হৃদয়ে আমার পৃথিবীর আলো
একদিন কর্মহীন এক অলস অপরাহ্নে আত্ম পরিজনহীন আমার গৃহকোণে শুয়ে শুয়ে পড়ছিলাম শামসুর রাহমানের 'হৃদয়ে আমার পৃথিবীর আলো' থেকে এই পংক্তিগুলো --
'... তোমার মদির চোখ, গোধূলি-রঙিন গ্রীবা,/জীবন স্পন্দিত টসটসে ঠোঁট/ অর্থাৎ তোমার সৌন্দর্যে সচকিত হয়েও/ শুধু সেজন্যেই আমার অনুরাগের আংটি/ পরিয়ে দিই নি তোমার আঙুলে।
তোমার হাসি, যা হতাশাকে করে তোলে দীপান্বিতা,আমাকে নিয়ে গ্যাছে সেই ঘাটে, / যেখানে ফোটে মনোজ কহলার। / না, কেবলমাত্র সেজন্যেও
ভালোবাসি না তোমাকে।'
মধুর এক ধাক্কা খেয়ে পথচলা
মেঘের আলপথে। / একটি ভুলের কুঁড়ি বিকাশের বাঁশির তানে/ চমৎকার এক ফুল হয়ে
দুলে উঠবে সত্যের মুখোমুখি, কে জানতো?...''
***** ***** *****
( এখানে একটু বলি -- জেবার সাথে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। আমার এক বন্ধুর কাজিন সে। আমি বিয়ে করব, মেয়ে খুঁজছি। এই কথা জেনে আমার সেই বন্ধু বলেছিল-- আমার একটি কাজিন আছে, ইডেনে পড়ে। ট্রেডিশনাল সিস্টেমে বাংলা অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। তুমি ওকে দেখতে পারো। '
বললাম, ঠিক আছে দেখব।
ধানমন্ডির একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে আমরা তিনজন একদিন লাঞ্চ করি। ঐদিনই জেবাকে আমি প্রথম দেখি। দেখে ওকে ভালো লাগল।
আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং মাস্টার্স করেছি। জেবা তাই আমাকে অনুরোধ করে বলেছিল -- 'আমি মাঝে মাঝে আপনার কাছে থেকে একটু হেল্প নেব।' আমি বলেছিলাম, অবশ্যই তোমাকে প্রয়োজনীয় হেল্প করব।'
শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বারান্দায়, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের লনে বসে আমি এবং জেবা সাহানি একাডেমিক বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছি, এবং জেবাকে যতটুকু পারি, টিপস্ দিয়েছি। ব্যাস, এই পর্যন্তই। কিন্তু কোনো ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়িনি কেউই।
একদিন আমার সেই বন্ধুটির সাথে আমার দেখা হয়। এবং সে বলে -- 'জেবাকে কি তোমার পছন্দ হয় ?' আমি ওকে বলি -- 'জেবা খুব ভালো মেয়ে। ওকে নিয়ে ঘর করা যায়।'
আমার সেই বন্ধুটি বলে -- 'তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।' আমি বললাম -- কী কথা?
-- জেবার একটি বিয়ে হয়েছিল। ওদের বাসর রাতও হয়েছিল। কিন্তু সেই একটি রাতই কেবল, কিংবা একটি দিনই বিয়ে টিকেছিল। তারপরের দিনই সে বিয়ে ভেঙে যায়। দুজনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কী জন্য বিয়েটা ভেঙে যায়, তা জানি না। জেবা সে কথা কাউকে বলেনি কখনও।
আমি শুধু কথাগুলো শুনলাম। এবং বললাম -- আমি আমার বাড়িতে আলাপ আলোচনা করে, তোমাকে মতামত জানাব।
আমি বাড়িতে আলাপ আলোচনা করে -- আমার সেই বন্ধুকে নেগেটিভ মতামত জানিয়ে দিলাম। বললাম -- আমাদের বাড়িতে কেউই এই বিয়েতে রাজি নয়। )
***** ***** *****
জেবা বলছিল -- আপনার কবিতার খাতাটি কই? একটু দেখব। দেখি -- সর্বশেষ কোন্ কবিতাটি আপনি লিখেছেন, একটু পড়ব।
টেবিলের উপরেই আমার কবিতার খাতাটি ছিল। আমি খাতাটি জেবার হাতে দিলাম। জেবা খাতাটি হাতে নিয়ে আমার লেখা শেষ কবিতাটা পড়তে লাগল --
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন