সোমবার, ১ জুন, ২০২০

মৌয়াল

মৌয়াল

জব্বর মৌয়াল একজন ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ। সংসারে তার অভাব অনটন লেগেই থাকে । দুটো ছোট মেয়ে আছে তার। বয়স একজনের পাঁচ বছর, আর একজনের তিন বছর। একজনের নাম নূরী, আর ছোট জনের নাম -- বুড়ী।       

সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে জব্বার সংসার চালায়। কিন্তু সবসময় সে বনে মধু পায় না। আর তখনই তার সংসারে অভাব লেগে থাকে।  অভুক্ত থাকতে হয় তাদের প্রায় সময়। 

জব্বারের বউ আছিয়া এই অভাব অনটন নিয়ে প্রায় দিনই জব্বার মিয়ার সাথে ঝগড়া করে। সেদিন দুপুরবেলা তুমুল ঝগড়া করছিল জামাই বউ দুজনে।  একে অপরে তুই তোকারি করে কথা বলছিল । আর অশ্লীল যত গালি গালাজ করছিল। শুরুটা করেছিল জব্বার মিয়ার বউ। 

--- মরদ তুই আমারে বিয়া করছিলি ক্যা.. বউ পোলাপানরে খাওন দিতে পারবি না.. 
--- চুপ কর মাগী, বেশি কতা কবিনা। 
-- চুপ করমু ক্যা..  মাইয়া দুউডা কাল থাইকা না খাইয়া রইচে.. 
--- আমি কী করমু.. কই থেইকা দিমু? 
--- তো জন্ম দিছিলি ক্যা.. 
--- তরে চুদছিলাম। তাই হইয়া গেছে। 
--- চোদার সময় তো মজা লউছোস,  হুস আছিল না। 
-- তুইও তো মজা লইছোস। 
-- চুপ কর্ মর্দা,  বউরে খাওন দিতে পারোস না, আবার কতা কস্। তুই আবার আমারে চুদতে আসিস।  তোর ধোন কাইটা দিমু। 
--- মাগী চুপ কর!  কইচি। 
---  মাইয়া দুইডা কখন থেকে ক্যানতাছে!  তুই শোনস না!  তুই ঘর থাইকা বের অইয়া যা মর্দ। তরে দেখতে চাই না।     

আছিয়া জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। 
     
জব্বার মিয়া মাথায় গামছা বাঁধল। নূরী আর বুড়ীকে বলল -- এই তোরা আমার সাথে আয়। নূরী বুড়ী খুব খুশি হয়।  ওরা বলল -- বাবা,  তুমি আমাগো কই নিয়া যাইবা? 
--  চল্। খোন্তাকাটা বাজার থোন তোগোর খাওয়াইয়া লইয়া আসি। 

নূরী ও বুড়ীকে নিয়ে জব্বার নৌকায় উঠল।  ছোট ডিঙি নৌকার পাটাতনের উপর দুই বোন বসে আছে।  ওদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।  জব্বার মিয়া বৈঠা চালাচ্ছে।  ছোট্ট নৌকাটি চলছে বলেশ্বর নদীর উপর দিয়ে। 

তখন সন্ধ্যা পূর্ব বিকাল।  ভাটি স্রোতের টানে নৌকাটি সুন্দরবনের তীরে এসে থামে। জব্বার মিয়া নৌকাটি একটি গাছের গুরির সাথে বাঁধে। তারপর মেয়ে দুটোকে হাত ধরে কূলে নামায়।  জব্বার মিয়া ওদের বনের গভীরে নিয়ে যায়।  এক জায়গায় ওদের বসিয়ে রেখে বলে -- 'তোরা এখানে বসে থাক্।  আমি আসছি।' 

মেয়ে দুটো বলছিল -- বাবা,  তুমি কই যাও? 
-- আমি তোগোর জন্য খাবার নিয়া আসমু। 
-- তাড়াতাড়ি আইসো বাবা,  আমাগো খুব খিদা লাগছে।
-- আচ্ছা। 

জব্বার মিয়া মেয়ে দুটোকে জঙ্গলের ভিতর রেখে আস্তে আস্তে এসে নৌকায় ওঠে। 

তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বনের ছোট্ট ছোট্ট পাখিরা সন্ধ্যার আকাশ জুড়ে চ্রিহি চ্রিহি শব্দ করছে। আঁধার নামছে ঘনঘোর করে। জব্বার মিয়া বলেশ্বর নদীর উজান বেয়ে  বৈঠা চালাতে থাকে। কিন্তু  বৈঠাটি চালাতে পারছিল না সে।নৌকা যেন চলছে না আর।
 
হাতে বল পাচ্ছিল না জব্বার মিয়া। তারও পেটে যে তখন প্রচন্ড খিদা ছিল ।              
                                     

কোয়েল তালুকদার
২ জুন, ২০২০ ইং, ঢাকা।                                         

   
                   
                             

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন