আমি নেমে যাব।' আমি পলকে শেষ যে প্রশ্নটা করেছিলাম, তাহলো- ''পল, তুমিত পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছ, কোন দেশে বা কোথায় তোমার মরতে ইচ্ছা করে ? '' আমার এ প্রশ্ন শুনে, পলের মুখটা বিষন্ন হয়ে গেল। চোখ দুটো কেমন যেনো ভারী হয়ে উঠলো।

পল :   তোমাদের ভারতবর্ষের বোম্বে নগরীতে আমি মরতে চাই। ওখানে আমার শৈশব ও ছেলেবেলা কেটেছে। ওখানকার আকাশ বাতাস এখনও আমাকে টানে। আরব সাগরের তীরে ছোট বেলায় আমার হাতধরে বাবা মা কত ঘুরে বেড়াত। আমার মায়ের সমাধিস্থল ঐ শহরেই। ঐ শহর আমাকে ডাকে। মেরিন ড্রাইভ রোডের আমাদের ছোট্ট বাড়ীটার কথাও মনে পড়ে।

ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে বিমান বন্দর স্টেশনে এসে থেমে যায়। আমি পলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়ি।
বিদায় মুহূর্তে পলকে বলেছিলাম --- তোমার সাথে আমার আর কি কখনও দেখা হবে ? পল বলেছিল--- হয়ত হবে, এই পৃথিবীর কোনো এক পথে। এই রকমই কোনো এক ট্রেনে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন